সেদিন আসিবে কবে, যেদিন মানুষগুলো আবার মুক্ত স্বাধীন হবে
আজকাল বাইরে গেলে কারও সাথে দেখা হলে প্রথমে একটাই কথা, ভাই কেমন আছেন? আজকালতো আর দেখাই হয়না, বন্ধু বান্ধবের সাথে আড্ডা দেওয়া হয়না, আত্মীয় স্বজনের বাসায় গিয়ে কেউর সাথে দেখা করা যায়না, একমাত্র টেলিফোনেই সবার ভালমন্দের খবর নেয়ার একমাত্র মাধ্যম। পরিবারের সবাই আছেন কিন্তু থেকেও যেন নেই। ঘরবন্দী হয়ে এভাবে আর কতদিন থাকবো আল্লাহই জানেন। আসলেও তো তাই। এমন এক ভাইরাস এসেছে যা পৃথিবীর যত নামি দামি ডাক্তার আছেন, সবাইর নাকের ডগা দিয়ে উড়ছে বিশ্ব কাঁপানো এই ভাইরাস। এটাকে সামলাতে গিয়ে জনগণের জন্য নাক মুখ ঢেকে রাখার জন্য মাস্ক ব্যবহার, হ্যান্ড সেনিটাইজার ব্যবহার এবং ঘন ঘন হাত ধোঁয়ার উপর জোর দিয়ে বিশ্বের সকল দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের উপদেশে সরকার থেকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সবাই ঠিক মতোই এসব ব্যবহার করছে কিন্তু ফল তেমন কিছু পাওয়া যাচ্ছেনা। এক দিকে কিছু কমলেও অন্যদিকে দেখা যায় বেড়ে গেছে তার প্রকোপ । কোন মতেই যেন সামাল দেয়া যাচ্ছেনা।
চীন থেকে যখন প্রথম এই রোগ শুরু হয়, তখন আমেরিকা চীনকে দোষারোপ করে বলেছিলো চীনই এই রোগের আবিস্কারক, তারাই বিশ্বকে বেকায়দায় ফেলার জন্য এই রোগ আবিস্কার করে সবাইকে এক অস্বস্থিকর অবস্থায় ফেলেছে। অন্যদিকে চীন তার প্রত্যুত্তরে আমেরিকাকে দোষারোপ করে বলেছে, এই রোগ শুরু হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে আমেরিকা থেকে কয়েকজন আর্মি অফিসার চীনে এসেছিলো এবং তারাই একটা কিছু করে গেছে। যাই হোক, এরপর উভয় পক্ষই নীরব হয়ে যায়। উভয় পক্ষই বিশ্বের মোড়ল। বেশি বাড়াবাড়ি করলে, কেঁচো খুঁড়তে শাপ বেড়িয়ে আসবে। তাই আর বাড়াবাড়ি না করে দু’পক্ষই চুপ। কথা হচ্ছে, যদি চীন এই রোগের আবিস্কারক হতো, তা হলে স্বভাবত:ই সে তার নিজের দেশে ব্যবহার করে দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করার চেষ্টা করতো না, নিশ্চয়ই সে তার প্রতিদ্ব›্ধি কোন দেশের উপর তা প্রয়োগ করতো। আমি মনে করি এতো শক্তিশালী এই ভাইরাস মানুষের দ্বারা সৃষ্টি করা কোন মতেই সম্ভব নয়। যদি মানুষের দ্বারা সৃষ্টি হতো, তা হলে হয়তো কয়েকটা দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো। এই ভাইরাস বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ঘুরে বেড়াতে পারতোনা, কোথা না কোথাও দুর্বল হয়ে পড়তো। বিশ্বের এমন কোন দেশ নেই যেখানে ভাইরাস আক্রমন করেনি। এ পর্য্যন্ত সারা বিশ্বে প্রায় ৬ কোটি ৭ লাখের উপর মানুষ মারা গিয়েছে। বৃটেনে আজকের সর্বশেষ খবর হচ্ছে, করোনায় প্রায় ৪০০ জন মৃত্যুবরণ করেছেন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ২০,০১৮ জন। কি ভয়ঙ্কর সময় আমরা অতিবাহিত করছি এই পৃথিবীর মানুষগুলো।
পৃথিবীর ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, এর আগেও এভাবে বিভিন্ন রূপে বিভিন্ন ধরণের রোগের আবির্ভাব হয়েছে এ পৃথিবীতে। কিন্তু রোগগুলো কোন সময়ই কোন মানুষের দ্বারা সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি। এ ধরণের বিভিন্ন রোগগুলো আল্লাহ পাক মানুষের উপর নাজিল করেছেন মানুষকে হেদায়েতের জন্য। মানুষ যখন তার সীমানা লংঘন করে চলে যায়, যখন তারা প্রমাণ করতে চায় আমরা যা খুশী তাই করতে পারি। আমরা ইচ্ছা করলে পারমাণিক শক্তি দিয়ে দুনিয়া ধ্বংস করে দিতে পারি। সব কিছুই আমাদের হাতে। আল্লাহ পাক এবং রাসুল (স:) এর দেয়া আমাদের চলা