img

ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা কতটুকু কার্যকর

প্রকাশিত :  ০৮:০৯, ০৭ জুলাই ২০২১

ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা কতটুকু কার্যকর

অ্যালোভেরা এখন বাংলাদেশের সব জায়গায় পাওয়া যায়। এটি ঘৃতকুমারি নামেও পরিচিত। অ্যালোভেরা চুল ও ত্বক দুটোর জন্যই উপকারী একটি উপাদান। ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করতে, ত্বককে মসৃণ রাখতে, দাগমুক্ত করতে এবং ত্বকে ব্রণের উপদ্রব কমাতে অ্যালোভেরার তুলনা নেই। বিশেষ করে যাদের ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল তারা অন্যান্য কেমিক্যাল জাতীয় উপাদান ব্যবহার না করে ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে পারেন। চলুন জেনে নেয়া যাক সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অ্যালোভেরার বিভিন্ন ব্যবহার-

উজ্জ্বল ত্বকের জন্য অ্যালোভেরা :

এক চিমটি হলুদের গুঁড়া ও এক চা-চামচ মধু ভালো করে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটির সাথে অ্যালোভেরার জেল মিশিয়ে পেস্ট করে নিন। মুখে, গলায় বা হাত-পায়ে পেস্টটি লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে এক-দুইবার এই মাস্ক ব্যবহারে আপনি পেতে পারেন উজ্জ্বল ও ফর্সা ত্বক।

মুখের ত্বকে প্রতিদিন দুইবার অ্যালোভেরা লাগালে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে ত্বক। গোলাপ জল ও অ্যালোভেরা এক সাথে মিশিয়ে মুখে লাগালেও ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়বে।

কাঁচা দুধ, হলুদ এবং অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে বানানো এই মাস্কটি উজ্জ্বল এবং নরম ত্বক পেতে আপনাকে সাহায্য করবে। হলুদে এমন কিছু উপাদান থাকে, যা ব্রণের প্রকোপ কমায়। অপরদিকে, অ্যালোভেরা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। কাঁচা দুধ ত্বকের পিএইচ লেভেল ঠিক রাখে। ফলে ত্বক নরম হয়।

দাগ দূর করতে অ্যালোভেরা :

অ্যালোভেরার দু’পাশের কাঁটাগুলো কেটে ফেলে দিয়ে ছিলে নিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। তারপর একটি লেবুর সম্পূর্ণ রস বের করে এর সাথে মিশিয়ে নিন। মুখে, গলা, হাত বা পায়ের রঙ হালকা ও দাগ দূর করতে প্রতিদিন লাগিয়ে ১৫ মিনিট লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কটি রোঁদে পোড়াভাবও দূর করে। মিশ্রণটি ফ্রিজে রাখলে এক সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকবে।

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য অ্যালোভেরা :

মুলতানি মাটির সাথে মধু, লেবুর রস ও অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে ঘন পেস্ট বানিয়ে নিন। মুখে ও গলায় লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার মাস্কটি ব্যবহারে মুখের অতিরিক্ত তৈলাক্ততার সমস্যা দূর হবে।

রোদে পোড়াভাব কমাতে অ্যালোভেরা :

একটি কাঁচা টমাটোর মাঝখান থেকে শাঁসটুকু নিন। মসুর ডালের পাউডার বা পেস্টের সাথে অ্যালোভেরা জেল ও টমাটোর শাঁস মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। মুখে, গলায় এবং হাত-পায়ে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। যাদের ত্বক শুষ্ক তারা মাস্কটি ধুয়ে ফেলার পর ভেজা ত্বকেই কয়েক ফোঁটা নারিকেল তেল ও দুধের মিশ্রণ লাগিয়ে নিবেন। এতে করে ত্বক ময়েশ্চারাইজড থাকবে।

তাজা শসার পেস্ট করে তার সাথে তাজা অ্যালোভেরার জেল মিশিয়ে নিন। টক দই ও মধুও মিশিয়ে নিন। পরিষ্কার মুখে মাস্কটি লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিট অপেক্ষা করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কটির প্রতিদিনের ব্যবহারে রোঁদে পোড়াভাব দূর হয়। ব্রণের দাগ বা দাগ হালকা করতেও এটি সাহায্য করে। এটি ত্বককে পরিষ্কার করে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে আপনাকে দেবে সমস্যামুক্ত ত্বক।

মেছতা দূর করতে অ্যালোভেরা :

অ্যালোভেরার জেল মেছতা দূর করে। আঙ্গুলের ডগায় খানিকটা জেল নিয়ে দাগের উপর ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করুন। সারা রাত লাগিয়ে রেখে পরদিন সকালে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কয়েক সপ্তাহ লাগালে মেছতার দাগ কমে যাবে।

