১৯ নভেম্বর, আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস

img

পুরুষদের বীরত্ব তুলে ধরা, সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা

প্রকাশিত :  ১৪:১১, ২৬ নভেম্বর ২০২০
সর্বশেষ আপডেট: ১৪:১৬, ২৬ নভেম্বর ২০২০

নারীদের চেয়ে ৩ গুণ বেশি পুরুষ আত্মহত্যা করে, পুরুষ মারা যায় নারীদের চেয়ে ৪ থেকে ৫ বছর আগে। পুরুষেরা হৃদরোগে ভুগে বেশি।

পুরুষদের বীরত্ব তুলে ধরা, সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা

আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস কবে? উত্তর দিতে গিয়ে থমকে যাবেন অনেকেই। উত্তরটা হলো ১৯ নভেম্বর। 

নারী দিবস আর পুরুষ দিবসের পার্থক্য হলো - নারী দিবস প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে নারীর অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। অনেক অত্যাচার সহ্য করে, জেল জুলুম খেটে আত্মত্যাগ এর বিনিময়ে  অর্জন করতে হয়েছে নারী দিবস। আর  পুরুষের বীরত্বকে তুলে ধরা এবং সমাজে ও পরিবারে পুরুষের অবদানকে উদযাপন করতেই পুরুষ দিবসের সূচনা হয়। এ বছরের আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের থিম হলো ‘বেটার হেলথ ফর ম্যান এন্ড বয়েজ’।

নারী-পুরুষ আদতে সমাজের দুটি স্তম্ভ। যার উপর ভিত্তি করেই দাঁড়িয়ে থাকে একটা সুস্থ, স্বাভাবিক সমাজ।

আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস প্রতি বছর ১৯ নভেম্বর তারিখে পালিত হয়। সারা বিশ্বব্যাপী পুরুষদের মধ্যে লিঙ্গ ভিত্তিক সমতা, পুরুষদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরার প্রধান উপলক্ষ হিসেবে এই দিবসটি উদযাপন করা হয়ে থাকে।

পুরুষ দিবসের ইতিকথা:

কথিত আছে, ১৯২৩ সালে, অগণিত পুরুষ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মতো আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস পালনের দাবি তুলে। প্রথমে ঠিক হয়েছিল ২৩ ফেব্রুয়ারী পুরুষ দিবস পালন করা হবে। ঠিক ৮ মার্চ নারী দিবসের আগেই হবে পুরুষ দিবস। কিন্তু তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে আগে থেকেই ২৩ ফেব্রুয়ারী বিশ্বযুদ্ধে মৃত সৈনিকদের শ্রদ্ধা জানাতে এবং পুরুষজাতিকে উদ্বুদ্ধ করতে রেড আর্মি ও নেভি ডে  পালন করা হতো।  ফলে ফেব্রুয়ারীর পরিবর্তে নভেম্বর মাসে পুরুষ দিবস পালনের জন্য ঠিক হয়।  

ষাটের দশক থেকেই পুরুষ দিবস পালনের জন্য লেখালেখি চলছে। ১৯৬৮ সালে আমেরিকান সাংবাদিক জন পি হ্যারিস নিজের লেখায় এ দিবসটি পালনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। নব্বই দশকের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও মাল্টায় কয়কেটি প্রতিষ্ঠান  পুরুষ দিবস পালনের জন্য বেশ কয়কেটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। যদিও অনুষ্ঠানগুলো খুব একটা প্রচার পায়নি। অংশগ্রহণও ছিল কম।

দিনটিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি আনার পেছনে যার সবচেয়ে বেশি অবদান রয়েছে তিনি ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর বাসিন্দা জেরোমি টিলুকসিংহ। তিনি দিবসটির স্বীকৃতির জন্য তার পিতার জন্মদিন ১৯ নভেম্বরকে বেছে নেন। আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের পেছনে ইউনেসকোরও পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। 

অবশেষে ১৯৯৯ সালের ১৯ নভেম্বর ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে প্রথম আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস উদযাপিত হয়েছিল। বর্তমানে প্রতি বছর ১৯ নভেম্বর বিশ্বের ৮০টিরও বেশি দেশে পালন করা হয় দিবসটি। এই দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো - যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রিয়া,  চীন, কানাডা, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ক্রোয়েশিয়া, জ্যামাইকা, কিউবা, স্কটল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মাল্টা, কানাডা, ডেনমার্ক, নরওয়ে ও ইউক্রেন।

আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসেকে গুরুত্ব দেবার আরো কারণ হলো:

