মন্তব্য কলাম

img

ব্রেক্সিটে বরিস হলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, করোনায় হলেন শুধুই ইংল্যান্ডের নেতা

প্রকাশিত :  ০০:৫৫, ১৪ মে ২০২০
সর্বশেষ আপডেট: ০৬:৩৬, ১৪ মে ২০২০

ব্রেক্সিটে বরিস হলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, করোনায় হলেন শুধুই ইংল্যান্ডের নেতা

মুহাম্মদ আব্দুস সাত্তার

ব্রেক্সিট তাঁকে করেছিলো ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রি, আর করোনা তাঁকে করলো ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রি। কম বেশি চার বছরের মধ্যে বরিস জনসনের এই উত্তুঙ্গ প্রমোশন এবং কার্যকর ডিমোশন।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বের করে এনে ব্রিটেনকে ‘স্বাধীন‘ করার ধূয়া তুলেছিলেন বরিস জনসন, এই স্বপ্নে মাতিয়ে তুলেছিলেন ব্রিটিশ ভোটারদের। ব্রেক্সিটের পক্ষে প্রথমে গণভোটে পেলেন বিপুল রায়, এর ধারাবাহিকতায় তাঁর কনসারভেটিভ দলের মেজরিটি অংশের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা হয়ে দাঁড়ালো আকাশচুম্বি, পার্টির এমপিদের মাঝে তিনি তখন রীতিমতো অপ্রতিদ্বন্দ্বি নায়ক, প্রধানমন্ত্রি তেরেসো মে পদত্যাগে বাধ্য হওয়ার পর দলের নেতা নির্বাচিত হতে বরিসকে মোটেই বেগ পেতে হয়নি এবং সবশেষে গত বছরের ১২ ডিসেম্বরের পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিরোধী লেবার পার্টিকে ভূপাতিত করে পেলেন বরিস বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা, ঐতিহাসিক বিজয়। হলেন ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড আর ওয়েলসের সমন্বয়ে গঠিত যুক্তরাজ্যের (ব্রিটেনের) প্রধানমন্ত্রি।
ডিসেম্বরে বিপুল নির্বাচনী বিজয়ের পর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে বরিস ও তাঁর সরকারের মূল টার্গেট ছিলো ব্রেক্সিটের সফল বাস্তবায়নের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়া। কিন্তু বাগড়া বাধালো চীন দেশ থেকে ভেসে আসা এক অদৃশ্য ‘শত্রু‘।  বেক্সিট নিয়ে তাঁর সব পরিকল্পনা আপাতত লন্ডভন্ড করে দিলো করোনাভাইরাস, অর্থনীতি দিলো ছত্রখান করে, লকডাউন জারী হলো, জনজীবন বাধ্য হলো ঘরে খিল এঁটে বসে থাকতে, তারপরও হাজারে হাজার মানুষের মৃত্যুর মিছিল ঠেকানো সম্ভব হলো না।
লকডাউনের শেষ ঘটাবার জন্যে বরিস প্রবল চাপের মধ্যে ছিলেন। ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিলো তিনি লকডাউন পর্যায়ক্রমে শিথিল করে আনার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন। আর সেখানেই তিনি রীতিমতো একা হয়ে গেলেন। স্কটল্যান্ড, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড আর ওয়েলস-এর জাতিগত অঞ্চলসমূহের সরকারগুলো ঘোষনা করলো, তারা মনে করে না লকডাউন তুলে নেবার মতো পরিস্থিতির উন্নতি এখনো ততোটা হয়েছে।
