img

পুরুষদের চেয়ে নারী অভিবাসন বাড়ছে

প্রকাশিত :  ১৪:৩৩, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১

পুরুষদের চেয়ে নারী অভিবাসন বাড়ছে

জনমত ডেস্ক : পুরুষদের অভিবাসন ব্যয় বাড়লেও কমছে নারীদের। একটি সময় নারীরা বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা খুব কম থাকলেও ২০০৪ সাল থেকে তা বাড়ছে। আর ২০১৫ সালে সৌদি আরবের শুন্য অভিবাসন ব্যয়ে বিদেশে যাওয়ার সুযোগের পর থেকে এটা নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। যদিও নারী অভিবাসনের ক্ষেত্রে এখনও সামাজিক বাধা রয়েছে। আর এ কারণে ঢালাওভাবে প্রবাসী নারীদের বিষয়ে নেতিবাচক প্রচারণা না করে ইতিবাচক ঘটনাও তুলে ধরতে হবে।

বৃহস্পতিবার নারী অভিবাসন বিষয়ক এক ওয়েবিনারে এমন মতামত তুলে ধরেন বক্তারা। ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরম, গবেষণা সংস্থা র‌্যাপিড ও দৃষ্টি রিচার্স সেন্টার যৌথভাবে এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে। ‘বাংলাদেশের অভিবাসন ও লিঙ্গ:একটি অনিয়মিত প্রকৃত দৃশ্যপট‘ শীষক ওয়েবিনারে ৫টি জেলার ওপর পরিচালিত জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন। ইআরএফ সভাপতি শারমিন রিনভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চলনা করেন সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলাম।

বক্তারা বলেন, অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি প্রবাসী আয়। ধীরে-ধীরে নারী অভিবাসন বাড়লেও যথাযথ তথ্যের অভাবে বিদেশে গিয়ে নির্যাতন ও ঝুঁকির মুখে পড়তে হচ্ছে। এ অবস্থার উন্নয়নে নারীদের বিদেশে নেয়ার আগে কোন কাজের জন্য নেয়া হচ্ছে সে বিষয়ে প্রকৃত তথ্য দিতে হবে। যে কাজের জন্য নেয়া হচ্ছে সে বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ থাকতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, একটি নির্যাতনের ঘটনাও আমরা টলারেট করি না। তবে যারা বিদেশে যাচ্ছেন তাদের অধিকাংশ নির্যাতিত হওয়ার বিষয়টি ঠিক না। গত ১০ বছরে অন্তত ৭ থেকে ৮ লাখ নারী শ্রমিক বিদেশে গেছেন তাদের কতজন নির্যাতিত হয়েছেন। সুতরাং যারা নির্যাতিত হয়েছেন তাদের বিষয়টি হাইলাইটস করলে নারী অভিবাসন বাড়ানো যাবে না। সফলতার বিষয়গুলোও সামনে আনতে হবে। তিনি বলেন, আমি স্বীকার করি অন্যান্য দেশ বিবেচনায় বাংলাদেশের নারী অভিবাসন খুব কম। এর অন্যতম কারণ আমাদের সামজিক প্রেক্ষিত। সমাজ বাস্তবতা বিবেচনায় একজন পুরুষ যত সহজে বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, একজন নারী পারেন না। এছাড়া সামগ্রিকভাবে একজনকে দেখাদেখি আরেকজন বিদেশে যান। যে কারণে সিলেট, চট্রগ্রাম, কুমিল্লা, টাঙ্গাইলের মতো আগে থেকে যেসব এলাকার লোক বাইরে তারাই বেশি বাইরে যাচ্ছেন। আর উত্তরবঙ্গের লোক বাইরে কম যান। এরকম প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ইশতেহারে প্রত্যেক উপজেলা থেকে যে এক হাজার করে লোক বাইরে পাঠানোর চেষ্ঠা চলছে সেখানে পিছিয়ে থাকা এলাকাকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। মোট নারীর ৭৫ শতাংশ থাকেন সৌদি আরবে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান র‌্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক বলেন, ৯০.৩৫বিলিয়নের অর্থনীতির বাংলাদেশ এখন ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের দেশ হয়েছে। দেশের অর্থনীতির আকার যত দ্রুত বেড়েছে সেভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়নি। বাংলাদেশের মতো বৈশ্বিক চিত্রও এরকম। এখন দেশ থেকে দক্ষ ও শ্রমিক রপ্তানির ওপর জোর দিতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের জিডিপিতে ১৩ শতাংশের কম অবদান এখন কৃষির। অথচ কর্মসংস্টস্থানের ৪০ শতাংশের বেশি এ খাতে। এটা ভালো না। প্রতিবছর দেশে ২০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান দরকার হলেও তা হচ্ছে না।

