করোনা ভ্যাকসিনের ন্যায্য ও সাশ্রয়ী প্রাপ্তি নিশ্চিতের আহ্বান বাংলাদেশের

প্রকাশিত :  ০৮:৩১, ২৩ জুলাই ২০২০

করোনা ভ্যাকসিনের ন্যায্য ও সাশ্রয়ী প্রাপ্তি নিশ্চিতের আহ্বান বাংলাদেশের

জনমত ডেস্ক: কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেখানে এর সাশ্রয়ী ও ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিতের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা।

তিনি বলেন, ‘এটি নিশ্চিত করার জন্য একটি ন্যায্যতাভিত্তিক নীতিমালা প্রণয়ন প্রয়োজন।’

বিভিন্ন দেশে কোভিড ভ্যাকসিন তৈরিতে যারা কাজ করছেন তাদের অগ্রগতিগুলোকে খুবই উৎসাহব্যঞ্জক আখ্যা দিয়ে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে ‘গ্রোবাল পাবলিক গুড’ হিসেবে পরিণত করতে নিঃসন্দেহে সুদৃঢ় বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি ও সহযোগিতা প্রয়োজন।

‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের গবেষণা, উন্নয়ন, সরবরাহ এবং এর সমতাভিত্তিক বণ্টন কাঠামো’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনায় এসব কথা বলেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।

যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ ও জাতিসংঘ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী লর্ড তারিক আহমেদ এবং ইউনাইটেড ন্যাশন্স ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট ও সিইও রাষ্ট্রদূত এলিজাবেথ কাউসেনস ইভেন্টটি যৌথভাবে আয়োজন করেন।

এতে কোভিড-১৯ এর সম্ভাব্য ভ্যাকসিনগুলোর সার্বজনীন প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে বক্তব্য রাখেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিকা, ভ্যাকসিন ও বায়োলজিক্যালসের পরিচালক কেট ও ব্রায়েন এবং গ্যাভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ম্যারি-অ্যাঞ্জে সারাকা-ইয়াও।

রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারি আমাদের আবারও জোরালোভাবে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে এ বিশ্বের সকলে এক অপরের সাথে সংযুক্ত। অতএব, বৈশ্বিক এ স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একতাবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি পুনঃসংক্রমণ রোধ করতে চাই, তাহলে প্রস্তুতি, প্রতিরোধ ও পুনরুদ্ধার বিষয়ে আমাদের একসাথে এবং কার্যকর বৈশ্বিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে।’

এ মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ও ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় এবং দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে ভ্যাকসিনের অপরিসীম গুরুত্বের কথা তুলে ধরে তিনি প্রফেসর সারাহ গিলবার্টের নেতৃত্বে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারে অক্সফোর্ড জেনার ইনস্টিটিউট টিমের মহতী কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

কোভিড-১৯ এর একটি কার্যকর ও নিরাপদ ভ্যাকসিন তৈরির পদক্ষেপ হিসেবে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনটির তৃতীয় ট্রায়াল সফল হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রদূত।

গত মাসে যুক্তরাজ্য আয়োজিত একটি ভার্চুয়াল ভ্যাকসিন সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রদত্ত প্রতিশ্রুতির উদাহরণ টেনে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গ্যাভি এবং অন্যান্য বেসরকারি অংশীদার গৃহীত ‘এটিসি অ্যাক্সিলারেটর ফর থিরাপিউটিক্স অ্যান্ড কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি’ পদক্ষেপটিতে বাংলাদেশের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ওষুধ শিল্পের কথা তুলে ধরে স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, ‘এসব ওষুধ কোম্পানি আমাদের দেশের চাহিদা মিটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, ওইসিডিভুক্ত দেশসহ প্রায় ১৪৫টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করে থাকে।’

বাংলাদেশের বর্তমান চাহিদার তুলনায় দ্বিগুণ ভ্যাকসিন উৎপাদনে এসব ওষুধ কোম্পানির সক্ষমতা ও সামর্থ্যের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, যদি মেধা সত্তার অধিকার অবলোপন করা হয় এবং প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি হস্তান্তর করা হয় তবে বাংলাদেশি ওষুধ কোম্পানিগুলো বৈশ্বিক সরবরাহের জন্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে সক্ষম।

বৈশ্বিকভাবে ঝুঁকি ভাগ করে নেয়ার পদক্ষেপ ‘এটিসি অ্যাক্সিলারেটর ফর থিরাপিউটিক্স অ্যান্ড কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি’সহ কোভিড-১৯ এর প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক ও আর্থিক বিনিয়োগ কীভাবে সমতার ভিত্তিতে এগিয়ে নেয়া যায় সে বিষয়ে দৃষ্টিপাত করেন আলোচকরা।

তারা জোর দিয়ে বলেন, এসডিজি অর্জন এবং বিশ্বকে কোভিডপূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে এটিই প্রথম পদক্ষেপ যা অপরিহার্য। উচ্চ এবং নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য বিশ্ববাজারে সমতাভিত্তিক প্রবেশাধিকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও গ্যাভি কাজ শুরু করেছে মর্মে জানান তারা।

