সুনামগঞ্জে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণে অনিয়ম
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের অধীনে হাওর অঞ্চলে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের আওতায় চার কোটি ৬০ লাখ ১০ হাজার ২৯০ টাকা ব্যয়ে ‘সুনামগঞ্জ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র’ নির্মাণ কাজ চলছে। দরপত্রে কাজের মেয়াদকাল ৫ মাস থাকলেও দীর্ঘ তিন বছরেও শেষ হয়নি অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ। নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে সরেজমিন তদন্ত করে কাজ বন্ধ করে রেখেছেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
শহরের ওয়েজখালি এলাকায় সুরমা নদীরপাড়ে ২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর সুনামগঞ্জ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ঢাকার দি বিল্ডার্স এসোসিয়েট লিমিটেডের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এই ভবনের নির্মাণ কাজ করছে। ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ এমপি। কাজ শেষ করার সময় সীমা ছিল ২০১৮ সালের ১৭ এপ্রিল। কিন্তু এখনও (সোমবার) এই ভবনের কাজ শেষ হয় নি। তিন বছরে সুনামগঞ্জ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের বাউন্ডারীর ভেতরে ১টি আড়ৎ ঘর, ১টি অফিস ভবন, ১টি বরফ ঘর ও ১টি শেড নির্মাণ হয়েছে। তবে ভবনগুলোর দরজা জানালা, টাইলস্ সহ নানা কাজ এখনও শেষ হয়নি। প্রকল্পের কোন সাইনবোর্ডও নির্মাণাধীন ভবনের আশপাশে দেখা যায় নি।
স্থানীয় লোকজন এই ভবনগুলো নির্মাণকালে নি¤œমানের ইট, মাটি মিশ্রিত বালু, নি¤œমানের পাথর ব্যবহার করার অভিযোগ করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সায়েস্তা মিয়া বলেন, সুনামগঞ্জ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণকালে মাটি মিশ্রিত বালু, নি¤œমানের ইট ও পাথর ব্যবহার হয়েছে।
ইকবালনগরের বাসিন্দা ফয়েজুর রহমান বলেন, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ভবন নির্মাণে নি¤œমানের মালামাল ব্যবহার হয়েছে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতি সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি আলাউর রহমান বলেন, এই ভবন নির্মাণে অনিয়মের বিষয়টি দায়িত্বশীলদের যাচাই করা জরুরি।
রাজধানী ঢাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দি বিল্ডার্স এসোসিয়েটস লিমিটেডের পরিচালক বায়েজিদ আহমদ খান বলেন, নানা সমস্যা থাকায় কয়েকবার নির্মাণ কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। চলতি বছরের জুনে শেষ হতে পারে এই কাজ। অনিয়মের অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন তিনি।
ভারপ্রাপ্ত জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সীমা রাণী বিশ্বাস বলেন, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণের সঙ্গে আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে আমাদের মন্ত্রণালয় এই কাজ করছে। এটা ব্যবহার করতে পারবেন সুনামগঞ্জের আড়ৎদার ও মাছের ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের প্রকৌশলী রায়হান মোল্লা বলেন, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণের মেয়াদ একাধিকবার বাড়ানোর পরও কাজ শেষ হচ্ছে না। এবার জুন মাসে যদি কাজ শেষ না হয়, এই ঠিকাদারকে বাদ দিয়ে অন্য ঠিকাদার দিয়ে কাজ করানো হবে। ৫ মাসের মেয়াদকালের স্থলে ৩ বছরেও ৬০ ভাগের বেশি কাজ হয় নি। কাজে কিছুটা অনিয়ম হয়েছে জানিয়ে এই প্রকৌশলী বলেন, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজ বন্ধ করে রেখেছেন। কাজ করার সময় উপকরণ তাকে দেখিয়ে কাজ করার কথা বলেছেন তিনি।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরান শাহরিয়ার বলেন, নি¤œমানের কাজের অভিযোগের ভিত্তিতে শহরের ওয়েজখালিতে নির্মাণাধীন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পরিদর্শ করে কাজ বন্ধ রাখার কথা বলেছি। আমাদের প্রকৌশলী দিয়ে পরীক্ষা করে উপকরণ ব্যবহারের কথা বলেছি।