রেস্তোরাঁ বন্ধ করে স্কুল খুলে দিন: বাংলাদেশকে মার্কিন বিশেষজ্ঞ

প্রকাশিত :  ০৬:২০, ০২ ডিসেম্বর ২০২০

রেস্তোরাঁ বন্ধ করে স্কুল খুলে দিন: বাংলাদেশকে মার্কিন বিশেষজ্ঞ

জনমত ডেস্ক : ‘স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় শিশুদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং উন্নতির ওপর সুস্পষ্ট নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে’ উল্লেখ করে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই বাংলাদেশের স্কুলগুলো পুনরায় চালু করার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে বলে পরামর্শ দিয়েছেন মার্কিন এক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মাইকেল ফ্রিডম্যান এক সাক্ষাত্কারে ইউএনবিকে জানান, তিনি রেস্তোরাঁর পরিবর্তে স্কুল খোলা রাখার পক্ষে।

‘স্কুলগুলো বন্ধ বা খোলা রাখার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তে এটি বিবেচনা করা উচিত,’ বলেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র এবং বৈশ্বিক পর্যায়ে ২৭ বছরের বিবিধ কাজের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এ বিশেষজ্ঞ বিশ্বব্যাপী চলমান পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করে বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা বর্তমান প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ওপর জোর দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ভবিষ্যত প্রজন্মের ওপর নয়।

তিনি বলেন, ‘সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা আপাতত প্রাপ্তবয়স্ক বা বর্তমান প্রজন্মকে বাঁচতে সহায়তা করার জন্য ভবিষ্যত প্রজন্মকে ধ্বংস হতে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

এ বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘স্কুল বন্ধ রেখে কোনো উপকার পাওয়া যাচ্ছে কি না সেটি একটি বড় প্রশ্ন। আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, স্কুল এবং রেস্তোরাঁর মধ্যে আমি কোনটি বন্ধ রাখার পক্ষে। আমি বলব রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ করুন এবং স্কুলগুলো খুলে দিন।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, স্কুলগুলো বন্ধ থাকার ফলে শিশুদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং উন্নতি, পরিবারের আয় ও সামগ্রিক অর্থনীতিতে এর স্পষ্ট নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে।

ডব্লিউএইচও’র মতে স্কুলগুলো পুনরায় খোলার সিদ্ধান্তের মধ্যে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত তা হলো- শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা শেষ করতে সহায়তা এবং পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ অব্যাহত রাখা, প্রয়োজনীয় পরিষেবা, পুষ্টি নিশ্চিত করা, শিশু কল্যাণ যেমন শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধ, সামাজিক এবং মানসিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা, কীভাবে নিজেকে এবং অন্যদের সুরক্ষিত রাখতে হবে সে বিষয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য সরবরাহ, স্কুলে ফিরে না আসার ঝুঁকি হ্রাস এবং সমাজের উপকার করা।

ডা. ফ্রিডম্যান বলেন, শিশুদের কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম এবং তাদের মাধ্যমে পরিবারের অন্য সদস্যদের সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা আরও কম।

এছাড়া, শিশুদের গুরুতর রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কম বলে জানান তিনি।

এ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘এখানে যদি কোনো শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক কোনো ব্যক্তি বসে থাকে এবং উভয়ই যদি কোভিড আক্রান্ত হয়, তাহলে ওই প্রাপ্তবয়স্কের মাধ্যমে আপনার কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, শিশুর থেকে নয়।’

সুতরাং, প্রশ্ন হলো- স্কুলগুলো থেকে কি সংক্রমণ বৃদ্ধি পাবে? ডা. ফ্রিডম্যান বলেন, কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে এটি সত্য না হলেও, ইনফ্লুয়েঞ্জার ক্ষেত্রে এটি সত্য।

চার মহাদেশে বসবাস এবং কাজ করা এ বিশেষজ্ঞ বলেন, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় এবং সহজ কোনো সিদ্ধান্ত নয় (বিদ্যালয় পুনরায় চালু করা)। শিক্ষা, বিশেষ করে নারী শিক্ষাকে বিশ্বের উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মূল কারণ উল্লেখ করে ডা. ফ্রিডম্যান বলেন, ‘আপনি যদি প্রায় পুরো বছরই মানুষকে আর শিক্ষিত না করেন তাহলে ক্ষতির পরিমাণ খুব বেশি। এক বছর ধরে শিশুদের স্কুলে না যাওয়ার জনস্বাস্থ্যের প্রভাবগুলোও আমাদের বুঝতে হবে।

