মন্তব্য কলাম

ওহ বরিস! বাহ বরিস!!

প্রকাশিত :  ১৮:৪৯, ০১ অক্টোবর ২০২০

টক্ অব দ্যা টাইমস

ওহ বরিস! বাহ বরিস!!

।। মুহাম্মদ আব্দুস সাত্তার।।

করোনাভীতির দ্বিতীয় পর্বে এখন আমাদের অবস্থান। করোনা যায়নি, আমরা জানি। জানি করোনার সঠিক প্রতিষেধক এখনও অবিষ্কার হয়নি। ফলে স্বস্তি নেই করোনা নিয়ে, স্বস্তি নেই জীবনের ধারাপাতে।

তবে যেহেতু এবার করোনার দ্বিতীয় হানা, সে কারণে লোকজন ঠিক আগের মতো ভয়ে জবু-থবু হয়ে পড়েননি। প্রথম দফার অভিজ্ঞতা অনেককে কিছুটা সাহস এনে দিয়েছে, কাউকে কাউকে দু:সাহসী করে তুলেছে আবার কাউকে কাউকে করে তুলেছে অবিশ্বাসীও। 

সত্যি কথা হলো, এখন করোনার নাম শুনেই সবাই মুষড়ে পড়ছেন না। বরং, কি করে এর সাথে নিরাপদে সহাবস্থানের একটা তরিকা বের করে ফেলা যায়, এরকম চেষ্টা আম জনতার মাঝে লক্ষ্য করা যায়। সে চেষ্টা করতেই হবে। করোনার কারণে দেশের সব মানুষকেই কম বেশি ছ‘ মাসের মতো সময় মহাবিপদের কালো ছায়ার নিচে বসবাস করতে হয়েছে। এর মধ্যে আমরা অসহায়-করুণ মৃত্যু দেখেছি, মরণাপন্ন মানুষের ভয়ানক যন্ত্রণার বর্ণনা জেনেছি, শুনেছি আয়-রোজগারের তলানীর পথে যাত্রার ধ্বনি, সব মিলিয়ে মানুষকে সহযাত্রি হতে হয়েছে এক নিদারুণ নিদান কালের, শুধুমাত্রএই দেশ নয়, শুধুমাত্র এই মহাদেশ নয়, শুধুমাত্র পশ্চিম গোলার্ধ নয়, গোটা বিশ্ব জুড়ে বিরাজমান এই মহাসঙ্কটকাল। 

করোনার প্রথম হানার সময় সবাই ছিলেন অনেকটাই অপ্রস্তুত। সাধারণ মানুষ তো বটেই, খোদ্্ সরকারকেও দেখা গেলো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে। প্রধানমন্ত্রি বরিস জনসন তো প্রথম দিকে করোনা নিয়ে খেলাধূলা করবার মতো একটা মানসিকতা নিয়ে করোনা ‘মোকাবেলায়‘ হাত দিলেন। বললেন, দু‘বার ‘হ্যাপি বার্থ ডে‘ গাইতে যতোটা সময় লাগে ততোটা সময় নিয়ে সবাইকে দু‘হাত ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। ব্যস, তাহলেই করোনা কূপোকাত। কোন্্ এক হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে তিনি করোনা পরোয়া না করে উপস্থিতদের সাথে  হাত মিলিয়েছিলেন-বীরদর্পে সে কথাও জানালেন তিনি। পরে এই তাঁকেই ২৩ মার্চ ঘোষণা দিতে হলো ন্যাশনাল লকডাউনের। 

এর পর তো অনেক কাহিনী। অনেক বিতন্ডা। এর মাঝে করোনায় আক্রান্ত হয়ে বরিসকে হাসপাতালের আইসইউতে গিয়েও থাকতে হলো কয়েকটা দিন। কথা উঠলো, করোনার ভয়াবহতা চোখের সামনে ইটালিতে প্রকট হয়ে উঠতে থাকার পরও ব্রিটিশ সরকার এদেশে রোগটি মোকাবেলায় কার্যকর প্রস্ততি নেয়নি বা নেয়ার জন্যে প্রয়োজনীয় দক্ষতা তাদের ছিলো না। 