বরিস তাদের নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলেও কাজ হয়নি। ওই আঞ্চলিক সরকারগুলো বরং আগ বাড়িয়ে বরিসের তরফে কোন সিদ্ধান্ত আসার আগেই নিজ নিজ অঞ্চলে লকডাউনের সময় সীমা ২৮ মে পর্যন্ত তিন সপ্তাহের জন্যে বাড়িয়ে দিলো।  ২৩ মার্চ লকডাউন জারি করার সাত সপ্তাহের মাথায় করোনাভাইরাস মহামারীটি নির্মূল বা নিদেনপক্ষে নিয়ন্ত্রিত না হওয়া সত্ত্বেও  মূলত অর্থনীতি আবার চাঙ্গা করার স্বার্থে রোববার ১০ মে প্রধানমন্ত্রি বরিস জনসন সেটি পর্যায়ক্রমে শিথিল করে আনার ঘোষণা দিলেন। ঘোষণাটি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রির পক্ষ থেকে এলেও আদতে তা কার্যকর হলো শুধুমাত্র ইংল্যান্ডে, অর্থাৎ, চার জাতির সমন্বয়ে গঠিত যুক্তরাজ্যের শুধুমাত্র একটি জাতির অঞ্চলে। এখানেই বরিস জনসনের ডিমোশন ঘটে গেলো অনিবার্যভাবে।
স্কটল্যান্ড, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড আর ওয়েলস-এ পৃথক পৃথক আঞ্চলিক সরকার থাকলেও ইংল্যান্ডে তা নেই। এখানে ওয়েস্টমিন্সটারে যে সরকার গঠিত হয় তার ক্ষমতার আওতায় রয়েছে পুরো যুক্তরাজ্য। কিন্তু এই কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থা এখন এমনই অবস্থায় পৌঁছেছে যে, মহামারীর মতো একটি পরিস্থিতি মোকাবেলায় তার কর্তৃত্ব এখন দেশের বাকি তিনটি অঞ্চলে একইভাবে প্রযোজ্য হচ্ছে না। অর্থাৎ, দেশের অন্য তিনটি জাতিসত্ত্বার জনপ্রতিনিধিরা কেন্দ্রীয় সরকারের উইজডম আর কম্পিটেন্সির ওপর ভরসা রাখতে পারছেন না।
ওয়েস্টমিন্সটারে হাউস অব পার্লামেন্টের বদৌলতে যে ব্রিটিশ সরকার গঠিত হয়, তার বিরুদ্ধে স্কটল্যান্ড, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড আর ওয়েলস এখনই স্বাধীনতা ঘোষণা করছে না, যদিও আমরা জানি স্কটল্যান্ড এরই মধ্যে এক দফা স্বাধীনতার পক্ষে গণভোট করেছিলো, সেটাতে স্বাধীনতার পক্ষের দলগুলো জিততে পারেনি বটে, কিন্তু বর্তমান স্কটিশ সরকার আবারও সেখানে স্বাধীনতার প্রশ্নে দ্বিতীয় দফা গণভোটের দাবিতে সোচ্চার রয়েছে।
বরিসের সরকার শিথিল লকডাউন বিধান অনুযায়ি ইংল্যান্ডের মানুষজন গাড়ি চালিয়ে দূরবর্তী সাগর সৈকত, পার্ক এগুলোতে যেতে পারবেন, কিন্তু তাদের স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে, এ সময় তারা যেন স্কটল্যান্ড, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড আর ওয়েলস এলাকায় প্রবেশ না করেন, কারণ, সেখানে লকডাউনের আগের সব বিধিনিষেধ বলবৎ রয়েছে।
অলিখিত সংবিধানের আওতায় যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক ভবিষ্যত আগামিতে কেমন দাঁড়াবে সে সম্পর্কে সুনিশ্চিত মন্তব্য করার সময় এখনো হয়নি। তবে যুক্তরাজ্যের বর্তমান রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রাজ্যগুলো আর কদ্দিন এই কাঠামোর ভেতওে ঐক্যবদ্ধ থাকছে সে প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ সম্ভবত আর নেই।

লন্ডন, ১৪ মে, ২০২০

[লেখাটি সাপ্তাহিক জনমত এর চলতি সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। জনমত এর ই-পেপার পড়তে হলে হোম পেজে গিয়ে সাপ্তাহিক জনমত এর প্রচ্ছদে ক্লিক করুন।]

img

যুদ্ধ উত্তেজনায় ইরান-ইসরায়েল, কে জিতল, কে হারল?

