ডেঙ্গু জ্বরের কারণ ও প্রতিকার

প্রকাশিত :  ০৮:৪৫, ২৮ অক্টোবর ২০১৮

ডেঙ্গু জ্বরের কারণ ও প্রতিকার

ডেঙ্গু জ্বর হলো ডেঙ্গু নামক এক ধরনের ভাইরাস দ্বারা মানবদেহে সৃষ্ট জ্বর রোগ। সারা পৃথিবীতে ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি প্রকরণ রয়েছে। সাধারণত প্রতি বছর জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আমাদের দেশে এই রোগ মহামারী আকার ধারণ করে। লিখেছেন ডা: মো: কফিল উদ্দিন চৌধুরী
আমাদের দেশে প্রধানত এডিস এজিপ্টাই ও এডিস এলবোপিক্টাস প্রজাতির মশকী-ই এই রোগের প্রধান বাহক হিসেবে কাজ করে। উপরিউক্ত প্রজাতির মশকীর দংশনেই এই ভাইরাস কোনো অসুস্থ ব্যক্তির দেহ থেকে অন্য কোনো সুস্থ ব্যক্তির রক্তে প্রবেশ করে রোগের সৃষ্টি করে। সেই সাথে মানবসমাজে এই রোগের প্রকোপ ব্যাপক আকার ধারণ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপে দেখা যায় প্রতি বছর পৃথিবীতে গড়ে প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। আর এই রোগে বার্ষিক মৃত্যুর পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার। নিরক্ষীয় ও উপনিরক্ষীয় অঞ্চলের প্রায় ১০০টি দেশে এই রোগ স্থানিক রোগ হিসেবে স্বীকৃত। উপরিউক্ত অঞ্চলদ্বয়ের প্রায় ১.৭ বিলিয়ন মানুষ এই রোগের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। আমাদের দেশে সর্বপ্রথম ১৯৬৪ সালে ডেঙ্গু জ্বরের কেইস রিপোর্ট হয়। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হলো ডেঙ্গু আমাদের দেশে সবচেয়ে দ্রুত বিস্তার লাভ করা সংক্রামক রোগ হলেও এখনো দেশব্যাপী এর প্রকোপ নিরূপণে বিশদ কোনো জরিপ পরিচালিত হয়নি। স্বল্প পরিসরে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বড় বড় শহর, হাসপাতাল-ক্লিনিকে কিছু খণ্ডকালীন জরিপ পরিচালিত হয়েছে মাত্র। তেমনি ২০১৭ সালে রাজধানী শহরের হাসপাতালকেন্দ্রিক এক জরিপে দেখা যায়, ওই বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজার ৫৮৮ জন। আর এই রোগে মৃতের সংখ্যা পাঁচজন। কিন্তু প্রকৃত হিসাবে দেশব্যাপী এই সংখ্যা আরো কয়েক গুণ বেশি হবে।

