বিবিসি’র প্রতিবেদন

img

ব্রিটেনে করোনায় মৃতের সংখ্যা যা বলা হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি?

প্রকাশিত :  ২০:২৫, ১৩ মে ২০২০
সর্বশেষ আপডেট: ২০:৩১, ১৩ মে ২০২০

ব্রিটেনে করোনায় মৃতের সংখ্যা যা বলা হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি?

জনমত ডেস্ক: প্রতিদিন ব্রিটেনে কোভিড১৯-এ মৃতের যে পরিসংখ্যান দেয়া হচ্ছে জানা যাচ্ছে প্রকৃত মৃতের সংখ্যা এর প্রায় দ্বিগুণ। পয়লা মে তারিখ পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকার মৃতের যে পরিসংখ্যান দিয়েছে তাতে বলা হচ্ছে ওই তারিখ পর্যন্ত দেশটিতে করোনাভাইরাসে মারা গেছে ২৮,০০০ মানুষ।

কিন্তু ওই তারিখ পর্যন্ত সরকারিভাবে নথিভুক্ত মৃতের তালিকায় মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। নথিভুক্তদের মধ্যে ৩৬,০০০ য়ের ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ লেখা হয়েছে কোভিড ১৯।

পরিসংখ্যানবিদরা যে পদ্ধতিতে গণনা করেন, সে অনুযায়ী ওই সময়ে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে পরিসংখ্যান তত্ত্বের হিসাবে আন্দাজ করা হয়েছে, তাতে এই সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রত্যেকটা গণনা পদ্ধতিই সরকারি সংখ্যাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

সরকারি পরিসংখ্যান বিশ্বাসযোগ্য নয়?

প্রতিদিন যুক্তরাজ্যের সর্বত্র করোনাভাইরাসে মৃত্যুর যেসব খবর জানা যাচ্ছে সেগুলো তুলে ধরছে সরকারের স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় (ডিপার্টমেন্ট ফর হেলথ অ্যান্ড সোসাল কেয়ার)।

এই পরিসংখ্যানই প্রতিদিন সরকারের ব্রিফিংয়ে পড়ে শোনানো হয়। আর এই পরিসংখ্যানই পাওয়া যায় মৃত্যুর তুলনামূলক চিত্র আন্তর্জাতিক যেসব সাইটে প্রকাশ করা হয় সেখানে।




করোনাভাইরাস সম্পর্কিত সরকারের পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা।

কিন্তু এই তালিকায় শুধু সেইসব ব্যক্তির মৃত্যুর পরিসংখ্যান দেয়া হচ্ছে যারা করোনাভাইরাস পরীক্ষায় পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।


যেসব বিজ্ঞানী মহামারির বিস্তার সঠিকভাবে নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে একটা প্যাটার্ন পর্যবেক্ষণ করছেন তাদের জন্য এই পরিসংখ্যান অর্থবহ।


কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়াল স্ট্যাটিসটিকাল সোসাইটির সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক সিলভিয়া রিচার্ডসন বলছেন সংক্রমণ বৃদ্ধির হার এবং সংক্রমণের এই হার শীর্ষ পর্যায়ে বা চূড়ায় কতদিন থাকছে তা দেখার জন্য এই পদ্ধতি কার্যকর।

কিন্তু সার্বিকভাবে মৃত্যুর সংখ্যা নির্ধারণের জন্য এই গণনা পদ্ধতি দুর্বল, কারণ যাদের কখনও পরীক্ষা করা হয়নি, কিন্তু কোভিডে মারা গেছে, তারা এই তালিকার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।

বর্তমানে যুক্তরাজ্যে কোভিড১৯-এর পরীক্ষা মূলত সীমিত রয়েছে হাসপাতালগুলোতে। কাজেই হাসপাতালের বাইরে যারা আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে যাদের পরীক্ষাই হয়নি তাদের একটা বড় সংখ্যা এই পরিসংখ্যানে আসেইনি।

এছাড়াও বিভিন্ন দেশে মৃত্যুর হিসাবের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংজ্ঞা ব্যবহার করা হচ্ছে।

যেমন, কয়েক সপ্তাহ আগে পর্যন্ত ইংল্যান্ডে হাসপাতালের বাইরে যাদের কোভিডে মৃত্যু হয়েছে তাদের সংখ্যা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছিল না। কিন্তু স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং উত্তর আর্য়াল্যান্ড তাদের অন্তর্ভুক্ত করছিল।