প্রকাশিত :  ১১:৪৯, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১১:৫৬, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

সিমন টিসডল

ইসফাহানের সামরিক ঘাঁটির কাছে ও অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতে গত শুক্রবার আকাশপথে ইসরায়েল যে হামলা চালায়, ইরান সেটা ততটা পাত্তা দিতে নারাজ। বাইরে থেকে হামলার বিষয়টা তেহরান অস্বীকার করেছে। 

ইসরায়েলি মুখপত্ররা আর সব বিষয়ে অনর্গল বাক্যবর্ষণ করে চললেও এ ঘটনায় অদ্ভুতভাবে নীরব। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, ঘটনাকে গুরুত্বহীন করে তুলতে দুই পক্ষের মধ্যে যেন একটা চুক্তি হয়েছে, যাতে ধীরে ধীরে উত্তেজনার পারদ এমনিতেই নিচে নেমে যায়।

এটিকে উনিশ শতকের সেই চোরাগোপ্তা কোনো এক ডুয়েল লড়াইয়ের মতো মনে হচ্ছে; যেন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ইংরেজ ব্রিটেনে কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে তৃণভূমির মধ্যে পরস্পরের দিকে অবৈধভাবে পিস্তল তাক করেছে। ইরান ও ইসরায়েল দুই দেশেরই মানমর্যাদা পরিপূর্ণভাবে রক্ষা করতে হবে, কিন্তু সেটা আবার করতে হবে জনগণের মধ্যে যেন আবার চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু না হয়, সেটা মাথায় রেখে। 

দুই দেশই একে অন্যের দিকে সরাসরি হামলা করেছে। তাতে প্রতীকী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখন তারা এবং তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে খেলা শেষ, অন্তত এবারের মতো।

এটা যদি সত্যি (যদিও সম্ভাবনাটা সাময়িক সময়ের জন্য) হয়, তাহলে সেটা অনেক বড় স্বস্তির বিষয়। এ ঘটনা এই ইঙ্গিত দেয় যে সংযত হতে ইসরায়েলের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র চাপ (যুক্তরাজ্য ও অন্য দেশগুলোও তাতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে) কাজে এসেছে। 

গত সপ্তাহে ইসরায়েলে ইরানের অভূতপূর্ব ও বড় পরিসরে হামলার পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের প্রতি ‘জয়টাকে ধরে রাখার’ আহ্বান জানিয়ে ছিলেন। বোঝা যাচ্ছে, এই বার্তার মর্মোদ্ধার সফলভাবেই করতে পেরেছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের নেতৃত্ব কখনোই কোনো বিষয়ে পুরোপুরি ঐকমত্য হতে পারে না।

অবশ্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ডিএনএর মধ্যেই সংযমের বালাই নেই। সাবেক এই কমান্ডো ইরানের হামলার পর সহজাতভাবেই পাল্টা শক্তি দেখাতে চেয়েছিলেন। আর তাঁর কট্টর ডানপন্থী মিত্ররা যুদ্ধের উন্মাদনা সৃষ্টি করেছিল। 

এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েল যে মাপা পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে মানাতে পেরেছে। আর ইরানের ড্রোন ও মিসাইল হামলা থেকে ইসরায়েলকে সুরক্ষা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, সেটাও নেতানিয়াহুর পক্ষে উপেক্ষা করা সম্ভব হয়নি।

আবার ইসরায়েলের সামান্যতম উদ্‌যাপনের কোনো কারণ নেই। এটা ঠিক যে এবার ইসরায়েল ইরানের হামলা ঠেকিয়ে দিয়েছে। কিন্তু অজেয় বলে ইসরায়েলের যে সুখ্যাতি, সেটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। ইসরায়েল অভেদ্য দুর্গ বলে যে মিথ, সেটা গুঁড়িয়ে গেছে। একইভাবে গাজায় এখনো হামাসের হাতে বন্দী ১৩০ পণবন্দী রয়ে গেছে। হামাস এখনো অপরাজেয়।

