জনমত ডেস্ক: সিলেটের জকিগঞ্জে বাস চাপায় এক মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় উপজেলার কসকনকপুর ইউনিয়নের ইনামতি এলাকায় কালিগঞ্জ জকিগঞ্জ সড়কে এ ঘটেছে। নিহত জিসান আহমদ (৭) পশ্চিম ইনামতি গ্রামের কামরুল ইসলামের ছেলে।
স্থানীরা জানান, জিসান আহমদ সড়কের ডানপাশে দাঁড়ানো ছিলো। তখন জকিগঞ্জ থেকে সিলেটগামী বাস (মৌলভীবাজার জ ১১-০০০১) বেপোরোয়া গতিতে ওভারটেক করতে গিয়ে শিশুটিকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এসময় চালক পালিয়ে যায়।
জিসান গ্রামের একটি মাদ্রাসায় দ্বিতীয় শ্রেণীতে লেখাপড়া করে। সংবাদ পেয়ে জকিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন ও থানার ওসি আবুল কাসেম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
জকিগঞ্জ থানার ওসি আবুল কাসেম জানান, লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে পাঠানো হবে। গাড়ি জব্দ করা হয়েছে এবং পলাতক চালককে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
শিক্ষাবিদ মোহাম্মদ আব্দুছ ছমদ : এক অত্যুজ্জ্বল আলোকবর্তিকা
প্রকাশিত :
২১:২৩, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ সর্বশেষ আপডেট: ২১:৩৬, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
বৃহত্তর সিলেটে যেসব কীর্তিমান জ্ঞানের আলো বিকাশে অনন্য ভূমিকা পালন করে আজও অমর হয়ে আছেন তাঁদের মধ্যে মোহাম্মদআব্দুছছমদ একটি প্রাতঃস্মরণীয় নাম, এক অনন্যসাধারণ প্রতিভা। শিক্ষাবিদ, একাধিক ভাষায় পণ্ডিত, বহু গ্রন্থ প্রণেতা হিসেবে তার নাম সর্বাগ্রে উচ্চারণীয়। স্কুল-কলেজে শিক্ষালাভ ও শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি আরবি সাহিত্যে যে পাণ্ডিত্য অর্জন করেছিলেন তা আজকালকার যে কোনো শিক্ষানুরাগীকে বিস্মিত করে তুলবে।
শিক্ষাবিদমোহাম্মদআব্দুছছমদ এর প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয়নিজগ্রাম হাজারীচকেরপাঠশালাএবংরাহাতপুর (বর্তমানভারত) প্রাইমারীস্কুলে। তিনিমাধ্যমিকস্তরপর্যন্ত কৃতিত্বের সাথে অধ্যয়ন সম্পন্নকরেছেনকরিমগঞ্জসরকারিহাইস্কুলে। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়েই তার সুপ্ত প্রতিভার স্ফূরণ ঘটতে থাকে।১৯১৫খ্রিস্টাব্দেসিলেটেরএমসিকলেজথেকেএফএপরীক্ষায়অংশনিয়েমেধাতালিকায়স্থানলাভকরেপ্রথমবিভাগেউত্তীর্ণহন। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য তাকে শ্রীভূমি ত্যাগ করে ওপার বাংলায় পাড়ি জমাতে হয়।১৯১৭খ্রিস্টাব্দেমোহাম্মদআব্দুছছমদ কলকাতাপ্রেসিডেন্সিকলেজথেকেপ্রথমশ্রেণিতেবিএপাশকরে শিক্ষকতার মহান পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন।
কর্মজীবন
অনুসন্ধিৎসা ও দুর্দমনীয় শিক্ষানুরাগ নিয়ে তিনি একজন শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবনে পদার্পণ করেন। ১৯১৯খ্রিস্টাব্দেশিলচরসরকারিস্কুলেসহাকারিশিক্ষকপদেযোগদানেরমাধ্যমেতাঁরশিক্ষকতারশুরু। এরপর১৯২১খ্রিস্টাব্দেতিনিস্কুলইন্সপেক্টরপদেনিয়োগলাভকরেন।১৯৩০খ্রিস্টাব্দপর্যন্তফেঞ্চুগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুরওবানিয়াচংপ্রভৃতিস্থানেস্কুলইন্সপেক্টরহিসেবেদায়িত্বপালনকরেন।১৯৩১খ্রিস্টাব্দেরশুরুতেশিলচরগভর্নমেন্টনরমালস্কুলে (টিচার্সট্রেনিং) সুপারিন্টেন্ডেন্টপদেনিয়োগপ্রাপ্তহন।১৯৪৭খ্রিস্টাব্দেদেশবিভাগপর্যন্তসুনামেরসাথেএপদেদায়িত্বপালনকরেন।