রোগের রোগতত্ত্ব
ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণু যখন মানবদেহের রক্তে প্রবেশ করে তখন এর বিরুদ্ধে মানবদেহে উৎপন্ন হয় এন্টিবডি নামক এক ধরনের প্রোটিন। অতঃপর ওই প্রোটিনের সাথে রোগের নিয়ন্ত্রণকল্পে জীবাণুর এক শক্ত বন্ধন সৃষ্টি হয়। সবশেষে এই প্রোটিন-জীবাণুর মিশ্রণ জমা হতে থাকে রক্তনালীর প্রাচীর ও রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়ক প্ল্যাটিলেট তথা অনুচক্রিকার গায়ে। সেই সাথে মানবরক্তে রোগ প্রতিরোধে সহায়ক টি-লিম্ফোসাইট নামক শ্বেত রক্তকণিকা উদ্দীপিত হয়ে মানবরক্তে নিঃসৃত করে নানা ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ। পরিশেষে বেড়ে যায় মানবরক্ত সংবহনতন্ত্রের ক্যাপিলারি তথা রক্ত জালকে অভিগম্যতা। অতিরিক্ত মাত্রায় রক্তরস তথা প্লাজমা রক্তনালী থেকে বের হয়ে মানব কোষ কলায় আশ্রয় নেয়। পানি জমতে শুরু করে রোগীর বুকে ও পেটে। বেড়ে যায় রক্তের ঘনত্ব তথা হেমাটোক্রিটের মাত্রা। কমতে শুরু করে রক্তে প্রোটিন ও সোডিয়ামের পরিমাণ। সেই সাথে কমতে শুরু করে রক্তে অনুচক্রিকার পরিমাণ ও কর্মক্ষমতা। দেখা দেয় মানবদেহের নানা জায়গা থেকে মামুলি থেকে তীব্র রক্তক্ষরণের প্রবণতা।
রোগের লক্ষণ
লক্ষণ ও রোগতত্ত্বের ভিত্তিতে মানব ডেঙ্গু জ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথাÑ
সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর ও রক্তপাতসহ ডেঙ্গু জ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর
হঠাৎ তীব্র জ্বর, যা সাধারণত দ্ইু থেকে সাত দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়,
জ্বরের সময় পুরো গায়ে কিংবা গায়ের অংশ বিশেষে লাল-লাল ফুসকুড়ি,
তীব্র মাথা ব্যথা,
চোখের পেছনে ব্যথা,
মাংসপেশি, অস্থিসন্ধি কিংবা কোমরে ব্যথা,
বিরল ক্ষেত্রে জ্বরের পর্যায়ে রোগীর দেহের নানা জায়গায় রক্তক্ষরণ।
প্রভৃতি এক বা একাধিক লক্ষণ নিয়ে মানবদেহে এই রোগ দেখা দিতে পারে।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গু জ্বর
এ ক্ষেত্রে রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সাধারণ ডেঙ্গু জ্বরের মতোই। তবে জ্বর শেষে পরবর্তী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রোগীর দেহের চামড়ার নিচ, নাক, চোখ, মুখ, যোনিপথ, বমি, প্রস্রাব-পায়খানা বা কাশির সাথে স্বল্প থেকে তীব্র রক্তক্ষরণ হতে পারে,
রোগীর রক্তনালী থেকে প্লাজমা লিকেজের কারণে বুকে ও পেটে পানি জমতে পারে,
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে রক্তচাপ কমে গিয়ে রোগী শকে চলে যেতে পারে।
সাধারণত জ্বর শেষ হওয়ার পরবর্তী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আক্রান্ত রোগীদের এসব লক্ষণ দেখা দেয় বলে ওই সময়কালকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ওই রোগে আক্রান্ত রোগীর ক্রাইসিস পিরিয়ড তথা সঙ্কটকাল বলা হয়। এ ছাড়া সাধারণ কিংবা রক্তপাতসহ ডেঙ্গু জ্বরে রোগের জটিল পর্যায়ে রোগীর দেহের এক বা একাধিক অঙ্গ যেমনÑ লিভার, কিডনি, স্নায়ুতন্ত্র, ফুসফুস প্রভৃতির অঙ্গে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। এমনকি আক্রান্ত অঙ্গের কর্মক্ষমতা হঠাৎ করে লুপ্ত হতে পারে।
কাদের ডেঙ্গু জ্বরের জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি?
নবজাতক
প্রৌঢ় ব্যক্তি
স্থূল স্বাস্থ্যের অধিকারী
গর্ভবতী নারী
ঋতুবতী নারী
পেপটিক আলসারে আক্রান্ত ব্যক্তি
থ্যালাসেমিয়াসহ অন্যান্য রক্তরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি
হৃদযন্ত্রের জন্মগত ত্রুটিতে আক্রান্ত ব্যক্তি
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগী, দীর্ঘমেয়াদে যকৃৎ ও কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি
এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি
দীর্ঘমেয়াদে স্টেরয়েড ও ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহারকারী
এই রোগের নানা জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি।
রোগ নির্ণয়
জ্বরের কারণ তথা ভাইরাসের উপস্থিতি নিরূপণকল্পে পরীক্ষাগুলো :
মানব রক্তে ভাইরাসের দেহস্থ ঘঝ১ এন্টিজেন নামক দেহাণুর উপস্থিতি
ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানব রক্তে উৎপন্ন এন্টিবডির উপস্থিতি
আক্রান্ত মানব কোষ-কলা কিংবা রক্তে ওই জীবাণু কিংবা উহার দেহাংশ তথা এন্টিজেনের উপস্থিতি
কিংবা চঈজ পরীক্ষার মাধ্যমে ওই জীবাণুর নিউক্লিক এসিডের বিন্যাস নির্ণয়
প্রভৃতি এক বা একাধিক পরীক্ষার মাধ্যমে মানব দেহে এই রোগের জীবাণুর উপস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
এ ছাড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক রোগ নির্ণয়ে সহায়ক এবং রোগের জটিলতা নিরূপণকল্পে নানা ল্যাবরেটরি পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশে ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, টনসিলাইটিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ল্যাপ্টোস্পাইরোসিস, মেনিনজাইটিস, চিকুনগুনিয়া জ্বর, টাইফাস বা সান্নিপাতিক জ্বর প্রভৃতি রোগ একই উপসর্গ নিয়ে মানব দেহে দেখা দিতে পারে। প্রয়োজনে একই রূপে ভিন্ন ব্যাধির সম্ভাবনা দূরীকরণকল্পে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক নানা ল্যাবরেটরি পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।
চিকিৎসা
এই রোগের চিকিৎসা মূলত উপসর্গভিত্তিক। কারণ এই রোগের ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ওষুধ এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাড়িতে রেখেই এই রোগের নিম্নলিখিত চিকিৎসা দেয়া যেতে পারে।
এই রোগের চিকিৎসায় পান করতে হবে পানিসহ প্রচুর তরল খাবার। তরল খাবার হিসেবে খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি, ফলের রস, স্যুপ প্রভৃতি দেয়া যেতে পারে। অন্ততপক্ষে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লিটার তরল খাবার খেতে হতে পারে। এই রোগের চিকিৎসায় তরল খাবার হিসেবে কোল্ড ড্রিংক পরিহার করাই উত্তম।
সেই সাথে নিশ্চিত করতে হবে উপযুক্ত শারীরিক বিশ্রাম।
জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবন করা যেতে পারে।
সেই সাথে প্রয়োজন জ্বরের সময় দ্রুত দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক আনার লক্ষ্যে রোগীর মাথায় ঠাণ্ডা জলপট্টি কিংবা সারা দেহ ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুছে দেয়া যেতে পারে।
বমির জন্য প্রয়োজন হতে পারে বমিনাশক ওষুধ।
প্রয়োজনে রোগের জটিল পর্যায়ে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে। এই অবস্থায় প্রধানত রোগীকে শিরাপথে প্রয়োজনীয় স্যালাইন দেয়া যেতে পারে। সেই সাথে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের সময় প্রয়োজনে রোগীর শরীরে রক্ত দেয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে তীব্র রক্তক্ষরণের সময় রোগীর রক্তে অনুচক্রিকার মাত্রা যখন প্রতি কিউবিক মিলি. এ দশ হাজারের কম কিংবা রক্তপাত হলে অনুচক্রিকার মাত্রা কমে প্রতি কিউবিক মিলি. এ পঞ্চাশ হাজার বা তার কম হলেও রোগীর শিরাপথে অনুচক্রিকা তথা প্লাটিলেট ট্রান্সফিউশনের প্রয়োজন হতে পারে।
রোগের জটিল পর্যায়ে রোগীর এক বা একাধিক অঙ্গ যখন অকার্যকর হয়ে পড়ে তখন এসব রোগীকে আইসিসিইউতে রেখে নিবিড় চিকিৎসা দেয়া হয়।
কখন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে
বাড়িতে যথাযথ চিকিৎসা সত্ত্বেও রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি,
রোগী মুখে খাদ্য ও পানীয় খেতে না পারলে,
তীব্র পেট ব্যথা, তীব্র বমি,
হাত-পা ক্রমাগতভাবে ঠাণ্ডা ও নিস্তেজ হয়ে আসা,
তীব্র অবসাদ কিংবা রোগীর আচরণের অস্বাভাবিক পরিবর্তন,
রোগীর শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্তক্ষরণ,
ঋতুবতী মহিলার মাসিকের সময় অস্বাভাবিকভাবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ,
বিগত ৬ ঘণ্টা ধরে আক্রান্ত রোগীর প্রস্রাব না হওয়া,
রোগীর হাত-পা নীল হয়ে আসা,
রোগীর রক্তচাপ অস্বাভাবিক কমে গিয়ে শকে চলে যাওয়া,
শরীরের গতি অতি দ্রুত ও ক্ষীণ হয়ে আসা,
ক্যাপিলারি রিফিল টাইম ৩ সেকেণ্ডের বেশি হওয়া,
রোগীর রক্তে অনুচক্রিকার মাত্রা প্রতি কিউবিক মিলি-এ এক লাখের কম হওয়া,
রোগীর রক্তের ঘনত্ব তথা হেমাটোক্রিটের মাত্রা চল্লিশের বেশি হওয়া,
