img

একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘লন্ডন মাল্টিলিংগুয়াল ডে’ হিসেবে ঘোষণা দেয়ার দাবি

প্রকাশিত :  ০৭:৫৫, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

 একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘লন্ডন মাল্টিলিংগুয়াল ডে’ হিসেবে ঘোষণা দেয়ার দাবি

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত অমর একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘লন্ডন মাল্টিলিংগুয়াল ডে’ হিসেবে পালনের আহ্বানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ হাই কমিশন, লন্ডন ‘বাংলা ভাষা শহিদ দিবস’ ও ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করেছে।

এ উপলক্ষে লন্ডনের কেন্জিংটনে এক হোটেলে “Safeguarding Indigenous Languages through Transforming Education” শীর্ষক এক বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম তার বক্তব্যে ১৯৫২-এর সকল ভাষা শহিদ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত অমর একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘লন্ডন মাল্টিলিংগুয়াল ডে’ হিসেবে ঘোষণা দেয়ার জন্য লন্ডন মেয়রের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “এ বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব হাই কমিশন খুব শীঘ্রই লন্ডন মেয়রের কাছে পাঠাবে।”

কমনওয়েলথের সেক্রেটারি জেনারেল পেট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। এতে লন্ডনে অবস্থিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, ১৭টি দূতাবাসের কূটনীতিক ও প্রতিনিধিগণ এবং ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অংশ নিয়ে বায়ান্নোর মহান ভাষা শহিদের ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বক্তব্য দেন।

এছাড়া অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনার ও রাষ্ট্রদূতগণ এবং দূতাবাসগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী শিল্পীরা মহান ভাষা শহিদদের উৎসর্গ করে নিজ নিজ ভাষায় মনোজ্ঞ সংগীত, আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশন করেন। দূতাবাসগুলোর মধ্যে ছিলো ভারত, কুয়েত, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, আর্জেন্টিনা, কিউবা, সাইপ্রাস, মিশর, রুয়ান্ডা, ফিলিস্তিন, জর্ডান, উগান্ডা ও রোমানিয়া।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি কমনওয়েলথের সেক্রেটারি জেনারেল পেট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড তার বক্তব্যে এবছরের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতিপাদ্যের উল্লেখ করে প্রতিটি দেশে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মাতৃভাষার সংরক্ষণ ও চর্চার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে বাংলাদেশে বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনকে মাতৃভাষার সংরক্ষণ ও চর্চার ক্ষেত্রে এক অনন্য নজির বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে ভাষা ও সংস্কৃতি সুরক্ষায় যারা প্রাণ দিয়েছিলো, তাদের সেই আত্মদান থেকে আজো আমরা অনুপ্রেরণা নিতে পারি।“

হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম যুক্তরাজ্যে প্রায় ৩০০টি এবং লন্ডনে প্রায় ২০০টি মাতৃভাষার প্রচলন রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, “একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটিকে ‘লন্ডন মাল্টিলিংগুয়াল ডে’ হিসেবে ঘোষণা করা খুবই যৌক্তিক এবং এবিষয়ে আজকের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সকল দেশের রাষ্ট্রদূতগণ অভিন্ন মত ব্যক্ত করেছেন।”

হাইকমিশনার ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটিসহ বিভিন্ন কমিউনিটির সদস্যদের তাদের নিজ নিজ এলাকার কাউন্সিলরদের মাধ্যমে লন্ডন মেয়রের নিকট এবিষয়ে প্রস্তাব প্রেরণের পরামর্শ দেন। তাছাড়া তিনি বাংলা ভাষা শিক্ষা এবং চর্চার জন্য যুক্তরাজ্যে কমিউনিটি সংগঠনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ গ্রহণ করলে হাইকমিশন বিনামূল্যে বাংলা পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করতে সহায়তা করবে বলে জানান।

হাইকমিশনার তার বক্তব্যে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ-এর প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে ৫২-র ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের কথা পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন এবং মহান একুশে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পাওয়া, বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের অন্যতম দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগসহ বাংলা ভাষার সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য পল ব্রিস্টো অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, “যুক্তরাজ্যে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটি অমর একুশের মহান আদর্শ ধারণ করে আছে যা আগামী দিনগুলোতেও এদেশে নিজ নিজ মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও উন্নয়নে অন্য ভাষার মানুষকেও উৎসাহ যোগাবে।

