বর্ধিত ভাড়াতেও সব সিটে যাত্রী বহন!

প্রকাশিত :  ০৮:২৭, ১৯ জুন ২০২১

বর্ধিত ভাড়াতেও সব সিটে যাত্রী বহন!

মহামারি করোনার মধ্যেও কোনও নিয়ম মানছে না রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনগুলো। দূরপাল্লার বেশির বাসে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী বহন করার নির্দেশনা মানা হলেও রাজধানীতে চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। বর্ধিত ভাড়া নেওয়া হলেও প্রায় সব আসনেই যাত্রী বসানোর পাশাপাশি দাঁড়িয়েও পরিবহন করার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে প্রায়শই। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ যাত্রীরা। কিছু চালক ও হেলপার এমন কাজ করছেন- স্বীকার করে তাদের সাজা দেওয়া হচ্ছে বলেও দাবি করছেন পরিবহন মালিকরা।

নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ পরিবহনেই সব আসনে যাত্রী বহন করা হচ্ছে। আবার সরকার নির্ধারিত ৬০ শতাংশ ভাড়াও বেশি আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি বলতে কোনও নিয়মই মানা হচ্ছে না। এ নিয়ে হেলপারের সঙ্গে যাত্রীর বাকবিতণ্ডা নিত্য ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় বর্ধিত ভাড়া আদায় প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।

সকালে নগরীর পল্টন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ পরিবহনেই সব আসনে যাত্রী রয়েছে। বেসরকারি কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠান বিআরটিসির গণপরিবহনকে এই নিয়ম বেশি ভাঙতে দেখা গেছে। অবশ্য এ জন্য যাত্রীর ঘাড়েই দোষ চাপালেন বিআরটিসির এক বাসের হেল্পার। বেশি যাত্রী নিচ্ছেন কেন?- জিজ্ঞাসা করতেই তার পাল্টা প্রশ্ন, মানুষ যদি তার নিজের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন না হয় আমরা কীভাবে করবো? আমরা তো তাদের জোর করে তুলছি না। তারা কেন অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে বাসে ওঠে, মানুষ বাসে না উঠলেই তো হয়।

অবশ্য গাড়ির হেলপারের সঙ্গে কথা বলার সময়ও কয়েকজনকে বাসে উঠতে দেখা গেল। বাসের আসন প্রায় পূর্ণ থাকলেও হেলপার যাত্রী উঠতে বাধা না দিয়ে বরং সহযোগিতাই করছেন। বিষয়টি দেখিয়ে দিতেই বাস ছেড়ে দিলো। জবাব পাওয়ার আগেই পরের গন্তব্যের দিকে বাড়লো বাস, সুযোগ বুঝে মুখ ফেরালেন হেলপারও। তবে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখা গেল অনেকেই পর্যাপ্ত গণপরিবহন না পেয়ে অনেকেই জোর করেও উঠছেন বাসে।

সকালে কুড়িল এলাকায় দেখা গেছে, জোয়ার সাহারা-সদরঘাট রুটে চলাচলরত বিআরটিসির দ্বিতল বিশিষ্টবাসগুলোর প্রতিটি আসনে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। রিয়াজুল ইসলাম নামে বেসরকারি একটি কোম্পানিতে কর্মরত এক যুবক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সকাল সাড়ে ৮টা থেকে কুড়িল এলাকায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। অধিকাংশ বাসই সব আসনে যাত্রী পরিবহন করেছে। ইচ্ছা করছে না স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে এভাবে বাসের যাত্রী হই। কিন্তু উপায় খুঁজে পাচ্ছি না।

শনির আখড়ার বাসিন্দা আরেফিন শাকিল বলেন, লকডাউনে গণপরিবহন যখন চালুর অনুমতি দেওয়ার হয় সেই শুরুর দিকে স্বাস্থ্যবিধি কিছুটা পালন হয়েছিলো। কিন্তু কয়েক দিন যেতে না যেতেই সব আসনেই যাত্রী তোলা হচ্ছে। কিন্তু ভাড়া কম নিচ্ছে না।

জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে আমরা আটটি মোবাইল টিম গঠন করেছি। বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়ে এই টিমগুলো গঠন করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্ব পালন করছে। এমন অপরাধের কারণে কয়েকটি বাসের ট্রিপ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকাসহ সারাদেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়ি চলাচল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে নয় সদস্য বিশিষ্ট আরেকটি মোবাইল টিম গঠন করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতে গণপরিবহন পরিচালনা করা হয় আমরা সেই দিকে বিশেষ নজর রাখছি।

এদিকে বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার করে ‘যতো সিট ততো যাত্রী’ ভিত্তিতে যাত্রী পরিবহনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গণপরিবহন মালিকদের নৈরাজ্য আজকের নয়। আমরা অনেক আগ থেকেই বলে আসছি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করে বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার করে যতো আসন ততো যাত্রী পদ্ধতিতে গণপরিবহন পরিচালনার জন্য।

নাটোরে স্কুলছাত্রকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা

প্রকাশিত :  ০৫:৫৬, ২৯ মার্চ ২০২৪

নাটোরের নলডাঙ্গায় হিমেল হোসেন (১৫) নামে এক স্কুল ছাত্রকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হাত-মুখ বেঁধে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে সহপাঠীদের বিরুদ্ধে।

নিহত হিমেল হোসেন পিপরুল গ্রামের টিসিবি ডিলার ফারুক সরদারের ছেলে। সে পাটুল-হাঁপানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র ছিল।

এ ঘটনায় হিমেলের দুই সহপাঠীসহ চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন— একই এলাকার পার্থ, মেহেদি, সুজন ও শিমুল। এদের মধ্যে পার্থ ও মেহেদী নিহত হিমেলের সহপাঠী।

গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) এ টি এম মাইনুল ইসলাম।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকালে হিমেলকে তার  বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় সহপাঠী পার্থ। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিল হিমেল। এ ঘটনায় হিমেলের বাবা ফারুক সরদার নলডাঙ্গা থানায় অভিযোগ করলে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ রাতেই পার্থকে আটক করে। পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অপর সহপাঠী মেহেদী এবং এলাকার ‘সিনিয়র’ বন্ধু সুজন ও শিমুলকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের সাথে নিয়ে রাত দেড়টার দিকে  পিপরুল ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের পেছনে পরিত্যক্ত ইউনিয়ন পরিষদের পাশের একটি ভুট্টা ক্ষেত থেকে হিমেলের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।  

নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) এ.টি.এম. মাইনুল ইসলাম বলেন, বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়ার পর হিমেলের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারছিল না পরিবারের সদস্যরা। বিষয়টি পুলিশকে জানালে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে হিমেলের মুঠোফোনের সূত্র ধরে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা প্রাথমিকভাবে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। নলডাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।