এই প্রেক্ষাপটে এবারে করোনার দ্বিতীয় হানা প্রকট হয়ে উঠতে থাকার সময় এর মোকাবেলায় বরিস জনসনের নেতৃত্বাধীন ব্রিটিশ সরকারের প্রস্ততি কতোখানি-সে প্রশ্নটি এড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। 

পর্যায়ক্রমে লকডাউন তুলতে শুরু করার এক পর্যায়ে বরিস বলেছিলেন, তিনি খুবই আশাবাদি যে, ক্রিসমাসের আগেই করোনার আতঙ্ক দূরে সরে যাবে, সবাই ক্রিসমাস উদযাপন করতে সক্ষম হবেন আতঙ্কমুক্ত পরিবেশে। আগস্ট থেকে বলা শুরু হলো, ‘গো ব্যাক টু ওয়ার্ক‘, যার যার কাজে ফিরে যান। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই আবার সুর বদলাতে শুরু করলো। প্রধানমন্ত্রি এবার বলতে শুরু করলেন ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম-ইফ ইউ ক্যান‘ অর্থাৎ, সম্ভব হলে ঘর থেকেই কাজ করুন। এবারে ছ‘ মাসের একটা মেয়াদ ছুঁড়ে দিলেন তিনি,  বললেন, নতুন যেসব বিধিনিষেধ জারি হলো, সেগুলো আগামি ছ‘ মাস পর্যন্ত বলবৎ থাকবে এবং এরপরও ‘আমরা যে বিপদমুক্ত হয়ে যাবো, সেই তুষ্টিতে ভুগবার কোন সুযোগ নেই‘। 

‘হ্যাপি বার্থডে‘ গাইবার আমন্ত্রণ জানিয়ে বরিসের করোনা-বিরোধী অভিযানের প্রথম পর্বের শুরু, এর শেষ দিকে তিনি ‘হ্যাপি ক্রিসমাসের‘ আগাম বার্তা দিয়ে রেখেছিলেন। এখন দেখা যাচ্ছে ক্রিসমাস-নিউ ইয়ার পেরিয়ে আগামি মার্চে, ব্রিটেনে ন্যাশনাল লকডাউনের প্রথম বর্ষপূর্তিও সময় পর্যন্ত চলবে তাঁর করোনা-বিরোধী দ্বিতীয় পর্বের যুদ্ধ এবং তারপরও আত্মতুষ্টিতে না ভুগতে তিনি সতর্কবাণি দিয়ে রাখছেন। 

নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রি হিসেবে বরিস জনসন দায়িত্বভার নিয়েছেন নয় মাস আগে। তাঁর প্রথম যুদ্ধ ছিলো ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন। সে নিয়ে বিশেষ কিছু করতে পারার আগেই করোনার হানা। করোনায় তাঁর সরকারের টালমাটাল পরিস্থিতি তেমন ভাবে সামলে তিনি উঠতে পারেননি। এর মধ্যেই আবারও ব্রেক্সিট যুদ্ধের দামামা। তার কোন দিক করতে পারার আগেই আবার তাঁর ঘাড়ে এসে নি:শ্বাস ফেলছে করোনার দ্বিতীয় অভিযান। 

প্রধানমন্ত্রি বরিসের প্রথম বছরটিতে তাঁর সবচেয়ে প্রধান গুরুত্বপূর্ণ দু‘টি ফ্রন্ট হচ্ছে ব্রেক্সিট এবং করোনা। কিন্তু এই দুই ফ্রন্টেই তাঁর লেজেগোবরে দশা তাঁর সমর্থকদের যেমন হতাশ করেছে, তেমনি বিরোধী শিবিরে নিয়ে এসেছে উল্লাস আর সাধারণ মানুষের মধ্যে জন্ম দিয়েছে অবিশ্বাসের। 