যুক্তরাজ্যে ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা অর্জনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন হাই কমিশনের স্মারক অনুষ্ঠানের সহ-আয়োজক যুক্তরাজ্যে ইউনেস্কোর জাতীয় কমিশনের প্রতিনিধি ম্যাথিউ রাবাগলিয়াতি, ব্রিটিশ কাউন্সিল প্রতিনিধি ও\'বায়ার্ন মুলিগান ও যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ।

অনুষ্ঠানে উদীচী স্কুল অব পারফরমিং আর্টসের শিশু-কিশোর শিল্পীরা সমবেত কণ্ঠে “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি” অমর সংগীতটি পরিবেশন করে। ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটিসহ লন্ডনে বসবাসকারী বিভিন্ন দেশের বিপুল সংখ্যক আমন্ত্রিত অতিথি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে হাইকমিশনার অতিথি ও মিশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রতীকী শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর ভাষা শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

একুশের প্রথম প্রহরে হাইকমিশনার ও টাওয়ার হ্যামলেটস-এর মেয়র লুৎফুর রহমান একসাথে এবং পরে মিশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে পূর্ব লন্ডনের শহিদ আলতাব আলি পার্কে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে বায়ান্নোর ভাষা শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

কমিউনিটি এর আরও খবর

img

নিউইয়র্কে দুদিনব্যাপী সুচিত্রা সেন বাংলা চলচ্চিত্র উৎসব

প্রকাশিত :  ১২:০০, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জ্যামাইকা পারফরমিং আর্টস সেন্টারে দুদিনব্যাপী সুচিত্রা সেন বাংলা চলচ্চিত্র উৎসবের শেষ দিন ২১ এপ্রিল রোববার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে অ্যাওয়ার্ডস প্রদান করা হয়। এতে বাংলাদেশ, ভারত ও এই দুই দেশের অভিবাসী ক্যাটাগরিতে ৩১টি পুরস্কার দেওয়া হয়। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার পায় হাওয়া (বাংলাদেশ), দোআঁশ (ভারত) ও রেডিও (অভিবাসী)। উৎসবে সুচিত্রা সেন অনারারি অ্যাওয়ার্ডস তুলে দেওয়া হয় বাংলাদেশের অভিনয় শিল্পী নায়ক ফেরদৌস আহমেদ, ভারতীয় নায়িকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তা ও চিত্র পরিচালক রেশমী মিত্রের হাতে।

এছাড়াও শ্রেষ্ঠ পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমন (হাওয়া-বাংলাদেশ) ও সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় (দোআঁশ-ভারত) এবং শ্রেষ্ঠ ডেব্যু পরিচালক হন যথাক্রমে হৃদি হক (১৯৭১: সেইসব দিন-বাংলাদেশ) ও অভিজিৎ শ্রীদাস (বিজয়ার পরে-ভারত)। শ্রেষ্ঠ অভিনয়শিল্পীর (পূরুষ-বাংলাদেশ) চঞ্চল চৌধুরী, যৌথভাবে প্রসেনজিত ও কৌশিক গাঙ্গুলি (ভারত) ও রাজুব ভৌমিক (অভিবাসী)। শ্রেষ্ঠ অভিনয়শিল্পী (নারী-বাংলাদেশ) নির্বাচিত হন নাজিফা তুষি (বাংলাদেশ), পায়েল সরকার (ভারত) ও সিন্ডি রোলিং (অভিবাসী)। শ্রেষ্ঠ সিনেমাটোগ্রাফারের পুরস্কার পান কামরুল হাসান খসরু (বাংলাদেশ) ও শুভজিৎ রায় (ভারত)।

উৎসবে শর্ট ফিল্ম ছুরত ও দ্যা ক্যাট (বাংলাদেশ), তৃতীয় রিপু ও রজনীগন্ধা (ভারত) এবং লাইট ক্যামেরা মেগা! (অভিবাসী) পুরস্কার পায়। ডক্যুফিল্ম-এ পুরস্কার পায় নানজিবা খানের দি আন ওয়ান্টেড টুইন (বাংলাদেশ), বাউল: সউল অব বেঙ্গল (ভারত) ও ড. নূরুন নবী: একজন আজীবন মুক্তিযোদ্ধা (অভিবাসী)। শিশুতোষ চলচ্চিত্র মাইক (বাংলাদেশ) ও মানিক কাকুর ক্যামেরা (ভারত)।

