প্রকাশিত : ১৪:২৩, ২৬ নভেম্বর ২০২০
আগামী ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে প্রাইমারী স্কুল থেকে সেক্স এডুকেশন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। “সরকারের এডুকেশন ডিপার্টমেন্টের এক কর্মকর্তা বলেন, আগা মী সেপ্টেম্বর ২০২১ থেকে প্রাইমারী স্কুল থেকে রিলেশন্সশীপ এন্ড সেক্স এডুকেশন নতুন এই কারিকুলাম বাধ্যতামূলক করা হবে। নতুন এই পলিসি সত্যি শিশুরা উপকৃত হবে। এতে সকল অভিবাবক বাবা মা’কে সহযোগিতা করতে হবে।” এডভাইজার ফর প্রাইমারী স্কুল অন এ্যানকারেজ পেরেন্টস অন রিলেশনশীপ এডুকেশনের মতে শিক্ষকরা মনে করেন, সামাজিক অবস্থান, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য সচেনতা শিক্ষা দেয়ার সাথে সাথে শুধু সেক্স নয় ভালোবাসারও ভিন্ন ভিন্ন রূপ যে আছে সে বিষয়গুলো সম্পর্কেও ছোটবেলা থেকেই ধারণা দেয়া উচিত। শিক্ষকদের মতে, ছোটবেলা থেকেই তাদের সন্তানদের সথে বাবা মা সেক্স সম্বন্ধে আলোচনা করলে ক্লাসে যখন এ বিষয়ে পড়ানো হবে তখন তারা বিব্রতবোধ করবেনা।
বৃটেনের অফিস অব দ্যা ন্যাশনাল স্টেটিসটিকস সোর্সের ২০১৮ সালের হিসেব অনুযায়ী গ্রেট বৃটেনে মুসলমানদের সংখ্যা হচ্ছে ৩,৩৭২,৯৬৬ জন অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫ দশমিক ১ ভাগ। এর মধ্যে ইংল্যান্ডে হচ্ছে ২৬৬০,১১৬ অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫ দশমিক ২ ভাগ, স্কটল্যান্ডে ৭৬,৭৩৭ জন এবং ওয়েলসে ৪৫,৯৫০ জন।
বৃটেনের লোক সংখ্যার হিসেবে মৃসলিম কমিউনিটির স্থান হচ্ছে দ্বিতীয়। মোট জনখ্যার শতকরা ৫ দশমিক ১ ভাগ। বৃহৎ এই কমিউনিটির অভিবকদের সাথে কোন পরামর্শ না করেই এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট প্রাথমিক স্কুল থেকেই রিলেশন্সশীপ এন্ড সেক্স এডুকেশন কারিকুলামে অন্তর্ভূক্ত করে ছাত্র ছাত্রীদের জন্য বাধ্যতামুলক করা হয়েছে। এ নিয়ে মুসলিম কমিউনিটির মধ্যে বিরাট অসন্তুষ দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে এসোসিয়েশন অব স্কুল এন্ড কলেজ লিডারের ডিরেক্টর জুলি ম্যাকচুলাসও বলেছেন, নতুন কোন বিষয় বা কারিকুলাম বাধ্যতামূলক করার পূর্বে অবশ্য অভিভাবকদের মতামত নেয়া প্রয়োজন ছিলো।
সরকারের এই সিদ্ধান্তে বৃটেনের অধিকাংশ মা বাবাই এক মত নন। তারা বলেন, প্রাইমারী স্কুল থেকে সেক্স বিষয়ে পড়ানো টু আর্লি হয়ে যায়। বৃটেনের প্রায় ৯০টি সংগঠনের দ্বারা পরিচালিত এক জরীপে দেখা যায়, প্রায় এগারো হাজার অভিবাবকের এই মতামত। তারা মনে করেন এই সময়টা শিশুদের পড়াশোনায় মন দিয়ে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ সময়।
অবশ্য ইংরেজদের জন্য এটা কোন ব্যাপার নয়। ইংলিশ পত্রপত্রিকায় প্রায়ই খবর বের হয়ে স্কুলে থাকা অবস্থায়ই অনেকে মা হয়ে যায়। ইংরেজ মা বাবারাও এখন হয়তো মনে করছেন যে, অতি অল্প বয়স থেকে এই সেক্স এডুকেশন চালু হলে তাদের মেয়েরা অতি অল্প বয়সেই মা হয়ে যাবে। মা হওয়া আগের সংখ্যা থেকে এখন যদি দ্বিগুন হয় তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই যেহেতু এটা তাদের সমাজে প্রচলিত আছে। এদেশের অভিভাবকরা চায় তাদের মেয়েরা সেকেন্ডারীতে উঠে গেলেই একজন বয়ফ্রেন্ড থাকা দরকার। আমি নিজে দেখেছি, ১৯৮৪ সালে আমি যখন ম্যানচেষ্টারে একটা রেষ্টুরেন্টে কাজ করি তখন একজন ইংরেজ মহিলা কাষ্টমার প্রায়ই তার দু’মেয়েকে নিয়েকে খেতে আসতো। ধীরে ধীরে তাদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো। মাঝে মধ্যে ডে অফ এর দিন বেড়াতে যেতাম। মহিলার স্বামী নেই, মারা গেছে। একদিন তার বাসায় গেছি, বসে বসে গল্প করছি। সোফাতে বসা মহিলা এবং তার দু’ মেয়ে হেদার এবং কিম্বারলী। হেদার বড় সে কলেজে পড়ে। কিছুক্ষণ পর হেদারের বয়ফ্রেন্ড এসে ফোন করতেই সে চলে গেলো। এর কিছুক্ষণ পর কিম্বারলী তার রুমে চলে গেল কোন এক কাজে। এই ফাঁকে তাদের মা আমাকে খুব দু:খের সাথে বললো জানিস ফয়সল, আমার এই কিম্বারলীর জন্য আমি খুব চিন্তিত আছি। বললাম কেন, সে তো লেখাপড়া করতেছে তো চিন্তা কিসের জন্য? জানো তার এখনও কোন বয়ফ্রেন্ড নেই। আমি বললাম, তো কি হয়েছে, সে তো সবেমাত্র এ বছর জিসিএসসি দেবে। আগে পরীক্ষাটা দিয়ে দিক, তারপরতো এমনিতেই বয়ফ্রেন্ড ধরবে। তাকে সান্তনা দিয়ে বললাম, এ চিন্তা ছেড়ে দিয়ে তাকে ভালো করে লেখাপড়া করতে বলো। এই হলো তাদের সমাজ। আমাদের এবং তাদের সমাজের পার্থক্য।
যাই হোক, এই সেক্স এডুকেশনের ব্যাপারে ওয়েলস এর বাংলাদেশী অর্গেনাইজেশনের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কমকর্তা কর্মচারী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সহ ওয়েলস এর অনলাইন পত্রিকা, অনলাইন টিভি অর্থাৎ মিডিয়ার সাথে জড়িত সাংবাদিকবৃন্দও তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। ওয়েলস এর প্রখ্যাত সাংবাদিক মকিস আহমেদ মনসুর বলেন, একজন মুসলমান হিসেবে এডুকেশন ডিপার্টমেন্টের এই সিদ্ধান্তকে আমরা মেনে নিতে পারিনা। তিনি বলেন, আমাদের কমিউনিটির পক্ষ থেকে আমি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। শুধু মকিস আহমদ মনসুরই নন, ওয়েলস এর মুসলিম কমিউনিটির বক্তব্যও একই। সবারই একটি কথা, আমরা মুসলমান, আমাদের ধর্মে যেহেতু ইহা গ্রহণ যোগ্য নয় সেহেতু আমরা তা মেনে নিতে পারিনা। তাদের আরও বক্তব্য হচ্ছে, কম বয়স থেকেই যদি ক্লাসে এসব পড়ানো হয় তাহলে তারা একটু বড় হলেই এদিকে মন আকৃষ্ট হবে বেশী, যার ফলে অন্যান্য মেইন সাবজেক্টগুলো যার উপর তাদের ভবিষ্যতে লেখাপড়ায় এগিয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলার কথা, তা না হয়ে ফল হবে তার উল্টো। ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ হবে অন্ধকার। সুতরাং এ সিদ্ধান্ত আরা মেনে নিতে পারিনা।
আমার মনে হয় শুধু ওয়েলসেই যদি সেক্স এন্ড এডুকেশনের বিরুদ্ধে মুসলিম কমিউনিটির এই প্রতিক্রিয়া হয়, তাহলে বৃটেনের অন্যান্য এলাকার মুসলমানদেরও একই প্রতিক্রিয়া হওয়ার কথা। গত বছর বার্মিংহামের কয়েকটি প্রাইমারী স্কুলে সেক্স এডুকেশন ক্লাস শুরু করলেও অভিবাবকদের চাপের মুখে সেক্স এডুকেশন বন্ধ করতে তারা বাধ্য হয়েছিলো এ কথা সবারই জানা। তাই আমার মনে হয়, বৃটেনে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের মুসলিম কমিউনিটির সকল মসজিদ, মাদ্রাসা সহ যত মুসলিম সংগঠনগুলো আছে তাদের নেতৃবৃন্দের উচিৎ এ ব্যাপারে এডুকেশন ডিপার্টমেন্টে প্রতিবাদ লিপি পাঠানো সহ ্আওয়াজ তোলা “আমরা এ সিদ্ধান্ত মানিনা, মানবোনা”।এ রকম প্রতিবাদ সরকারের এডুকেশন ডিপার্টমেন্টে গেলে আমার বিশ্বাস, মুসলমান ছাত্র ছাত্রীদের জন্য এ ব্যাপারে হয়তো কোন একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বার্মিংহামের ঘটনায় আমার কাছে তাই মনে হয়।
*দেওয়ান ফয়সল, সাংবাদিক, বিশেষ প্রদায়ক, সাপ্তাহিক জনমত; সদস্য, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব*
ওয়েলস, ২৬ নভেম্বর ২০২০