img

বিষণ্ণতা এক নীরব ঘাতক

প্রকাশিত :  ০৭:৩৪, ০৪ নভেম্বর ২০১৮

বিষণ্ণতা এক নীরব ঘাতক

একজন মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে গ্রাস করতে পারে বিষন্নতা। এটি এমন এক নীরব ঘাতক যা মানুষের জীবনে এনে দেয় একাকীত্ব। এই একাকীত্ব তার বিষন্নতার অসুখকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। সে জড়িয়ে পড়ে বিষন্নতা, কষ্ট, একাকীত্বের এক দুষ্টু চক্রে।

স্বপ্নহীন, আনন্দহীন এক দুর্বিসহ জীবন নিয়ে আমাদেরই মাঝে বাস করে অনেকে। আসু্ন এই মানসিক রোগটি সম্পর্কে ভালভাবে জানি এবং নিজে সচেতন হই ও অন্যকে সচেতন করি।

 

# উপসর্গসমূহ
নিম্নোক্ত যে কোনো উপসর্গ যদি ১৫ দিনের বেশী আপনার মধ্যে থাকে(যে কোনো কারণেই হোক না কেন) তাহলে আপনি নিশ্চিতভাবে মারাত্মক মাত্রায় বিষন্নতায় ভুগছেন যার চিকিৎসা না করালে আপনার সুন্দর জীবন ধ্বংসের মুখোমুখি চলে যাবে। উপসর্গগুলো হলোঃ

১) প্রায়ই মন খারাপ থাকা বা একাকী মনের কষ্টে কান্নাকাটি করা বা ভিতর থেকে কান্না ঠেলে আসছে এমন লাগা।

২) অধিকাংশ কাজে আনন্দ না পাওয়া এমনকি যেসব কাজে মানুষ যথেষ্ঠ আনন্দ পায় যেমন ঈদ, বিয়ে, জন্মদিন ও অন্যান্য পারিবারিক/সামাজিক অনুষ্ঠান বা শপিং-এ অনীহা তৈরি হওয়া বা অংশগ্রহন করে আনন্দ না পাওয়া কিংবা এ ধরনের অনুষ্ঠানে না যাওয়ার জন্য অজুহাত তৈরি করা। মানুষের সাথে মেলামেশা করতে ভাল না লাগায় দিন দিন একা হয়ে যাওয়া।

৩) খাওয়ার ব্যাপারে অনীহা এমনকি ক্ষুধা লাগলেও খেতে ইচ্ছে না করা। দিন দিন শরীর শুকিয়ে যাওয়া। অবশ্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগী অতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়া করে এবং মোটা হতে পারে।

৪) শরীর খুব দুর্বল বা ক্লান্ত লাগা। বিশেষত, কোনো কাজ আরম্ভ করার আগেই মনে হওয়া যে দুর্বলতার জন্য কাজটা করতে পারব না।

৫) ঘুম না হওয়া বা ঘুম খুব পাতলা হওয়া বা বিছানায় শোয়ার পরও সহজে ঘুম না আসা বা বার বার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া। বিশেষত, শেষ রাতে ঘুমটা আসে ফলে সে সকালে ঘুম থেকে দেরি করে উঠে। কিছুক্ষেত্রে অবশ্য কারো কারো ঘুম বেড়ে যায়।

৬) দিন দিন মেজাজ চড়ে যাওয়া বা অল্পতেই বেশি বিরক্ত বা উত্তেজিত হওয়া। এমনকি তারা অন্যের দেয়া ভাল উপদেশও সহ্য করতে পারেনা।

৭) নিজেকে খুব অসহায় লাগা বা সকলের জন্য নিজেকে একটা বোঝা মনে করা অথবা সকল কষ্টের জন্য নিজেকে বা ভাগ্যকে বার বার দায়ী করা। আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া। ভবিষ্যত অন্ধকার দেখা।

৮) কাজ-কর্মে মন না বসা বা কথা মনে রাখতে না পারা অর্থাৎ অমনোযোগী হওয়া।

৯) বেঁচে থাকার আগ্রহ কমে যাওয়া। তারা অনেক সময় বলে থাকে ‘অনেক কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছি, তার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো’। তারা বেশীরভাগ সময় আত্মহত্যার চিন্তা বা চেষ্টা করে থাকে।

# আনুষঙ্গিক লক্ষণ
এগুলো বিষন্নতার প্রত্যক্ষ উপসর্গ না হলেও বিষন্ন রোগীদের মাঝে প্রায়ই দেখা যায়। যেমন খুব অস্থির লাগা, বুক ধড়ফড় করা, ঘাড় বা মাথার পিছনে ব্যাথা হওয়া, জ্বর জ্বর লাগা, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাথা হওয়া, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, হজমের অসুবিধা বা পায়খানা কষে যাওয়া, ভয়/আতঙ্ক অনুভব করা, নেতিবাচক চিন্তাভাবনা, চারপাশের মানুষকে শত্রু ভাবাপন্ন/ক্ষতিকর মনে হওয়া, নিজের মতামতকে বেশি গুরুত্ব দেয়া এবং অন্যের মতামতকে গুরুত্ব না দেয়া ইত্যাদি।