ডা. ফ্রিডম্যান আরও বলেন, ‘অনলাইন শিক্ষা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভালো শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকর। তবে এর বাইরে বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য আমার খুব খারাপ লাগছে। ভালো শিক্ষার্থীদের মতো সক্ষমতা এবং সংস্থান তাদের নেই।’


সেরোলজি গবেষণা

বাংলাদেশের ছয়টি মহানগরীতে সেরোলজি গবেষণা পরিচালনা করছে সিডিসি।‘এখনও ফলাফল পাইনি। তবে আমরা শিগগিরই তা জানতে পারব। ভাইরাসটিকে কীভাবে আমরা নিয়ন্ত্রণ করছি এবং ভবিষ্যতে আমরা কী আশা করতে পারি সে বিষয়ে এ গবেষণা আরও অনেক তথ্য দেবে,’ বলেন সিডিসির বিশেষজ্ঞ।

সেরোলজি হলো রক্তরস নিয়ে গবেষণা এবং এটি বিশ্বজুড়ে করা হচ্ছে। সেরোলজি গবেষণা কোনো জনগোষ্ঠীর মাঝে প্রাদুর্ভাবের আকার বা সংক্রমণের মাত্রা নির্ধারণ করতে সহায়তা করে।

মাঠ পর্যায়ে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে কী ঘটছে তা দেখার জন্য মার্কিন এ বিশেষজ্ঞ কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের প্রথম চার মাসে বাংলাদেশের ১৫ জেলা পরিদর্শন করেছেন।


শত ভাগ মাস্ক, হাত ধোয়া নীতি

ডা. ফ্রিডম্যান বলেন, মানুষকে সুরক্ষিত রেখেই বাংলাদেশ এখনও রেস্তোরাঁগুলো খোলা রাখার অনুমতি প্রদান এবং ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারে।

বাংলাদেশে সামাজিক দূরত্ব আরও বেশি কঠিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শত ভাগ মানুষের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত এবং নিয়মিত হাত ধোয়ার নীতি চালু করে আপনার সত্যিই এটি করা সম্ভব।’

এ দুটি কৌশল কঠোরভাবে অনুসরণ করে বাংলাদেশ তার অর্থনীতির চাকা চালু রাখতে পারে।

সিডিসির বিশেষজ্ঞ বলেন, অর্থনীতির চাকা চালু রাখার মধ্য দিয়ে মানুষকে উপার্জনে সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশ কিছুটা শিথিলতা চায় এবং এটিই মূল চ্যালেঞ্জ।

‘জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হিসেবে, মানুষের জীবিকা এবং তাদের সুরক্ষার মধ্যে আমাকে ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়। তবে এ ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন,’ বলেন তিনি।

ডা. ফ্রিডম্যান বলেন, এ দুটি ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত বেশ ভালো কাজ করেছে।


দ্বিতীয় ঢেউ বা এখনও প্রথম ঢেউ

মার্কিন এ বিশেষজ্ঞ বলছেন, প্রথম ঢেউ কেটে যাওয়ার পর দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানতে পারে। তবে প্রথম ঢেউই আসলে শেষ হয়নি।

তিনি বলেন, কোভিডের বর্তমান ঢেউ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে কারণ মানুষ নিজের সুরক্ষা নিয়ে কম চিন্তিত।

‘শুধুমাত্র শীতের মৌসুমের কারণে নয়, মানুষের অসচেতনতাই সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলবে,’ বলেন ডা. ফ্রিডম্যান।

এ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, আবহাওয়া নয়, মানুষের আচরণই সমস্যার বড় কারণ।

‘মহামারি প্রায় শেষের দিকে রয়েছে মনে করে মানষ যদি ভাইরাসটিকে গুরুত্বের সাথে না নেয়, যদি তারা মাস্ক ব্যবহার না করেন, সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে যান এবং গণপরিবহন ব্যবহার করেন তাহলে তারা কোভিডে আক্রান্ত হতে পারেন এবং ঢেউ আরও বড় হতে পারে। এসব বিষয় একসাথে কোভিড-১৯ সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ তৈরি করতে পারে,’ বলেন তিনি।

কোভিড-১৯ মোকাবিলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যের বিষয়ে জানতে চাইলে মার্কিন বিশেষজ্ঞ বলেন, এটি বিচার করা কঠিন, তবে সফল কি না তা ইতিহাসই বলে দেবে।