মঙ্গলবার ২৯ সেপ্টেম্বর বরিস তাঁর ভুলভাল একটি বক্তব্যের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বাধ্য হয়েছেন। মঙ্গলবার দিনগত রাত থেকে নর্থ-ইস্ট ইংল্যান্ডে চালু হতে যাওয়া কোভিড-১৯ নিষেধ্জ্ঞা সম্পর্কে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো। প্রথমে প্রধানমন্ত্রি বললেন, যে সব এলাকায় বাড়তি নিষেধাজ্ঞা নেই, সেসব এলাকার মানুষজন ইনডোর ও আউটডোর- দুই স্থানেই ৬ জন পর্যন্ত পরষ্পর একত্রিত হতে পারবেন। কথাটি সঠিক নয়। নতুন বিধান অনুযায়ি আউটডোরে এভাবে মিলিত হবার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। 

বরিসের এই বক্তব্যটি লোকজনদের বিভ্রান্ত করেছে চরমভাবে। নর্থ-ইস্টের জন্যে সরকারের নতুন বিধান হচ্ছে: সেখানকার বাসিন্দারা পাব, রেস্টুরেন্ট ও নিজের ঘরসহ ইনডোর কোন সেটিংয়ে অন্য ঘরের বাসিন্দা কারও সাথে মিলিত হতে পারবেন না। 

মঙ্গলবার সকালে স্কিলস মিনিস্টার গিলিয়ান কিগানও বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে একই রকম অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো: নর্থ-ইস্টের লোকজন কি পাবের গার্ডেন অংশে বা কোন রেস্টুরেন্টের বাইরের বসার অংশে অন্য কোন ঘরের কোন বাসিন্দার সাথে মিলিত হতে পারবেন? মিনিস্টারের অকপট জবাব ছিলো: এ প্রশ্নের জবাব আমার জানা নেই। 

প্রধানমন্ত্রি বরিসের কান্ডটির পর লেবার পার্টির ডেপুটি লীডার এঞ্জেলা রেইনার বলেছেন: প্রধানমন্ত্রির ‘অযোগ্যতা মাত্রাছাড়া‘। শ্যাডো কেবিনেট অফিস মিনিস্টার র‌্যাচেল রীভস বলেছেন: প্রধানমন্ত্রি এমনকি বিধি-বিধান সম্পর্কেও কোন জ্ঞান রাখেন না। 

ব্রেক্সিট বরিস প্রধামন্ত্রিত্বের প্রথম বছরেই যেভাবে খুবই জরুরী বিভিন্ন ইস্যুতে ঢিলেমি, দোদুল্যমানতা, সিদ্ধান্তহীনতা, সিদ্ধান্ত নিয়েও পিছিয়ে যাওয়া-ইত্যাদি কান্ড করে চলেছেন, তাতে তাঁর যোগ্যতা নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠে গেছে। এটা শুধু বিরোধী পক্ষে নয়, বলতে গেলে, সব সেক্টরের গুরুত্বপর্ণ ব্যক্তিদের মধ্য থেকেই উঠেছে। সরকার পরিচালনায় ভুল হতে পারে, সেই ভুল সংশোধন কওে নেয়ার দৃষ্টান্তও একদমই যে নেই, তা নয়। কিন্তু মাত্রছাড়া ভুল করতে থাকা; ভুল যেন না হয়, সে বিষয়ে কার্যকর মনোযোগ না থাকা; ভুল স্বীকারের সৎসাহস না থাকা ইত্যাদি যখন এক সাথে যোগ হয় এবং ঘনঘন যখন এসবের পুনরাবৃত্তি হতে থাকে তখন শুধু উদ্বিগ্ন হওয়া নয়, আতঙ্কিত হয়ে পড়তে হয়।

