হানাদার মুক্ত সিলেট

img

অকুতোভয় দুই মুক্তিযোদ্ধার সাহসের গল্প

প্রকাশিত :  ২৩:৪৬, ১৭ ডিসেম্বর ২০২০
সর্বশেষ আপডেট: ২৩:৫২, ১৭ ডিসেম্বর ২০২০

অজয় পাল

অকুতোভয় দুই মুক্তিযোদ্ধার সাহসের গল্প

।। অজয় পাল ।।

গল্পটি তেরো ডিসেম্বর একাত্তর সালের। ছয় ডিসেম্বর   বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার পর ভারতীয় মিত্রবাহিনী সিলেট শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রচন্ড বিমান হামলা শুরু করে। এসময় গেরিলা তৎপরতা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চোরাগুপ্তা হামলাও সমান্তরালভাবে চলতে থাকায় পাকসেনা ও তাদের দোসররা প্রায় দিশেহারা হয়ে পড়ে এবং পাকি-দের কয়েকটি ঘাঁটিরও পতন ঘটে। এরই মধ্যে তেরো ডিসেম্বর পাকবাহিনী হঠাৎ করে পাল্টা বিমান হামলা শুরু করলে মুক্তি ও মিত্রবাহিনী সড়ক পথে বিনা যুদ্ধে সিলেট দখলের প্রস্তুতি নেয়।
এর আগে বারো ডিসেম্বর জৈন্তাপুরের দরবস্ত এলাকায় অবস্থান নেয়া মুক্তিযুদ্ধের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের তথা ৪ ও ৫ নম্বর সেক্টরের বেসামরিক প্রধান, তৎকালীন জাতীয় পরিষদ সদস্য দেওয়ান ফরিদ গাজী, মিত্র বাহিনীর অধিনায়ক কর্নেল বাগচী এবং ৪ নম্বর সেক্টর কমান্ডার সি আর দত্ত সিলেটের মানচিত্র নিয়ে  বসে উল্লেখিত সিদ্ধান্তের ছক কষেন। সে অনুযায়ী তেরো ডিসেম্বর পাকসেনাদের বিমান হামলা উপেক্ষা করে মুক্তিবাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্যকে সাথে নিয়ে  এগিয়ে এসে তাঁরা অবস্থান নেন সিলেট শহরের পূর্ব দিকে খাদিমনগরে। একই সময়ে  মুক্তিযোদ্ধাদের আরো দুটি দল অবস্থান নেয় দক্ষিণ-পশ্চিমে জালালপুর এবং  লামাকাজী এলাকায়। একমাত্র উত্তর দিক ছিলো উন্মুক্ত। বিস্তীর্ণ সীমান্ত ও পাহাড়ি এলাকা থাকায় সেদিকে পাকবাহিনীর পালানোর সকল পথ ছিলো রুদ্ধ।
ইতোমধ্যে এমসি কলেজ থেকে পাক বাহিনী তাদের ক্যাম্পটি গুটিয়ে  নেয়নি, এমন খবর চলে আসলে এদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করার প্রস্তুতি নেয়া হয় দুপুরের দিকে। হরিপুর গ্যাস ফিল্ড, টিলাগড়স্থ বেতার কেন্দ্র ও এমসি কলেজ সহ অন্যান্য স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে আশঙ্কায় যুদ্ধ অর্থাৎ লড়াইয়ের পরিকল্পনা বাদ দেয়া হয়। সে অনুযায়ী দু’জন অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধার প্রয়োজন অপরিহার্য হয়ে ওঠে, যারা গাড়িতে মাইক বেঁধে পাকবাহিনীর ক্যাম্পে পৌঁছে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানাবে। হাত উঁচিয়ে  স্বেচ্ছায় এগিয়ে এলেন দুই মুক্তিযোদ্ধা। জীবনের উপর মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে  এগিয়ে  আসা এই দুই মুক্তিযোদ্ধার একজন দেওয়ান ফরিদ গাজীর দীর্ঘদিনের ছায়াসঙ্গী ফোরকান আলী (কুটু মিয়া), অপরজন টগবগে যুবক আনোয়ার হোসেন গোরা।



অল্পক্ষণের মধ্যেই গাড়িতে মাইক বেঁধে তাঁরা পৌঁছে গেলেন এমসি কলেজে পাক সেনাদের ক্যাম্পে। মাইকে উপর্যুপরি আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানোর এক পর্যায়ে কয়েকজন পাকসেনা এগিয়ে এসে তাঁদের আটক করে জীপসহ ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালাতে থাকে। তাঁরা তখন পাকসেনাদের জানিয়ে দেন যে, মুক্তি ও মিত্রবাহিনী তোমাদের কাছাকাছি অবস্থানে। আমাদের হত্যা করলে পরিণতি ভয়াবহ হবে, বরং তোমরা আত্মসমর্পণ করো । তখন হঠাৎ কি ভেবে যেনো দুজনকেই তারা প্রায় দু’ঘন্টা পর গাড়ি নিয়ে  চলে যেতে বলে। জবাবে তাঁরা বলেন, তোমরা কি পেছন থেকে আমাদের গুলি করতে চাচ্ছো?  ক্যাম্প ইনচার্জ বলে, নাহ্, তোমরা নির্ভয়ে যাও। মিত্রবাহিনীকে বলে দিও, আমরা আপার লেভেলে যোগাযোগ করে আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব।
প্রাণ নিয়ে ফিরে এসে দুই মুক্তিযোদ্ধা আদ্যপান্ত জানালে পরদিন চৌদ্দ ডিসেম্বর বিকেলের দিকে মুক্তি ও মিত্রবাহিনীকে সাথে নিয়ে  দেওয়ান ফরিদ গাজী, সি আর দত্ত ও কর্নেল বাগচী শহর অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। এদিকে অবস্থা বেগতিক দেখে আগের রাতেই পাকবাহিনী এমসি কলেজের ক্যাম্প গুটিয়ে নিয়ে সালুটিকর বিমানঘাঁটিতে চলে যায়। যাবার আগে তারা ডিনামাইট দিয়ে  উড়িয়ে দিয়ে যায় সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কীনব্রিজটি । এদিকে সিলেট অভিমুখী যাত্রার অংশ হিসেবে আনোয়ার হোসেন গোরা ও ফোরকান আলীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের আরো দুটি দল সালুটিকর বিমান ঘাঁটি পর্যন্ত ঘুরে আসে। মিত্র বাহিনীর একটি দল অবস্থান নেয় আলুরতলে সরকারী দুগ্ধ খামারের কাছে । এরই মাঝে সন্ধ্যা ঘনিয়ে  আসে । চারদিক থেকে স্রোতের মতো সিলেট শহর অভিমুখে মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর আগমন ঘটতে থাকে । এদের সাথে যুক্ত হন মুক্তিকামী আপামর জনগণ। জয়বাংলা শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে সিলেট নগরী। হানাদার মুক্ত সিলেটের জনগণ আনন্দে সেদিন রাতে দুচোখের পাতা আর এক করতে পারেননি। পরদিন পনেরো ডিসেম্বর সিলেটকে মুক্তাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। ইতোমধ্যে পাকবাহিনীর দোসর আলবদর , রাজাকার, আল-সামশ ও শান্তি বাহিনীর সাথে সংশ্লিষ্টরা আত্মগোপনে চলে যায়।
সিলেটকে মুক্ত করার সেদিনের অভিযাত্রায় অগণন মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর অবদান আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সন্দেহাতীতভাবে সমৃদ্ধ করলেও সেই দুজন মুক্তিযোদ্ধা, ফোরকান আলী ও আনোয়ার হোসেন গোরা’র কীর্তিকে আমি একটু এগিয়েই রাখছি। কতটুকু সাহসী হলে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে হানাদারদের ডেরায়  চলে যেতে পারেন দুই বীর, ভাবতেই আজো আমি অবাক হই । অথচ এই দুই বীরকে আজ আমরা ভুলতে বসেছি। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক সংবাদকর্মীকে সিলেট মুক্ত দিবস সম্পর্কে লিখতে দেখেছি। তারা নিজেদের প্রতিবেদনে এই দুই মুক্তিযোদ্ধার নাম উল্লেখ না করে “অজ্ঞাতনামা দুই মুক্তিযোদ্ধা” শব্দটি ব্যবহার করেছেন, যা কিনা নিতান্তই দুঃখজনক।
সিলেট নগরীর সুবিদবাজার নিবাসী ফোরকান আলী প্রয়াত হয়ে ছেন ’৯৫ সালের ২৩ অক্টোবর আর জালালাবাদ আবাসিক এলাকা নিবাসী আনোয়ার হোসেন গোরা লোকান্তরিত হয়েছেন ২০০৬ সালের ১২ মে। ব্যক্তিজীবনে দুজনই ছিলেন খুবই সমাজ-বান্ধব এবং নগরীর পরিচিত মুখ। গোরা ছিলেন সংস্কৃতিমনস্ক মানুষ । গানের কন্ঠ ছিলো অপূর্ব। চমৎকার করে গাইতেন: “তোমরা ভুলে গেছো মল্লিকাদির নাম” গানটি। প্রয়াত চিত্রনায়ক জাফর ইকবালের খুব নিকটজন ছিলেন এই আনোয়ার হোসেন গোরা।
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের গর্বিত ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত এই দুই বীর সর্বমহলে যথাযথ সম্মানিত হবেন, এ আমার প্রত্যাশা ।
অজয় পাল, প্রবীণ সাংবাদিক।
লণ্ডন ১৬ ডিসেম্বর ২০২০

img

যুদ্ধ উত্তেজনায় ইরান-ইসরায়েল, কে জিতল, কে হারল?

প্রকাশিত :  ১১:৪৯, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১১:৫৬, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

সিমন টিসডল

ইসফাহানের সামরিক ঘাঁটির কাছে ও অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতে গত শুক্রবার আকাশপথে ইসরায়েল যে হামলা চালায়, ইরান সেটা ততটা পাত্তা দিতে নারাজ। বাইরে থেকে হামলার বিষয়টা তেহরান অস্বীকার করেছে। 

ইসরায়েলি মুখপত্ররা আর সব বিষয়ে অনর্গল বাক্যবর্ষণ করে চললেও এ ঘটনায় অদ্ভুতভাবে নীরব। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, ঘটনাকে গুরুত্বহীন করে তুলতে দুই পক্ষের মধ্যে যেন একটা চুক্তি হয়েছে, যাতে ধীরে ধীরে উত্তেজনার পারদ এমনিতেই নিচে নেমে যায়।

এটিকে উনিশ শতকের সেই চোরাগোপ্তা কোনো এক ডুয়েল লড়াইয়ের মতো মনে হচ্ছে; যেন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ইংরেজ ব্রিটেনে কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে তৃণভূমির মধ্যে পরস্পরের দিকে অবৈধভাবে পিস্তল তাক করেছে। ইরান ও ইসরায়েল দুই দেশেরই মানমর্যাদা পরিপূর্ণভাবে রক্ষা করতে হবে, কিন্তু সেটা আবার করতে হবে জনগণের মধ্যে যেন আবার চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু না হয়, সেটা মাথায় রেখে। 

দুই দেশই একে অন্যের দিকে সরাসরি হামলা করেছে। তাতে প্রতীকী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখন তারা এবং তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে খেলা শেষ, অন্তত এবারের মতো।

এটা যদি সত্যি (যদিও সম্ভাবনাটা সাময়িক সময়ের জন্য) হয়, তাহলে সেটা অনেক বড় স্বস্তির বিষয়। এ ঘটনা এই ইঙ্গিত দেয় যে সংযত হতে ইসরায়েলের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র চাপ (যুক্তরাজ্য ও অন্য দেশগুলোও তাতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে) কাজে এসেছে। 

গত সপ্তাহে ইসরায়েলে ইরানের অভূতপূর্ব ও বড় পরিসরে হামলার পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের প্রতি ‘জয়টাকে ধরে রাখার’ আহ্বান জানিয়ে ছিলেন। বোঝা যাচ্ছে, এই বার্তার মর্মোদ্ধার সফলভাবেই করতে পেরেছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের নেতৃত্ব কখনোই কোনো বিষয়ে পুরোপুরি ঐকমত্য হতে পারে না।

অবশ্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ডিএনএর মধ্যেই সংযমের বালাই নেই। সাবেক এই কমান্ডো ইরানের হামলার পর সহজাতভাবেই পাল্টা শক্তি দেখাতে চেয়েছিলেন। আর তাঁর কট্টর ডানপন্থী মিত্ররা যুদ্ধের উন্মাদনা সৃষ্টি করেছিল। 

এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েল যে মাপা পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে মানাতে পেরেছে। আর ইরানের ড্রোন ও মিসাইল হামলা থেকে ইসরায়েলকে সুরক্ষা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, সেটাও নেতানিয়াহুর পক্ষে উপেক্ষা করা সম্ভব হয়নি।

আবার ইসরায়েলের সামান্যতম উদ্‌যাপনের কোনো কারণ নেই। এটা ঠিক যে এবার ইসরায়েল ইরানের হামলা ঠেকিয়ে দিয়েছে। কিন্তু অজেয় বলে ইসরায়েলের যে সুখ্যাতি, সেটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। ইসরায়েল অভেদ্য দুর্গ বলে যে মিথ, সেটা গুঁড়িয়ে গেছে। একইভাবে গাজায় এখনো হামাসের হাতে বন্দী ১৩০ পণবন্দী রয়ে গেছে। হামাস এখনো অপরাজেয়।

অবশ্য এখানেই বিষয়টা মীমাংসা হয়ে গেল এটা ধরে নেওয়াটাও বোকামি হয়ে যাবে। রাজনৈতিক ও মতাদর্শিকভাবে গভীর বৈরিতা ইরান ও ইসরায়েল—এই দুই শত্রুকে পরস্পর থেকে আলাদা করে রেখেছে। 

দুই দেশের সরকারের মধ্যেই অভ্যন্তরীণ বিভাজন রয়েছে, যা চরম অনিশ্চয়তা ও প্ররোচনাময় পরিবেশ সৃষ্টি করছে। তারই একটা ভয়ানক নজির আমরা গত কয়েক দিনে দেখতে পেলাম। একেবারে মুখোমুখি যুদ্ধের প্যান্ডোরার বাক্সটি সরাসরি খুলে গিয়েছিল।

বছরের পর বছর ধরে দুটি দেশ যে ছায়াযুদ্ধ লড়ে যাচ্ছিল, সেই যুদ্ধ তারা সবার চোখের সামনে দিনের আলোয় নিয়ে এসেছিল। ইরান দেখিয়ে দিয়েছে যে তারা ইসরায়েলের যেকোনো জায়গায়, যেকোনো সময়, প্রত্যক্ষভাবে হোক আর পরোক্ষভাবে হোক, হামলা চালাতে সক্ষম। আর ইসরায়েল দেখাল যে তারা যদি চায়, তাহলে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালাতে সক্ষম, পরেরবারের হামলা হবে আরও ভয়াবহ।

ইসরায়েল-ইরানের এ অচলাবস্থা ফিলিস্তিন সংঘাতের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। কিন্তু ফিলিস্তিন সংকট নিরসনে কোনো ভূমিকা রাখছে না। আর ফিলিস্তিন সংকটে পশ্চিমাদের দোটানা অবস্থান আগের চেয়ে তীব্র হলো। 

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন একপেশে, দ্বিমুখী নীতির প্রতীক হয়ে উঠলেন। গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছতে তিনি প্রাণান্ত চেষ্টা করে চলেছেন, কিন্তু যুদ্ধবিরতির চেষ্টায় সমানভাবে ঢিলেমি করে যাচ্ছেন। ফলে তাঁর নীতি খুব সামান্যই সফলতার মুখ দেখছে।

এর একটা কারণ হতে পারে, ঋষি সুনাকের সরকার ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রির সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না। আরেকটি কারণ হলো, ১ এপ্রিল দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলের বিমান হামলার (এই হামলায় ইরানের জ্যেষ্ঠ কয়েকজন কমান্ডার নিহত হন, ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক হামলা চালায় ইরান) নিন্দা জানাতে ক্যামেরন অস্বীকৃতি জানান।

জাতিসংঘ–বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের কনস্যুলেটে ইসরায়েলের হামলা ছিল আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। গত সপ্তাহে ক্যামেরন অবশ্য স্বীকার করেছেন, যুক্তরাজ্যের কোনো দূতাবাসে এ ধরনের হামলা হলে তারা কঠোর ব্যবস্থা নিত। 

কিন্তু তিনি কখনোই বলবেন না, ইসরায়েল অন্যায় করেছে। এ ধরনের ইসরায়েলপন্থী অবস্থান বেশির ভাগ পশ্চিমা দেশের সরকারগুলোর চারিত্রিক অবস্থান।