অ্যালোভেরা, মধু ও শসা একসাথে মিশিয়ে পেস্ট করে মুখে লাগালে মেছতা দূর হওয়ার পাশাপাশি সতেজ হয়ে উঠবে ত্বক।

অ্যালোভেরা ও গাজর সেদ্ধ একসাথে পেস্ট করে লাগালেও মেছতা দূর হয়।

ত্বক সতেজ রাখার জন্য অ্যালোভেরা :

দুই চামচ অ্যালোভেরার রসের সাথে একটি ডিমের সাদা অংশ এবং এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ভালোভাবে প্যাক তৈরি করুন। পুরো মুখে লাগান, শুকিয়ে এলে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

বলিরেখা দূর করতে অ্যালোভেরা :

ত্বকের বলিরেখা দূর করার জন্য অ্যালোভেরার রস উপকারী। এ জন্য শুকনো কমলালেবুর খোসার গুঁড়া, চালের গুঁড়া, মধু ও তুলসী পাতার মিশ্রণের সাথে অ্যালোভেরা মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। ত্বকে লাগিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ। শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটায় ধুয়ে ফেলুন।

শুষ্ক ত্বককে স্বাভাবিক করতে অ্যালোভেরা :

শুষ্ক ত্বককে স্বাভাবিক করতে এই ফেস মাস্কটি দারুণ কাজে আসে। সেই সাথে বলি রেখা, ব্রণ এবং কালো ছোপ দূর করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অ্যালোভেরা জেলের সাথে কয়েক ফোঁটা গোলাপজল মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে ফেলুন। তারপর সেটি মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন মুখটা।

ব্রণ দূর করতে অ্যালোভেরা :

অ্যালোভেরার প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্রণ সারাতে আর নতুন কোষ জন্মাতে কার্যকর। অ্যালোভেরার জেল আইস কিউব ট্রেতে করে অ্যালোভেরার আইস কিউব তৈরি করে এই কিউব দিনে দু’-তিনবার ব্রণের ওপর ঘষলে ব্রণের সমস্যা কমে যাবে।


ঠোঁটের যত্নে অ্যালোভেরা :

ঠোঁটের রঙ উজ্জ্বল রাখতে ঠোঁট নরম আর মসৃণ করতে অ্যালোভেরা ব্যবহার করা যায়। নিয়মিত অ্যালোভেরা জেল ঠোঁটে লাগলেই ঠোঁট উজ্জ্বল হবে। এক টেবিলচামচ চালের গুঁড়া আর অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে আস্তে আস্তে এই মিশ্রণ ঠোঁটে লাগিয়ে পাঁচ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। দেখুন ঠোঁট কত উজ্জ্বল, মসৃণ এবং কোমল হয়ে ওঠে।


চুলের যত্নে অ্যালোভেরা :

নারিকেল তেল, লেবুর রস ও নারিকেলের দুধের সাথে অ্যালোভেরা মিশিয়ে ব্যবহার করুন। চুল সতেজ থাকবে।

অ্যালোভেরা জেল মাথার তালুতে ম্যাসাজ করুন। দুই ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত করলে চুল পড়া বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি নতুন চুল গজাবে।

অ্যালোভেরার জেল, টক দই এবং ডিম মিলিয়ে হেয়ার প্যাক তৈরি করতে পারেন। নিয়মিত ব্যবহারে চুল বাড়বে দ্রুত।

চার ভাগের এক ভাগ আমন্ড অয়েলের সাথে আধা কাপ অ্যালোভেরার রস মিশিয়ে মাথায় লাগান। চুলের ময়েশ্চার বাড়বে।

চুল সুস্থ রাখতে নিয়মিত তেল ব্যবহার প্রয়োজন। নারিকেল বা জলপাই তেলের সাথে অ্যালোভেরা মিশিয়ে চুলে লাগালে পারেন। চাইলে ঘরে বসেও বানিয়ে নিতে পারেন অ্যালোভেরা হেয়ার অয়েল। চার ভাগের এক ভাগ অ্যালোভেরা জেলের সাথে নারিকেল বা জলপাই তেল মিক্স করুন। তারপর মিশ্রণটি ১০ মিনিট গরম করে ঠাণ্ডা করে নিন। শুষ্ক জায়গায় সংরক্ষণ করুন। এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে খুশকি দূর হবে ও চু পড়া কমবে।

খুশকি দূর করতে লেবুর রস ও নারিকেল তেলের সাথে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে চুলের গোঁড়ায় লাগাতে পারেন।

অ্যালোভেরার ব্যবহারে মাথার ত্বকের পিএইচ ঠিক থাকে আর খুশকিও দূর হয়। ২:১ অনুপাতে অ্যালোভেরা জেল আর ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগিয়ে সারা রাত রেখে সকালে শ্যাম্পু করতে হবে। চুল খুশকিমুক্ত থাকবে।