করোনাভাইরাসের মতো একটি গুরুত্ব ইস্যু মোকাবেলায় বরিস জনসনের সরকার এ পর্যন্ত আশ্বস্ত হওয়ার মতো বিশেষ কোন দৃষ্টান্ত রাখতে পারেনি। আমরা জানি, করোনার প্রথম হানার সময় সরকারের দোদুল্যমান ও অনিশ্চিত ব্যবস্থার কারণে বিভিন্ন কেয়ার হোমে ২০ হাজারের মতো বয়ষ্ক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। সরকার লকডাউন দিয়েছে দেরীতে, সেটা তুলেও নিয়েছে কিছুটা আগে-এসব অভিযোগ রয়েছে। আরো আছে, করোনা সম্পর্কিত অপর্যাপ্ত টেস্ট এন্ড ট্রেসিংয়ের অভিযোগ। এদিকে, করোনা সংক্রমণের হার আবারও ক্রমেই বাড়ছে। সরকার এখনও যদি দক্ষতার সাথে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার বিষয়ে বিশেষ মনোযোগী না হয়,  তাহলে অনেক-অনেক মানুষের প্রাণ ঝুঁকির মধ্যে নিশ্চয় পড়ে যাবে। প্রথম দফার পর, এবারও যদি ঠেকানো যাওয়ার মতো মৃত্যু ঠেকানো না যায়, তাহলে বরিসের সরকারকে সেজন্যে বিপুল খেসারত দিতে হবে-নিশ্চিত করে বলা যায়। 

বরিস জনসন পররাষ্ট্র মন্ত্রি থাকার সময় ইরানে আটক ব্রিটিশ-ইরানী নাগরিক নাজনীন সম্পর্কে ভুলভাল বক্তব্য দেয়ার কারণে ইরান সরকার নাজনীনের সাজা বাড়ানোর মওকা পেয়ে গিয়েছিলো। বরিস এ বিষয়ে তাঁর ভুল আজও স্বীকার করেননি। নাজনীন আজও বন্দী জেলের অন্ধ প্রকোষ্ঠে।

বরিস বলেছেন, করোনার প্রথম দফা মোকাবেলায় তাঁর সরকার ‘বিপুল সাফল্য‘ পেয়েছে। সেটা কি মৃতের সংখ্যার দিক থেকে গোটা বিশ্বের মধ্য পঞ্চম স্থান পাওয়ার সুবাদে? বরিসের কাছে যদি এটা বিপুল সাফল্যের নমুনা হয়ে থাকে তাহলে বলতেই হয়: ওহ বরিস! বাহ বরিস!!

লন্ডন ০১ অক্টোবর ২০২০

[লেখকঃ মুহাম্মদ আব্দুস সাত্তার, স্পেশাল কন্ট্রিবিউটর, জনমত ডটকম ও সাপ্তাহিক জনমত, সাবেক নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক সিলেটের ডাক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সিলেট প্রেস ক্লাব এবং  প্রেস ক্লাব।]

মতামত এর আরও খবর

ফের মধ্যপ্রাচ্য সফরে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, যুদ্ধ কি থামবে?

প্রকাশিত :  ১৪:০৮, ২১ মার্চ ২০২৪

 ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার জন্য ফের মধ্যপ্রাচ্য সফরে গেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। প্রথমে সৌদি আরব ও তারপর মিসরে আরব নেতাদের সাথে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন আলোচনা করবেন। যাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলছে ‘অ্যান আর্কিটেকচার ফর লাস্টিং পিস’, অর্থাৎ সেখানে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির লক্ষ্যে একটি কাঠামো তৈরির চেষ্টা করা হবে। এবারের আলোচনার মূল বিষয়বস্তুও এটি।

এই উদ্যোগ এমন সময়ে নেয়া হলো, যখন প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন ইসরাইলি বাহিনী গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালের চারপাশে অভিযান বাড়িয়েছে, এমনকি তারা বেশ কয়েকটি বিমান হামলাও চালিয়েছে।

এর আগে ইসরাইলের সেনাবাহিনী বলেছিল যে তারা সোমবার থেকে সেখানে ৯০ জন বন্দুকধারীকে হত্যা করেছে।

একইসাথে, যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তির জন্য কাতারে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা চলছে। তবে কিছু বিষয় দেখে বোঝা যাচ্ছে যে একটা অগ্রগতি আসন্ন।

গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এই অঞ্চলে এটি মি ব্লিঙ্কেনের ষষ্ঠ সফর। সৌদি নেতাদের সাথে দেখা করতে বুধবার বিকেলে তিনি জেদ্দায় অবতরণ করেন।

সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ আগে বিমান থেকে নামার পর সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাজিন আল-হিমালি সহ অপেক্ষমান কর্মকর্তারা তাকে অভ্যর্থনা জানান এবং আলিঙ্গন করেন।

বুধবার রাতে রাজপ্রাসাদে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে তার দেখা করার কথা।

যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন যে তারা একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির সিদ্ধান্তে পৌঁছানো ও গাজায় চলমান মানবিক সংকটের মাঝে সেখানে ত্রাণ বিতরণ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করবেন।

এই সপ্তাহে জাতিসঙ্ঘ-সমর্থিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি)-এর একটি খাদ্য নিরাপত্তা জরিপ বলছে যে গাজার এক দশমিক এক মিলিয়ন, অর্থাৎ ১১ লাখ মানুষ ভয়ানক ক্ষুধা ও অনাহারের সাথে লড়াই করছে।

সংস্থাটি আরো বলেছে যে আগামী মে মাসের মাঝে গাজার উত্তরাঞ্চলেও একটি মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ আসতে চলেছে।

এছাড়াও মিলার যোগ করেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচ্যসূচিতে আরো থাকবে গাজার জন্য সঙ্ঘাত পরবর্তী পরিকল্পনার সমন্বয়, এটি নিশ্চিত করা যে হামাস আর গাজাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে বা ৭ অক্টোবরের হামলার আর পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারবে না, ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য একটি রাজনৈতিক সমাধান, দীর্ঘস্থায়ী শান্তি স্থাপন এবং এই অঞ্চলের নিরাপত্তা।’

ব্লিঙ্কেন মিসরের নেতাদের সাথে দেখা করতে বৃহস্পতিবার কায়রো যাবেন।

আজ থেকে ১৭ বছর আগে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্যালেস্টেনিয়ান অথরিটিকে (পিএ) গাজা থেকে বিতাড়িত করেছিলো হামাস।

এত বছর পর আবার তাদেরকে গাজায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে আমেরিকানরা।

এখনো কিছুই এগোয়নি। কিন্তু, আন্তর্জাতিক মহল দীর্ঘদিন ধরে যে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের কথা বলে আসছে, ইসরাইলসহ সকল পক্ষ যখন সেদিকে অগ্রসর হবে, তখন আরব দেশগুলোর সমর্থন পাওয়া যাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের উন্নত অস্ত্রশস্ত্র এবং তাদের সমর্থিত বেসামরিক পারমাণবিক শক্তি কর্মসূচিতে প্রবেশের বিনময়ে আরব দেশগুলোর প্রধান পৃষ্ঠপোষক দেশ সৌদি আরব ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে পারে।

এদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার গাজায় পিএ নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

এই অবস্থায় গাজায় পিএ-কে ফিরিয়ে আবার চেষ্টার কারণে তার এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সম্পর্কে কিছুটা চিড় ধরাতে পারে।

তবে এই পরিকল্পনার বিষয়ে জানেন, এমন কেউ কেউ স্বীকার করেছেন যে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে অগ্রগতির অভাব, গাজায় চলমান মানবিক সংকট, ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে বিদ্যমান অবশিষ্ট আস্থাটুকুও ভেঙে যাওয়ার কারণে আপাতদৃষ্টিতে এটিকে উচ্চাভিলাষী বলে মনে হচ্ছে।

যদিও মার্কিন প্রশাসন তাদের এই পরিকল্পনার বিষয়ে এখনো আশাবাদী।

ব্লিঙ্কেনও তার বর্তমান সফরের অংশ হিসেবে শুক্রবার ইসরাইলেও যাবেন।

মিলারের মতে, তিনি ইসরাইলি নেতাদের সাথে জিম্মিদের বিষয়ে ও রাফাহ-তে বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য হামাসের পরাজয় সুনিশ্চিত করা নিয়েও আলোচনা করবেন।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরাইলকে সতর্ক করেছেন যে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহ-তে আক্রমণ শুরু করা ‘ভুল’ হবে। কারণ সেখানে এক মিলিয়নেরও বেশি বাস্তুচ্যুত বেসামরিক লোক আশ্রয় নিয়েছে।