ফেরার ক্ষেত্রে যে আদেশ নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা অমান্য করে যখনই মানুষ অবাধ্য হতে শুরু করে তখনই আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীনের তরফ থেকে গজব নাজিল হয়। এই গজব শুরু হওয়ার আগে থেকেই আল্লাহ পাক মানব জাতিকে হুঁশিয়ার করার জন্য বিভিন্ন ধরণের আলামত দেখান, যাতে তারা তাদের ভুল বুঝে ঠিক পথে আসতে পারে। কিন্তু মানুষ তা বুঝতে চেষ্টা করেনা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের দিকে তাকালে দেখা যায়, গত কয়েক বছর ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে টর্ণেডো, হারিকেন ইত্যাদি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে সাগর থেকে যে ঝড় ওঠে হাজার হাজার ঘর বাড়ি ধ্বংস করে, হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুরবণ করে। এই ঝড় থামাবার কোন বুদ্ধি বা শক্তি কি আছে মানুষের মধ্যে? তা কোন দিনই সম্ভব নয়। এছাড়াও আসে শক্তিশালী ভূমিকম্প, যা এক নিমিষেই ধ্বংস করে দেয় এক এক এলাকা, ঘরবাড়ি, গাছ গাছালির চাপা পড়ে নিহত হয় অসংখ্য মানুষ। দুনিয়ায় কারিগরি শিক্ষার দিক দিয়ে জাপান সবার উপরে। তার দেশের যে ঘরবাড়ি বানানো হয় তা খুবই উন্নতমানের, শক্তিশালী এবং টেকসই। ইতিমধ্যেই আমরা দেখেছি, জাপানে সাগর থেকে ওঠা ঝড়ে তাদের শক্তিশালী করে গড়ে তোলা ঘরবাড়ি ঝড়ের তান্ডবে পড়ে কাগজের মতো বাতাসে উড়ে বেড়াতে। ভূমিকম্পে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে অনেক মূল্যবান ঘরবাড়ি অফিস আদালত। এ সবের তান্ডবে মারা গেছে শত শত মানুষ। শুধু জাপানই নয়, আমেরিকায়তো কয়েক মাস পরপরই ঝড়ের আঘাতে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে, ধ্বংস হচ্ছে ঘরবাড়ি। চীন দেশে হত্যা করা হয়েছে এবং হচ্ছে হাজার হাজার শিশু কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধ মুসলমান নরনারীকে। মসজিদের গম্বুজগুলো ভেঙ্গে দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। শুধু চীন দেশেই নয়, ভারত, আমেরিকা, ইউরোপ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শুরু হয়েছে মুসলমানদের উপর অমানসিক অত্যাচার। শুধু তাদের কথাই বলবো কেন, আমরা তো মুসলমান এবং মহানবী (স:) এর উম্মত। আমরা কি মানছি আল্লাহ পাক ও তাঁর রাসুলের (স:) নির্দেশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলমানরাও এখন বিধর্মীদের ছাড়িয়ে অনেক উপরে চলে গেছে। যতো খারাপ কাজ, নির্লজ্বের মতো চলাফেরা অর্থাৎ এমন কোন কুকীর্তি নেই যা আমরা করছিনা অর্থাৎ বেহায়াপনার চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করে চলেছি, কি পুরুষ, কি মহিলা। সুতরাং আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে যে গজব এসেছে তা আমাদেরকে হেদায়েত করার জন্যই এসেছে। মুসলমানদের এখনও সময় আছে আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীনের কাছে গোনাহের মাফি চাওয়া, তওবা করা, তাহলেই হয়তো আল্লাহ পাক আমাদেরকে এই ভয়ঙ্কর ভাইরাসের আক্রমন থেকে রক্ষা করতে পারেন। সুতরাং বলা যায়, যতদিন পর্য্যন্ত আল্লাহ পাক মানুষের উপর থেকে গজব তুলে না নিবেন, ততদিন পর্য্যন্ত আমরা যতোই টিকা বা যে কোন ধরণের অষুধ আবিস্কার করার চেষ্টা করিনা কেন তা সফল হবেনা, আর যতোদিন পর্য্যন্ত তা সফল হবেনা আমাদেরকে ততদিন বন্দী জীবনই কাটাতে হবে। তাই আমরা শুধু অপেক্ষায়ই থাকবো, সে দিন আসিবে কবে- যে দিন মানুষগুলো আবার মুক্ত স্বাধীন হবে।
কার্ডিফ, ওয়েলস
৫ নভেম্বর ২০২০