img

শ্রীলঙ্কায় রাবণের প্রাসাদ সিগিরিয়া রক

প্রকাশিত :  ১৫:২২, ২৫ নভেম্বর ২০২৩

শ্রীলঙ্কায় রাবণের প্রাসাদ সিগিরিয়া রক

সংগ্রাম দত্ত

চারপাশ সমুদ্র দিয়ে ঘেরা শ্রীলঙ্কা । এটি ছিল রাবণের সোনার লঙ্কা। গভীর নীল এ সমুদ্রেই  সেতু তৈরি করেছিল নল ও নীল। যা পেরিয়ে লঙ্কায় পৌঁছেছিলেন রামচন্দ্র-লক্ষ্মণ। রাবণ বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেছিলেন রঘুপতি। 

ভারত মহাসাগরের একটি দ্বীপদেশ হচ্ছে শ্রীলঙ্কা যার অস্তিত্বের কথা পাওয়া যায় রামায়ণে । রামায়ণের -লঙ্কা কাণ্ডে ভারত ও শ্রী লঙ্কার মাঝে যে রাম-সেতুর কথা উল্লেখ আছে সম্প্রতি আর্কিওলজিস্টরা স্যাটেলাইট চিত্রের মাধ্যমে তার অস্তিত্বের প্রমান পেয়েছেন।

সীতা ইলিয়া নামের ছোট্ট গ্রামে এই মন্দির রয়েছে। রামচন্দ্র, সীতা, লক্ষ্মণের পাশাপাশি হনুমানের মূ্র্তি রয়েছে এখানে। মন্দিরের পাশ দিয়ে একটি নদী বয়ে গিয়েছে। জনশ্রুতি, এখানে সীতা স্নান করতেন। পাহাড়ে নাকি হনুমানের পদচিহ্ন রয়েছে।

সীতা কোটুয়া  নামেও একটি জায়গা রয়েছে। বলা হয়, এটি  রাবণের প্রধান রানি মন্দোদরির প্রাসাদে অবস্থিত। সুন্দর নদী আর জলপ্রপাত দিয়ে ঘেরা এই জায়গাতেই নাকি সীতাকে বন্দি করে রেখেছিল রাবণ। অনেকে একে সীতা ফোর্টও বলেন।

কোথেমালে বলে একটি জায়গায় ‘সীতা গোলি’ দেখা যায়। শোনা যায়, রাবণ সীতাকে অপহরণ করে নিয়ে আসার সময় সীতা গোলি (সম্ভবত চাল দিয়ে তৈরি লাড্ডু) খাবার হিসেবে দিয়েছিল। জানকী তা না খেয়ে ফেলতে ফেলতে গিয়েছিলেন যাতে রামচন্দ্র তাঁর সন্ধান পান।

 শ্রীলঙ্কায়  মুনেশ্বরম মন্দির খুবই জনপ্রিয় স্থান। কথিত আছে, রাবণকে বধ করার পর রামচন্দ্র এই মন্দিরেই মহাদেবের আরাধনা করেছিলেন। যাতে তিনি ব্রহ্মহত্যার মতো মহাপাপ থেকে মুক্তি পান। শ্রীলঙ্কার চিল্লাও থেকে ৬ কিলোমিটার উত্তরে রয়েছে মানাভারী মন্দির । শিবের নির্দেশমতো নাকি এই মন্দিরে লিঙ্গ স্থাপিত করেছিলেন রামচন্দ্র।

দোলুকান্ড সঞ্জীবনী পর্বতমালা । লক্ষ্মণকে বাঁচাতে হনুমান যখন গন্ধমাদন পর্বত নিয়ে এসেছিলেন তার পাঁচটি টুকরো লঙ্কার পাঁচটি জায়গায় পড়ে। যার মধ্যে অন্যতম শ্রীলঙ্কার কুরুনেগালা জেলার হিরিপিতিয়া গ্রামের এই দোলুকান্ড পর্বত। এখানকার উদ্ভিদের সঙ্গে নাকি ভারতীয় উদ্ভিদের মিল রয়েছে। আবার এতে অনেক ঔষধি গুণও রয়েছে বলে বিশ্বাস স্থানীয়দের। বাকি চারটি জায়গা রুমাস্সালা, রিতিদালা, থাল্লাড়ি, কাচ্চাটিভুতে আছে বলে মনে করা হয়।