কিন্তু মঙ্গলবার নেতানিয়াহু বলেন, ইসরাইল রাফাহ-তে হামাস ব্যাটালিয়নদের নির্মূল করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং স্থল আক্রমণ ছাড়া এটি করার আর কোনো উপায় নেই।

হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় ৩১ হাজার ৯০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

আর ইসরাইল বলছে, সাতই অক্টোবর দক্ষিণ ইসরাইলে হামাসের হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ জন নিহত ও ২৫৩ জন জিম্মি হওয়ার পর থেকে এই সংঘর্ষ শুরু হয়।

বুধবার গাজার মাটিতে, বিশেষত আল-শিফা হাসপাতালের চারপাশে প্রচণ্ড লড়াই হয়েছিল। কারণ সেখানে তৃতীয় দিনের মতো ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর অভিযান অব্যাহত ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবিসিকে বলেছেন যে আগে হাসপাতাল কমপ্লেক্সের চারপাশে অবস্থান করা ট্যাঙ্কগুলো এখন আল-ওয়াহদা স্ট্রিট বরাবর পূর্ব দিকে সরে গেছে।

তারা গাজা শহর ও উত্তরাঞ্চলে বিমান হামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধির কথাও জানিয়েছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গাজা শহরে মানবিক সহায়তা বিতরণের সময় ১১ জন নিহত হন। গাজার স্থানীয়রা বলছেন যে তারা শুধু বোমা হামলাই সহ্য করছে না, খাদ্য সংকটেরও সম্মুখীন হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ওসামা তৌফিক বলেন যে কিছুদিন শান্ত থাকার পর তার এলাকায় পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

‘আমরা শুধু বোমা হামলাই সহ্য করছি না, খাদ্য সঙ্কটও মোকাবেলা করছি’, তিনি বলেন।

তিনি জানান, গত রমজানে তারা ইফতারে কিছু একটা খেয়ে রোজা ভাঙতে পারতেন। কিন্তু এখন তারা পানির বাইরে তেমন কিছুই খেতে পান না।

এমনকি যে পানি তারা পান করছেন, সেগুলোও ‘নর্দমার গন্ধযুক্ত ও সুমদ্রের পানির মতো স্বাদযুক্ত’ বলে জানিয়েছেন তিনি।

তৌফিক বলেন যে তারা এখন সামান্য একটু রুটিও খেতে পান না। ‘আমার সন্তানরা ক্ষুধার কষ্টে ভুগছে’, বলছিলেন তিনি।

বুধবার সকালে ইসরাইলের সেনাবাহিনী বলেছে যে প্রায় ৯০ জনকে হত্যা করার পাশাপাশি তারা সেদিন ৩০০ জন সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

এটিকে তারা আল-শিফা হাসপাতালের চারপাশে ‘নির্দিষ্ট অভিযান’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

এই হাসপাতালে প্রথম অভিযান চালানো হয়েছিল গত নভেম্বরে। তখন ইসরাইলি সেনাবাহিনী এটিকে হামাসের ‘কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার’ হিসেবে অভিযুক্ত করেছিল।

যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করেছিল।

ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বলছে যে সোমবার ফের অভিযান শুরুর কারণ, ‘জ্যেষ্ঠ হামাস সন্ত্রাসীরা ভেতরে পুনরায় সংগঠিত হয়েছে…এবং তারা এটিকে ব্যবহার করে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা করছে।’

হামাস স্বীকার করেছে যে সোমবার সেখানে তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীর একজন জ্যেষ্ঠ কমান্ডার নিহত হয়েছেন। তবে তারা বলেছেন যে তিনি তখন ত্রাণ বিতরণে সমন্বয় করছিলেন। সূত্র : বিবিসি