হারজিতের প্রশ্নটি বড় পরিসর থেকে বিবেচনা করা হলে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে গত সপ্তাহের ঘটনাপ্রবাহে ইউক্রেনীয়রাও সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা আরেকটি পশ্চিমা ভণ্ডামির শিকার। 

দুই বছরের বেশি সময় ধরে কিয়েভ ন্যাটোর কাছে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও মিসাইল প্রতিরক্ষাব্যবস্থা চেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের সেই চাওয়া বৃথা পর্যবসিত হয়েছে।

অথচ ইরান যখন ইসরায়েলে ড্রোন ও মিসাইল হামলা করল, তখন পশ্চিমা দেশগুলো তেল আবিবের সুরক্ষা দিতে কী না করেছে। ইরান ৩০০ ড্রোন ও মিসাইল ছুড়লেও প্রায় অক্ষত থাকে ইসরায়েল। অথচ প্রতি সপ্তাহে রাশিয়া সমানসংখ্যক ড্রোন ও মিসাইল হামলা করে ইউক্রেনে।  

একইভাবে অবরুদ্ধ গাজাবাসীর হতাশা আরও প্রলম্বিত হলো এ–ই দেখে যে নেতানিয়াহুর প্রতি পশ্চিমা সমালোচনা রাতারাতি পাল্টে গেছে। পশ্চিমাদের এই সংহতির ঐকতানের জন্য ইরান অবশ্যই নেতানিয়াহুর ধন্যবাদ পেতে পারে। 

দাতা সংস্থাগুলো ফিলিস্তিন নিয়ে অব্যাহতভাবে সতর্ক করে যাচ্ছে যে সেখানে দুর্ভিক্ষ আসন্ন। ইসরায়েলের হাতে ৬ মাসে ৩৪ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। রাফায় ভয়াবহ আগ্রাসন চোখরাঙানি দিচ্ছে। গাজা ও পশ্চিম তীরে কোনো বিজয়ী নেই, কেবল পরাজিত রয়েছেন।

ইরান দাবি করেছে, তারা খুব সফলভাবে দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে বোমাবর্ষণের শাস্তি দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ইরানের এই হামলাকে একটা পরাজয়ই বলা যায়। কেননা, এতে তাদের সামরিক সীমাবদ্ধতা প্রকাশ হয়ে গেছে। 

এ হামলার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ইরান আরও একঘরে হয়ে গেছে, তেহরানের ঘাড়ে নতুন নিষেধাজ্ঞার বোঝা চেপেছে এবং ফিলিস্তিনিদের সুবিধা হয়—এমন কোনো কিছু করতে পারেনি ইরান। অবশ্য সেটা তাদের নেতারা তোয়াক্কা করেন না।

আবার ইসরায়েলের সামান্যতম উদ্‌যাপনের কোনো কারণ নেই। এটা ঠিক যে এবার ইসরায়েল ইরানের হামলা ঠেকিয়ে দিয়েছে। কিন্তু অজেয় বলে ইসরায়েলের যে সুখ্যাতি, সেটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। ইসরায়েল অভেদ্য দুর্গ বলে যে মিথ, সেটা গুঁড়িয়ে গেছে। একইভাবে গাজায় এখনো হামাসের হাতে বন্দী ১৩০ পণবন্দী রয়ে গেছে। হামাস এখনো অপরাজেয়।

অনেকের কাছেই শক্তিশালী যুক্তি হলো, মধ্যপ্রাচ্যের মূল সংকট সমাধান করতে হলে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের অবসান করতে হবে। এর জন্য অনেক বেশি কূটনৈতিক সময়, শক্তি ও সম্পদ ব্যয় করা প্রয়োজন। 

এই সংঘাত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় বিষ ছড়াচ্ছে। এই সংঘাত পশ্চিমা নীতিকে ভারসাম্যহীন করে তুলছে। ইরানের মতো দুর্বৃত্ত খেলোয়াড়ের ক্ষমতা বাড়াচ্ছে।


সিমন টিসডল: বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক ভাষ্যকার ও কলাম লেখক;
(গার্ডিয়ান থেকেঅনূদিত)

মতামত এর আরও খবর