ইন্টারন্যাশনাল মেনসডে ওয়বেসাইট অনুসারে, বিশ্বের নারীদের চেয়ে ৩ গুণ বেশি পুরুষ আত্মহত্যা করে, পুরুষ মারা যায় নারীদের চেয়ে ৪ থেকে ৫ বছর আগে। পুরুষেরা হৃদরোগে ভুগেন বেশি। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে এবং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস পালনের লক্ষ্য। 

শিশু,  কিশোর ও পুরুষের স্বাস্থ্যের  বিষয়ে বিশেষ যতœ ও মনোযোগ দেয়া। বিভিন্ন সংস্কার ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে এবং সমাজ, পরিবার, বিবাহ ও শিশু যতেœর ক্ষেত্রে পুরুষদের সচেতনতা তৈরী করা। নারী-পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন, সমান অধিকার বিষয়ক প্রচারণা করা এবং পুরুষদের অর্জন ও অবদানকে তুলে ধরাও এ্ দিবসের উদ্দেশ্য।

বিশ্বজুড়ে পুরুষ দিবসে নানা ভাবে পালনের রেওয়াজ রয়েছে। শোভাযাত্রা  এবং মহিলা ও পুরুষদের সাম্যতা রক্ষার্থে বিভিন্ন দাবী-দাওয়া সম্পর্কিত আলোচনা সভা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপন করা হয়। লিঙ্গ সমতা, কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের একই সুযোগ দেওয়ার মত সামাজিক বিষয়গুলিও প্রাসঙ্গিকভাবে আসে। 

নারীর অধিকারগুলো পুরোপুরি অর্জিত না হলে যেমন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা যাবে না, তেমনি পুরুষের অধিকার বাদ দিয়েও সেটা হবে না। নারীর অধিকার ও পুরুষের অধিকার তাই একে অপরের পরিপূরক। 

নারী-পুরুষ একই মানবসমাজের সহযোদ্ধা। উভয়ের লড়াইটা মূলত বৈষম্য ও সকল প্রকার  নির্যাতকের বিরুদ্ধে, অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে। অন্যায় ও বৈষম্যমূলক রীতিনীতিকে ধারণ করে যে সমাজ সেই সামাজিক বৈষম্য ও রীতিনীতির বিরুদ্ধে। এ লড়াইতে সচেতন পুরুষ ও নারী দুজনকেই এগোতে হবে পাশাপাশি।

অনেকে ‘দিবস’ পালনের মর্মার্থ বুঝতে পারেননা। আসলে প্রতি বছর একটি দিনকে  দিবস’ হিসেবে পালনের উদ্দেশ্য হলো অসংগতি দূর করা, উত্তরণের উপায় উদ্ভাবন ও পালন। আগামীদিনের জন্য কিছু কর্মসূচী গ্রহণ করা এবং বিগত বছরের প্রতিবাদ্য বিষয় কতটুকু কার্যকর হলো তার মূল্যায়ণ করা।

অপরদিকে, ১৯ নভেম্বর আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের পরদিন ২০ নভেম্বর ছিলো বিশ্ব শিশু দিবস। দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে শিশুদের গুরুত্বকে মনে করেই এই দিনটি পালিত হয়। এছাড়াও,এই দিনে শিশুদের অধিকার সম্পর্কে সব মানুষকে আরও সচেতন করার চেষ্টা করা হয়। শিশুরা যাতে সঠিক শিক্ষা পায়, দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে শিক্ষা পায় সে ব্যাপারেও প্রচার করা হয় এই দিনটিকে উপলক্ষ করে। পাশাপাশি শিশুদের সঠিক পুষ্টির প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরা হয়।

*নিলুফা ইয়াসমীন হাসান: সাংবাদিক ও কলাম লেখক*

লন্ডন ২৫ নভেম্বর ২০২০

মতামত এর আরও খবর

img

গাজা যুদ্ধ বন্ধে বাইডেন কেন এতটা মরিয়া

প্রকাশিত :  ১১:৪১, ১২ মে ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১১:৪৮, ১২ মে ২০২৪

জনাথন ফ্রিডল্যান্ড

দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হবেন কি না তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উদ্বেগ একেবারে প্রান্তে এসে পৌঁছেছে। জো বাইডেনের পরামর্শ বারবার উপেক্ষা করে আসছিলেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এই উপেক্ষার মূল্য কী হতে পারে, এই সপ্তাহে ইসরায়েল সেটা দেখতে পেল।

ইসরায়েলের ৩ হাজার ৫০০ বোমার চালান আটকে দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। এই অস্ত্র ইসরায়েল গাজার দক্ষিণের শহর রাফা আক্রমণে ব্যবহার করবে, সেই বিবেচনায় অস্ত্রের চালানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাফায় এখন ১০ লাখের বেশি শরণার্থীর আশ্রয়শিবির।