পপুলার ক্যাটাগরিতে প্রিয়তমা ছবিতে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ শিল্পী (পূরুষ) শাকিব খান ও সুরঙ্গ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনয় শিল্পী (নারী) নির্বাচিত হন তমা মির্জা।

গত ২০ ও ২১ এপ্রিল নিউইয়র্কে জ্যামাইকা পারফরমিং আর্টস সেন্টারে দুই দিনের অনুষ্ঠানে মানুষের উপচেপড়া ভিড় ছিল। দুদিনই পাঁচশ আসনের হলটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। দ্বিতীয় দিন লোকজন অনুষ্ঠান স্থলে প্রবেশ করতে না পেরে লবিতে, বাইরের প্রাঙ্গণে আড্ডা দিয়ে সময় কাটান। অনেকেই ফিরেও যান। এজন্য উৎসবের আয়োজক সংগঠন সুচিত্রা সেন মেমোরিয়াল ইউএসএ’র প্রতিষ্ঠাতা ও উৎসব কমিটির আহ্বায়ক গোপাল সান্যাল দু:খ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা সবক্ষেত্রে সফল হয়েছি। সারা বিশ্বের মানুষ যারাই উৎসবে এসেছেন তারাই আমাদের অনুষ্ঠান দেখে প্রশংসা করেছেন। শুধু একটি ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছি আমরা হাজারো মানুষকে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ভেতরে প্রবেশ করতে দিতে পারিনি। এছাড়াও আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়েছি। দুবাই এয়ারপোর্ট ডুবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাই বাংলাদেশ ও ভারতের বেশিরভাগ অতিথি সময়মতো নিউইয়র্কে এসে পৌঁছাতে বিড়ম্বনায় পড়েন। তারা কয়েক ঘণ্টার নোটিশে এয়ারলাইন্স পরিবর্তন করে শেষমেষ নিউইয়র্কে এসে পৌঁছেছেন। গোপাল সান্যাল বলেন, আমাদের অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠানের উপস্থাপক নাজিম শাহরিয়ার জয় ত্রিশ ঘণ্টা বিমানবন্দরে আটকে ছিলেন। নিউইয়র্কে এসে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তারপরও আমরা যে একটি বৃহৎ ও স্মরণীয় অনুষ্ঠান করতে পেরেছি এজন্য অতিথি ও নিউইয়র্কের দর্শকদের ধন্যবাদ জানাই।

এরআগে শনিবার সকাল ১১টা থেকে ছবি প্রদর্শনী শুরু হয়। উৎসবে ৪৩৮টি ছবি জমা পড়ে। এরমধ্যে বাছাই করে ৩৯টি ছবি দেখানো হয়। এই ছবিগুলো থেকেই জুরি সদস্যরা পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেন। জুরি সদস্যদের মধ্যে ছিলেন নিউইয়র্কের ভিজ্যুয়াল আর্টসের ফিল্ম ডিপার্টমেন্টের প্রধান মেরি লী গ্রিসান্তি ও ভারতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা, নাসার সাবেক বিজ্ঞানী বেদব্রত পাইন। দুবাই এয়ারপোর্ট বন্ধ থাকায় উৎসবের আরেক জুরি বাংলাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম আসতে পারেননি। অনুষ্ঠানে তিনি পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে ভিডিও বার্তা দেন। জুরি কোঅর্ডিনেটর ছিলেন শাহরিয়ার তৈমূর।

