পিকে হালদারের বান্ধবী নাহিদার হিসাবের খোঁজে ৮০ ব্যাংকে চিঠি
জনমত ডেস্ক : সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাচার ও লোপাটের অভিযোগে বিদেশে পালিয়ে থাকা এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদারের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী নাহিদা রুনাইয়ের সব ধরনের ব্যাংক হিসাব তলব করে ৮০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। নাহিদা রুনাই ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) নাহিদার সব ধরনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে এনবিআরের সিআইসি বিভাগ থেকে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে এনবিএরর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে।
৮০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর দেয়া চিঠিতে নাহিদার সঞ্চয় হিসাব, চলতি হিসাব, ঋণ হিসাব ও বিদেশি মুদ্রার হিসাব, ক্রেডিট কার্ড, ভল্ট সঞ্চয়পত্র, ডিপোজিট স্কিম ও বিও (বেনিফিসিয়ারি ওনার্স) অ্যাকাউন্টসহ সব ধরনের হিসাবের তথ্য চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে নাহিদার বাবা মফিজুর রহমান ও মা তাহমিনা খানমের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আর ঠিকানা হিসেবে চট্টগ্রামের খুলশী ও ঢাকার রমনার দুটি ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে।
২০১৩ সালের ১ জুলাই থেকে হালনাগাদ তথ্য বিবরণী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে ওই চিঠিতে। একইসঙ্গে আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া হিসাবেরও তথ্য চেয়েছে এনবিআর।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নাহিদার অসীম ক্ষমতার উৎস ছিলেন পিকে হালদার। যার বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৭২ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য রয়েছে। অপর বান্ধবী অবন্তিকা ও নাহিদার মধ্যে ছিল পিকে হালদারকে নিয়ে ব্যাপক প্রতিযোগিতা। তখন নাহিদাকে বড় আপা আর অবন্তিকাকে ছোট আপা ডাকা হতো। কারণ নাহিদা চালাতো ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও অবন্তিকা চালাতো পিপলস লিজিং।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হাতে গ্রেফতার হওয়া পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দীর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
তিনি জবানবন্দিতে আরও জানান, পিকে হালদারের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ছিল অবন্তিকা বড়াল ও নাহিদা রুনাই। অবন্তিকা ও নাহিদার সঙ্গে আলাদাভাবে অন্তত ২০-২৫ বার সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেছেন পিকে হালদার। ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে নাহিদা ও অবন্তিকার সঙ্গে একান্তে সময় কাটিয়েছেন। খুব দ্রুতই নাহিদা কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান। মাত্র কয়েক বছরে তার বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৭২ কোটি টাকা লেনদেন হয়।
গত ২৫ জানুয়ারি দুদকের করা ৫ মামলায় নাহিদা রুনাইকে অন্যতম আসামি করা হয়। পিকে হালদার কেলেঙ্কারিতে ৩৫০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মোট ৩৩ জনের বিরুদ্ধে মামলাগুলো করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, রিলায়েন্স ফিন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকাবস্থায় আত্মীয়স্বজনদের দিয়ে সারা দেশে ৩৯টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলের পিকে হালদার। এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে থাকা ৮৩ জনের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে তিনি ও তার সহযোগীরা সাধারণ আমানতকারীদের কাছ থেকে কৌশলে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এরমধ্যে আইএলএফএসএল থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে। এসব অর্থ নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যান তিনি।
এরইমধ্যে ৩৬০০ কোটি টাকা নিয়ে পালানো পিকে হালদার দেশে ফিরতে চান মর্মে গেল বছরের ৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চে আবেদন করেন পিকে হালদারের আইনজীবী।
চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি পিকে হালদারের মা’সহ ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন হাইকোর্ট। গত ৮ জানুয়ারি পিকে হালদারকে ধরতে পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলে চিঠি দিয়েছে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়।
গত ১৯ জানুয়ারি প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা পাচারের ঘটনায় ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিডেটের পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারসহ (পিকে হালদার) ১৩ পরিচালকের সব সম্পদ, ব্যাংক হিসাব জব্দ ও পাসপোর্ট আটকে দেয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে পিকে হালদারের মা, স্ত্রী ও ভাইসহ ২০ জনের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দ, সব সম্পদ ক্রোক করার নির্দেশ দেন আদালত। পাশাপাশি পিকে হালদারসহ ওই ২০ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় এবং তাদের গত ৫ বছরের আয়কর রিটার্ন হাইকোর্টে দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের ধারাবাহিকতায় প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি সাড়ে ২০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও পাচারের সম্পৃক্ততায় পিকে হালদারের ৫ সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। সবশেষ গত ৯ মার্চ কাগুজে প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ৮০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পিকে হালদারসহ ৩৭ জনের বিরুদ্ধে ১০টি মামলার অনুমোদন দেয় দুদক।
এ কেলেঙ্কারিতে এখন পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে উজ্জ্বল কুমার নন্দী ছাড়াও পিকে হালদারের সহযোগী শংখ বেপারী ও রাশেদুল হক আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি রাজধানরি ধানমন্ডি এলাকা থেকে পিকে হালদারের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অবন্তিকা বড়ালকে গ্রেফতার করে দুদক। ওইদিনই তাকে তিনদিনের রিমান্ডে পাঠায় ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালত। রিমান্ড শেষে গত ২৭ জানুয়ারি তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৪ মার্চ দ্বিতীয় দফায় অবন্তিকাকে আরও ৩ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়।