ইসরায়েলের প্রতি জো বাইডেন তাঁর ‘লৌহদৃঢ়’ সমর্থন থেকে সরে আসছেন না। কিন্তু ইসরায়েল রাফা হামলার জন্য যে হুমকি দিয়ে চলেছে, সেটা সফল করতে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করবেন না। সিএনএনকে বাইডেন বলেছেন, ‘ইসরায়েলের নিরাপত্তা দেওয়া থেকে আমরা সরে আসছি না। অন্যখানে যুদ্ধ করার সক্ষমতা তৈরির পথ থেকে সরে আসছি আমরা।’

ইসরায়েলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আইজাক রবিন বলতেন, তাঁর দেশের ১ নম্বর কৌশলগত সম্পদ এই সব অস্ত্র, এমনকি পারমাণবিক অস্ত্র নয়; বরং ওয়াশিংটনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক। দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় অস্ত্রের জোগানদাতা ও কূটনৈতিক অভিভাবক। 

কিন্তু মাত্র ছয় সপ্তাহের ব্যবধানে ওয়াশিংটন এমন দুটি পদক্ষেপ নিল, যা পুরোপুরি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গেল। গত মার্চ মাসে নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ভেটো দেওয়া থেকে বিরত থাকে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে ইসরায়েল প্রস্তাবটি আটকে দিতে চাইলেও ব্যর্থ হয়। আর এখন তো ওয়াশিংটন অস্ত্রের চালান আটকে দিল।

এর থেকেও বড় বিষয় হলো, এই সিদ্ধান্তগুলো এমন একজন রাজনীতিবিদ নিয়েছেন, যিনি ব্যক্তিগতভাবে ইসরায়েলের খুব নিবেদিতপ্রাণ সমর্থক। বাইডেন সেই যুগের একজন ডেমোক্র্যাট, যখন দুই সহস্রাব্দের নির্বাসন ও শাস্তির পর মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদিদের আদি বাড়ি প্রতিষ্ঠার বিষয়টি গতি পেতে শুরু করেছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের উদারপন্থীদের চোখ তখন রহস্যজনকভাবে বন্ধ ছিল।  

গোল্ডা মেয়ার থেকে শুরু করে ইসরায়েলের প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাইডেন দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে। ইসরায়েলের প্রতি বাইডেনের টান বাড়ার ক্ষেত্রে এর একটার ভূমিকা আছে। পূর্বতন প্রেসিডেন্টদের মতো বাইডেনের ইসরায়েলের প্রতি ভ্রাতৃত্ববোধ শুধু নির্বাচনী হিসাব-নিকাশের বিষয় নয়।  

গাজা নিয়ে কোনো চুক্তি হচ্ছে না। কেননা, নেতানিয়াহু কিংবা সিনাওয়ারা কেউই বিশ্বাস করেন না, চুক্তি করলে তাঁদের স্বার্থ রক্ষিত হয়। যেমনটা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা অ্যারন ডেভিড মিলার বলেছেন, ‘এই সংঘাত বন্ধে একটি পক্ষেরই কেবল সত্যিকারের তাড়া আছে, সেই পক্ষটি হলেন জো বাইডেন।’

অন্যদিকে ১৯৮০-এর দশকে নেতানিয়াহু প্রথম আলোচনার পাদপ্রদীপে উঠে আসেন। তিনি এমন একজন কূটনীতিক, যিনি আমেরিকানদের সঙ্গে সাবলীলভাবে কথা বলতেন। সে সময় থেকেই তিনি নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে দাঁড় করান। ইসরায়েলের একজন হবু নেতার জন্য এই দক্ষতা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। 

কয়েক দশক ধরে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর ভোটারদের এই বার্তা দিয়ে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যকার সব ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিনিই একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি।

কিন্তু বাস্তব অবস্থাটা এখন কী দাঁড়াল?  চার দশকের বেশি সময়ের মধ্যে বাইডেনই প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করলেন। (১৯৮২ সালে ইসরায়েলের লেবানন অভিযানের সময় রোনাল্ড রিগ্যান যুদ্ধবিমান দিতে বিলম্ব করেছিলেন।) বাইডেন কেন এটা করলেন? কারণ, নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের একটি অংশের জনগোষ্ঠীর মধ্যে এমন তিক্ততা তৈরি করেছেন, যেটা আগে দেখা যায়নি।