‘এ মুহূর্তে এটি বলা কঠিন কারণ কোভিড-১৯ মেকাবিলায় বিশ্বব্যাপী নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ সফল হয়েছে না কি ব্যর্থ হয়েছে সে বিষয়ে এখনও আমাদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। তবে এ সংকট থেকে ইতোমধ্যেই শেখার মতো বিষয় পাওয়া গেছে এবং সেটি আমরা জানি,’ বলেন সিডিসির কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মাইকেল ফ্রিডম্যান।

ডিপফেক ভিডিও থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন যেভাবে

প্রকাশিত :  ১০:১৪, ২৮ মার্চ ২০২৪

বিজ্ঞানের উৎকর্ষকালে প্রযুক্তি যেমন মানুষের উপকার করছে, তেমনি কিছু প্রযুক্তি মানুষের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি প্রযুক্তি হলো ডিপফেক প্রযুক্তি বা ডিপফেক ইন্টেলিজেন্সি।

অনেকে ডিপফেক এআইকে একুশ শতকের ফটোশপিং বলে থাকে। সহজ ভাষায় ডিপফেক হলো এআই নির্ভর এমন এক প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে যেকোনো ভিডিও, ছবি এবং অডিও রেকর্ডিংয়ে বিশ্বাসযোগ্যভাবে মানুষের মুখমণ্ডল বা কণ্ঠস্বর নকল করা যায়।

দিন দিন বাড়ছে ডিপফেক প্রযুক্তির অপব্যবহারের সংখ্যা। প্রথম প্রথম বিশ্বের নামকরা সেলিব্রিটি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ডিপফেক ইন্টেলিজেন্সি দিয়ে তৈরি নকল ভিডিও দ্বারা হেনস্তার শিকার হন।

ডিপফেক প্রযুক্তি থেকে নিজের ডেটার সুরক্ষার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যায়। সেগুলো উঠে এসেছে এনডিটিভির প্রতিবেদনে। 

১. যতদূর সম্ভব নিজের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অন্য কোনো পাবলিক প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। এসব প্ল্যাটফর্মে প্রাইভেসি সেটিংসগুলো সঠিকভাবে নির্বাচন করতে হবে। 

২. শক্তিশালী ও অনন্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে অনলাইন অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। ফলে ছবি ও ভিডিওগুলোয় অননুমোদিত অ্যাকসেস লাভ করা হ্যাকারদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে এবং ডিপফেক প্রযুক্তি দিয়ে নিজের গোপনীয়তা লঙ্ঘনের সম্ভাবনা কমে যায়। 

৩. কম্পিউটারে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করিয়ে হ্যাকাররা ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত ডেটা ও ছবি চুরি করতে পারে। এসব ডেটা ও ছবি দিয়ে ডিপফেক কনটেন্ট তৈরি করে হ্যাকাররা। এজন্য কম্পিউটারে ভালোমানের অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করা উচিত। এভাবে ব্যক্তিগত মিডিয়াতে ক্ষতিকারক টুলগুলোর অ্যাকসেস পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

৪. ডিপফেক কনটেন্টের সাধারণ লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানতে হবে। যদি কোনো ভিডিও, ছবি ও কণ্ঠ খুবই নিখুঁত বা অবাস্তব বলে মনে হয় তবে এটি শেয়ার করা বা বিশ্বাস করার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার মাধ্যমে এ ধরনের কারসাজি ভিডিও শনাক্ত করা যাবে। 

৫. নিজের ছবি ও ভিডিওতে জলছাপ বা ওয়াটারমার্ক যুক্ত করুন। এসব ওয়াটারমার্ক অনেক সময় সম্পূর্ণ মুছে ফেলা যায় না। আর সম্পূর্ণ মুছে ফেলার সময় ছবি ও ভিডিও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ফলে এসব ছবি ও ভিডিও দিয়ে ডিপফেক তৈরি কঠিন হয়ে পড়ে। জলছাপ একটি অতিরিক্ত সুরক্ষা হিসেবে কাজ করে।

৬. নিজের ফাইলগুলোয় মেটাডেটা সঠিকভাবে এম্বেড করা হয়েছে নাকি তা নিশ্চিত করতে হবে। মেটাডেটা হলো ফাইল সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক তথ্য। যেমন- কে তৈরি করেছে, কবে তৈরি করা হয়, কোথায় তৈরি হয়েছে, কবে এডিট করা হয়েছে, টাইটেল ইত্যাদি। মিডিয়া ফাইল ব্যবহার নিয়ে বিরোধ বা দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে এটি মালিকানার প্রমাণ হিসেবে কাজ করতে পারে। 

তবে এসব পদ্ধতি নিজের ডেটা সুরক্ষা দেবে তার শতভাগ নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না।