বন্যপ্রাণী ধ্বংস করতে থাকলে আরও মহামারি হবে: জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ

প্রকাশিত :  ০৭:০১, ০৭ জুলাই ২০২০

বন্যপ্রাণী ধ্বংস করতে থাকলে আরও মহামারি হবে: জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া রোগ বাড়ছে। আর বন্যপ্রাণীর সুরক্ষা এবং পরিবেশ রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়া না হলে এর প্রকোপ বাড়তেই থাকবে। কোভিড-১৯ এর মতো রোগ বেড়ে যাওয়ার জন্য তারা প্রাণীজ প্রোটিনের তীব্র চাহিদা বৃদ্ধি, টেকসই নয় এমন কৃষিকাজ বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন। প্রাণী থেকে ছড়ানো রোগ অবহেলা করায় প্রতিবছর ২০ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন তারা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

করোনাভাইরাসের আগে প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া অন্য রোগগুলোর মধ্যে রয়েছে ইবোলা, ওয়েস্ট নীল ভাইরাস এবং সার্স। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড-১৯ এর কারণে দুই বছরের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতির নয় লাখ কোটি মার্কিন ডলারের ক্ষতি হবে।

জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি এবং আন্তর্জাতিক প্রাণীসম্পদ গবেষণা ইন্সটিটিউটের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাণী থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানুষের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়ে না। প্রাকৃতিক পরিবেশের অবমূল্যায়নের মাধ্যমে এসব রোগ মানুষের মধ্যে ছড়ায়। উদাহরণ হিসেবে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমি বিনাশ, বন্যপ্রাণী ধ্বংস, খনিজ আহরণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এসব রোগ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলো প্রাণী ও মানুষের মিথস্ক্রিয়ার উপায় পাল্টে দেয়।

জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং সংস্থাটির জলবায়ু কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক ইঙ্গার অ্যান্ডারসন বলেন, ‘গত শতাব্দীতে আমরা অন্তত ছয়টি নোবেল করোনাভাইরাসের বিস্তার দেখতে পেয়েছি। কোভিড-১৯ এর আগে পর্যন্ত গত দুই দশকে প্রাণী থেকে ছড়িয়ে পড়া রোগের কারণে ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রাণী থেকে ছড়ানো রোগ অবহেলা করায় নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে প্রতিবছর ২০ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। অ্যানথ্রাক্স, গবাদিপশুর যক্ষ্মা এবং জলাতঙ্কের মতো রোগের প্রাদুর্ভাবে এসব মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।’

ইঙ্গার অ্যান্ডারসন বলেন, প্রাণীসম্পদ এবং বন্যপ্রাণীর সান্নিধ্যের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর মানুষই বেশি এসব মৃত্যুর শিকার হচ্ছে। তিনি জানান, গত ৫০ বছরে মাংসের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ২৬০ শতাংশ। অ্যান্ডারসন বলেন, ‘আমরা বন্য স্থানের বিনিময়ে কৃষিকাজ জোরালো করেছি, অবকাঠামো সম্প্রসারণ করেছি, খনিজ আহরণ করেছি।’

জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ইঙ্গার অ্যান্ডারসন বলেন, ‘মানুষের ২৫ শতাংশ সংক্রামক রোগের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে বাঁধ, সেচ এবং কারখানা প্রতিষ্ঠানের। ভ্রমণ, পরিবহন এবং খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খল সীমান্ত আর দূরত্ব মুছে দিয়েছে। রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়ায় ভূমিকা রাখছে জলবায়ু পরিবর্তন।’

ভবিষ্যতের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকারগুলোর কৌশল কী হতে পারে তারও বর্ণনা দেওয়া হয়েছে জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে। এসব কৌশলের মধ্যে রয়েছে, টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা, জীববৈচিত্র্যের উন্নয়ন এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বিনিয়োগ।

জাতিসংঘের জলবায়ু কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক ইঙ্গার অ্যান্ডারসন বলেন, ‘বিজ্ঞান স্পষ্ট যে, আমরা যদি বন্যপ্রাণী ধ্বংস এবং বাস্তুতন্ত্র বিনাশ করতে থাকি, তাহলে আশঙ্কা করতে পারি সামনের বছরগুলোতে প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়া নিয়মিতভাবে বাড়তে থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতের মহামারি মোকাবিলায় আমাদের অবশ্যই প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষায় আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে।’

