img

আড়াই হাজার বছর আগের ‘জাপোনিকা জাতের’ ধান

প্রকাশিত :  ০৮:২২, ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯

আড়াই হাজার বছর আগের ‘জাপোনিকা জাতের’ ধান

জনমত ডেস্ক: নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বরে জাপোনিকা জাতের ধান চাষ প্রমাণ করে, এ অঞ্চলের সঙ্গে পূর্ব এশিয়ার মানুষের সরাসরি যোগাযোগ ছিল। এত দিন ধরে বাংলা অঞ্চলে ধান চাষের যেসব প্রমাণ পাওয়া গেছে, তা আদি ‘ইন্ডিকা’ জাতের। এবার নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বরে আড়াই হাজার বছর আগের আরেকটি জাতের ধান চাষের প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকেরা। এ ধান ‘জাপোনিকা জাতের’। জাপান, থাইল্যান্ড, চীনে এই জাতের ধান এখনো চাষ হয়। কিছুটা আঠালো এই ধানের ভাত পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় জনপ্রিয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) পাঁচ গবেষকের যৌথ গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। গবেষকেরা বলছেন, উয়ারী-বটেশ্বরে জাপোনিকা জাতের ধান চাষ প্রমাণ করে, আড়াই থেকে তিন হাজার বছর আগে থেকে এই অঞ্চলের সঙ্গে পূর্ব এশিয়ার মানুষের সরাসরি যোগাযোগ ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরীক্ষাগারে উয়ারী-বটেশ্বরে পাওয়া চার ধরনের শস্য—ধান, সরিষা, তিল ও তুলার নমুনার বয়স নিরূপণ করা হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান, সহকারী অধ্যাপক মিজানুর রহমান এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ক্রিস্টিনা কোবো ক্যাসটিল্লা, চারলিটি মার্ফি ও ডোরিয়ান কিউ ফুলার যৌথভাবে এ গবেষণা করেছেন।

অধ্যাপক মিজানুর বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ধান চাষের প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে উচ্চতর গবেষণা করছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গবেষণায় ধান ও অন্যান্য শস্যবীজের পাশাপাশি পুঁতি ও ধান রাখার বেশ কয়েকটি পাত্রের নমুনা পাওয়া গেছে। এসব পাত্রের নকশা আর ধরনেও পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে মিল রয়েছে। একই ধরনের পাত্র ও পুঁতি সে সময়ে থাইল্যান্ডে ব্যবহৃত হতো। আমরা মনে করছি, থাইল্যান্ড থেকে পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের কিছু মানুষ উয়ারী-বটেশ্বর এলাকায় বসবাসের জন্য এসেছিল। মূলত তাদের নিজেদের খাওয়ার জন্য এসব ধান (জাপোনিকা) চাষ করত। কারণ, বাংলা অঞ্চলে ধান চাষের ইতিহাস খুঁজে দেখা গেছে, এখানে মূলত লম্বা আকৃতির ও ডুবো পানিতে হয়, এমন জাতের আউশ ও আমন ধানের চাষ হতো। প্রায় ১০ বছর ধরে চলা এ গবেষণা আর্কিওলজিক্যাল অ্যান্ড অ্যানথ্রোপলজিক্যাল সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশের জন্য গৃহীত হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক মিজানুর।

প্রবীণ ধান গবেষক তুলসী দাসের বাংলাদেশে ধান গ্রন্থে বলা হয়েছে, মহাস্থানগড়ের ব্রাহ্মীলিপি অনুযায়ী ২ হাজার ৩০০ বছর আগে মৌর্য শাসনামলে সম্রাটের গুদামে চাল রাখার কথা বলা আছে। রাজ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়ায় সেখান থেকে জনগণকে চাল দেওয়ার জন্য সম্রাটের দপ্তর থেকে নির্দেশ দেওয়ার কথারউল্লেখ আছে।