ওদিকে, বেলজিয়াম তাদের প্রতিদিনের পরিসংখ্যানে সন্দেহভাজন করোনা রোগীদেরও অন্তর্ভুক্ত করছে। ফলে অন্যান্য দেশের তুলনায় বেলজিয়ামে আক্রান্তের সংখ্যা খুবই বেশি।

আর একারণে দেশগুলোর মধ্যে তুলনা টানা খুবই কঠিন।

মাপকাঠির ভিত্তি একই না হওয়ায় এই তুলনা সমতার ভিত্তিতে হয় না। আর তাই বিজ্ঞানীরাও প্রতিদিনের পরিসংখ্যানে ছোটখাট পার্থক্যকে খুব বেশি গুরুত্ব না দেবার আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা বলছেন এর থেকে কোন উপসংহার খোঁজার চেষ্টা করাটা ভুল হবে।

যেহেতু প্রতিটি দেশের গণনা পদ্ধতি আলাদা, তাই পরিসংখ্যানবিদরা একটা সহজ সংজ্ঞার ভিত্তিতে হিসাব করার কথা বলছেন।


সব মৃত্যুকে আমলে নেয়া

যদি একটা দেশে প্রতিটি মৃত্যুর সংখ্যা আমলে নেয়া হয়, কারণ যাই হোক না কেন, তাহলে সব মৃত্যুর একটা হিসাব পাওয়া যাবে। এমনকী যেসব মৃত্যুর কারণ গবেষণাগারে পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়নি, যেসব মৃত্যুর কারণ সঠিকভাবে নিরূপণ করা যায়নি এবং যেসব মৃত্যু ভাইরাসের কারণে ঘটেছে।

প্রথম দিকে ব্রিটেনে মৃতের পরিসংখ্যানে হাসপাতালের বাইরে কোভিডে মৃত্যুির পরিসংখ্যান যোগ না করার অভিযোগ ওঠে।

অবশ্যই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এবং দুর্ঘটনায় যারা মারা গেছে তাদের পরিসংখ্যান তো থাকবেই।



কিন্তু নথিভুক্ত দৈনিক মৃত্যুর একটা প্যাটার্ন পরিসংখ্যানবিদদের জানা আছে।

ব্রিটেনে এই প্যাটার্নে বড় ধরনের একটা পরিবর্তন এসেছে মার্চের শেষ থেকে। তার আগের সপ্তাহের তুলনায় এই সংখ্যা এক লাফে অনেক বেড়েছে।

বছরের এই সময় নাগাদ মৃত্যুর হারের যে রেকর্ড বছরের পর বছর নথিভুক্ত হয়েছে, তার থেকেও এই সময়ে কত মানুষের মৃত্যু হতে পারে তার একটা আন্দাজ আছে। সেই অনুমান থেকে এটাও পরিস্কার যে হঠাৎ খুব বেশি বেড়ে যাওয়ার পর মৃত্যুর সংখ্যা কমে এলেও বছরের এ সময়ের অতীত রেকর্ডের নিরীখে তা এখনও অনেক বেশি।

আর এটাই তাদের হিসাবে "অতিরিক্ত" মৃত্যুর সংখ্যা। সাধারণত এ সময়ে যত মানুষ মারা যাবে বলে ধারণা আর যত মানুষ প্রকৃতপক্ষে মারা যাচ্ছে এই সংখ্যা সেই 'বাড়তি'র হিসাব।

তাহলে এর অর্থ কী দাঁড়াচ্ছে?

মহামারি শুরু হবার পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে এই 'বাড়তি' মৃত্যুর সংখ্যা যদি যোগ করা হয় তাহলে এই সংখ্যা পয়লা মে-তে দাঁড়াবে ৫০ হাজারের বেশি। এই সংখ্যা মৃত্যুর সার্টিফিকেটে কারণ হিসাবে কোভিড-১৯ যেসব ক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয়েছে তার থেকে বেশি, এমনকী প্রতিদিন ব্রিটিশ সরকার মৃত্যুর যে পরিসংখ্যান দিচ্ছে তার থেকেও বেশি।

এই অতিরিক্ত মৃতদের পরিসংখ্যানে প্রায় এক তৃতীয়াংশের ক্ষেত্রে ডেথ সার্টিফিকেটে কোভিড-১৯ এর উল্লেখ আছে। সেটা আমলে নিলেও পয়লা মে তারিখে এই সংখ্যা ৩৬ হাজারের কিছু বেশি আসে।