শিক্ষাবিদ মোহাম্মদ আব্দুছ ছমদ প্রতিষ্ঠিত সিলেট শহরের পীর মহল্লা মসজিদ
দেশভাগেরপরপরই (১৯৪৭) তিনিমৌলবীবাজারসরকারিউচ্চবিদ্যালয়েপ্রধানশিক্ষকপদেযোগদানকরেন। উল্লেখ্য যে, তিনিছিলেনএস্কুলেরপ্রথমমুসলিমপ্রধানশিক্ষক ।১৯৪৯থেকে১৯৫৩খ্রিস্টাব্দেরশেষদিকপর্যন্ততিনিবড়লেখাপিসিস্কুলেরপ্রধানশিক্ষকহিসেবেদায়িত্বপালনকরেন। এখানেইতাঁরপ্রাতিষ্ঠানিককর্মজীবনেরইতি ঘটে।
শিক্ষাবিদ মোহাম্মদ আব্দুছ ছমদ প্রতিষ্ঠিত হাজারীচক মসজিদ
একজন আদর্শ শিক্ষক ও শিক্ষা ইন্সপেক্টরহিসেবে তিনিছিলেন সর্বাংশেসফল।তাঁর হাজারো ছাত্রের তালিকায় অনেক কীর্তিমানের নামও রয়েছে, যারা যোগ্য শিক্ষকের সুযোগ্য ছাত্র হিসেবে দেশ ও জাতির বহুবিদ কল্যাণ সাধন করে গেছেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- সাবেকডিআইজি, এমপিওভূমিপ্রশাসনমন্ত্রীএমএহক, সাবেকএমপিে এবংঅর্থওপরিকল্পনামন্ত্রীএমসাইফুররহমান, সাবেকএমপিওপররাষ্ট্রমন্ত্রীআবদুসসামাদআজাদ, সাবেকসচিবওএমপিব্রিগেডিয়ার (অব:) এমআরমজুমদার, হাফিজমজুমদারপ্রমুখ।
প্রকাশিতগ্রন্থ
ভূমিকায়ই উল্লেখ করেছি, একজন জেনারেল শিক্ষিত হয়ে আরবি সাহিত্যে তাঁর দক্ষতার কথা, যা স্বীয় ধর্মনিষ্ঠা ও পারিবারিক ধর্মানুরাগকেই পরিস্ফুটিত করে। মোহাম্মদআব্দুছছমদবেশকয়েকটিইসলামিগ্রন্থপ্রণয়নকরেন। তাঁর রচিত ইসলামি বইসমূহ দ্বীনের প্রাথমিক স্তম্ভ হিসেবে মুমিন মুসলিমগণের ইবাদতের পরিশুদ্ধতা ও ঈমানের দৃঢ়তার বাহক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। সেসময়বাংলাভাষায়ইসলামিগ্রন্থপ্রণয়নছিলোখুবইসীমিত।তাঁরসেগ্রন্থসমূহ আজওকালেরসাক্ষীহয়েঠিকেআছে। শিক্ষাবিদ, পণ্ডিত মোহাম্মদআব্দুছছমদ প্রণীত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ হচ্ছে:
১ . আলকাওয়াইদুলআরাবিয়্যামাআসুওয়ারিলকুরআনওয়ালআদইয়াতিদ দারুরিয়্যাহ,
এছাড়ামুফিদুলমুছাল্লীন৫ম, ৬ষ্ঠও৭মখণ্ডপ্রকাশিতহয়েছিলোবলেপারিবারিকসূত্রেজানাগেছে।কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যএগুলোর প্রকাশিতকোনকপিসংগৃহীতহয় নি।
সংসারজীবন
সংসারজীবনেও সফল ছিলেন এই কর্মবীর।তাঁরসহধর্মিণীর নামসৈয়দারাইসুননেসা (মরহুমা১৯৯৯)। তিনিচারপুত্রওতিনকন্যাসন্তানেরজনক।তাঁরাসবাইউচ্চশিক্ষায়শিক্ষিত।তাঁরপরিবারসিলেটশহরেরস্থায়ীবাসিন্দা।
মোহাম্মদআব্দুছছমদের সন্তানদেরমধ্যেসর্বকনিষ্ঠসন্তানইঞ্জিনিয়ারমোহাম্মদআব্দুলবাকীইশুধুবর্তমানেজীবিতআছেন। বড় ছেলে মরহুম মোহাম্মদ আব্দুল হাই ইউকে প্রবাসী ছিলেন (১৯৯৮), মেজো ছেলে মরহুম প্রিন্সিপাল আব্দুর নূর (২০১৭), তৃতীয় ছেলে মরহুম ডাক্তার আব্দুর রব (২০১৯) এবং চতুর্থ ছেলে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল বাকী (জীবিত)।
উল্লেখ্য, শিক্ষাবিদমোহাম্মদআব্দুছছমদ এর পৌত্র,ইঞ্জিনিয়ারমোহাম্মদআব্দুলবাকীর কনিষ্ঠ সন্তান বর্তমান ব্রিটিশ বাংলা টাইমস (বিবিটি) এর সম্পদক তৌহিদ আহমেদ।
বহু প্রতিভার অধিকারী, মহানলেখকওশিক্ষাবিদমোহাম্মদআব্দুছছমদ ২৮শেএপ্রিল১৯৮৩সালে৯৩বছরবয়সেসিলেটেরপশ্চিমপীরমহল্লায়তারনিজবাসভবনপরলোকগমনকরেন।
পরিশেষে বলা যায়, অনন্য সাধারণ প্রতিভার অধিকারী মোহাম্মদ আব্দুছ ছমদ নিজের কর্মের মাঝে আজও মহীয়ান। তিনি নিজেই যেন এক আলোকরশ্মি। তাঁর আজীবন শিক্ষকতা ও ধর্মীয় ইবাদত-আকিদামূলক গ্রন্থ প্রণয়ন আমাদের সমাজে জ্ঞানের অত্যুজ্জ্বল আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।