img

‘মিসরের আসল সন্ত্রাসী হচ্ছেন সিসি’

প্রকাশিত :  ১০:২৬, ২২ জুন ২০২১

‘মিসরের আসল সন্ত্রাসী হচ্ছেন সিসি’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিসরের বামপন্থি রাজনীতিবিদ ড. মামদুহ হামজা।  মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির কট্টর সমর্থক হিসেবেই ছিলেন পরিচিত। এখন তিনিই সিসির অন্যতম সমালোচক হয়ে উঠেছেন। 

মিডল ইস্ট আইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. মামদুহ হামজা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, যে কোনো মুহূর্তে সিসির পতন হয়ে যেতে পারে।  একই সঙ্গে সিসিকে তিনি অভিহিত করেছেন, মিসরের আসল সন্ত্রাসী হিসেবে।

সাক্ষাৎকারে তিনি সিসির নেওয়া নানা পদক্ষেপের সমালোচনা করেন।  একই সঙ্গে সিসি যে জনগণের সমর্থন হারাচ্ছেন, সে বিষয়টিও তুলে ধরেন। 

হামজা একজন প্রসিদ্ধ প্রকৌশলী। তার হামজা অ্যান্ড কোং নামে একটি কনসালট্যান্সি ফার্ম রয়েছে।  তিনি আলেক্সান্দ্রিয়া লাইব্রেরি তৈরিতে অংশ নেন।  কিন্তু তার সম্পদ বর্তমানে রাষ্ট্র দখল করে নিয়েছে।

হামজা কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন পড়তেন, তখন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয়। এর পর তিনি হোসনি মোবারক এবং মোহাম্মদ মুরসির বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেন।

মুরসির বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি রাজনৈতিক ইসলামের বিরুদ্ধে। 

যখন সিসি ক্ষমতায় এলেন, হামজা তাকে সমর্থন জানান।

হামজার সঙ্গে সরকারের টানাপোড়েন শুরু হয় মূলত সুয়েজ খালের নতুন শাখা তৈরির সমালোচনা করে একটি আর্টিক্যাল প্রকাশের পর থেকে।

তিনি বলেন, আমি সুয়েজ খালের নতুন শাখা নিয়ে একটি আর্টিক্যাল লিখি।  এটা যে মিসরের জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনবে, তা তুলে ধরি লেখায়। এ ছাড়া কেন আমাদের এ নতুন শাখার দরকার নেই, সে বিষয়েও উল্লেখ ছিল সেখানে।  এটিই মূলত টার্নিং পয়েন্ট।  এর পর আমি রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত টিভির অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বন্ধ করে দিলাম।   

সাক্ষাৎকারে নীল নদে দ্য গ্রান্ড ইথিওপিয়ান রেনেসান্স ড্যামের (জিইআরডি) তীব্র সমালোচনা করেন হামজা।

তার মতে, এ ড্যাম মিসরের জন্য ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, পানির স্তর নেমে যাওয়া এবং ক্ষুধার কারণে মিসরের ৪০ শতাংশ নাগরিক কর্মহীন হয়ে যেতে পারে। 

কয়েক বছর আগে চিকিৎসার জন্য হামজা মিসর ত্যাগ করেন।  নিরাপত্তারক্ষীদের ওপর সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে হামজার অনুপস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে তিনটি রায় ইস্যু করেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে স্থান দেওয়া হয় মিসরের সন্ত্রাসীদের তালিকায়। 

এতে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছেন হামজা। তিনি বলেন, এটি শোনার পর আমার মনে হচ্ছিল আমার কান দিয়ে যেন আগুন বের হবে। আমার বয়স ৭৩ বছর। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের অধ্যাপক, লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের স্নাতক আমি হঠাৎ করে সন্ত্রাসী হয়ে গেলাম। আমার প্রকাশিত গবেষণামূলক প্রবন্ধের সংখ্যা ৬৪। কিন্তু আমি সিসির সরকারের চোখে এখন সন্ত্রাসী।  নিজের সমালোচকদের বিরুদ্ধে দেদারসে আইনকে ব্যবহার করছেন সিসি।

এর পর তিনি বলেন, মিসরে সিসিই আসল সন্ত্রাসী।

২০১৩ সালের জুলাইয়ে দেশটিতে প্রবল গণবিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত মুসলিম ব্রাদারহুডের মোহামেদ মুরসিকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদচ্যুত করেন সিসি৷ এর পর ২০১৪ সালে তিনি মিসরের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন।

img

ইসরাইল-মিসর সম্পর্কে ফাটল, রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের হুমকি!

প্রকাশিত :  ১২:০২, ১৪ মে ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৬, ১৪ মে ২০২৪

ইসরায়েল ও মিসরের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের শুরু ৪৫ বছর আগে। এই সময়ের মধ্যে দুই দেশের সম্পর্ক খুক একটা উষ্ণ না হলেও একটি ন্যূনতম সম্পর্ক বজায় ছিল। তবে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে দুই দেশের সম্পর্কে ফাটল তৈরি হয়েছে। এমনকি তেল আবিব থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও ভাবছে কায়রো।

সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে মিসরীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন, রাফায় দেশটির অভিযানকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে মতভেদের বিষয়টি প্রকট আকার ধারণ করেছে। এই অবস্থায় ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করার কথা ভাবছে মিসর। বিশেষ করে, গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে ইসরাইল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করে দেশটি।

মিসরের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আলকাহেরা নিউজ শনিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রাফাতে ইসরাইলের ‘অগ্রহণযোগ্য উত্তেজনা বৃদ্ধির’ কারণে ত্রাণ নিয়ে মিসর তাদের সঙ্গে কাজ করবে না।

একটি সূত্র সংবাদমাধ্যমটিকে জানিয়েছে, গাজায় মানবিক পরিস্থিতির বিপর্যয়ের জন্য শুধুমাত্র ইসরাইলকেই দায়ী করে মিসর।

ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুরোপুরি ছিন্ন না করে তা সীমিত করার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিসরীয় কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মিসরীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কায়রো ইসরাইল থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের বিষয়টিও বিবেচনা করে দেখছে।

তিনি আরও বলেন, তবে যতক্ষণ পর্যন্ত ইসরাইলি বাহিনী রাফাহ ক্রসিংয়ে (মিসর ও গাজার মধ্যকার সংযোগ পথ) অবস্থান করবে ততক্ষণ পর্যন্ত মিসর একটি ট্রাকও (ত্রাণবাহী) রাফাহে পাঠাবে না।’ তবে রাফাহে ত্রাণের ট্রাক পাঠাতে না পারলে সেটির ফলাফল কী হবে সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি ও মিসরীয় কর্মকর্তা।

গত সপ্তাহে হঠাৎ করে গাজা ও মিসরের সীমান্তবর্তী রাফা ক্রসিং দখল করে নেয় ইসরাইলি সেনারা। এরপর থেকে সীমান্তটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। সেখান দিয়ে এখন কোনো ধরনের ত্রাণ আসছে না। এর আগে গাজার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে ত্রাণ আসার একমাত্র পথ ছিল এই রাফা ক্রসিং। এছাড়া গাজা থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মিসর যাওয়ার একমাত্র রাস্তাও ছিল এটি।

রাফা ক্রসিং দখল করার পর শনিবার রাফার মধ্যাঞ্চল থেকে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরাইল। এরপরই সেখানে পূর্ণমাত্রার হামলা চালায় দখলদার ইসরাইলের সেনারা।