সতর্কতা

অ্যালোভেরা জেল তখনই নিরাপদ যখন এটি চামড়ায় প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু প্রাকৃতিক উপায়ে যখন অ্যালোভেরার হলদে যে রসালো পদার্থ বের করা হয়, তার সাথে ‘অ্যালো লেটেক্স’ নামের ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে। যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই ল্যাটেক্স অ্যালোভেরার পাতার মধ্যেই থাকে। যা যদি খাওয়া হয় তবে এটি শরীরের বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে।

আর ল্যাটেক্সের দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে ডায়রিয়া, কিডনির সমস্যা, প্রস্রাবে রক্ত, পটাশিয়ামের ঘাটতি, পেশী দুর্বলতা, ওজন হ্রাস এবং হার্ট অ্যাটাকের মতো সমস্যা হতে পারে। এমনকি অ্যালো ল্যাটেক্স ব্যবহারের ফলে গর্ভের সন্তান নষ্টও হয়ে যেতে পারে। সেই সাথে মায়ের বুকের দুধ সন্তানকে খাওয়ার মাধ্যমেও এর ক্ষতিকর প্রভাব মায়ের শরীর থেকে সন্তানের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তাই অ্যালোভেরা ব্যবহার করার আগে কেটে এক ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এতে অ্যালোভেরা থেকে হলুদ কষ জাতীয় একটি পদার্থ বের হবে। এটি ভালোভাবে ধুয়ে ফেলে দিয়ে তারপর ব্যবহার করতে হবে। অ্যালোভেরার সবুজ পাতাই নিরাপদ বলে ধরা হয়ে থাকে। পাতা একটু বেশি পুরনো হয়ে হলদেভাব এলে তা ব্যবহার করা উচিত নয়।


 


img

বৃষ্টির সময় নিরাপদে থাকতে যা করবেন

প্রকাশিত :  ১২:৩২, ১৩ মে ২০২৪

ঝড়-বৃষ্টির কাল গ্রীষ্মে বৃষ্টি হবেই। এতে প্রশান্তির পরশ যেমন রয়েছে, তেমনই মুখোমুখি হতে হয় নানা অসুবিধারও। তাই বলে তো নিজের অফিস আর বাসার কাজ থেমে থাকে না। তবে বাসা থেকে কোথাও যাওয়ার লক্ষ্যে বের হওয়ার পর বৃষ্টি শুরু হলে তা মহাবিপদের। না হয় সঠিক সময়ে কাজে পৌঁছানো, না থাকে নিজের পোশাক ঠিক। আবার বৃষ্টির মধ্যেই যত দুর্ঘটনা ঘটে। এই পরিস্থিতিতে নিজেকে সুরক্ষা রাখা জরুরি।

বৃষ্টির সময় নিরাপদে থাকার উপায়সমূহ-

১. বাসা বা বাড়ির বাইরে থাকলে নিরাপদ কোনো জায়গায় থাকা প্রয়োজন। রাস্তায় কিংবা খোলা কোনো জায়গায় কখনোই থাকা যাবে না। প্রয়োজনে নিকটবর্তী কোনো নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিন।

২. বৃষ্টি বা ঝড় হলে তখন গাড়ি চালানো একদমই উচিত নয়। এ সময় রাস্তার পাশে নিরাপদ জায়গা দেখে গাড়ি থামিয়ে সেখানে আশ্রয় নিন। আর অবশ্যই গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়ে রাখুন।

 ৩. রাস্তায় যদি বৃষ্টির সময় কোনো খোলা তার বা রাস্তায় তার পড়ে থাকতে দেখেন তাহলে তার আশপাশে যাবেন না। সেই তার যদি পানির স্পর্শে থাকে তাহলে সেই পানি থেকেও সাবধান। সম্ভব হলে স্থানীয় প্রশাসনকে খবর দিন। আর এ সময় যদি রাস্তা পারাপার হতে হয় তাহলে অবশ্যই ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করবেন।

৪. বাড়ির ছোট সন্তানদের ভেতরে রাখুন। তাদের কোনোভাবেই বাইরে যেতে দিবেন না।

৫. বৃষ্টির সময় কোনো গাছের নিচে দাঁড়ানো উচিত নয়। এ সময় গাছের ডাল ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

৬. বাসায় বা বাড়ি থাকলে টর্চ লাইট, হারিকেন বা আলোর বিকল্প উপায় রাখুন। বৃষ্টির সময় বিদ্যুৎ বিপর্যয় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৭. গ্রীষ্ম বা বর্ষার সময় মোবাইল ফোনে সব সময় যথেষ্ট চার্জ রাখুন। যাতে করে যেকোনো প্রয়োজনে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

৮. বাসা বা বাড়ির বাইরে থাকলে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না। কেননা, মোবাইল ফোন থেকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার শঙ্কা থাকে।