রোগীর বুক ও পেটে পানি জমা,
রোগীর যকৃতের আকার ২ সেমি.-এর বেশি বৃদ্ধি পাওয়া।
ডেঙ্গুর চিকিৎসায় যা করবেন না
কখনো ডেঙ্গু জ্বরে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত এসপিরিন বা ব্যথানাশক ওষুধ সেবন,
রক্তক্ষরণের প্রবণতা দেখা না যাওয়া পর্যন্ত শিরাপথে স্যালাইন দেয়া,
রক্তক্ষরণ তীব্র না হলে কিংবা রক্তের হেমাটোক্রিট অতিরিক্ত মাত্রায় কমে না গেলে রোগীকে রক্ত দেয়া,
রোগের চিকিৎসায় অযাচিতভাবে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের ব্যবহার,
রোগের চিকিৎসার প্রয়োজন না হলে এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার,
শরীরের শিরাপথে স্যালাইন প্রবাহের গতি অপ্রয়োজনে অতি দ্রুত বাড়ানো বা কমানো,
রোগীর দেহে অদৃশ্যমান রক্তপাত সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য রোগীর পাকস্থলীতে নল ঢুকানো।
নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে করণীয়
প্রতিরোধই প্রতিকারের চেয়ে উত্তম পন্থা। তাই এই রোগের প্রতিরোধে নিম্নলিখিত পন্থাগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে।
ক) ব্যক্তিগত পর্যায়ে
ঘুমানোর সময় বিশেষত বিকেল ও রাতে মশারি খাটিয়ে ঘুমানো,
মশকীর দংশন প্রতিরোধকল্পে গায়ে ও পরার কাপড়ে মশক নিবারক ক্রিমের ব্যবহার কিংবা প্রয়োজনে লম্বা হাতওয়ালা শার্ট ও ফুলপ্যান্টসহ মোজা পরিধান,
প্রয়োজনে বাড়িতে মশার প্রবেশ নিয়ন্ত্রণকল্পে বাড়ির সব জানালা, ভেন্টিলেটর মশা অনভিগম্য জালক বা স্ক্রিনের ব্যবহার।
খ) কমিউনিটি পর্যায়ে করণীয়
স্থির পানিই যেহেতু এডিস মশার বংশবিস্তারের প্রধান মাধ্যম। তাই গৃহস্থালির আশপাশে পড়ে থাকা পানি জমার বিভিন্ন আধার যেমন- টিনের ক্যান, পরিত্যক্ত টায়ার, অব্যবহৃত পানির পাত্র, সেপটিক ট্যাংক, এয়ারকুলার প্রভৃতিতে যাতে পানি জমতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা। প্রয়োজনে উপরোক্ত আবর্জনাগুলো অপসারণের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রয়োজনে পানির ট্যাংক, হাউজ কিংবা ম্যানহোলের গর্তগুলো উপযুক্ত মশক অনভিগম্য ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। যাতে পানির আধারের পানিগুলো এডিস মশার বংশবিস্তারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতে না পারে।
ফুলের টব বা ফুলদানিতে জমে থাকা পানি প্রতি তিন দিন অন্তর ফেলে দিতে হবে।
বাড়ির আশপাশের ঝোপজঙ্গল নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
গ) রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে করণীয়
মশার নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মশার দমনে নিয়মিতভাবে ব্যাপক হারে মশকনাশক বিভিন্ন কীটনাশক যেমন- ডিডিটি, পারমেথ্রিন প্রভৃতি দেয়া যেতে পারে।
মশার লাভা দমনে বাড়ির আশপাশের মজা পুকুর ডোবায় বিভিন্ন কীটনাশক যেমনÑ কেরোসিন, পেরিসগ্রিন প্রভৃতি দেখা যেতে পারে। উপরোক্ত পুকুরে মশার লাভা সেবনকারী বিভিন্ন মাছ যেমনÑ তেলাপিয়া, নাইলোটিকা কিংবা গাপ্পি মাছের চাষ পরিবেশবান্ধব বিকল্প পন্থা হতে পারে।
সেই সাথে রাষ্ট্রীয় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ডেঙ্গু ও এর নিয়ন্ত্রণে যথাযথ স্বাস্থ্য শিক্ষার দেয়ার মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগের প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক গণসচেতনতা তৈরি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াগুলোতে এই জনসচেতনতা রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
আছে কি কোন টীকা?
সম্প্রতি বাংলাদেশে সানোফি-এভেন্টিস নামক ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি কর্তৃক উদ্ভাবিত ডেঙ্গুর প্রতিরোধে ডেঙ্গাভেক্সিয়া নামক টীকা বাংলাদেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশনগুলোতে এর কার্যকারিতা নিরীক্ষার জন্য স্বল্পপরিসরে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে দেয়া হচ্ছে। তথাপি সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য এর সবুজ টিকিট পেতে হলে আমাদের আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।