অবশ্য এখানেই বিষয়টা মীমাংসা হয়ে গেল এটা ধরে নেওয়াটাও বোকামি হয়ে যাবে। রাজনৈতিক ও মতাদর্শিকভাবে গভীর বৈরিতা ইরান ও ইসরায়েল—এই দুই শত্রুকে পরস্পর থেকে আলাদা করে রেখেছে। 

দুই দেশের সরকারের মধ্যেই অভ্যন্তরীণ বিভাজন রয়েছে, যা চরম অনিশ্চয়তা ও প্ররোচনাময় পরিবেশ সৃষ্টি করছে। তারই একটা ভয়ানক নজির আমরা গত কয়েক দিনে দেখতে পেলাম। একেবারে মুখোমুখি যুদ্ধের প্যান্ডোরার বাক্সটি সরাসরি খুলে গিয়েছিল।

বছরের পর বছর ধরে দুটি দেশ যে ছায়াযুদ্ধ লড়ে যাচ্ছিল, সেই যুদ্ধ তারা সবার চোখের সামনে দিনের আলোয় নিয়ে এসেছিল। ইরান দেখিয়ে দিয়েছে যে তারা ইসরায়েলের যেকোনো জায়গায়, যেকোনো সময়, প্রত্যক্ষভাবে হোক আর পরোক্ষভাবে হোক, হামলা চালাতে সক্ষম। আর ইসরায়েল দেখাল যে তারা যদি চায়, তাহলে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালাতে সক্ষম, পরেরবারের হামলা হবে আরও ভয়াবহ।

ইসরায়েল-ইরানের এ অচলাবস্থা ফিলিস্তিন সংঘাতের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। কিন্তু ফিলিস্তিন সংকট নিরসনে কোনো ভূমিকা রাখছে না। আর ফিলিস্তিন সংকটে পশ্চিমাদের দোটানা অবস্থান আগের চেয়ে তীব্র হলো। 

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন একপেশে, দ্বিমুখী নীতির প্রতীক হয়ে উঠলেন। গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছতে তিনি প্রাণান্ত চেষ্টা করে চলেছেন, কিন্তু যুদ্ধবিরতির চেষ্টায় সমানভাবে ঢিলেমি করে যাচ্ছেন। ফলে তাঁর নীতি খুব সামান্যই সফলতার মুখ দেখছে।

এর একটা কারণ হতে পারে, ঋষি সুনাকের সরকার ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রির সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না। আরেকটি কারণ হলো, ১ এপ্রিল দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলের বিমান হামলার (এই হামলায় ইরানের জ্যেষ্ঠ কয়েকজন কমান্ডার নিহত হন, ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক হামলা চালায় ইরান) নিন্দা জানাতে ক্যামেরন অস্বীকৃতি জানান।

জাতিসংঘ–বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের কনস্যুলেটে ইসরায়েলের হামলা ছিল আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। গত সপ্তাহে ক্যামেরন অবশ্য স্বীকার করেছেন, যুক্তরাজ্যের কোনো দূতাবাসে এ ধরনের হামলা হলে তারা কঠোর ব্যবস্থা নিত। 

কিন্তু তিনি কখনোই বলবেন না, ইসরায়েল অন্যায় করেছে। এ ধরনের ইসরায়েলপন্থী অবস্থান বেশির ভাগ পশ্চিমা দেশের সরকারগুলোর চারিত্রিক অবস্থান।

হারজিতের প্রশ্নটি বড় পরিসর থেকে বিবেচনা করা হলে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে গত সপ্তাহের ঘটনাপ্রবাহে ইউক্রেনীয়রাও সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা আরেকটি পশ্চিমা ভণ্ডামির শিকার। 

