প্রকাশিত :
১২:৪৩, ০৪ জুলাই ২০২১ সর্বশেষ আপডেট: ১৩:০৯, ০৪ জুলাই ২০২১
জনমত ডেস্ক: বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের টিকার বিষয়ে খোঁজ নিতে বলেছেন হাইকোর্ট। বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনার ভ্যাকসিন দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের বলেছেন আদালত।
লেখাপড়ার উদ্দেশে বিদেশগমনেচ্ছু শিক্ষার্থীদের করোনার ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করতে আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী এস কে জাহাঙ্গীর আলম।
তখন আদালত রাষ্ট্রপক্ষকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বিদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনেক ছাত্রই টাকা দিয়ে ভর্তি হয়ে গেছে। আগস্ট-সেপ্টেম্বর থেকে তাদের সেশন শুরু হয়ে যাবে। এসব শিক্ষার্থীদের কীভাবে টিকার ব্যবস্থা করা যায় এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কথা বলেন।
এসময় আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলমকেও শিক্ষার উদ্দেশ্যে বিদেশ গমনেচ্ছু শিক্ষার্থীদের টিকার ব্যবস্থা করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একটি আবেদনও করতে বলেন আদালত।
ডেপুটি এটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বাসস'কে বলেন, বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনার ভ্যাকসিন দেয়ার বিষয়টি মৌখিক আকারে আদালতের নজরে আনা হয়। আদালত বলছেন বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কথা বলতে। আমরা বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলব।
প্রকাশিত :
১০:১৪, ১৩ মে ২০২৪ সর্বশেষ আপডেট: ১১:২৯, ১৩ মে ২০২৪
ইয়ান বুরুমা
ফিলিস্তিনি কেফিয়াহ্ (বিশেষ ধরনের স্কার্ফ) গলায় জড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন করতে আমরা দেখছি। ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’ {নদী (এখানে নদী বলতে জর্ডান নদী বোঝানো হচ্ছে) থেকে সাগর (সাগর বলতে এখানে ভূমধ্যসাগর) পর্যন্ত ফিলিস্তিন মুক্ত হবে}—এই স্লোগান দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের নিয়ে ঠাট্টা–মশকরা বা হাসাহাসি করাটা খুব সোজা।
তাঁরা এমনভাবে ক্যাম্পাস ভবনগুলো ‘মুক্ত’ করার ডাক দিচ্ছেন, যেন তাঁরা একেজন মুক্তিযোদ্ধা। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ আবার (অন্তত একজনের বিষয়ে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারছি) কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে আন্দোলনকারীদের জন্য ‘মৌলিক মানবিক ত্রাণ’ হিসেবে খাবার ও পানি দাবি করেছেন।
এসব বিষয় হাসিঠাট্টার বিষয় হতে পারে। তবে এটিও ঠিক, সব রাজনৈতিক বিক্ষোভই কোনো না কোনো লেভেলে একধরনের থিয়েটার হয়ে ওঠে। তারপরও এটি মানতে হবে, গাজায় বিপুলসংখ্যক নিরীহ বেসামরিক নাগরিককে হত্যার বিরুদ্ধে যাঁরা প্রতিবাদ করছেন, তাঁদের সবাই উপহাস করার মতো কাজ করছেন না। তাঁদের বিরুদ্ধে সহিংস আচরণ করা (তা সে পুলিশের দ্বারা হোক কিংবা কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উন্মত্ত জনতার দ্বারা হোক) কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।
সমস্যা হলো, কলেজ ক্যাম্পাসে এর মাধ্যমে ‘জায়নবাদবিরোধী’ অজুহাতের মাঠ দখল প্রায়ই সংকট তৈরি করে। এসব আন্দোলনের মতাদর্শগত ভিত্তি সবকিছুকেই একটির সঙ্গে আরেকটির যোগসাজশ আছে বলে দেখাতে থাকে। আফ্রিকান-আমেরিকানদের বিরুদ্ধে পুলিশের বর্বরতা, বৈশ্বিক উষ্ণতা, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ব, আমেরিকান দাসব্যবস্থার ইতিহাস, ইউরোপীয় উপনিবেশবাদ, রূপান্তর ও সমকামভীতি এবং বর্তমানে চলমান ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ—এর সবগুলোর মধ্যে আন্তসম্পর্ক খোঁজার প্রবণতা এসব আন্দোলনে প্রবলভাবে নিহিত থাকে।