রোজায় মুখে দুর্গন্ধ হলে কী করবেন?

প্রকাশিত :  ০৮:৫৯, ২৭ মার্চ ২০২৪

চলছে রমজান মাস। প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ করলেও রোজা থাকা অবস্থায় মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে।এমনিতেই  দীর্ঘ সময় না খাওয়ার কারণে মুখে কেমন যেন দুর্গন্ধ হয়। চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলা হয় ‘হ্যালিটোসিস’ । রোজার সময়ে  অনেকেই এই সমস্যার সম্মুখীন হন। এটা বেশ বিব্রতকরও । তবে, সাধারণ কিছু বিষয় মাথায় রাখলেই এই সমস্যা সহজে এড়ানো যায়।

মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে কী করবেন 

১. চিকিৎসকরা বলছেন, দীর্ঘ সময় পানি না খাওয়ার কারণে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়ে। এতে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। এ কারণে রোজা ভাঙা মাত্রই পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। 

২. মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে দাঁতের আনাচ-কানাচে খাবার জমতে না দেওয়া যাবে না। এই সমস্যা সমাধানে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে দাঁত ব্রাশ করা। যত ক্ষণ বাড়িতে থাকবেন, প্রতি বার খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করার অভ্যাস করুন। 

৩. দাঁত ব্রাশ করা সবসময় সম্ভব না হলে খাওয়ার পরে মুখ ধোয়ার জন্য মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন। এতে মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে। 

৪. দীর্ঘ ক্ষণ রোজা রাখার পর মিষ্টিজাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো। কারণ, অতিরিক্ত চিনি মুখে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটায়। এতে দাঁতের উপর যে এনামেলের পরত থাকে, তা উঠে যায়।

৫.অনেকসময় দাঁত, মাড়ির সমস্যা থাকলেও মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। তাই আগে সেই সমস্যার সমাধান করুন। দাঁতের তেমন কোনও সমস্যা না থাকলেও নির্দিষ্ট সময় পর পর দাঁত পরীক্ষা করানো জরুরি।