নৈশপ্রহরী থেকে পৌরপিতা সাইদুর রহমান
জনমত ডেস্ক : পেশায় একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। পদের নাম নৈশপ্রহরী। কর্মরত রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুণ্ডুমালা মহিলা ডিগ্রি কলেজে। বাড়ি মুণ্ডুমালা পৌর সদরের সাদিপুর কলনীপাড়া। পিতা মৃত সাইনাল হক ছিলেন একজন মুদি ব্যবসায়ী। ছোটবেলা থেকে পিতার ব্যবসার কারণে পদচারণা ছিল মুণ্ডুমালা বাজারে। ভাগ্যের আশীর্বাদে সেই বাজারেরই পৌর পিতা হলেন সাইদুর রহমান।
জানা গেছে, সাইদুর রহমান ছোটবেলা থেকে ছিলেন পরিশ্রমী, উদার প্রকৃতির এবং পরোপকারী। এলাকা কিংবা বাজারে কেউ কোনও বিপদে পড়লে ছুটে যেতেন তিনি। ১৯৯৮ সালের দিকে মুণ্ডুমালা বাজারে বেশ কিছু তরুণকে নিয়ে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন তিনি। নাম দেন তরুণ সংঘ ফোরাম। মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে থাকতে সাইদুর রহমান হয়ে গেলেন পৌরসভার মেয়র।
আরও জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মেয়র গোলাম রাব্বানীর বিভিন্ন রাজনৈতিক কাজে সহযোগিতা করতে থাকেন সাইদুর রহমান। এমনকি গোলাম রাব্বানীর পৌর নির্বাচনে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন তিনি। মুণ্ডুমালা পৌর সদরের কয়েক শতক জমি বিক্রি করে গোলাম রাব্বানীকে নির্বাচনে সহযোগিতাও করেন। সেই নির্বাচনে গোলাম রাব্বানী মেয়রও নির্বাচিত হন।
ছোটবেলা থেকে ব্যবসায় জড়িত থাকায় মুণ্ডুমালা পৌরসভায় স্ত্রীর নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স করে নেন সাইদুর রহমান। ওই লাইসেন্স তার ভাগ্যের পরিবর্তন আনতে থাকে। টেন্ডারে অংশ নিলেই লটারিতে কাজ পেয়ে যান। এভাবে পৌরসভার রাস্তাঘাট ও ড্রেন নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজ শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তার স্ত্রী তানোরের সর্বোচ্চ করদাতা। এভাবে পরিশ্রম করে বেড়ে উঠতে থাকেন। একটি বাড়ি ছাড়াও পরিশ্রম করে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন সাইদুর।
গত ৩০ জানুয়ারি রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুণ্ডুমালা পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আমির হোসেন আমিনকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইদুর রহমান। তিনি পাঁচ হাজার ৪৫৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আমির হোসেন আমিন পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৩৯৮ ভোট।
চুনিয়াপাড়া গ্রামের হারুন রশীদ বলেন, ‘সাইদুর রহমান পেশায় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হলেও তিনি উদার প্রকৃতির মানুষ। কেউ কোনও বিপদে পড়লে ছুটে যান। এছাড়া আওয়ামী লীগের অফিসে কোনও আবদার নিয়ে গেলে কেউ খালি হাতে ফিরে আসেন না। মসজিদ, মাদ্রাসা, গরিব-দুঃখী মানুষদের সাহায্য করেন তিনি। আমরা মুণ্ডুমালা পৌরবাসী তাকে “দাতা সাইদুর ভাই” বলে ডাকি।’
সূত্র জানায়, রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুণ্ডুমালা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মেয়র প্রার্থীর টিকিট না দেওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি করোনাকালে লকডাউনে সাইদুর রহমান চাল-ডালসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য ঘরবন্দি মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেন। এখান থেকেই শুরু তার জনপ্রিয়তা। হাজারো মানুষের ভালোবাসায় ‘দাতা সাইদুর ভাই’ হয়ে ওঠেন তিনি।
সাইদুর বর্তমানে মুণ্ডুমালা মহিলা কলেজের নৈশপ্রহরী। কলেজ থেকে নির্বাচন করার জন্য ছুটি নিয়েছিলেন ১৫ দিন। পৌর আওয়ামী লীগে ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক পদে। নিষেধ সত্ত্বেও নির্বাচনে অটল ছিলেন তিনি। এ জন্য দল থেকে বহিষ্কারও হতে হয়েছে তাকে। তারপরও অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও দিনরাত পরিশ্রমের ফলে তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে মুণ্ডুমালা পৌরসভায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন সাইদুর রহমান।
নবনির্বাচিত মেয়র সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমার ইচ্ছা ছিল দল থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করার। কিন্তু আমি মনোনয়ন পায়নি। নিজ পরিশ্রম ও জনগণের প্রচেষ্টায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। পৌরবাসী নির্বাচিত করে আমার স্বপ্ন পূরণ করেছে। আমি খাদেম হিসেবে এখন তাদের সেবা করে যাবো।’