ভারত টিকা আটকানোয় ভারতীয় ধরনের ঝুঁকিতে ৯১ দেশ: ডব্লিউএইচও
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারত সরকার করোনার টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় বিশ্বের ৯১টি দেশের ওপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশসহ এসব দেশে টিকার মজুত তলানিতে যাওয়ায় করোনার ভারতীয় ধরনসহ নতুন নতুন ধরনে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথান ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই অভিমত দিয়েছেন। সোমবার এই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে এনডিটিভি।
সাক্ষাৎকারে সৌম্য স্বামীনাথান বলেন, ‘শুধু ভারতীয় ধরন নয়, বিশ্বের অনেক দেশে করোনার অনেকগুলো ধরন শনাক্ত হয়েছে। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা দেখেছি, এসব ধরন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এমনকি প্রথম শনাক্ত হওয়ার আগেই এসব ধরন বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে যাচ্ছে। একই চিত্র দেখা গেছে যুক্তরাজ্য থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনার ধরনের ক্ষেত্রেও।’
করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকর উপায় টিকা। অথচ সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা কিংবা তৃতীয় ঢেউয়ের ঝুঁকির মুখেও অনেক দেশ প্রয়োজনীয় টিকা পাচ্ছে না। এ বিষয়ে ডব্লিউএইচওর প্রধান বিজ্ঞানীর ভাষ্য, টিকা রপ্তানির জন্য গত বছর অনেকগুলো আইনি চুক্তি করেছিল অ্যাস্ট্রাজেনেকা। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকা বিলিয়ন ডোজ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে সরবরাহের কথা ছিল। ২০২০ সালেই জাতিসংঘের উদ্যোগ কোভ্যাক্সের আওতায় এসব দেশে ৪০ কোটি ডোজ করোনার টিকা সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটি।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর গত মার্চে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার করোনার টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। আগে অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করতে হবে, তার পরে টিকা রপ্তানি করা যাবে—সেরামের প্রতি এমনটাই নির্দেশনা নরেন্দ্র মোদি সরকারের।
সৌম্য স্বামীনাথান বলেন, ভারত থেকে করোনার টিকা রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে ঝুঁকিতে পড়েছে আফ্রিকার দেশগুলো। এ মহাদেশের অনেক দেশ মোট জনসংখ্যার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশের কম মানুষকে করোনার টিকা দিতে পেরেছে।
এমনকি অনেক দেশ স্বাস্থ্যসেবা খাতে কর্মরত সম্মুখসারির যোদ্ধাদের জন্যও টিকার জোগান নিশ্চিত করতে পারেনি।
টিকা প্রাপ্তিতে বিদ্যমান বৈষম্যের বিষয়ে তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে কিছু দেশ স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে। অপর দিকে অনেক দেশকে করোনার দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় ঢেউয়ে ভুগতে থাকবে।
ভারত টিকা রপ্তানি বন্ধ করায় সংকট তৈরি হয়েছে বাংলাদেশেও। করোনাভাইরাসের প্রথম ধাক্কা সামাল দেওয়ার সময় গত বছরের নভেম্বরে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিশিল্ড টিকার তিন কোটি ডোজ টিকা কিনতে বেক্সিমকো ফার্মাকে যুক্ত করে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ। দুই দফায় সেরাম ৭০ লাখ ডোজ টিকা পাঠিয়েছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে চুক্তি অনুযায়ী অবশিষ্ট টিকার ডোজ এখনো দেয়নি সেরাম। সেপ্টেম্বরের আগে সেরাম টিকা রপ্তানি করতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে চীন, রাশিয়াসহ বিকল্প উৎস থেকে টিকা পাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে চীনা টিকার চালান দেশে এসেছে।
প্রয়োগও শুরু হয়েছে। কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া ফাইজার–বায়োএনটেকের উদ্ভাবিত করোনার টিকার ১ লাখ ৬২০ ডোজের প্রথম চালানও দেশে আসছে।