সভায় ২০২১ সালের শেষ অবধি বিশ্বব্যাপী প্রায় ২ বিলিয়ন ভ্যাকসিন ডোজের প্রয়োজন হবে বলে বলা হয়।

ব্রিটিশ সরকার বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের সমতাভিত্তিক বণ্টন বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য বণ্টন নিশ্চিত করবে মর্মে প্রতিশ্রুতির কথা জানান যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ ও জাতিসংঘ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী লর্ড তারিক আহমেদ।

তিনি আরও বলেন, তার সরকার ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত বিষয়ে ৭৬০ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ করেছে।

জাতিসংঘ সদস্য দেশগুলোর স্থায়ী প্রতিনিধি, অন্যান্য কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি এবং বেসরকারি ও সিভিল সোসাইটি সংস্থার বিপুল সংখ্যক প্রতিনিধি সভায় অংশগ্রহণ করেন।

ডিপফেক ভিডিও থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন যেভাবে

প্রকাশিত :  ১০:১৪, ২৮ মার্চ ২০২৪

বিজ্ঞানের উৎকর্ষকালে প্রযুক্তি যেমন মানুষের উপকার করছে, তেমনি কিছু প্রযুক্তি মানুষের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি প্রযুক্তি হলো ডিপফেক প্রযুক্তি বা ডিপফেক ইন্টেলিজেন্সি।

অনেকে ডিপফেক এআইকে একুশ শতকের ফটোশপিং বলে থাকে। সহজ ভাষায় ডিপফেক হলো এআই নির্ভর এমন এক প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে যেকোনো ভিডিও, ছবি এবং অডিও রেকর্ডিংয়ে বিশ্বাসযোগ্যভাবে মানুষের মুখমণ্ডল বা কণ্ঠস্বর নকল করা যায়।

দিন দিন বাড়ছে ডিপফেক প্রযুক্তির অপব্যবহারের সংখ্যা। প্রথম প্রথম বিশ্বের নামকরা সেলিব্রিটি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ডিপফেক ইন্টেলিজেন্সি দিয়ে তৈরি নকল ভিডিও দ্বারা হেনস্তার শিকার হন।

ডিপফেক প্রযুক্তি থেকে নিজের ডেটার সুরক্ষার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যায়। সেগুলো উঠে এসেছে এনডিটিভির প্রতিবেদনে। 

১. যতদূর সম্ভব নিজের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অন্য কোনো পাবলিক প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। এসব প্ল্যাটফর্মে প্রাইভেসি সেটিংসগুলো সঠিকভাবে নির্বাচন করতে হবে। 

২. শক্তিশালী ও অনন্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে অনলাইন অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। ফলে ছবি ও ভিডিওগুলোয় অননুমোদিত অ্যাকসেস লাভ করা হ্যাকারদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে এবং ডিপফেক প্রযুক্তি দিয়ে নিজের গোপনীয়তা লঙ্ঘনের সম্ভাবনা কমে যায়। 

৩. কম্পিউটারে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করিয়ে হ্যাকাররা ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত ডেটা ও ছবি চুরি করতে পারে। এসব ডেটা ও ছবি দিয়ে ডিপফেক কনটেন্ট তৈরি করে হ্যাকাররা। এজন্য কম্পিউটারে ভালোমানের অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করা উচিত। এভাবে ব্যক্তিগত মিডিয়াতে ক্ষতিকারক টুলগুলোর অ্যাকসেস পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

৪. ডিপফেক কনটেন্টের সাধারণ লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। যদি কোনো ভিডিও, ছবি ও কণ্ঠ খুবই নিখুঁত বা অবাস্তব বলে মনে হয় তবে এটি শেয়ার করা বা বিশ্বাস করার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার মাধ্যমে এ ধরনের কারসাজি ভিডিও শনাক্ত করা যাবে। 

৫. নিজের ছবি ও ভিডিওতে জলছাপ বা ওয়াটারমার্ক যুক্ত করুন। এসব ওয়াটারমার্ক অনেক সময় সম্পূর্ণ মুছে ফেলা যায় না। আর সম্পূর্ণ মুছে ফেলার সময় ছবি ও ভিডিও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ফলে এসব ছবি ও ভিডিও দিয়ে ডিপফেক তৈরি কঠিন হয়ে পড়ে। জলছাপ একটি অতিরিক্ত সুরক্ষা হিসেবে কাজ করে।

৬. নিজের ফাইলগুলোয় মেটাডেটা সঠিকভাবে এম্বেড করা হয়েছে নাকি তা নিশ্চিত করতে হবে। মেটাডেটা হলো ফাইল সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক তথ্য। যেমন- কে তৈরি করেছে, কবে তৈরি করা হয়, কোথায় তৈরি হয়েছে, কবে এডিট করা হয়েছে, টাইটেল ইত্যাদি। মিডিয়া ফাইল ব্যবহার নিয়ে বিরোধ বা দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে এটি মালিকানার প্রমাণ হিসেবে কাজ করতে পারে। 

তবে এসব পদ্ধতি নিজের ডেটা সুরক্ষা দেবে তার শতভাগ নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না।