মূল প্রবন্ধ উপস্থান করেন দৃষ্টি রিসার্চ সেন্টারের প্রিন্সিপাল তেরেস। তার নেতৃত্বে ৫টি জেলায় পরিচালিত জরিপের ফল তুলে ধরা হয। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। বরগুনা, পটুয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও মানিকগঞ্জ জেলার একটি করে ইউনিয়নের মোট ১২৫টি গ্রামের ৬ হাজার ৮৪৮ খানার ৮ হাজার ৪৩৭ জনের ওপর এ জরিপ করা হয়। যেখানে নারী অভিবাসী ছিলেন ১ হাজার ৩২৭ জন বা ১৫.৭৩ শতাংশ। আর পুরুষ ৭ হাজার ১১০ জন। দেশের মোট জনশক্তির ৩৭.১০ শতাংশ থাকেন সৌদি আরবে। আর মোট নারী অভিবাসির ৭৫ শতাংশ থাকেন দেশটিতে। পুরুষদের অভিবাসন ব্যয় বাড়লেও নারীদের কমছে। অভিবাসীদের ১৪ শতাংশের মতো নারী বিনা খরচে বাইরে গেছেন। পুরুষদের বেলায় যেখানে অনেক বেশি খরচ করতে হয়েছে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অভিবাসন ব্যয় হয়েছে মানব পাচারসহ নানা অভিযোগে বাংলাদেশি এমপি পাপুল আটকের ঘটনায় সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত কুয়েতে। প্রকৃত খরচের তুলনায় দেশটিতে ৪২১ শতাংশ বেশি ব্যয় হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাহরাইনে যেতে প্রকৃত খরচের চেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে ৩৮৭ শতাংশ। পর্যায়ত্রক্রমে কাতারে ৩৭২ শতাংশ, ওমানে ৩২৩, লেবাননে ৩১২, জর্দানে ৩০৮ সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৯১ ও সৌদি আরবে ২৮৭ শতাংশ বেশি খরচ হয়েছে।

জরিপের তথ্য তুলে ধরে তেরেস বলেন, একটি সময় বাংলাদেশের অভিবাসন বলতে শুধু পুরুষদের বলা হতো। তবে বাংলাদেশ থেকে মোট ৪৪টি দেশে শ্রমিক যান। এর মধ্যে ২২টি দেশে নারীরা যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে বড় পরিবর্তনটা এসেছে ২০০৪ সাল থেকে। এরপর ২০১৫ সালে সৌদি সরকারের সঙ্গে এক চুক্তির পর ২০১৭ সালে এটি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আর পুরুষদের অভিবাসন ব্যয় বাড়লেও নারীদের ক্ষেত্রে ধীরে-ধীরে কমেছে। যেসব নারীরা বিদেশে গেছেন তাদের মধ্যে ৫৫.৮০ শতাংশ আগে গৃহকর্মী ছিলেন। আর ১৬ শতাংশ তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক ছিলেন। তালাকপ্রাপ্ত বা বিধবা নারীদের মধ্যে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বেশি।

জরিপে অন্তর্ভুক্ত এসব জেলার মধ্যে নারী পুরুষের অনুপাতে সব চেয়ে বেশি নারী বিদেশে আছেন বরগুনা জেলা থেকে। আর সব চেয়ে কম গেছেন বাহ্মণবাড়িয়ার নারীরা। বরগুণা জেলার ২৫১ জন অভিবাসির মধ্যে নারী ছিলেন ৬৯ জন বা সাড়ে ২৭ শতাংশ। নারায়ণগঞ্জ জেলার এক হাজার ৯৪ জনের মধ্যে ২৬.৪০ শতাংশ ছিলেন নারী। পর্যায়ত্রক্রমে পটুয়াখালরি ৬২৯ জনের মধ্যে ২১.১০ শতাংশ, মানিকগঞ্জের ৩ হাজার ৯১৭ জনের মধ্যে ১৮ শতাংশ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২ হাজার ৫৪৬ জনের মধ্যে ৫.১০ শতাংশ নারী বিদেশে গেছেন।