নতুন গবেষণাটির গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সব সময় বলি, বাঙালির ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো। কিন্তু উয়ারী-বটেশ্বরে ধানসহ অন্যান্য শস্যের যেসব নমুনা পাওয়া গেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, সেখানে পরিকল্পিত শস্য চাষের ইতিহাস কমপক্ষে আড়াই থেকে তিন হাজার বছরের পুরোনো। এরও ৩০০ থেকে ৫০০ বছর আগে থেকে এখানে ধান চাষ হয়ে থাকতে পারে। এখানে আমরা তুলা চাষের যে প্রমাণ পেয়েছি, তার সঙ্গে বাংলার হারিয়ে যাওয়া মসলিনের সম্পর্ক আছে বলে মনে হচ্ছে।’

বাংলাদেশে ধান গ্রন্থে এই অঞ্চলে আউশ ধানের চাষের বয়সকাল বলা হয়েছে কয়েক হাজার বছর। তবে এই বয়সকাল ধরা হয়েছে মূলত প্রাচীন রাজদরবারের নানা নথির ভিত্তিতে। এর মধ্যে ২ হাজার ৭০০ বছর আগে পশ্চিমবঙ্গে মাটির পাত্র তৈরির সময় ধানের তুষ ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। এর মানে হচ্ছে, সেখানে নিয়মিত ধান চাষ হতো। তবে এসব ধানের বিষয়ে প্রত্নতাত্ত্বিক কোনো প্রমাণ নেই।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক গবেষণা পরিচালক ও ধান গবেষক তুলসী দাস প্রথম আলোকে বলেন, বাংলা অঞ্চলে জাপোনিকা ধানের চাষ আগে কোথাও হয়েছে কি না, তার কোনো সঠিক তথ্য-উপাত্ত নেই। আউশ ধান বাদে উঁচু জমিতে ধান চাষ হতো একমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রামে। সেখানে জুম পদ্ধতিতে যেসব ধানের চাষ হতো এবং হয়, তা অবশ্য জাপোনিকা জাতের। সেগুলো পূর্ব এশিয়া থেকে আসতে পারে। তবে উয়ারী-বটেশ্বরে জাপোনিকা ধানের বীজ পাওয়ার বিষয়টি একটি নতুন ঘটনা।

বাংলাদেশে বর্তমানে বছরে প্রায় পৌনে চার কোটি মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়, যার ৯৩ শতাংশই উচ্চ ফলনশীল জাতের। গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রিরি) গবেষকেরা এসব জাত উদ্ভাবন করেছেন। ধান গবেষণাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ইরি) তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে প্রাচীনতম ধান চাষের প্রমাণ পাওয়া যায় চীনে। সেখানে খ্রিষ্টপূর্ব ১২ হাজার থেকে ১১ হাজার বছর অব্দে ধান চাষ হতো।

এ ছাড়া কোরিয়ায় ৮ থেকে ১০ হাজার বছর আগে এবং ভারতের উত্তর প্রদেশ ও বিহারে ৭ থেকে ৯ হাজার বছর আগে ধান চাষের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই সময়ে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বেশির ভাগ অংশ ছিল সমুদ্রের নিচে। এই অঞ্চলের ভূখণ্ড তৈরি হওয়ার পর অন্যান্য এলাকা থেকে এখানে মানুষ বসতি শুরু করার পর ধান চাষ শুরু হয়।

img

মিসড কলেই গায়েব হতে পারে ব্যাংকের টাকা

প্রকাশিত :  ১১:২৪, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

মিসড কলেই গায়েব হতে পারে ব্যাংকের টাকা। নানাধর্মী অনলাইন স্ক্যামারের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। এতদিন আপনি নিশ্চয়ই ওটিপি শেয়ার করে বা কোনো অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে স্ক্যামের কথা শুনেছেন। তবে আজকাল আবার স্ক্যামাররা সিম সোয়্যাপ করেও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খালি করে ফেলছে। গত মাসের শুরুতেই নর্থ দিল্লির একজন আইনজীবী সিম সোয়্যাপ স্ক্যামারের শিকার হয়েছেন। আননোন নম্বর থেকে তিনবার মিসডকল পেতেই তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খালি হয়ে যায়।

তিনি জানান, অপরিচিত একটি ফোন নম্বর থেকে পরপর তিনটি মিসড কল আসে। তবে তিনি রিটার্ন ফোন করেননি। তারপরই ওই নারীর ফোনে একটি মেসেজ আসে। সেখানে লেখা অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। তবে চিন্তার বিষয় হলো তিনি কখনও কারো সঙ্গে ওটিপি বা অন্য কোনো ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করেননি। কিন্তু তারপরেও তার অ্যাকাউন্ট থেকে মোটা অঙ্কের টাকা গায়েব।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ধরনের প্রতারণার নাম ‘সিম সোয়্যাপ স্ক্যাম’। ফোনে মিসড কল আসা এবং পরবর্তীতে কোনো একবার সেই কল রিসিভ করলেই এই প্রতারণা কাজ করে। চক্রটি এভাবে আপনার ডুপ্লিকেট সিমের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং তা দিয়ে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে শুরু করে অন্য অনেক কিছুই ব্যবহার করে। কীভাবে এই প্রতারণা চক্র কাজ করে, কীভাবেই বা আপনি সুরক্ষিত থাকবেন, চলুন জেনে নেওয়া যাক করণীয়গুলো-

এই প্রতারণা চক্র কাজ করে যেভাবে ?

এই প্রতারণা চক্র কীভাবে কাজ করে, তা জানতে হলে প্রথমে বুঝতে হবে ওই নারীর সাথে ঠিক কী ঘটেছিল? ওই আইনজীবীর অভিযোগ, গত ১৮ অক্টোবর তার সাথে এ ঘটনা ঘটেছিল। স্থানীয় প্রশাসনকে তিনি জানান, কয়েক লাখ টাকা তার অ্যাকাউন্ট থেকে মুহূর্তের মধ্যেই গায়েব হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, মোট তিনবার একই নম্বর থেকে তার ফোনে কল আসে। পরবর্তীতে তিনি যখন অন্য একটি নম্বর থেকে কল ব্যাক করেন, তখন তাকে বলা হয় এটি কুরিয়ার সার্ভিসের ডেলিভারির নম্বর। ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, তিনি অভিযুক্তের সাথে শুধু তার বাড়ির ঠিকানা শেয়ার করেছিলেন। তিনি মনে করেছিলেন, বন্ধু কোনো উপহার পাঠিয়েছে এবং তিনি পেয়েও গিয়েছেন। তারপরেই তার ব্যাংক থেকে একটি মেসেজ আসে, সেখানে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

প্রশাসনের কর্মকর্তা জানান, তদন্তে ওই নারী ফোন থেকে কিছু অস্বাভাবিক ব্রাউজিং হিস্ট্রি লক্ষ্য করা যায়, যা তিনি কখনও করেননি। তিনি কিছু ফিশিং লিঙ্ক এবং কিছু UPI রেজিস্ট্রেশন টেক্স পেয়েছিলেন বলে ওই অফিসার উল্লেখ করেছেন। এখান থেকে একটি বিষয় বোঝা যায়, সিমটি দিয়ে প্রতারকরা ওই নারীর ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়েই যাবতীয় কাজ করে। সেই তথ্য তারা কারো সহযোগিতায় মোবাইল নেটওয়ার্কে ব্যবহার করে ডুপ্লিকেট সিমের অ্যাক্সেস পেতে পারে।

সুরক্ষিত থাকবেন যেভাবে-

১. কখনও আপনার ব্যক্তিগত তথ্য কারো সাথে শেয়ার করবেন না।

২.বিভিন্ন ব্যক্তিগত নথি ও তার নম্বর অনলাইনে কোনো প্ল্যাটফর্মেই শেয়ার করবেন না।

৩.আপনার সিম কার্ড কাজ না করলে টেলিকম অপারেটরকে বিষয়টি জানান।

৪. ওটিপি কখনো ব্যাংকের কর্মী, ব্যাংকিং এজেন্টের সাথে ফোনে বা অনলাইনে শেয়ার করবেন না।