হয়তো এরই ধারাবাহিকতায় ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক শ্বেতাঙ্গ যুবক চরম ডানপন্থী রাজনৈতিক দলের দিকে ঝুঁকেছে। তাঁরা এমন সব চটকদার গুরুসদৃশ ব্যক্তিত্বের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে, যাঁরা এই তরুণদের ঘুমিয়ে থাকা পৌরুষকে জাহির করতে এবং নারীদের আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এটি অশ্বেতাঙ্গ মানুষের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আচরণকে উসকে দিচ্ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র বলছিলেন, ‘ক্লাইমেট জাস্টিসের (জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের সুষম ক্ষতিপূরণ আদায়ের আন্দোলন) শিকড় যেভাবে সাম্রাজ্যবাদ এবং পুঁজিবাদবিরোধী সংগ্রামের মধ্যে গভীরভাবে প্রোথিত, ঠিক একইভাবে এসব আন্দোলনের সঙ্গে ফিলিস্তিনের গণহত্যাবিরোধী আন্দোলনের যোগসূত্র আছে।’
ঊনবিংশ শতাব্দীর একটি ইহুদি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন হলো জায়নবাদ। জায়নবাদে ধর্মীয়, ধর্মনিরপেক্ষ, বামপন্থী এবং ডানপন্থী আদর্শের উপাদান রয়েছে। তবে এই জায়নবাদ এখন উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদ এবং বর্ণবাদের সমার্থক হয়ে উঠেছে। এখন এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে যে একজন ভালো, মানবিক এবং নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হতে হলে তাকে অবশ্যই ‘জায়নবাদবিরোধী’ হতে হবে।
আবার কিছু লোক মনে করে, জায়নবাদবিরোধিতা মানেই অ্যান্টিসেমেটিক বা ইহুদিবিদ্বেষ। তবে আসলেই সেটি ঠিক কি না, তা পরিষ্কার নয়।
আসলে ইহুদিবাদের বিরোধিতা বা ইসরায়েলি নীতির সমালোচনা আর ইহুদিবিরোধিতা এক নয়। ইসরায়েলের অধিকারকে অস্বীকার করাটা সব ইহুদিকেই জায়নবাদী মনে করার মতো একটি শত্রুভাবাপন্ন মনোভাবের প্রকাশ।
সব ধরনের নিপীড়নকে একটির সঙ্গে আরেকটিকে জড়িয়ে দেওয়ার একটি একাডেমিক পরিভাষা আছে। সেটি হলো ‘ইন্টারসেকশনালিটি’ বা ‘আন্তছেদ’। এই মুহূর্তে ফিলিস্তিনের পক্ষে সক্রিয় বিক্ষোভকারীদের মধ্যকার অনেক শিক্ষার্থী এই চিন্তাধারা গ্রহণ করেছেন।
আত্মপরিচয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেতে ওঠা রাজনীতির মহাসমুদ্রে নেমে উদার বামপন্থী শিবিরের সব শিক্ষিত সদস্যরা (বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে) অন্তত একটি বিষয়ে একমত। সেটি হলো দাসপ্রথা-পরবর্তী ও ঔপনিবেশিক-পরবর্তী পশ্চিমের একজন সুশীল নাগরিক হওয়ার জন্য যে কাউকে সক্রিয়ভাবে বর্ণবাদবিরোধী হতে হবে; সাম্রাজ্যবাদবিরোধী হতে হবে এবং উপনিবেশবাদবিরোধী হতে হবে।
তার মানে হলো, সুশিক্ষিত ও আলোকিত মানসিকতার মানুষ হতে হলে যে কাউকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত সবখানের অতীত ও বর্তমানের সব বৈশ্বিক ঘটনাগুলোকে বর্ণবাদবিরোধিতার নিরিখেই পর্যালোচনা করতে হবে।
ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভগুলো কলাম্বিয়া, হার্ভার্ড, ইয়েল, স্ট্যানফোর্ডের মতো সেরা আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেন শুরু হলো, তা এই বিশ্বদৃষ্টিই হয়তো সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবে।
এই আন্তছেদের অনুভূতি যে শ্রমজীবী মানুষের বোধ থেকে উৎসারিত হয়েছে তা কিন্তু নয়। বরং এই বোধটি এসেছে সেই শিক্ষিত অভিজাত শ্রেণি থেকে, যাঁরা নিজেদের পশ্চিমা বিশ্বের সামষ্টিক নৈতিক বিবেক হিসেবে ভাবতে অভ্যস্ত।