দুই বছরের বেশি সময় ধরে কিয়েভ ন্যাটোর কাছে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও মিসাইল প্রতিরক্ষাব্যবস্থা চেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের সেই চাওয়া বৃথা পর্যবসিত হয়েছে।

অথচ ইরান যখন ইসরায়েলে ড্রোন ও মিসাইল হামলা করল, তখন পশ্চিমা দেশগুলো তেল আবিবের সুরক্ষা দিতে কী না করেছে। ইরান ৩০০ ড্রোন ও মিসাইল ছুড়লেও প্রায় অক্ষত থাকে ইসরায়েল। অথচ প্রতি সপ্তাহে রাশিয়া সমানসংখ্যক ড্রোন ও মিসাইল হামলা করে ইউক্রেনে।  

একইভাবে অবরুদ্ধ গাজাবাসীর হতাশা আরও প্রলম্বিত হলো এ–ই দেখে যে নেতানিয়াহুর প্রতি পশ্চিমা সমালোচনা রাতারাতি পাল্টে গেছে। পশ্চিমাদের এই সংহতির ঐকতানের জন্য ইরান অবশ্যই নেতানিয়াহুর ধন্যবাদ পেতে পারে। 

দাতা সংস্থাগুলো ফিলিস্তিন নিয়ে অব্যাহতভাবে সতর্ক করে যাচ্ছে যে সেখানে দুর্ভিক্ষ আসন্ন। ইসরায়েলের হাতে ৬ মাসে ৩৪ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। রাফায় ভয়াবহ আগ্রাসন চোখরাঙানি দিচ্ছে। গাজা ও পশ্চিম তীরে কোনো বিজয়ী নেই, কেবল পরাজিত রয়েছেন।

ইরান দাবি করেছে, তারা খুব সফলভাবে দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে বোমাবর্ষণের শাস্তি দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ইরানের এই হামলাকে একটা পরাজয়ই বলা যায়। কেননা, এতে তাদের সামরিক সীমাবদ্ধতা প্রকাশ হয়ে গেছে। 

এ হামলার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ইরান আরও একঘরে হয়ে গেছে, তেহরানের ঘাড়ে নতুন নিষেধাজ্ঞার বোঝা চেপেছে এবং ফিলিস্তিনিদের সুবিধা হয়—এমন কোনো কিছু করতে পারেনি ইরান। অবশ্য সেটা তাদের নেতারা তোয়াক্কা করেন না।

আবার ইসরায়েলের সামান্যতম উদ্‌যাপনের কোনো কারণ নেই। এটা ঠিক যে এবার ইসরায়েল ইরানের হামলা ঠেকিয়ে দিয়েছে। কিন্তু অজেয় বলে ইসরায়েলের যে সুখ্যাতি, সেটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। ইসরায়েল অভেদ্য দুর্গ বলে যে মিথ, সেটা গুঁড়িয়ে গেছে। একইভাবে গাজায় এখনো হামাসের হাতে বন্দী ১৩০ পণবন্দী রয়ে গেছে। হামাস এখনো অপরাজেয়।

অনেকের কাছেই শক্তিশালী যুক্তি হলো, মধ্যপ্রাচ্যের মূল সংকট সমাধান করতে হলে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের অবসান করতে হবে। এর জন্য অনেক বেশি কূটনৈতিক সময়, শক্তি ও সম্পদ ব্যয় করা প্রয়োজন। 

এই সংঘাত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় বিষ ছড়াচ্ছে। এই সংঘাত পশ্চিমা নীতিকে ভারসাম্যহীন করে তুলছে। ইরানের মতো দুর্বৃত্ত খেলোয়াড়ের ক্ষমতা বাড়াচ্ছে।


সিমন টিসডল: বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক ভাষ্যকার ও কলাম লেখক;
(গার্ডিয়ান থেকেঅনূদিত)

মতামত এর আরও খবর