পদায়ন নিয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে সংকট
জনমত ডেস্ক : সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের কারিগরি বোর্ডে পদায়ন দেওয়া নিয়ে বোর্ডের শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ফলে পদায়ন নিয়ে সংকটে পড়েছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড।
এমনকি পলিটেকনিক শিক্ষক সমিতিও এই পদায়নের বিপক্ষে রয়েছে। এতে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।
এ ছাড়া আগে থেকেই তেমন কোনো প্রচারণা না থাকায় বয়সের বাধা তুলে দিয়েও এ বছর খুব একটা শিক্ষার্থী বাড়ানো যায়নি।
সম্প্রতি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পরিচালক (শিল্প ও প্রশিক্ষণ সমন্বয়) ও পরিচালক (আইসিটি) পদে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের পদায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এরপর থেকেই এর বিপক্ষে অবস্থান নেন কারিগরির শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত ১০ সেপ্টেম্বর শিক্ষা ক্যাডারের একজন সদস্য পরিচালক পদে যোগদানের জন্য এলেও তাঁকে যোগদান করতে দেওয়া হয়নি।
গত ১০ সেপ্টেম্বর বোর্ডে শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এ ব্যাপারে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষাসচিবের কাছে লিখিত আবেদন জমা দেন। সেখানে বলা হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা ও শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে বোর্ডের পরিচালক (আইসিটি)সহ অন্যান্য পদে প্রেষণে নিয়োগ প্রদানের কার্যক্রম চলছে।
অথচ বোর্ডের বিদ্যমান নিয়োগবিধিতে এসব পদে কারিগরি খাতের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে পদোন্নতি প্রদানের বিধান রয়েছে। এরই মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ছয়-সাতজন কর্মকর্তাকে বোর্ডে প্রেষণে পদায়ন দেওয়া হয়েছে।
কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় অনভিজ্ঞ এসব কর্মকর্তার জন্য বোর্ডের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। একই সঙ্গে কারিগরিতে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও হুমকির মধ্যে পড়েছে। এ ছাড়া কারিগরি খাতের কর্মকর্তারাও পদোন্নতি না পেয়ে হতাশার মধ্যে রয়েছেন।
কারিগরি বোর্ডে অন্য খাতের কাউকে পদায়ন না দিতে বাংলাদেশ পলিটেকনিক শিক্ষক সমিতির (বাপশিস) সভাপতি হাফিজ আহম্মেদ সিদ্দিক ও সাধারণ সম্পাদক এ এম জহিরুল ইসলামও সচিব বরাবর আবেদন করেছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্তেই একজন কর্মকর্তাকে পদায়ন দেওয়া হয়। যাঁকে পদায়ন দিলে প্রতিষ্ঠানের জন্য ভালো হবে তাঁকেই সেখানে পদায়ন দেয় সরকার। কারিগরিতে শিক্ষক সংকট রয়েছে। সেই সংকট পূরণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারিগরিতে ক্যাডার পদেও নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। যখন কারিগরির শিক্ষকরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হবেন তখন এমনিতেই ডেপুটেশন কমে যাবে। সরকার অবশ্যই তখন তাঁদের বিষয়টি বিবেচনা করবে।’
কারিগরির ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তিতে এবারই প্রথম বয়সের বাধা তুলে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ এসএসসি ও সমমান উত্তীর্ণ যে কেউ ভর্তি আবেদন করতে পারবে। কিন্তু এর পরও কারিগরিতে বাড়েনি শিক্ষার্থী। গত বছর পলিটেকনিকগুলোতে ভর্তির জন্য ৮৯ হাজার শিক্ষার্থী আবেদন করেছিল। কিন্তু এবার প্রথম পর্যায়ে আবেদন পড়েছে ৮৮ হাজার। এর মধ্যে বেশি বয়সের শিক্ষার্থী পাওয়া গেছে মাত্র ৯৮০ জন। তাঁরা ২০১৫ বা এর আগে এসএসসি উত্তীর্ণ। একজন শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন যিনি ১৯৯৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ।
জানা যায়, কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে প্রচারণা বাবদ প্রায় দুই কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু সরকারি পলিটেকনিক ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি আবেদন কার্যক্রম শেষ হতে চললেও সেই প্রচারণা শুরু করা যায়নি। ফলে বয়সের বাধা তুলে দিলেও কারিগরিতে সেভাবে শিক্ষার্থীরা আবেদন করেনি।
টেকনিক্যাল এডুকেশন কনসোর্টিয়াম অব বাংলাদেশের (টেকবিডি) সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আজিজ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং যেহেতু এইচএসসি সমমান, তাই এখানে শিক্ষার্থী বাড়াতে হলে চার বছরের ডিপ্লোমা কোর্স দুই বছরে নামিয়ে আনতে হবে। আর যদি চার বছরেরই রাখতে হয় তাহলে তাদের জন্য দুই বছরের গ্র্যাজুয়েশন কোর্স করতে হবে। অর্থাৎ একজন শিক্ষার্থী সাধারণ শিক্ষায় যে সময় গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে, কারিগরিতেও একই সময় গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করার সুযোগ রাখতে হবে। আর ডিপ্লোমায় যেকোনো বয়সের শিক্ষার্থী ভর্তি করলে নিয়মিতদের মধ্যে এই খাতে আসার আগ্রহ আরো কমবে। তবে এত দিন ডিপ্লোমায় ভর্তিতে তিন বছর আগে পাস করা শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারত, সেটা আরো দুই বছর বাড়ানো যেতে পারে।’