দখলমুক্ত মসজিদে চুমু খেয়ে ঢুকলেন আজেরি প্রেসিডেন্ট

প্রকাশিত :  ১২:২১, ২৪ নভেম্বর ২০২০

দখলমুক্ত মসজিদে চুমু খেয়ে ঢুকলেন আজেরি প্রেসিডেন্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আর্মেনিয়ার হাত থেকে দখলমুক্ত করা মসজিদে চুমু খেয়ে ঢুকেছেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ। মসজিদে ঢুকে দোয়া প্রার্থনার পাশাপাশি কোরআন শরিফ রেখেছেন। 

সোমবার ২৭ বছর পর দুখলমুক্ত বিরোধীয় নাগোরনো-কারাবাখের আগদাম অঞ্চল সফরে যান বাকুর প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ফাস্ট লেডি মেহরিবান আলিয়েভা। 

এদিন স্ত্রী আলিয়েভা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটার ও ইন্সটাগ্রামে কয়েকটি ছবি পোস্ট করেন। পাশাপাশি ভিডিও আপলোড করেন। নিজস্ব যানবহনের চেপে অঞ্চলটিতে সফর করেন দেশটির প্রধান।  

ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা ছবিতে দেখা যায়, আগদামের একটি মসজিদে প্রেসিডেন্ট আলিয়েভ এবং তার স্ত্রী ও প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মেহরিবান আলিয়েভাকে নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করছেন। এসময় তিনি ও তার স্ত্রী মসজিদের ফটকে চুমু খেয়ে তাতে প্রবেশ করেন। এ সময় তিনি ও তার স্ত্রী কুরআনে চুমু খেয়ে সেটি মসজিদে রাখেন।

ভিডিওতে প্রেসিডেন্ট আলিয়েভ জানান, আজারবাইজানের সেনাবাহিনী কোনো বুলেট ব্যবহার না করেই আগদাম বিজয় করেছে।

এসময় আলিয়েভ আর্মেনিয়দের হাতে ধ্বংস হওয়া এলাকা দেখিয়ে বলেন, সমগ্র বিশ্বকে এসব দেখা উচিত। এখানে ভালো কোনো স্থাপনা নেই। সব আর্মেনিয়রা ধ্বংস করে ফেলেছে।

সাবেক সোভিয়েতভুক্ত দুই দেশের মধ্যে নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে যুদ্ধ চলে আসছে বহু আগে থেকেই। ১৯৯১ সোলে আর্মেনিয়া যখন নাগোরনো-কারাবাখ দখল করলে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়।

ওই যুদ্ধে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলটি আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের ভখণ্ড হিসেবে স্বীকৃত। 

পরে চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ হলেও সর্বশেষ ২৭ সেপ্টেম্বর আবারো দুই দেশ যুদ্ধে জড়ায়। পরে আর্মেনিয়া গত ১০ নভেম্বর রাশিয়ার মধ্যস্থতায় আজারবাইানের সঙ্গে চুক্তি করতে বাধ্য হয়।

৪৪ দিন চলা এই যুদ্ধে বাকু ৩০০টির বেশি বসতি ও এলকা দখলমুক্ত করে।

চুক্তিটি আজারবাইজানের জয় ও আর্মেনিয়ার পরাজয়ের দলিল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এ চুক্তিটিকে তুরস্ক সমর্থন জানিয়েছে। 

ঐতিহাসিক বদর দিবস আজ

প্রকাশিত :  ০৬:৪৮, ২৮ মার্চ ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ০৬:৫১, ২৮ মার্চ ২০২৪

আজ ১৭ রমজান। আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে ১৭ রমজান মদিনার মুসলিম ও কুরাইশদের একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ২য় হিজরির এই দিনে মহানবী (সা.)’র নেতৃত্বে সাহাবায়ে কেরামের ৩১৩ জনের একটি মুজাহিদ বাহিনী বদর প্রান্তরে উপস্থিত হন। ইসলামের ইতিহাসে যাকে জঙ্গে বদর বা বদর যুদ্ধ নামে অভিহিত করা হয়েছে।  মুসলমানদের সমৃদ্ধি ও শক্তিবৃদ্ধিতে ঈর্ষা ও শত্রুতা থেকেই পৌত্তলিক মক্কাবাসী রাসুলুল্লাহ (স.) ও তাঁর অনুসারীদের সাথে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটায়, ইসলামের ইতিহাসে তা ’গাজওয়ায়ে বদর’ বা বদর যুদ্ধ নামে পরিচিত। এই যুদ্ধে আবু জেহেলের এক হাজার সুসজ্জিত বাহিনীর বিপরীতে মুসলমানদের সেনা সংখ্যা ছিল মাত্র ৩১৩। 

