ভারত থেকে আড়াই লাখ টন চাল আমদানি করছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত :  ০৮:২৩, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০

ভারত থেকে আড়াই লাখ টন চাল আমদানি করছে বাংলাদেশ

জনমত ডেস্ক : এ বছর ধানের উৎপাদন কম হওয়ায় ঘাটতি পূরণ করতে ভারত থেকে কয়েক লাখ টন চাল আমদানি করবে বাংলাদেশ। ভারতের সাথে এখন পর্যন্ত আড়াই লাখ টন রফতানির চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ভারতের ন্যাশনাল এগ্রিকালচার কো-অপারেটিভ মাকেটিং ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া (ন্যাফেড) বাংলাদেশের কাছে দেড় লাখ টন চাল রফতানি করবে। তবে তাদের সাথে আরো এক লাখ টন চাল রফতানির বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বাংলাদেশ সরকার চাচ্ছে সিংহভাগ চাল সরকারি ন্যাফেডের কাছ থেকে নিতে।

যদিও ভারতের দুটি বেসরকারি রফতানিকারক টেন্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশে চাল রফতানির সুযোগ পেয়েছে। এদিকে বর্তমানে বাংলাদেশ চাল রফতানির ওপর নেয়া ৬২ দশমিক পাঁচ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনায় সুবিধা পাচ্ছে ভারতের রফতানিকারকরা।

ভারতের চাল রফতানিকারক সংগঠন অল ইন্ডিয়া রাইস এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক ভিনোদ কুমার বলেন, ‘বাংলাদেশে এ বছর বন্যার কারণে ধান উৎপাদন কম হয়েছে। সেই ঘাটতি পূরণ করতে তারা চাল আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এটা মূলত সিদ্ধ চাল। বাংলাদেশ এ বছরও বাসমতি চালে নিজেদের চাহিদা পূরণ করে অন্য দেশে রফতানি করছে।’

ন্যাফেডের সাথে দেড় লাখ টন চাল রফতানির যে আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে, সেই চাল কী দরে দেয়া হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে তাদের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, ‘দেড় লাখ টন রফতানি চূড়ান্ত হলেও তার দর এখনো ঠিক হয়নি। বাংলাদেশের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাইসিং কমিটি সেটা ঠিক করবে। আশা করছি দু’এক দিনের মধ্যে চুক্তি সই হয়ে যাবে।’

চাল আমদানি করার জন্য বাংলাদেশ সরকার যে গ্লোবাল টেন্ডার আহ্বান করেছিল, তাতে অংশ নিয়ে একটি বেসরকারি সংস্থা ৪০৫ ডলার প্রতি টন দরে এবং অন্য সংস্থাটি ৪১৬ ডলার প্রতি টন দরে সিদ্ধ চাল রফতানি করবে।

ভিনোদ কুমার বলেছেন, বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ চাল রফতানি করার সুযোগ ভারত পাচ্ছে। কারণ অন্য চাল রফতানিকারক দেশ যেমন থাইল্যান্ড বা ভিয়েতনামের থেকেও সস্তায় চাল দিতে পারছি আমরা।

যদিও বাংলাদেশের সাথে চাল রফতানির চুক্তি সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক চুক্তি। কিন্তু দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ড. সঞ্জয় ভরদ্বাজ বলছেন, ‘উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলোতে শান্তি বজায় রাখা বা পূর্ব সীমান্ত নিরাপদ রাখতে নানাভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য ভারত তাদের সহায়তা দিচ্ছে। যার অন্যতম হলো, প্রায় সমস্ত বাংলাদেশী পণ্যের জন্য ভারতের বাজারকে শুল্কমুক্ত করে দেয়া। বাংলাদেশও ট্র্যানজিট দিয়েছে যার মাধ্যমে উত্তরপূর্বাঞ্চলের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলো লাভবান হচ্ছে।’

‘শুধুমাত্র তিস্তার জল না পাওয়া ছাড়া ভারতের ব্যাপারে বাংলাদেশের বিশেষ ক্ষোভ থাকার কথা নয়। তবে সম্প্রতি এন আর সি ও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বাংলাদেশের একটা দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে। এখন সেদেশে চালের ঘাটতি পূরণে যদি ভারত এগিয়ে যায়, সেই ক্ষোভ বা দুশ্চিন্তা কিছুটা প্রশমন করতে পারবে বলে ধারণা করছেন অধ্যাপক ভরদ্বাজ।’

