হবিগঞ্জে ছাত্রলীগের পদ দেওয়ার কথা বলে ২০ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযো
জনমত ডেস্ক : হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ দেওয়ার কথা বলে এক ছাত্রলীগকর্মীর কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান মাহি এই টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। মাহতাবুর আলম জাপ্পি নামের মাধবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কর্মী জেলার সভাপতি ও সম্পাদককে এই টাকা প্রদান করেন বলে অভিযোগ করেছেন।
জাপ্পি উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। তবে তিনি ওই পদ পাননি। পদ না পেয়ে লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য ও ফোনালাপ ফাঁস করে দেন জাপ্পি। তার দাবি মতে, গত মে মাসে দেশের ডাচ বাংলা ব্যাংক ও আমেরিকার মর্গান চেস ব্যাংকের মাধ্যমে ওই টাকা নেন তারা। এনিয়ে তোলপাড় চলছে জেলাজুড়ে।
অভিযোগে জানা গেছে, মাহতাবুর আলম জাপ্পি মাধবপুরের মনতলা কলেজের ছাত্রলীগ কর্মী। জাপ্পির সঙ্গে হবিগঞ্জ সরকারী বৃন্দাবন কলেজ শাখার এক নেতার সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। কয়েক মাস আগে মাধবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি দেয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। ওই সময় হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজের ওই ছাত্রলীগ নেতা জাপ্পির আমেরিকা প্রবাসী ভাই শাহীনকে ফোন করেন। তিনি জাপ্পিকে মাধবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি পদ পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এ বিষয়ে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুর রহমান তার সঙ্গে কথাও বলবেন বলে জানান ওই নেতা। সাইদুর ফোনে কথা বলেন আমেরিকার টেক্সাসে অবস্থানরত জাপ্পির ভাই শাহীনের সঙ্গে। ছোট ভাইকে কমিটিতে স্থান পাইয়ে দিতে তার কাছে ২০ লাখ টাকা চান সাইদুর। তিনি এতে রাজি হয়ে যান।
জাপ্পির দেওয়া বিভিন্ন তথ্য ঘেটে দেখা গেছে, আমেরিকা প্রবাসী শাহীন ৭ হাজার ৮০০ ডলার সাইদুরের এক আত্মীয়ের একাউন্টে জমা করে গত ১৮ মে। আমেরিকার মর্গান চেস ব্যাংকের ক্যাশ ডিপোজিট নম্বর #৯৫, একাউন্টের শেষের নম্বর #১২৩০।
এছাড়া গত ১০ মে বাংলাদেশে সাইদুরের ডাচ বাংলা ব্যাংকের একাউন্টে (একাউন্ট নম্বর #১৮৭১৫১০০৫০৮৯৫) ৩৮৪৫১৬৪ নং রশিদে ২ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা জমা দেন। বাকি টাকা নগদে জমা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরও ৫০ হাজার টাকা সাইদুরের একাউন্টে জমা দেওয়া হয়। ভোক্তভোগিদের অভিযোগ জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান মাহিকে ৯ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে নগদে ৫ লাখ ও চেকে ৪ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, পদ পাইয়ে দেয়ার প্রলোভনে হাতিয়ে নেওয়া ২০ লাখ টাকার মধ্যে ১১ লাখ নেন হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুর রহমান। আর ৯ লাখ টাকা নেন সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান মাহি।
আমেরিকা প্রবাসী শাহীন গণমাধ্যমকে বলেন, আমি বুঝতে পারিনি তারা এতোবড় প্রতারণা করবে। আমি সরল বিশ্বাসে টাকা দিয়েছি। এখন টাকা পেয়ে পদতো দিচ্ছেই না, পাল্টা অস্বীকার করছে। অথচ আমার কাছে যে এসবের প্রমাণ রয়েছে তা তারা হয়তো জানে না।
অভিযোগ প্রসঙ্গে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মাহী বলেন, তাদের অভিযোগ মিথ্যে। ছাত্রলীগের অফিসিয়াল প্যাডে মাধবপুরের উপজেলা কমিটি অনুমোদন দেয়া আছে। টাকা লেনদেনের চেক, অডিও রেকর্ড, ক্যাশ রিসিভ ও অন্যান্য ডকুমেন্টস প্রসঙ্গে বলেন, এ ধরনের সব অভিযোগ মিথ্যে। প্রমাণ থাকলে অবশ্যই নিউজ করবেন।
হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুর রহমানও অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কিছুদিন ধরেই শাহীনের সঙ্গে আমার কথা হতো। এসব কথা রেকর্ড করে রেখেছে সে। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য না। তিনি বলেন, শাহীন একটা প্রতারক। নিজেকে আমেরিকান একটি বাহিনীর পরিচয় দেয় সে। এর কোন প্রমাণ আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে কোন রেকর্ড নেই।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে সিলেট বিভাগের ছাত্রলীগ নেতা মিহির রঞ্জন দাশের সাথে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন এ ধরণের অভিযোগ সত্য প্রমানিত হলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবে। তবে ব্যাপারটা নিয়ে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আমি আলাপ করে তারপর আপনাকে জানাবো।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্য বলেন, বিষয়টা আমি গভীরভাবে দেখছি। আমি জেলার প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারির সঙ্গে কথাও বলেছি। ঘটনা যদি সত্য হয় তাহলে যারা টাকা দিয়েছে এবং যারা টাকা নিয়েছে দুইপক্ষই ছাত্রলীগ করার অধিকার হারাবে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব। যাতে তারা কেউই ভবিষ্যতে আর ছাত্রলীগের রাজনীতিই না করতে পারে।
তিনি বলেন, করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। যে কারণে এখন কেন্দ্র থেকেই কমিটি ঘোষণা দিতে নিষেধ করা হয়েছে।