ডিপফেক ভিডিও থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন যেভাবে

প্রকাশিত :  ১০:১৪, ২৮ মার্চ ২০২৪

বিজ্ঞানের উৎকর্ষকালে প্রযুক্তি যেমন মানুষের উপকার করছে, তেমনি কিছু প্রযুক্তি মানুষের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি প্রযুক্তি হলো ডিপফেক প্রযুক্তি বা ডিপফেক ইন্টেলিজেন্সি।

অনেকে ডিপফেক এআইকে একুশ শতকের ফটোশপিং বলে থাকে। সহজ ভাষায় ডিপফেক হলো এআই নির্ভর এমন এক প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে যেকোনো ভিডিও, ছবি এবং অডিও রেকর্ডিংয়ে বিশ্বাসযোগ্যভাবে মানুষের মুখমণ্ডল বা কণ্ঠস্বর নকল করা যায়।

দিন দিন বাড়ছে ডিপফেক প্রযুক্তির অপব্যবহারের সংখ্যা। প্রথম প্রথম বিশ্বের নামকরা সেলিব্রিটি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ডিপফেক ইন্টেলিজেন্সি দিয়ে তৈরি নকল ভিডিও দ্বারা হেনস্তার শিকার হন।

ডিপফেক প্রযুক্তি থেকে নিজের ডেটার সুরক্ষার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যায়। সেগুলো উঠে এসেছে এনডিটিভির প্রতিবেদনে। 

১. যতদূর সম্ভব নিজের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অন্য কোনো পাবলিক প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। এসব প্ল্যাটফর্মে প্রাইভেসি সেটিংসগুলো সঠিকভাবে নির্বাচন করতে হবে। 

২. শক্তিশালী ও অনন্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে অনলাইন অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। ফলে ছবি ও ভিডিওগুলোয় অননুমোদিত অ্যাকসেস লাভ করা হ্যাকারদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে এবং ডিপফেক প্রযুক্তি দিয়ে নিজের গোপনীয়তা লঙ্ঘনের সম্ভাবনা কমে যায়। 

৩. কম্পিউটারে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করিয়ে হ্যাকাররা ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত ডেটা ও ছবি চুরি করতে পারে। এসব ডেটা ও ছবি দিয়ে ডিপফেক কনটেন্ট তৈরি করে হ্যাকাররা। এজন্য কম্পিউটারে ভালোমানের অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করা উচিত। এভাবে ব্যক্তিগত মিডিয়াতে ক্ষতিকারক টুলগুলোর অ্যাকসেস পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

৪. ডিপফেক কনটেন্টের সাধারণ লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। যদি কোনো ভিডিও, ছবি ও কণ্ঠ খুবই নিখুঁত বা অবাস্তব বলে মনে হয় তবে এটি শেয়ার করা বা বিশ্বাস করার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার মাধ্যমে এ ধরনের কারসাজি ভিডিও শনাক্ত করা যাবে। 

৫. নিজের ছবি ও ভিডিওতে জলছাপ বা ওয়াটারমার্ক যুক্ত করুন। এসব ওয়াটারমার্ক অনেক সময় সম্পূর্ণ মুছে ফেলা যায় না। আর সম্পূর্ণ মুছে ফেলার সময় ছবি ও ভিডিও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ফলে এসব ছবি ও ভিডিও দিয়ে ডিপফেক তৈরি কঠিন হয়ে পড়ে। জলছাপ একটি অতিরিক্ত সুরক্ষা হিসেবে কাজ করে।

৬. নিজের ফাইলগুলোয় মেটাডেটা সঠিকভাবে এম্বেড করা হয়েছে নাকি তা নিশ্চিত করতে হবে। মেটাডেটা হলো ফাইল সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক তথ্য। যেমন- কে তৈরি করেছে, কবে তৈরি করা হয়, কোথায় তৈরি হয়েছে, কবে এডিট করা হয়েছে, টাইটেল ইত্যাদি। মিডিয়া ফাইল ব্যবহার নিয়ে বিরোধ বা দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে এটি মালিকানার প্রমাণ হিসেবে কাজ করতে পারে। 

তবে এসব পদ্ধতি নিজের ডেটা সুরক্ষা দেবে তার শতভাগ নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না।