সাভারে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভে পুলিশের গুলি, নারী নিহত

প্রকাশিত :  ০৯:৩৯, ১৩ জুন ২০২১

সাভারে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভে পুলিশের গুলি, নারী নিহত

জনমত ডেস্ক: বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) পোশাক শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন।

রোববার সকাল ৭টার দিকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের নতুন ইপিজেড এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ঢাকা ইপিজেডের লেনী ফ্যাশনের শ্রমিকরা।

এ সময় শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে। এ সময় ইপিজেডের গোল্ডটেক্স কারখানার  জিয়াস নামে এক নারী শ্রমিক নিহত ও অন্তত পাঁচ শ্রমিক আহত হন। 

জানা গেছে, পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার সময় বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে মারা গেছেন ওই নারী শ্রমিক।  

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নতুন ইপিজেড এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

শিল্প পুলিশ জানায়, সকালে লেনী ফ্যাশন কারখানার কয়েকশ শ্রমিক বকেয়া বেতনভাতার দাবিতে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের নতুন ইপিজেডের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় তারা সড়কে চলাচলরত গাড়িতে ইটপাটকেল মেরে ভাঙচুর করেন। এ সময় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) একটি গাড়ির কাচ ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এতে  সড়কটিতে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। 

পরে শ্রমিকদের সড়ক ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেও তারা সরেনি। এ সময় তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

শ্রমিকরা জানান, কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের ৪-৫ মাসের বকেয়া বেতন না দিয়ে কারখানায় তালা মেরে দেয়। তাই শ্রমিকরা তাদের পাওনার জন্য বেপজার গেটের সামনে বিক্ষোভ করে। পুলিশ এতে বাধা দিয়ে শ্রমিকদের ওপর লাঠিচার্জ করে, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ও জলকামান দিয়ে পানি মারে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।  এ সময় পাঁচ শ্রমিক আহত হয়েছেন। ঘটনার সময় জেসমিন নামে এক শ্রমিক গুরুতর আহত হলে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

তারা আরও জানান, লেনী ফ্যাশনের ছয় হাজার শ্রমিক এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শ্রমিকরা যাতে তাদের বকেয়া বেতন পান, তার ব্যবস্থা যেন বেপজা কর্তৃপক্ষ করে। 

শিল্প পুলিশ ১-এর পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ইপিজেডের লেনী ফ্যাশনের শ্রমিকরা বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেওয়ার অনেকবার চেষ্টা করে পুলিশ। তারা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ও গাড়ি ভাঙচুর চালান। পরে পুলিশ আইনানুগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাস্তা ক্লিয়ার করেছে। এ সময় পুলিশ হালকা কাঁদানে গ্যাস ও পানি ছিটিয়ে তাদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।

তিনি আরও বলেন, ‘লেনী ফ্যাশন কারখানার মালিক একজন ভারতীয়। অনেক দিন আগে থেকেই করোনার কারণে মালিক ফ্যাক্টরিতে আসেন না। কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা করতে হবে।

বিশ্বে প্রতিদিন ১০০ কোটি টন খাবার নষ্ট হয় : জাতিসংঘ

প্রকাশিত :  ১৭:৫৩, ২৮ মার্চ ২০২৪

জাতিসংঘের নতুন এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ১০০ কোটি টনের বেশি খাবার নষ্ট হচ্ছে। যদিও এর বিপরীতে প্রতিদিন অনাহারে থাকছে প্রায় ৮০ কোটি মানুষ।

বুধবার (২৭ মার্চ) জাতিসংঘ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। খাবার অপচয়ের এ ঘটনাকে উল্লেখ করা হয়েছে ‘বৈশ্বিক ট্র্যাজেডি’ হিসেবে।

জাতিসংঘের ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের প্রায় ৮০ কোটি মানুষ যখন না খেয়ে আছে, তখন লাখ কোটি ডলার মূল্যের খাবার ময়লার ঝুড়িতে ফেলা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২২ সালে যত খাবার নষ্ট হয়েছে, তার ২৮ শতাংশ নষ্ট হয়েছে রেস্তোরাঁ, ক্যান্টিন ও হোটেলের মতো খাদ্য পরিষেবা ব্যবস্থাগুলোতে। কসাই ও মুদিদোকানে নষ্ট হয়েছে ১২ শতাংশ খাবার। তবে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৬০ শতাংশ খাবার নষ্ট হয়েছে বাসাবাড়িতে। এর পরিমাণ ৬৩ কোটি ১০ লাখ টন।

বাড়িঘরগুলোতে প্রতি বছর যে পরিমাণ খাদ্য নষ্ট হয়, তা এক বছরে বিশ্বে মোট উৎপাদিত খাদ্যের এক পঞ্চমাংশ। জাতিসংঘের বৈশ্বিক পরিবেশ রক্ষা বিষয়ক প্রকল্প ইউনাইটেড নেশন্স এনভায়র্নমেন্ট প্রোগ্রামের (ইউএনইপি) নির্বাহী পরিচালক ইঙ্গের অ্যান্ডারসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘খাদ্যের অপচয় একটি বৈশ্বিক ট্র্যাজেডি। শুধুমাত্র এই অপচয়ের কারণে প্রতিদিন বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ না খেয়ে থাকেন।’

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ‘খাদ্যের অপচয় কেবল মানুষের আদর্শগত ব্যর্থতা নয়, বরং পরিবেশের জন্যও হুমকি। অপচয়িত বা ফেলে দেওয়া খাবার থেকে বিপুল পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী। আমাদের হাতে থাকা তথ্য বলছে, , ফেলে দেওয়া খাবার থেকে প্রতিদিন যে পরিমাণ গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত হয়, বিশ্বে প্রতিদিন বিমান চলাচলজনিত কারণে নির্গত হওয়া গ্রিনহাউস গ্যাসের তুলনায় তা পাঁচগুণ বেশি।

প্রতিবেদনটির তথ্য সংগ্রহ ও তা বিশ্লেষণের কাজে জাতিসংঘকে সহযোগিতা করেছে র‌্যাপ নামের একটি অলাভজনক গবেষণা সংস্থা। ইউএনইপির কর্মকর্তা ক্লেমেন্টেন ও’কনর এএফপিকে বলেন,‘আমরা এখানে শুধু বাড়িঘরগুলোর তথ্য দিয়েছি। এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে জরিপের ভিত্তিতে। এছাড়া রেস্তোরাঁয় খাদ্য অপচয়ের তথ্য এখানে দেওয়া হয়নি। তাই আমাদের বিশ্বাস, বাড়িঘর ও রেস্তোরাঁয় অপচয় হওয়া খাদ্যের প্রকৃত আরও অনেক, অনেক বেশি।

এখন পর্যন্ত বিশ্বে খাবারের অপচয় নিয়ে জাতিসংঘের সংকলিত দ্বিতীয় প্রতিবেদন এটি। প্রতিবেদনটি তৈরিতে জাতিসংঘকে সহযোগিতা করেছে অলাভজনক সংস্থা ডব্লিউআরএপি। সূত্র: সিএনএন