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কারণে এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে একধরনের শ্রেণি অপরাধবোধ কাজ করে। সেই অপরাধবোধ থেকে বিবেককে মুক্ত করার একধরনের তাগিদ থেকে তাঁরা ক্যাম্পাসের বিক্ষোভে যুক্ত হয়ে থাকতে পারেন। বিশেষ করে এমন একটি সমাজে, যেখানে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান বাড়ছে, সেখানে তাঁদের মধ্যে এ ধরনের বোধ কাজ করাটা অমূলক নয়।
উপনিবেশের বিরুদ্ধে সংগ্রাম কিংবা বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ যখন শ্রেণিসংগ্রামের স্থলাভিষিক্ত হয়, তখন সেই সমাজে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত নাগরিকদের বাস করা সহজ হয়।
অবশ্য এর মধ্যেই শ্রেণিব্যবস্থা তার মতো করে চলতে থাকে। আর বিদ্রোহ প্রায়ই প্রিভিলেজ বা বিশেষাধিকার হাত থেকে ছুটে যাওয়ার ভয় থেকে উদ্ভূত হয়। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সে কারণেই তুলনামূলক অশিক্ষিত শ্বেতাঙ্গদের মনের মধ্যে এই ধারণা ঢুকিয়ে দিতে চেয়েছেন যে আরেক দেশ থেকে উড়ে আসা অভিবাসীরা তাদের চেয়ে ভালো করতে পারে।
সেই ভয় থেকেই তারা ট্রাম্পের পক্ষ নিয়ে আমেরিকান উদার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। আমেরিকার অভিজাত প্রতিষ্ঠান এবং পশ্চিমা বিশ্বের অন্যান্য অংশে এই ধরনের কিছু একটা ঘটছে।
এই কিছুদিন আগে পর্যন্ত একটি সুশিক্ষিত শ্বেতাঙ্গ পরিবার থেকে আসা ব্যক্তির জন্য সমাজের উচ্চপর্যায়ের টিকিট বরাদ্দ রাখা ছিল। কিন্তু এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রকাশনা, জাদুঘর, সাংবাদিকতাসহ উচ্চশিক্ষার প্রয়োজন হয় এমন অন্যান্য ক্ষেত্রে চাকরির জন্য তাঁদের এখন উচ্চশিক্ষিত অশ্বেতাঙ্গ ও নারীদের সঙ্গে অনেক বেশি প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হচ্ছে। এটি একটি সামগ্রিক ইতিবাচক উন্নয়ন। সবার অন্তর্ভুক্তি এবং ধর্ম-বর্ণের বৈচিত্র্যে বিশ্বাসী যে কারও এই ব্যবস্থাকে সাধুবাদ জানানো উচিত।
কিন্তু উদার-বাম মতাদর্শও (যা কিনা ‘বি-উপনিবেশকরণ’ও জাতিভিত্তিক বিশেষাধিকারের বিলোপের ওপর জোর দেয়) প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়াশীল অবস্থার দিকে আমাদের নিয়ে যেতে পারে।
হয়তো এরই ধারাবাহিকতায় ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক শ্বেতাঙ্গ যুবক চরম ডানপন্থী রাজনৈতিক দলের দিকে ঝুঁকেছে। তাঁরা এমন সব চটকদার গুরুসদৃশ ব্যক্তিত্বের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে, যাঁরা এই তরুণদের ঘুমিয়ে থাকা পৌরুষকে জাহির করতে এবং নারীদের আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এটি অশ্বেতাঙ্গ মানুষের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আচরণকে উসকে দিচ্ছে।
অন্যদিকে বিশেষাধিকার বজায় রাখার বিষয়ে অভিজাতদের উদ্বেগও তাদের প্রতিক্রিয়াশীল পথে নিয়ে যেতে পারে।
সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলো শিক্ষার্থীরা তাদের নিজেদের বর্ণবাদবিরোধী, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী এবং উপনিবেশবাদবিরোধী হিসেবে উপস্থাপনের মাধ্যমে সততা প্রদর্শন করাকে বিশেষাধিকার বঞ্চিত সমাজের রোষ থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে দেখতে পারে।
এটি বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় অবস্থান ধরে রাখার একটি উপায় হতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলন সত্যি সত্যি ফিলিস্তিনিদের নিজস্ব রাষ্ট্র অর্জনে (যেখানে তারা স্বাধীনভাবে নির্বাচিত সরকারের অধীনে আরও ভালো এবং আরও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারবে) সহায়তা করতে পারবে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
সেটি হয়তো কখনোই আন্দোলনকারীদের মূল বিষয় ছিলও না। তবে এটি স্পষ্ট, এই আন্দোলন যতটা না ফিলিস্তিনকে নিয়ে, তার চেয়ে বেশি আমেরিকাকে ঘিরে।