# ফলাফল
চিকিৎসা না করালে একজন বিষন্ন রোগী নিজ, পরিবার ও সমাজের কাছে বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। লেখাপড়ায় ফলাফল খারাপ করে, চাকরিক্ষেত্রে উন্নতি হয়না, ব্যবসায় সফলতা আসেনা, জীবনে উন্নতি বাঁধাপ্রাপ্ত হয়, নিকটজনের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটে, বিয়ের ব্যাপারে অনাগ্রহ দেখা দেয়, পারিবারিক বা দাম্পত্য জীবনে অশান্তি নেমে আসে, কর্মে ও আচরণে অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠে, বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে, মাদকাসক্ত হতে পারে, আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়ে, তাছাড়া শরীরে বিভিন্ন রোগ দেখা দেয় যা ধরা পড়েনা।

অর্থাৎ একজন বিষন্ন মানুষ সকল অশান্তির উৎস বা কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

# প্রতিরোধ
বিষন্নতাবিরোধী ঔষধ দিয়েই মূলত এর চিকিৎসা করা হয়; তবে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ঔষধের সাথে সাথে কাউন্সেলিংও বেশ ভাল কাজ করে।

বিষন্নতাবিরোধী ঔষধগুলো বেশ ধীরগতিতে কাজ করে তাই অবস্থার উন্নতি হতে ২-৩সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। আবার একই ঔষধ একই মাত্রায় সকলের ক্ষেত্রে সমভাবে কাজ নাও করতে পারে। তাই ২-৩সপ্তাহ পরপর চিকিৎসক ঔষধ বা ঔষধের মাত্রা পুণঃনির্ধারন করে থাকেন।

বিষন্নতাবিরোধী ঔষধগুলোর কোনটিই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত নয়।তবে সময়ের সাথে সাথে অধিকাংশ ঔষধই সহনশীল হয়ে যায়। তাই প্রতিটি ঔষধ সেবন করার পূর্বে এগুলো সম্পর্কে আপনার ভালোভাবে জানা উচিত।

চিকিৎসার ৩ মাস পর চিকিৎসক ঔষধ বা এর মাত্রা কমাতে শুরু করেন এবং উন্নতি অব্যাহত থাকলে আস্তে আস্তে তা বন্ধ করে দেন। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে এটা ৬মাস বা ১২মাস কিংবা বা এর বেশি সময় লাগতে পারে। অবস্থার উন্নতি দেখে হঠাৎ করে ঔষধ খাওয়া বন্ধ করবেন না, করলে এ রোগের উপসর্গ পুনরায় ফিরে আসতে পারে।

img

আবেগ চেপে রাখলে বাড়ে মানসিক ব্যাধি

প্রকাশিত :  ১০:৩৭, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১০:৫৮, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রকৃতিগতভাবে মানুষ আবেগপ্রবণ। যদিও এ আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারা অনেক বড় একটি গুণ, যা সবার মধ্যে থাকে না। তবে আবেগ চেপে রাখা কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

মনের কথা প্রকাশ করাটাও জরুরি। তবে অনেকেই আছেন, যারা নিজেদের চিন্তাভাবনা কিংবা অনুভূতি কারও সঙ্গে শেয়ার করতে চান না। দীর্ঘদিনের এ অভ্যাসে বাড়ে মানসিক ব্যাধির ঝুঁকি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে পরিবারের সঙ্গে যদি আপনি আবেগ প্রকাশ না করেন, তখন একাকিত্ব ও বিষন্নতায় ভুগতে পারেন।

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক সম্পর্ক বোঝার ক্ষমতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যে গভীর সম্পর্ক আছে। যা বোঝা প্রত্যেকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক জ্ঞান হলো একটি জটিল মানসিক প্রক্রিয়া। এটি আমাদের অনুভূতি, উদ্দেশ্য, বিশ্বাস ও সামনের মানুষের চিন্তা করার উপায়গুলো বুঝতে সাহায্য করে।

বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, কারও যদি সামাজিক দক্ষতার ঘাটতি থাকে তাহলে তা অনেক ধরনের মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাধির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যেমন বিষন্নতা, বাইপোলার ডিসঅর্ডার বা সিজোফ্রেনিয়ার মতো সমস্যা। বিষন্নতায় মানুষ অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন বোধ করে। এমনকি সবার সঙ্গে যোগাযোগে আগ্রহও হারিয়ে ফেলে।

অন্যদিকে বাইপোলার ডিসঅর্ডারের ক্ষেত্রে, মেজাজের পরিবর্তন সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অস্থিরতা হয়ে দেখা দেয়। তবে সিজোফ্রেনিয়ায়, বিভ্রম বা হ্যালুসিনেশনের মতো উপসর্গগুলো দেখা যায়। বাইপোলার ডিসঅর্ডার হলে, আক্রান্ত ব্যক্তিরা অন্যদের সঙ্গে সামঞ্জস্য করতে অসুবিধা বোধ করেন। অন্যরা কি বলছে, তা সঠিকভাবে বুঝতে অক্ষম হন। শুধু তাই নয়, তাদের অনুভূতিগুলো সঠিকভাবে প্রকাশ করতেও দ্বিধাবোধ করেন তারা। ফলে তাদের বন্ধু তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়ে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আরও জানাচ্ছেন, মানসিক ব্যাধি সামাজিক দক্ষতায় প্রভাব ফেলে। এতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সামনের মানুষের আবেগ বুঝতে ও নিজস্ব আবেগগুলো সঠিকভাবে প্রকাশ করতে অসুবিধা বোধ করেন।

আপনিও যদি মানসিক কোনো সমস্যার মধ্যে দিয়ে যান তাহলে অবশ্যই শরীরচর্চা ও মেডিটেশন করুন। কারণ ব্যায়াম আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যায়াম করার মাধ্যমে আমরা সামনের মানুষে আবেগ বুঝতে সক্ষম হই। তাই সুস্থ থাকতে ব্যায়াম করুন।