সকাল থেকে ছবি প্রদর্শনী শুরু হলেও উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় সন্ধ্যার ঠিক আগে আগে। উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নায়ক ও সংসদ সদস্য ফেরদৌস আহমেদ। এরপর তিনি ও দেশের সর্বকনিষ্ঠ নির্মাতা নানজিবা খানকে নিয়ে বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন। এসময় উৎসবের প্রধান উপদেষ্টা ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, চিফ প্যাট্রন শাহ নেওয়াজ গ্রপের মালিক ও গোল্ডেন এজ হোম কেয়ারের প্রধান শাহ নেওয়াজ, কো-প্যাট্রন আশা হোম কেয়ারের প্রধান আকাশ রহমান বক্তব্য রাখেন। এসময় উৎসবের উপদেষ্টা নজরুল মিন্টো, লুতফুন নাহার লতা, খাইরুল ইসলাম পাখি ও নূরুল আমিন বাবু, আহ্বায়ক গোপাল সান্যালসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।

উৎসবে যোগ দিতে বাংলাদেশ থেকে আসেন সংসদ সদস্য ও চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ, বাংলাদেশের জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী চঞ্চল চৌধুরী, চিত্রনায়িকা তমা মির্জা, সোহানা সাবা, হৃদি হক, ভারতীয় অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তা, পায়েল সরকার, রেশমী মিত্র, ভারতীয় ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউটর ও প্রডিউসার শংকর বসু, শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী বাবলী, ব্রিটিশ ভারতীয় সংগীত শিল্পী রিক্তা মুখার্জি প্রমুখ।

উদ্বোধনী পর্বে অ্যানি ফেরদৌসের নৃত্য পরিচালনা ও সেলিমা আশরাফের সংগীতে অর্ধশতাধিক নৃত্যশিল্পী নাচ পরিবেশন করেন। জ্যামাইকা পারফরমিং আর্টস সেন্টারের বাইরের প্রাঙ্গণটি তখন দর্শকদের ভিড়ে উপচে পড়ে। দুদিনের উৎসবে সাংস্কৃতিক পর্ব ও অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বাংলা ও ভিন্ন ভাষাভাষীর শিল্পীরা জমকালো বিনোদন অনুষ্ঠান উপহার দেন। অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল নাচ, গান, ফ্যাশন শো। ভিন্নধারার এসব অনুষ্ঠান দর্শকরা দারুণ উপভোগ করেন।

উৎসব উপলক্ষে একটি থিম সঙ তৈরি করা হয়। হাসানুজ্জামান সাকীর লেখা ও রাজর্ষী শীলের সুরে চমৎকার এই থিম সঙের মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করেন নিউইয়র্কের তরুণ নির্মাতা সৈয়দ ইমন। এতে নৃত্য পরিবেশন করেন সৈয়দা জ্যোতি, আপিয়া পম্পি ও কাজী মুস্তা। মিউজিক ভিডিওটির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের ভেতরে সাংস্কৃতিক পর্ব শুরু হয়।

এরপর নিউইয়র্কের সংগীত শিল্পী কামরুজ্জামান বকুল, লেমন চৌধুরী, শাহ মাহবুব, কৃষ্ণা তিথি, মরিয়ম মারিয়া ও অনিক রাজ সংগীত পরিবেশ করেন। বাংলাদেশ একাডেমী অব ফাইন আর্টস বাফা ‘তোমার রূপের মাধুরী রেখেছি সঞ্চয়ে’ নামে একটি নৃত্যানুষ্ঠান করে। স্বার্ণালী দিনের গান পরিবেশন করেন রবিন খান ও কানিজ দীপ্তি, ছায়াছবির গান পরিবেশন করেন লন্ডন থেকে আগত শিল্পী রিক্তা মুখার্জি। চিত্রনায়িকা ঋতুপর্ণাকে সম্মান জানিয়ে পরিবেশিত হয় ‘ঋতুরঙ্গ’। এই পর্বের গ্রন্থনা ও সংগীত পরিবেশনায় ছিলেন ভারতীয় শিল্পী সাহানা ভট্টাচার্য্য।

