সালথায় সংঘর্ষে হাফেজ নিহত, আহত র‍্যাব-পুলিশের ৮ সদস্য

প্রকাশিত :  ০৭:৫৭, ০৬ এপ্রিল ২০২১
সর্বশেষ আপডেট: ০৮:০৩, ০৬ এপ্রিল ২০২১

সালথায় সংঘর্ষে হাফেজ নিহত, আহত র‍্যাব-পুলিশের ৮ সদস্য

জনমত ডেস্ক : ফরিদপুরের সালথায় পুলিশের অবিরাম গুলি ও টিয়ার সেল বর্ষণের পর গভীর রাতে পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের গুলিতে একজন হাফেজ নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান।

পুলিশ সুপার জানান, হামলার সময় একজন মাদরাসা শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এছাড়া হামলার সময় র‌্যাব ও পুলিশের ৮জন সদস্য আহত হয়েছেন।

তিনি জানান, ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করতে সিআইডির ক্রাইম টিম কাজ শুরু করেছে। হামলার ঘটনায় অংশ নিয়ে অনেকে গুলিবিদ্ধ ও আহত হয়েছেন যাদের পরিচয় এখনো জানা যায়নি।

হামলার সময় নিহত ওই মাদরাসা শিক্ষার্থীর নাম হাফেজ মো. জুবায়ের হোসেন (২২)। সে সালথা উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের রামকান্তপুর গ্রামের আশরাফ আলী মোল্যার ছেলে। মাদারীপুর জেলার শিবচরের একটি মাদরাসা থেকে হাফিজি সম্পন্ন করে হাফেজ জুবায়ের সেখানে চার জামাতে পড়াশুনা করছিলেন।

স্থানীয়রা জানান, আশরাফ আলী মোল্যা কৃষিকাজ ও মাদরাসা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন। গতকাল রাতে মৃত্যুর পর মঙ্গলবার সকালে বাড়ির প্রাঙ্গণে হাফেজ জুবায়েরের জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানেই দাফন করা হয়েছে।

জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যা থেকে সারারাতের তাণ্ডবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ভবনসহ বিভিন্ন সরকারী অফিস ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে উপজেলা ত্রাণের গুদাম ও কৃষি অফিস। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনেও ভাংচুর করা হয়েছে। দুটি মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সাতটি মোটর সাইকেল ভাংচুর করা হয়েছে। এছাড়া দুটি মোটরসাইকেল হামলাকারীরা নিয়ে গেছে।

সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা সদরের থানা কার্যালয়, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, এসি ল্যান্ডের অফিস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও সরকারী বাসভবন, উপজেলা চেয়ারম্যানের সরকারী বাসভবনে হামলা হয়েছে। এরমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ভবনে অবস্থিত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে ক্ষতির পরিমাণ বেশি। ভবনের নিচতলার অধিকাংশ দরজা জানালা ও আসবাব ভাংচুর করা হয়েছে। কাগজপত্র ও মালামাল তছনছ করা হয়েছে। এসিল্যান্ড অফিসে আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র বিনষ্ট হয়েছে।

পাশের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অস্থায়ী কার্যালয়ের জানালা ও সাইনবোর্ড ভাংচুর করা হয়েছে। পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। হামলার শিকার এসব স্থানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সদরের দোকানপাট অধিকাংশ বন্ধ রয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান সালথা থানা কার্যালয় চত্বরে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, গতকাল যে ঘটনা ঘটেছে পুরো ঘটনাটি নিয়ন্ত্রণে রাত ১২টা পর্যন্ত কাজ করেছি। যেই ধ্বংসযজ্ঞ তারা চালিয়েছে সেসব আলামত সংগ্রহ করেছে সিআইডির ক্রাইম টিম। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। হামলায় পুলিশ ও র‍্যাবের ৮ জন আহত হয়েছেন। তারা বিভিন্নভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন। সংঘর্ষে জড়িতদের মধ্যে একজন মারা গেছে এবং চারজন আহত হয়েছে।

তিনি বলেন, ঘটনার পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরণের গুজব প্রচার করা হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোক এবং পলিটিকাল মতাদর্শের লোক জড় হয়েছে। আমরা বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।