ভারতের চাল রফতানিকারকরা বলছে, বাংলাদেশে ভারতের চাল রফতানির ক্ষেত্রে এবার রেকর্ড হতে চলেছে। সূত্র : বিবিসি


বিশ্বে প্রতিদিন ১০০ কোটি টন খাবার নষ্ট হয় : জাতিসংঘ

প্রকাশিত :  ১৭:৫৩, ২৮ মার্চ ২০২৪

জাতিসংঘের নতুন এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ১০০ কোটি টনের বেশি খাবার নষ্ট হচ্ছে। যদিও এর বিপরীতে প্রতিদিন অনাহারে থাকছে প্রায় ৮০ কোটি মানুষ।

বুধবার (২৭ মার্চ) জাতিসংঘ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। খাবার অপচয়ের এ ঘটনাকে উল্লেখ করা হয়েছে ‘বৈশ্বিক ট্র্যাজেডি’ হিসেবে।

জাতিসংঘের ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের প্রায় ৮০ কোটি মানুষ যখন না খেয়ে আছে, তখন লাখ কোটি ডলার মূল্যের খাবার ময়লার ঝুড়িতে ফেলা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২২ সালে যত খাবার নষ্ট হয়েছে, তার ২৮ শতাংশ নষ্ট হয়েছে রেস্তোরাঁ, ক্যান্টিন ও হোটেলের মতো খাদ্য পরিষেবা ব্যবস্থাগুলোতে। কসাই ও মুদিদোকানে নষ্ট হয়েছে ১২ শতাংশ খাবার। তবে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৬০ শতাংশ খাবার নষ্ট হয়েছে বাসাবাড়িতে। এর পরিমাণ ৬৩ কোটি ১০ লাখ টন।

বাড়িঘরগুলোতে প্রতি বছর যে পরিমাণ খাদ্য নষ্ট হয়, তা এক বছরে বিশ্বে মোট উৎপাদিত খাদ্যের এক পঞ্চমাংশ। জাতিসংঘের বৈশ্বিক পরিবেশ রক্ষা বিষয়ক প্রকল্প ইউনাইটেড নেশন্স এনভায়র্নমেন্ট প্রোগ্রামের (ইউএনইপি) নির্বাহী পরিচালক ইঙ্গের অ্যান্ডারসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘খাদ্যের অপচয় একটি বৈশ্বিক ট্র্যাজেডি। শুধুমাত্র এই অপচয়ের কারণে প্রতিদিন বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ না খেয়ে থাকেন।’

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ‘খাদ্যের অপচয় কেবল মানুষের আদর্শগত ব্যর্থতা নয়, বরং পরিবেশের জন্যও হুমকি। অপচয়িত বা ফেলে দেওয়া খাবার থেকে বিপুল পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী। আমাদের হাতে থাকা তথ্য বলছে, , ফেলে দেওয়া খাবার থেকে প্রতিদিন যে পরিমাণ গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত হয়, বিশ্বে প্রতিদিন বিমান চলাচলজনিত কারণে নির্গত হওয়া গ্রিনহাউস গ্যাসের তুলনায় তা পাঁচগুণ বেশি।

প্রতিবেদনটির তথ্য সংগ্রহ ও তা বিশ্লেষণের কাজে জাতিসংঘকে সহযোগিতা করেছে র‌্যাপ নামের একটি অলাভজনক গবেষণা সংস্থা। ইউএনইপির কর্মকর্তা ক্লেমেন্টেন ও’কনর এএফপিকে বলেন,‘আমরা এখানে শুধু বাড়িঘরগুলোর তথ্য দিয়েছি। এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে জরিপের ভিত্তিতে। এছাড়া রেস্তোরাঁয় খাদ্য অপচয়ের তথ্য এখানে দেওয়া হয়নি। তাই আমাদের বিশ্বাস, বাড়িঘর ও রেস্তোরাঁয় অপচয় হওয়া খাদ্যের প্রকৃত আরও অনেক, অনেক বেশি।

এখন পর্যন্ত বিশ্বে খাবারের অপচয় নিয়ে জাতিসংঘের সংকলিত দ্বিতীয় প্রতিবেদন এটি। প্রতিবেদনটি তৈরিতে জাতিসংঘকে সহযোগিতা করেছে অলাভজনক সংস্থা ডব্লিউআরএপি। সূত্র: সিএনএন