যেসব পরোক্ষ কারণে বদরযুদ্ধের সূচনা হয়, তা হলো- হিজরতের পর মদিনায় ইসলামের দৃঢ় প্রতিষ্ঠা ও প্রসারে কুরাইশদের হিংসা, আবদুল্লাহ বিন ওবাই ও ইহুদিদের যড়যন্ত্র, ইসলামের ক্রমবর্ধমান শক্তির ধ্বংস এবং নবীজি (স.)-কে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার হীন চক্রান্ত, কাফেরদের সন্ধি-শর্ত ভঙ্গ, বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা, কাফেরদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা। প্রত্যক্ষ কারণ ছিল- নাখালার ঘটনা, কাফেরদের রণপ্রস্তুতি, আবু সুফিয়ানদের অপপ্রচার, যুদ্ধ প্রস্তুতির জন্য ওহি লাভ ও মক্কাবাসীদের ক্ষোভ।

ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর নগণ্যসংখ্যক সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহ তাআলার গায়েবি সাহায্যে আবু জেহেলের বিশাল বাহিনীকে পর্যুদস্ত করেছিলেন। এই যুদ্ধকে কোরআন কারিমে ‘সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।

মদিনার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে ৮০ মাইল দূরে এই সশস্ত্র যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ‘আশহুরে হুরুম’ বা নিষিদ্ধ চার মাসের অন্যতম হচ্ছে পবিত্র রমজান। এই রমজানেই মদিনা আক্রমণ করে বসে কাফেররা। তার বিপরীতে আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধের কৌশল গ্রহণ করেছিলেন মুসলিমরা।

আল্লাহর ওপর পূর্ণ বিশ্বাসী মুসলমানদের অস্ত্র ছিল মাত্র তিনটি ঘোড়া, ৭০টি উট, ছয়টি বর্ম ও আটটি তলোয়ার। রসদ কম মনে হলেও বিজয় লাভে তাদের প্রধান উপকরণ ছিল ঈমানি শক্তি। মুসলমানদের বিশ্ব জয়ের সূচনা এবং সর্বোত্তম ইতিহাস রচনার ভিত্তি এই বদর যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ৭০ জন মুশরিক নিহত ও ৭০ জন বন্দি হয়। অন্যদিকে মাত্র ১৪ জন মুসলিম বীর সেনানী শাহাদতের অমীয় সুধা পান করেন।

বদরের এ ঘটনা থেকে মুসলিম জাতীর সবচেয়ে বড় শিক্ষণীয় বিষয় হলো—মুসলিম উম্মাহ এমন একটি জাতি, যে নীরবে নিভৃতে অত্যাচার-অনাচার-জুলুম সহ্য করবে না। প্রয়োজনে জীবন দিয়ে হলেও সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখাকে কর্তব্য হিসেবে গ্রহণ করবে। 

ইসলামকে সমুন্নত রাখার জন্য কাফের-মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে। ঈমান ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য সূচিত করবে। বদর যুদ্ধ মুসলমানকে সর্বাবস্থায় আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে শেখায়। আল্লাহর ওপর দৃঢ় ঈমান ও নির্ভর হওয়া শেখায়। যুদ্ধে অবিচল থাকা ও সবর করা শেখায়।

বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মুসলিমরা ইসলামবিদ্বেষীদের জুলুমের শিকার হচ্ছেন এবং ইসলামের শত্রুরা ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আর মুসলমানরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে নীরবে বসে আছেন। তা মোটেও ইসলামের শিক্ষা নয়। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বদরের যুদ্ধ থেকে শিক্ষা নেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।