তেরেস বলেন, নতুনভাবে যেসব জেলা থেকে অভিবাসী বাইরে যাচ্ছেন সেখান থেকেই নারীদের বিদেশে যাওয়ার সংখ্যা বেশি। আবার যে পাড়া থেকে একবার বাইরে যান, থেকে যাওয়ার হার বাড়ে। সাধারণভাবে অবিবাহিতদের বাইরে যাওয়ার সংখ্যা কম। অবিবাহীতদের দেশের বাইরে পাঠালেও তার আয় দিয়ে জমি বা অন্য সম্পদ ক্রয়, ছোট ভাই থাকলে তাকে বিদেশে পাঠানোর আশায় সহজে তাকে দেশে আসতে দিতে রাজি হননা বাবা মা। এছাড়া সরকারের একটি আইন আছে বাংলাদেশ থেকে ২৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী নারীরা বিদেশে যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে দালাল চক্র নানা প্রলোভন দেখিয়ে যে কোনো বয়সীদের নিয়ে যান। তারা ১০ হাজার টাকা দিলে সব কাগজ ঠিক করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।

আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও র‌্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক ড. এম আবু ইউসুফ, আইএলওর প্রতিনিধি ইগোর বস প্রমুখ। 

কমিউনিটি এর আরও খবর

img

ব্রিটেনের কার্ডিফের লর্ড মেয়র ম্যানসন হাউসে চ্যারিটি ইভেন্ট অনুষ্ঠিত,

প্রকাশিত :  ০৯:১৪, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

ব্রিটেনের কার্ডিফের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার বিশিষ্টজনদের অংশগ্রহণে ৮ ই এপ্রিল সোমবার কার্ডিফের  লর্ড মেয়র  এর পক্ষ থেকে ঐতিহ্যবাহী ম্যানসন হাউসে কার্ডিফের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো এক ইফতার পাটি ও চ্যারিটি ইভেন্টের আয়োজন করা হয়। 

রাইট অনারেবল লর্ড মেয়র ড. বাবলিন মল্লিক এর স্বাগত বক্তব্যের পর ইফতার পূর্ব আলোচনায় পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন কামরুল ইসলাম বাবু ও দোয়া পরিচালনা করেন হাফিজ আব্দুল হান্নান।

অনুষ্ঠানে প্রবাসের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কার্ডিফ বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার আমিনুর রশিদ, কার্ডিফ বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের সাবেক সেক্রেটারি একাউন্টেন্ট ফজলুল হক ফারুক, ইউকে বিডি টিভির চেয়ারম্যান ও গ্রেটার সিলেট কমিউনিটি ইউকেরফাউন্ডার্স কনভেনার কমিউনিটি লিডার মোহাম্মদ মকিস মনসুর, বিশিষ্ট সমাজসেবক অধ্যাপক মল্লিক মোসাদ্দেক আহমেদ, কাউন্সিলার জেসমিন চৌধুরী, ও এস এ খান লেনিন সহ অন্যান্য কাউন্সিলারবৃন্দ ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

এটিন বাংলা ইউকে ও  ওয়েলস বাংলা নিউজ এর সম্পাদক মোহাম্মদ মকিস মনসুর এর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে মৌলভীবাজার জেলা সদরের কচুয়া গ্রামের মেধাবী মূখ কার্ডিফের প্রথম মুসলিম রাইট অনারেবল লর্ড মেয়র ড. বাবলিন মল্লিক ইউ কান প্রডাকশন চ্যারিটিতে সবাইকে সহযোগিতা করার আহবান জানিয়ে আজকের ইফতার পাটি ও চ্যারিটি ইভেন্টে যারা সহযোগিতা করেছেন সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। 

অনুষ্ঠানে দোয়া মাধ্যমে লর্ড মেয়র ড. বাবলিন মল্লিক ইউ কান প্রডাকশন চ্যারিটিতে সবাইকে সহযোগিতা করার আহবান জানান। এবং ফিলিস্তিন ও গাজার মানুষের কল্যাণ ও মুসলিম উম্মাসহ বিশ্বের মানবজাতির সূখ শান্তি  ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়। 

কমিউনিটি এর আরও খবর