img

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সিদ্ধান্তে হতাশ গারোরা

প্রকাশিত :  ১০:০৯, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সিদ্ধান্তে হতাশ গারোরা

জনমত ডেস্ক: তাহিরপুর সীমান্তের বড়গোপটিলা গারো মাঠ দখলের বিচার করতে গিয়ে বৃহস্পতিবার একতরফা সিদ্ধান্ত দিয়ে এসেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। গারো সম্প্রদায়ের লোকজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনা প্রত্যাখান করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুবিচার চেয়েছেন। এর আগে মাঠটি গারোদের ফিরিয়ে দিতে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

তাহিরপুর উপজেলার কড়ইগড়া সীমান্তের আদিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি বড়গোপটিলায় সদ্য বসতি স্থাপনকারীরা কিছু লোক গারোরা যাতে মাঠে খেলাধুলা ও নিজেদের সংস্কৃতিচর্চা না করতে পারে সেজন্য বাঁধা দিচ্ছে। অথচ. ১৯৪৮ সনে জঙ্গল কেটে মাঠ প্রতিষ্ঠা করে খেলাধুলা, আদিবাসী দিবসসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন কড়ইগড়া, চানপুর, রাজাইরসহ সীমান্তের কয়েকটি গ্রামের ক্ষুদ্র নৃতাত্বিক গোষ্ঠীর লোকজন। গত তিনমাস ধরে হঠাৎ করে মাঠ দখলের চেষ্টা চালায় বড়গোপটিলার কিছু যুবক। তারা গারো যুবকদের হুমকি ধমকিসহ সাম্প্রদায়িক কথাবার্তা বলে আসছে। এ নিয়ে গত ১৩ সেপ্টেম্বর বড়গোপটিলা গারো মাঠে শালিস বসে। ওই বৈঠকেও গারোদের মাঠ প্রতিষ্ঠার অবদানের কথা স্বীকার করেন শালিসকারীরা। তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে আগের মতো মাঠ ব্যবহারের দাবি জানান।

শালিসে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়ায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বৃহষ্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে যান তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ। তিনি গারোদের তৈরি মাঠ দখলকারী স্থানীয়রা ক্ষুদ্র নৃতাত্বিক গোষ্ঠীকে মিলেমিশে মাঠ ব্যবহারের কথা বলে চলে আসেন। এমন সিদ্ধান্তে উপস্থিত গারো সম্প্রদায়ের লোকজন এবং স্থানীয় নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হন। গারোরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এই সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ। তারা মনে করছেন এতে তাদের তৈরি মাঠ দখলকারীরা উৎসাহিত হবে। মাঠে যেতে চাইলে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষ হবে তাদের।

জানা গেছে, মাঠটি গারোদের তৈরি হলেও সময়ের ব্যবধানে নতুন বসতি স্থাপনকারীরা গারোদের মাঠ পরিচালনার নির্দেশনা মেনে শান্তিপূর্ণভাবে খেলাধুলা করে আসছিলেন। সম্প্রতি জোরপূর্বক গারোদের হটিয়ে মাঠ দখলের চেষ্টায় তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

মাঠ পরিচালনাকারী সুনীল দাজেল বলেন, আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে সুবিচার চেয়েছিলাম। তিনি একতরফা ও অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত দিয়ে গেছেন তিনি। এতে আমরা মাঠের অধিকার হারাব। এ কারণে আমরা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করেছি। আমরা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে কথা বলব। তিনি বলেন, প্রায় ৭২ বছর ধরে আমরা মাঠ ব্যবহার করছি। খেলাধুলা ও উৎসবে আমাদের সঙ্গে বাঙালিরা অংশ নেন। আমরা আক্রমণের শিকার হইনি।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সিদ্ধান্তটি মানেন নি গারোরা। কারণ এই সিদ্ধান্তে সমাধানের বদলে আরো সংঘাত ও বিশৃঙ্খলা হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ বলেন, আমি দুই পক্ষকে মিলে-মিশে খেলাধুলা করতে বলেছি। বিশৃঙ্খলা এড়াতে একটি কমিটিও করে দেব।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সরেজমিন গিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দিতে বলেছি। তবে তিনি কি সিদ্ধান্ত দিয়ে এসেছেন এখনো জানতে পারিনি।


img

মৌলভীবাজারে কালবৈশাখীর তাণ্ডব

প্রকাশিত :  ১৯:২৯, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

সংগ্রাম দত্ত: আজ ২৮ শে এপ্রিল বিকাল প্রায় ৫ ঘটিকার দিকে শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজার উপজেলার উপর দিয়ে প্রবল ঝড়বৃষ্টির বয়ে যায়। ফলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘর বাড়ি, গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটি ইত্যাদি বিনষ্ট হয়।

ঝড়ের পাশাপাশি অল্প পরিমাণে শিলাবৃষ্টিও হয়েছে, শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে হাওরের বোরো ফসল ও সবজিরও ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে কমলগঞ্জের লাউয়াছড়ায় গাছ পড়ে সিলেটের সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। প্রায় দুই ঘণ্টা পর রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।

রোববার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কালবৈশাখী ঝড়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকায় রেললাইনের ওপর গাছ ভেঙে পড়ায় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গাছ সরিয়ে নেয়ার পর সন্ধ্যা ৭টা ৪২ মিনিটের দিকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

শ্রীমঙ্গলে সিলেট অভিমুখী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীরা জানান, রোববার বিকেলে হঠাৎ করেই কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হানে। শ্রীমঙ্গল স্টেশনে জয়ন্তিকা ট্রেন আসার পরপরই স্টেশনের পাশে থাকা গাছ ভেঙে ট্রেনের ওপর পড়ে।

ঝড়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বেশ ক্ষতি হয়েছে। বনের ভেতর দিয়ে যাওয়া আখাউড়া-সিলেট রেলপথের একাধিক স্থানে গাছ ভেঙে পড়েছে। এর ফলে ওই লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়েন ট্রেনের কয়েক শ’ যাত্রী। তারা আরও জানান, রেললাইনের ওপর থেকে ভেঙে পড়া গাছ সরিয়ে নেয়ার পর সন্ধ্যা ৭টা ৪২ মিনিটে ট্রেন যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।

কমলগঞ্জের ভানুগাছ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার কবির আহমেদ বলেন, ‘ঝড়ে সিলেট-শ্রীমঙ্গল রেললাইনের ওপর কয়েকটি গাছ ভেঙে পড়ে। এতে বিকেল থেকে সারা দেশের সঙ্গে সিলেটের ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। গাছ সরানোর পর সন্ধ্যা ৭টা ৪২ মিনিটের দিকে সারা দেশের সঙ্গে সিলেটের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।’

মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস ও আমরা বন বিভাগের সদস্যরা মিলে লাইনের ওপর ভেঙে পড়া গাছ সরানোর পর ট্রেন যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।’

এদিকে, শ্রীমঙ্গলে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে ও গাছ উপড়ে পড়ায় ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কসহ অভ্যন্তরীণ অনেক সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। ফলে উপজেলাজুড়ে ৫০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

শ্রীমঙ্গলের আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, ঝড়টির গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার। ঝড়ের পিক টাইমের স্থায়িত্ব ছিল প্রায় ৬ মিনিট।

শ্রীমঙ্গল কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা রকেন্দ্র শর্মা বলেন, ‘হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড় ও অল্প শিলাবৃষ্টি হয়েছে। আমরা মাঠপর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করে বলতে পারব কৃষির কেমন ক্ষতি হয়েছে।’