ইসরায়েলের প্রতি যে যুক্তরাষ্ট্রের সমাজের নিরেট সমর্থন, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেভাবে ছাত্র আন্দোলন আছড়ে পড়েছে, সেটা বিস্ময়করই। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা গ্যালাপের মার্চ মাসের জরিপ বলছে, ৫১ শতাংশ ইসরায়েলের পক্ষে সমর্থন দিয়েছে, ২৭ শতাংশ সমর্থন দিয়েছে ফিলিস্তিনের পক্ষে। কিন্তু ডেমোক্র্যাট ও তরুণ জনগোষ্ঠী—দুই ক্ষেত্রেই ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সমর্থন অনেকটাই বেড়েছে।

জরিপের এই তথ্য বাইডেন ও তাঁর নির্বাচনী প্রচারণা দলকে চিন্তার মধ্যে ফেলেছে। এই অংশের দ্ব্যর্থহীন সমর্থনই ২০২০ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করতে ভূমিকা রেখেছিল। গাজাবাসীর দুর্ভোগ সেই ভোটারদের সমর্থন অনিশ্চিত করে তুলেছে। হোয়াইট হাউস নেতানিয়াহুর কাছে পরিকল্পনা চেয়েছিলেন, বেসামরিক জনসাধারণকে হতাহত না করে কীভাবে রাফায় অভিযান করতে পারে ইসরায়েল। 

কিন্তু নেতানিয়াহু সেই পরিকল্পনা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সেই কারণে ইসরায়েলকে থামানোর জন্য অস্ত্রের চালান আটকে দেওয়ার সরাসরি পথ বেছে নিয়েছে ওয়াশিংটন।

রাফা বাইডেনের জন্য শক্তি পরীক্ষার জায়গাও হয়ে উঠেছে। বাইডেন রাফাকে বিপদরেখা হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। নেতানিয়াহু যদি সেই বিপদরেখা অতিক্রম করেন, তাহলে বাইডেন দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত হবেন।

কিন্তু নেতানিয়াহু এখন পর্যন্ত রণেভঙ্গ দিতে অস্বীকার করেছেন। ইসরায়েলের স্বাধীনতা আন্দোলনকে সামনে রেখে জনগণের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ছাড়া আমরা একাই লড়ে যাব। প্রয়োজনে আমরা আমাদের নখ দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাব।’ 

নেতানিয়াহু চার্চিলের মতো আওয়াজ তুলতে চাইছেন। কিন্তু তাঁর কথাগুলো দুর্বলের কণ্ঠস্বর, সবলের নয়। ওয়াশিংটন চায়, নেতানিয়াহু যেন রাফা অভিযান থেকে সরে আসেন। কিন্তু জোট সরকারের অতি ডানপন্থী মিত্ররা তাঁকে আরও কঠোর হতে বলছেন, রাফা অভিযানের মাধ্যমে হামাসের বিরুদ্ধে পুরোপুরি বিজয়ের জন্য বলছেন।

এই নিরানন্দ নাটকে বাইডেন ও নেতানিয়াহুই কেবল কুশীলব নন; হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনাওয়ারেরও নিজস্ব হিসাব-নিকাশ আছে, নেতা হিসেবে টিকে থাকার সংকল্প রয়েছে। খুব ঘনিষ্ঠভাবে যাঁরা সিনাওয়ারকেও পাঠ করেছেন তাঁরা বিশ্বাস করেন, নির্দোষ মানুষের জীবন রক্ষা করা তাঁর অগ্রাধিকার নয়; বরং যত বেশি গাজাবাসী নিহত হবেন, আন্তর্জাতিক পরিসরে তাঁর শত্রু ইসরায়েলে অবস্থান ততই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেই পরিস্থিতি তাঁকে বিজয়ী দাবি করতে সহায়তা করবে। সম্প্রতি হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নেওয়ার ঘোষণার পেছনে সিনাওয়ারের এই ভাবনায় কাজ করেছে। 

সিনাওয়ারা সাময়িক কোনো যুদ্ধবিরতি (তাতে অনেক মানুষের প্রাণরক্ষা হয়, দুর্ভোগ কমে) চান না, তিনি চান স্থায়ী যুদ্ধবিরতি। আর তার জন্য সিনাওয়ারা অপেক্ষা করতেও রাজি।

গাজা নিয়ে কোনো চুক্তি হচ্ছে না। কেননা, নেতানিয়াহু কিংবা সিনাওয়ারা কেউই বিশ্বাস করেন না, চুক্তি করলে তাঁদের স্বার্থ রক্ষিত হয়। যেমনটা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা অ্যারন ডেভিড মিলার বলেছেন, ‘এই সংঘাত বন্ধে একটি পক্ষেরই কেবল সত্যিকারের তাড়া আছে, সেই পক্ষটি হলেন জো বাইডেন।’


জনাথন ফ্রিডল্যান্ড, ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ানের খ্যাতিমান কলামিস্ট

মতামত এর আরও খবর