আলিমুজ্জামান বলেন, অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য নেওয়া হচ্ছে। পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনতে পর্যাপ্ত সংখ্যক গুলি বর্ষণ করতে হয়েছে। পুলিশ ৫৫২ রাউন্ড রাবার বুলেট, টিয়ার সেল ব্যবহার করেছে। লেট বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছে। সর্বোপরি আমরা শেষ মুহূর্তে চায়না রাইফেল ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছি।

এ ব্যাপারে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসিব সরকার জানান, সম্প্রতি তিনি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। ঘটনার সময় তিনি সরকারী বাসভবনে ছিলেন না। ফেসবুক ও স্থানীয় বিভিন্ন লোকজন গুজব ছড়িয়ে দেয় যে, পুলিশ এবং প্রশাসন ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করছে। তারা একজন হুজুরকে ধরে নিয়ে গেছে। তারা পুলিশ এবং উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে দিতে উপজেলা অফিসের দিকে আসতে থাকে।


তিনি বলেন, ঘটনাটি জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে অবহিত করলে ফরিদপুর ছাড়াও আশেপাশের জেলা থেকে পুলিশ ফোর্স আসে। কিন্তু উত্তেজিত জনতার সংখ্যা এতো বেশি ছিল যে এই স্বল্পসংখ্যক ফোর্স দিয়ে তাদের ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। একপর্যায়ে তারা উপজেলা অফিস চত্বরে প্রবেশ করে উপজেলা কৃষি অফিসের সমস্ত কিছু তারা ভাংচুর করেছে। ল্যাপটপ চুরি করেছে। এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যে গোডাউন রয়েছে সেটিও তারা আগুন দিয়ে জালিয়ে দেয়। তারা আমার বাসভবনের দিকে অগ্রসর হলে নিরাপত্তায় যে আনসার রয়েছে তারা গুলি করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু তারা তাদের লক্ষ্য করে হামলা করে। বাসায় আমার পরিবার ছিল।


হাসিব সরকার জানান, তারা অতর্কিতভাবে মধ্যযুগীয় কায়দায় আমার বাসভবনে হামলা চালায়। এখানে গ্যারেজে ইউএনও এবং এসি ল্যান্ডের সরকরী গাড়ি ছিল সে দুটিও জালিয়ে দেয়। একপর্যায়ে তারা বাসভবনের সমস্ত কিছু ভাংচুর করে। পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশ এসে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরমধ্যে উপজেলা ভূমি অফিসের নথিপত্র রেকর্ড সবকিছু জালিয়ে পুড়িয়ে বিনষ্ট করেছে। সবথেকে দুঃখজনক ঘটনা হচ্ছে, উপজেলা চত্বরে যে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এবং মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে যে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল রয়েছে সেগুলো তারা তাণ্ডবলীলা চালিয়ে ভেঙ্গে ফেলেছে। তারা যে ধরনের স্লোগান ব্যবহার করেছে এ থেকে বোঝা যায়, লকডাউন মুল কারণ নয়। মূল কারণ হচ্ছে, এখানে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র এবং ধর্মান্ধ গোষ্ঠী তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ভূলুণ্ঠিত করার জন্য এ হামলা করেছে।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পাশে থাকা এসিল্যান্ড মারুফা সুলতানা হিরামনির কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে অপারগতা জানান।


এদিকে, ফুকরা বাজার ও সালথার স্থানীয়দের মাঝে এ ঘটনায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত এসব সম্পত্তি জনগণের টাকায় এমন কথাও বলছেন তারা। পাশাপাশি সরকারী দু’জন কর্মকর্তা জনগণের সাথে জনবান্ধব আচরণ করতেও ব্যর্থ হয়েছেন বলে অভিযোগ তাদের।

চট্টগ্রামে ফিশিং বোটে আগুন, দগ্ধ ৪

প্রকাশিত :  ১০:৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১০:৩৪, ২৮ মার্চ ২০২৪

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানা এলাকায় কর্ণফুলী নদীর ১৫ নম্বর ঘাটে নোঙ্গররত ফিশিং বোটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ৪ জন দগ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে কোস্ট গার্ড জাহাজ প্রমত্ত।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দগ্ধ চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তারা হলেন- জামাল উদ্দিন (৫৫), মাহমুদুল করিম (৪৫), মফিজুর রহমান (৪৫) ও এমরাম (২৮)।

চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুল আলম আশেক বলেন, পতেঙ্গা এলাকায় ফিশিং বোটে বিস্ফোরণে দগ্ধ ৪ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে।