চিলির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিততে পারেন ফিলিস্তিনি বংশদ্ভুত প্রার্থী

প্রকাশিত :  ১৫:৪১, ২৬ জুন ২০২১

চিলির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিততে পারেন ফিলিস্তিনি বংশদ্ভুত প্রার্থী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলির রাজধানী সান্তিয়েগোর অন্তর্গত রেকোলেতার মেয়র ড্যানিয়েল হাজওয়া এই বছর দেশটিতে অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। চিলিতে অভিবাসী হয়ে আসা ফিলিস্তিনি অভিবাসীর বংশধর এই প্রার্থী নির্বাচনে জিততে পারেন বলে সাম্প্রতিক এক জরিপে প্রকাশ করা হয়েছে।

অধিকৃত পশ্চিম তীরের বাইত জালা থেকে গত শতকের প্রথমার্ধে ড্যানিয়েল হাজওয়ার দাদা প্রথম চিলিতে আসেন। তৎকালীন ব্রিটেনের ম্যান্ডেট শাসিত ফিলিস্তিনে ইহুদি অভিবাসীদের অবিরাম আগ্রাসনে উদ্বাস্তু হওয়া অনেক ফিলিস্তিনি আরব বিশেষ করে খ্রিস্টান ফিলিস্তিনি আরবরা দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে অভিবাসী হয়ে আসেন।

তরুণ বয়স থেকেই হাজওয়া ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায়ের বিষয়ে কথা বলে আসছেন। মাত্র ১১ বছর বয়সে তিনি চিলির জেনারেল ইউনিয়ন অব প্যালেস্টেনিয়ান স্টুডেন্টসে যোগ দেন। পরে ১৯৮৭ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত সংস্থাটির নেতৃত্ব দেন তিনি। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারেবিয়ান অঞ্চলে ফিলিস্তিনি যুব সংগঠনগুলোর সমন্বয়ের কাজ করেন তিনি। এই সময়ে ড্যানিয়েল লেবানন ও সিরিয়া সফর করেন এবং ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন।

২০০৯ সালে প্রথম বারের মতো ফিলিস্তিন সফর করেন ড্যানিয়েল হাজওয়া। সফর থেকে ফিরে নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘প্যালেস্টাইন : ক্রনিকল অব অ্যা সিজ’ নামের বইটি লিখেন তিনি। ২০১৩ সালে এটি প্রকাশিত হয়।

গত মাসে ফিলিস্তিনজুড়ে অস্থিরতা এবং অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে চিলিতে অবস্থিত ইসরাইলি দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভের আয়োজন করেন তিনি।

৫৩ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ ২০১২ থেকে রেকোলেতার মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। এই বছর ২১ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য চিলির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে এখন প্রচারণায় ব্যস্ত ড্যানিয়েল হাজওয়া।

রাজনৈতিক জীবনে কমিউনিস্ট আদর্শে বিশ্বাসী হলেও হাজওয়া সোভিয়েত রাশিয়ার অধীন রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার তুমুল সমালোচক। সোভিয়েত কম্যুনিজমকে তিনি ‘রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ’ ও ‘নির্মম ব্যর্থতা’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মাঝে ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের অবস্থান রাখার পক্ষপাতী তিনি। তবে নায্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিশ্চিতে তা রাষ্ট্রীয় নজরদারির আওতায় রাখার বিষয়ে মত প্রকাশ করেন তিনি।

বর্তমানে চিলির কমিউনিস্ট পার্টির সেন্ট্রাল কমিটির সদস্য হাজওয়ার রাজনৈতিক মতাদর্শের বদলে তার ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে ভূমিকাকেই লক্ষ্য বানিয়েছে প্রতিপক্ষ। ড্যানিয়েল হাজওয়ার বিরুদ্ধে তার প্রতিপক্ষ ইহুদিবিদ্বেষের (অ্যান্টি-সেমিটিজম) অভিযোগ তোলা হয়েছে।

ড্যানিয়েল হাজওয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ল্যাটিন আমেরিকায় অবশ্য তিনিই প্রথম ফিলিস্তিনি বংশদ্ভুত প্রেসিডেন্ট হবেন না। তার আগে হন্ডুরাসে কার্লোস ফাকুসা ১৯৯৮ থেকে ২০০২, এল সালভেদরে অ্যান্টোনিও সাসা ২০০৪ থেকে ২০০৯ এবং বর্তমানে এল সালভেদরে ২০১৯ থেকে নায়েব বুকলালা প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন।

তবে ফিলিস্তিনিদের জন্য ভূমিকার জেরে আর সকলের চেয়ে তিনি আলাদা এক অবস্থানে রয়েছেন। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি মানেই ফিলিস্তিনি খাবার খাওয়া ও দাবকা নাচা না। যদি আপনি ফিলিস্তিনি হয়েও জানেন না যে আপনি দেয়ালের কোন পাশে, তবে আপনি ফিলিস্তিনি নন।’

বর্তমানে চিলিতে পাঁচ লাখের মতো ফিলিস্তিনি অভিবাসীদের বসবাস রয়েছে। ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে দেশটির। গত বছরের জুলাইয়ে চিলির আইন পরিষদের সদস্যরা একটি প্রস্তাব পাস করে, যাতে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে পণ্য উৎপাদন ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ইসরাইলি প্রতিষ্ঠানকে বয়কটের জন্য দেশটির প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

সূত্র : মিডল ইস্ট মনিটর, টিআরটি ওয়ার্ল্ড


আন্তর্জাতিক এর আরও খবর

টাকার বিছানায় ঘুমিয়ে ভাইরাল নেতা

প্রকাশিত :  ০৯:১৮, ২৮ মার্চ ২০২৪

বিছানায় ছড়িয়ে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। আর সেই টাকার মধ্যে শুয়ে আছেন ভারতের আসাম রাজ্যের দুর্নীতিতে অভিযুক্ত রাজনীতিবিদ বেঞ্জামিন বসুমাতারি। এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে চারদিকে হৈ চৈ পড়ে যায়। সবার জানার আগ্রহ কে এই নেতা যিনি দেশের মানুষের এত টাকা মেরে দিয়েছেন।

জানা যায়, বেঞ্জামিন বসুমাতারি। ভারতের আসামের ইউনাইটেড পিপলস পার্টি লিবারেল (ইউপিপিএল)-এর একজন নেতা। প্রধানমন্ত্রীর আবাসন প্রকল্প এবং গ্রামীণ চাকরি প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত বড় এক দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত তিনি। অদ্ভুত এক কাণ্ড ঘটিয়ে আবারও আলোচনায় এসেছেন এই নেতা।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে বসুমাতারির। আর তাতেই ভারত জুড়ে তোলপাড়। ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে, টাকার বিছানায় ঘুমিয়ে আছেন আসামের ওদালগুড়ি জেলার ভৈরাগুড়িতে গ্রাম পরিষদ উন্নয়ন কমিটির (ভিসিডিসি) এই চেয়ারম্যান। তার ওপর ৫০০ রুপির নোটের স্তূপ।

ছবিটি নিয়ে ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে। এদিকে বসুমাতারির এমন কাণ্ডের দায় নিতে অস্বীকার করেছে তার দল ইউপিপিএল। বোডোল্যান্ড-ভিত্তিক দলটির প্রধান এবং বোডোল্যান্ড টেরিটোরিয়াল কাউন্সিলের (বিটিসি) প্রধান নির্বাহী সদস্য প্রমোদ বোরো বুধবার সকালে বিষয়টি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, বেঞ্জামিন বসুমাতারি আর দলের সঙ্গে যুক্ত নন। কয়েক মাস আগেই তাকে বহিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে।

বিবৃতি দিয়ে প্রমোদ বোরো বলেছেন, ‘বেঞ্জামিন বসুমাতারির একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমগুলোয় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। আমরা স্পষ্ট করতে চাই যে, বেঞ্জামিন বসুমাতারি আর ইউপিপিএলের সঙ্গে যুক্ত নন। তাকে গত ১০ জানুয়ারি দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি সকল গণমাধ্যম এবং সামাজিক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের অনুরোধ করছি যে, বেঞ্জামিন বসুমাতারিকে ইউপিপিএলের সঙ্গে যুক্ত করা থেকে বিরত থাকুন। তার ক্রিয়াকলাপের দায়িত্ব সম্পূর্ণ তার নিজের। দল তার ব্যক্তিগত কোনো কাজের জন্য দায়ী নয়।’

বিরোধীরা অবশ্য ইউপিপিএল প্রধানের এমন বক্তব্য মানতে নারাজ। তাদের দাবি, বেঞ্জামিন বসুমাতারি এখনও ইউপিপিএলে যুক্ত আছেন।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বোডোল্যান্ডের এই নেতা প্রধানমন্ত্রীর আবাসন প্রকল্প এবং গ্রামীণ চাকরি প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত বড় আকারের একটি দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত। ওদালগুড়ি উন্নয়ন অঞ্চলে বসুমাতারি ভিসিডিসির অধীনে পিএমএওয়াই এবং এমএনআরইজিএ প্রকল্পের অধীন দরিদ্র সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে তিনি ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।