‘সুরের আকাশে তারারমেলা’ কোরিওগ্রাফীতে প্রায় ২০ জন স্থানীয় শিল্পী অংশগ্রহণ করে। রোববার দ্বিতীয় দিন যথারীতি সকাল ১১টায় ছবি প্রদর্শন শুরু হয়। সন্ধ্যায় এওয়ার্ডস অনুষ্ঠান শুরু হয় থিম সঙ দিয়ে। পরে চন্দ্রা ব্যানার্জির দল নৃত্যাঞ্জলী পরিবেশন করে ‘সোনাঝরা সন্ধ্যা’। নুসরাত এলিনের পোশাকে ফ্যাশন শো ‘রূপ-অনুরূপ’, নিউইয়র্কের মূলধারায় বাংলাদেশি মডেল ইয়াসমীনের পরিকল্পনা ও পরিচালনায় নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকের ভিন্ন ভাষাভাষী একঝাঁক মডেলের ফ্যাশন শো দর্শকদের কাছে উপভোগ্য ছিল। এ পর্বের নাম ছিল ‘বাঙালি পোশাকের বিশ্বায়ন’। ভার্জিনিয়ার নৃত্যশিল্পী রোকেয়া হাসি ও শিশুশিল্পী মাহাদিয়া ইশালম ও মেয়ের পরিবেশনা ট্রিবিউট টু গ্রেট হিরোইনস’ প্রশংসা কুড়িয়েছে।

ছায়াছাবির গান পরিবেশন করেন নিউইয়র্কের সংগীতশিল্পী রানো নেওয়াজ। এসময় একদল নৃত্যশিল্পী তাঁর সাথে নাচ পরিবেশন করেন। অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কের নতুন প্রজন্মের শিল্পী সামিয়া ইসলাম, সাগ্নিক রিক ও আলভান চৌধুরী গান গেয়ে দর্শকদের মাতিয়ে দেন। মাজিদ ডিজায়ারের নাচে অংশ নেন তাঁর দলের একগুচ্ছ শিল্পী।

সবশেষ নিউইয়র্কের সর্ববৃহৎ সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনস্টিটিউট অব পারফরর্মিং আর্টস-বিপার সমাপনী অনুষ্ঠান। এতে একঝাঁক নৃত্য শিল্পীর পরিবেশনা ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে।

দুদিনের অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন স্বাধীন মজুমদার, সাদিয়া খন্দকার, দূররে মাখনুন নবনী ও মিহির চৌধুরী। অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন শাহরিয়ার নাজিম জয়। এলইডি স্ক্রিন, সাউন্ড ও লাইটে ছিলেন তানভীর শাহীন, পলক ও বাবর খাদেমী। অফিশিয়াল ফটোগ্রাফার মিনহাজ আহম্মেদ শাম্মু ও রেহান পি আলী। পুরো আয়োজনের ইভেন্ট সাজসজ্জায় ছিল রুবান ইভেন্টস।

উৎসবে বাংলাদেশ, ভারত, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় অর্ধশত অভিনেতা, অভিনেত্রী, নির্মাতা, পরিচালক, প্রযোজক, সিনেমাটোগ্রাফার সহ কলাকুশলীরা যোগ দেন। উপস্থিত ছিলেন চিত্রনায়িকা মৌসুমী, অভিনয় শিল্পী রেখা আহমেদ, লুতফুন নাহার লতা, শিরীন বকুল, সুলতান বোখারী, খাইরুল ইসলাম পাখি, শফিক সাদেকী, বন্যা মির্জা, মিলা হোসেন, রোমানা খান, নওশীন নাহরীন মৌ ও মোজেজা আশরাফ মোনালিসা, সংগীত শিল্পী রিজিয়া পারভীন ও দিনাত জাহান মুন্নী, উপস্থাপক ফাতেমা শাহার রুমা প্রমুখ।

সুচিত্রা সেন মেমোরিয়াল ইউএসএ আয়োজিত দুদিনব্যাপী উৎসবের আয়োজকদের মধ্যে ছিলেন গোপাল সান্যাল, স্বীকৃতি বড়ুয়া, আবদুল হামিদ, জাহেদ শরীফ, সাহানা ভট্টাচার্য্য, সুখেন জোসেফ গোমেজ, শুভ রায়, পিনাকী তালুকদার, স্বাধীন মজুমদার, তাহরীনা পারভীর প্রীতি, এলি বড়ুয়া, শাহরিয়ার তৈমূর, কানিজ দীপ্তি, সাদিয়া খন্দকার, হাসানুজ্জামান সাকী এবং ঢাকা কোঅর্ডিনেটর পিয়াল হোসেন, কলকাতা কোঅর্ডিনেটর শর্মিষ্ঠা ঘোষ।

কমিউনিটি এর আরও খবর