সিগিরিয়া বা সিংহগিরি হল একটি প্রাচীন পাথরের দুর্গ যা শ্রীলঙ্কার মধ্য প্রদেশের ডাম্বুলা শহরের কাছে উত্তর মাতালে জেলায় অবস্থিত।

একটি বিশাল শিলা মালভূমি  আজো দাঁড়িয়ে আছে

ঐ স্থানে। যা বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য হিসাবে উল্লেখ করা হয়।  একটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে বিবেচিত। স্হানটি এখন শ্রীলঙ্কার পর্যটনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আইকনগুলির মধ্যে একটি।

ভারত মহাসাগরের একটি দ্বীপদেশ হচ্ছে শ্রীলঙ্কা যার অস্তিত্বের কথা পাওয়া যায় আমাদের রামায়ণে । রামায়ণের -লঙ্কা কাণ্ডে ভারত ও শ্রী লঙ্কার মাঝে যে রাম-সেতুর কথা উল্লেখ আছে সম্প্রতি আর্কিওলজিস্টরা স্যাটেলাইট চিত্রের মাধ্যমে তার অস্তিত্বের প্রমান পেয়েছেন।

কথিত আছে, বর্তমানে শ্রীলঙ্কার সিগিরিয়া স্থানে রাবণের একটি প্রাসাদ ছিল। যা শক্ত সোনার তৈরি এবং প্রায় ৫০ শতাব্দী আগে সম্পদের দেবতা কুবের  তৈরি করেছিলেন ।  যাতে দুর্গ, সোপান, বাগান, পুকুর, খাল এমনকী ঝর্ণাও রয়েছে। শীর্ষে প্রায় ১০০০ টি সিঁড়ি সহ এটিতে রাবণ এবং তাঁর দর্শনার্থীদের শীর্ষে উঠতে নাকি একটি  লিফটের মতো ব্যবস্থাও ছিল।

দুনুভিলা লেক  নামের একটি জায়গা শ্রীলঙ্কায় রয়েছে। এখানেই নাকি রাবণকে ব্রহ্মাস্ত্র দিয়ে বধ করেছিলেন রামচন্দ্র। ইয়ানগালায় বিশাল এক পাথর আছে। মনে করা হয়, এই জায়গাতেই রাবণের দেহ রাখা ছিল। অনেক দূর থেকে এই পাথর দেখা যায়। রাবণ জলপ্রপাতও রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে দিভুরুম্পোলা এই জায়গাতেই নাকি দেবী সীতা অগ্নিপরীক্ষা দিয়েছিলেন।

img

আজ পঁচিশে বৈশাখ, কবিগুরুর ১৬৩তম জন্মদিন

প্রকাশিত :  ০৬:১০, ০৮ মে ২০২৪

 আজ পঁচিশে বৈশাখ, বাংলা সাহিত্যের অনন্যপ্রতিভা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মদিন। ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দ অর্থাৎ ১২৬৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বকবি।

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উৎকর্ষের নায়ক তিনি। বাঙালির আত্মিক মুক্তি ও সার্বিক স্বনির্ভরতার প্রতীক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সংকটে প্রতিরোধ ও অভিযাত্রার প্রেরণাও তিনি।

কবিগুরুর জন্মদিন প্রথম বার পালিত হয়েছিল তার ২৬ বছর বয়সে, ১৮৮৭ সালে। প্রিয় ভাগনি সরলাদেবী ‘জীবনের ঝরাপাতা’য় লিখেছেন, ‘রবি মামার প্রথম জন্মদিন উৎসব আমি করাই। তখন মেজ মামা ও নতুন মামার সঙ্গে তিনি ৮৯ পার্ক স্ট্রিটে থাকেন। অতি ভোরে নিঃশব্দে বাড়ির বকুল ফুলের নিজের হাতে গাঁথা মালার সঙ্গে অন্যান্য ফুল ও একজোড়া ধুতি চাদর তাঁর পায়ের কাছে রেখে প্রণাম করে তাকে জাগিয়ে দিলাম, এরপর সেদিন বাড়িতে সবাই মিলে জন্মদিন পালন হয়েছিল।’ পরে শান্তিনিকেতনে ১৯১০ সাল থেকে নিয়মিত কবির জন্মদিন পালিত হয়ে এসেছে। ১৯৩১ সালে কবির ৭০ বছর বয়সে তো রীতিমতো আলোড়ন তুলে জন্মদিনের অনুষ্ঠান হয়েছিল। অনুষ্ঠান কমিটির সভাপতি ছিলেন জগদীশচন্দ্র বসু, মূল উদ্যোক্তা অমল হোম। এই উপলক্ষে প্রকাশিত ‘The book of Tagore Golden’-এ নিবন্ধ লিখেছিলেন দেশবিদেশের গুণী মানুষেরা।