তারপরেও প্রায় ১৪ হাজার মৃত্যুর হিসাব রয়েছে, যেখানে মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ধারণ করা না গেলেও করোনাভাইরাসই প্রত্যক্ষভাবে এসব মৃত্যুর কারণ, অথবা সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে করোনাভাইরাসেই তাদের মৃত্যু হয়েছে।

এর থেকে করোনাভাইরাসের কারণে ব্রিটেনকে মানুষের জীবনের ক্ষেত্রে কত বড় মূল্য দিতে হয়েছে তার একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।

এর থেকে অন্য দেশের সঙ্গে তুলনার ক্ষেত্রেও একটা স্পষ্ট ধারণা করা সম্ভব হবে। কারণ যুক্তরাজ্যে কোন মৃত্যুকে আমলে নেয়া হচ্ছে বা হচ্ছে না সেই চুলচেরা হিসাব এই পদ্ধতিতে করতে হবে না।

তুলনামূলক হিসাব

তারপরেও "এই পরিসংখ্যানের ভিত্তি সম্পর্কে একটা ধারণার প্রয়োজন আছে", বলেছেন অধ্যাপক রিচার্ডসন। যুক্তরাজ্যে মৃত্যুর পরিসংখ্যান দেয়া হয় সাপ্তাহিক ভিত্তিতে। সব দেশে সেটা করা হয় না।

কোন কোন দেশ তাদের মৃত্যুর হিসাব প্রকাশ করে প্রতিদিন, কেউ দেয় প্রতি মাসের হিসাব, কেউ দেয় তিন মাস পরপর। ফলে এখানে তুলনার ভিত্তিটা সঠিক হবে না।

এছাড়াও করোনাভাইরাসের ঝুঁকির কারণ একেক দেশে একেক রকম। যেমন ইতালিতে 'অতিরিক্ত' মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হবার সম্ভাবনা বেশি, কারণ সেখানে মানুষের গড় বয়স ৪৭। আয়ারল্যান্ডে মানুষের গড় বয়স ৪০।

এর ওপর আছে কোন্ দেশে কত দ্রুত লকডাউন দেয়া হচ্ছে, কো‌ন্ দেশে তা কত কঠোরভাবে কার্যকর করা হচ্ছে, কোন্ দেশে পরীক্ষা হচ্ছে বেশি, কোন্ দেশে ট্র্যাকিং ব্যবস্থা কতটা জোরদার, কোন্ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কতটা সামাল দিতে সক্ষম এধরনের বেশি কিছু মানদণ্ড।

অধ্যাপক রিচার্ডসন বলছেন এসব সম্পর্কে বাড়তি ও নির্ভরযোগ্য তথ্য ছাড়া তুলনামূলক হিসাব কখনই সঠিক হবে না। শুধু যদি বলা হয় সবচেয়ে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত কোন একটি দেশ সেটা যথেষ্ট নয়, এর থেকে বলা সম্ভব নয় কেন দেশটি মারাত্মকভাবে প্রভাবিত।

তিনি বলছেন, এই মহামারি শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন্ দেশে এই মহামারি সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে তার স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে না।

তবে তিনি বলছেন তার মানে এই নয় যে বিভিন্ন দেশে সংক্রমণের চেহারা ও চরিত্র তুলনা করা বন্ধ রাখতে হবে। কিন্ত তার মতে: "আরও বেশি পরিসংখ্যান আমাদের প্রয়োজন এবং এসব পরিসংখ্যান বিশ্লেষণের জন্য পর্যাপ্ত জ্ঞানের দরকার।"  তথ্য সূত্র: বিবিসি

img

করোনায় আক্রান্ত ডিবিপ্রধান হারুন

প্রকাশিত :  ০৪:০৮, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ০৭:৩৬, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে তিনি এ তথ্য নিজেই নিশ্চিত করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজে গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ লিখেছেন, হঠাৎ করে করোনা আক্রান্ত হলাম। সুস্থতার জন্য দোয়া চাই।

ডিবি সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসার পরে বর্তমানে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ।

২০২২ সালের ১৩ জুলাই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান হারুন অর রশীদ।

২০২১ সালের মে মাসে যুগ্ম পুলিশ কমিশনার হিসেবে গোয়েন্দা বিভাগে পদায়ন হয় তার। এর আগে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার এবং নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করেন।