প্রতি বছর জন্মদিন উপলক্ষে তিনি কিছু লিখতেন। সব কবিতাতেই সেই অনন্ত জিজ্ঞাসা, ‘কে আমি?’ চিরন্তন এই প্রশ্ন থেকে ‘এই আমি প্রথমজাত অমৃত’ উত্তরে ফেরার চেষ্টা। সেসব কবিতাই আমাদের দলিল দস্তাবেজ। বাংলা ১৩৪৪ সালে আলমোড়াতে বসে ‘জন্মদিন’ কবিতায় লিখছেন, ‘দৃষ্টিজালে জড়ায় ওকে হাজারখানা চোখ,/ ধ্বনির ঝড়ে বিপন্ন ঐ লোক।/ জন্মদিনের মুখর তিথি যারা ভুলেই থাকে,/ দোহাই ওগো, তাদের দলে লও এ মানুষটাকে।’

রবীন্দ্রভূমির এক ভাগ কাব্য আর তিন ভাগ গদ্য। চিন্তা ব্যাখ্যা বাস্তববোধ তার প্রতিভার বুনিয়াদ; সেই মাটি থেকে উঠে আকাশ ছুঁয়েছে তার কল্পনা, ভাবাদর্শ, বিশ্বচেতনা। জীবন ও জগদ্বেদনার আলোয় কবির চিত্ত উদ্ভাসিত হয়ে সত্যের সুন্দর ভাষ্য রচনা করেছেন সংগীতে। কত অসাধারণ সব গান রচনা করেছেন তিনি! এক আশ্চর্য ক্ষমতা রবীন্দ্রসংগীতের। দেখা গেল সাধারণ মানুষ, যার জীবন হতদরিদ্রের নিঃস্বতায় জর্জরিত নয়, একটুখানি মানবিক সুবাতাস গ্রহণের সামান্য অবকাশটুকু আছে, সে যেন রবীন্দ্রনাথের গানে ঠিকই তার মনের পুষ্টি পেয়ে যায়।

বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় বলেন, ‘বাংলার পথে, ঘাটে, হাটে, মাঠে, এমনকি সুদূর নিভৃত পল্লির ঘরে প্রাঙ্গণে তাহার গানের সুর বাজিয়া উঠিতেছে।’ কারণ তিনি জানেন, ‘রবীন্দ্রনাথ খাঁটি বাঙালি কবি। রবীন্দ্রনাথের যে সত্যকার কবি-মূর্তি, তাহা সেই বাংলার বৈষ্ণব কবিরই প্রতিচ্ছবি। ’

বাঙালির পরম আরাধ্য এই মহাত্মার জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, ‘মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম ছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধের প্রধান পাথেয়। সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘রবীন্দ্রদর্শনের প্রধান বিষয় হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। তাকে (রবীন্দ্রনাথ) জীবনমুখী শিক্ষাদর্শনের পথপ্রদর্শকও বলা যায়। তিনি শান্তি ও মানবতার কবি। বিশ্বমানবতার সংকটে তিনি সব সময় গভীর উদ্বেগ বোধ করতেন।’

কর্মসূচি :কবিগুরুর জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে ছায়ানট দুই দিনব্যাপী রবীন্দ্র-উত্সবের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠান আরম্ভ হবে আজ সন্ধ্যা ৭টায়। দুই দিনব্যাপী এই উৎসবে পরিবেশিত হবে একক ও সম্মেলক গান, নৃত্য, পাঠ-আবৃত্তি। অনুষ্ঠানে ছায়ানটের শিল্পী ছাড়াও আমন্ত্রিত শিল্পী ও দল অংশ নেবেন। উৎসব সবার জন্য উন্মুক্ত। এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর তাদের মিলনায়তনে বিকাল ৪টায় আয়োজন করেছে ‘আত্মশক্তির উদ্বোধনেই নিহিত মানবমুক্তি’ শীর্ষক সেমিনার ও আলোচনা সভা। বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে শিল্পকলা একাডেমি, বেলা ১১টায় তিন দিনের এ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এছাড়া থাকছে চ্যানেল আইয়ের ‘পর্দা জুড়ে ২৪ ঘণ্টা রবীন্দ্রমেলা’।