ব্রিটেনে ফের জারি হতে পারে কিছু বিধিনিষেধ
‘ভ্যাকসিন পাসপোর্ট’ নিয়ে দলে বিদ্রোহের মুখে বরিস
জনমত রিপোর্টঃ বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা উপেক্ষা করে সকল বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে ১৯ জুলাই সরকার ইংল্যান্ডকে ‘স্বাধীনতা’ দিলেও আবারও বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে।
সংক্রমণ পরিস্থিতি যেভাবে গুরুতর আকার ধারণ করছে, তাতে করে হাসপাতালগুলোতে ভর্তির হার আশংকাজনকভাবে বাড়তে পারে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আর যদি পরিস্থিতি তেমনটা দাড়ায়, তাহলে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যেই ফেস মাস্ক, ঘরে বসে কাজ করা সহ বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা ফের জারি করা হতে পারে।
এনএইচএস এর ওপর রোগীদের অতিরিক্ত চাপ এড়াতে আগষ্ট মাসের প্রথম সপ্তাহেই কঠোর পদক্ষেপ নিতে বরিস জনসনকে প্রস্তুত থাকতে সরকারের বৈজ্ঞানিক পরামর্শক গ্রুপের সদস্যরা বারবার বলে আসছেন। বিজ্ঞানীদের ধারনা, আগামী আগষ্ট মাসের শেষ নাগাদ যুক্তরাজ্যে প্রতিদিন ১ থেকে ২ হাজার লোক কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেন। এবং দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ১০০ থেকে ২০০ জনে গিয়ে ঠেকতে পারে। এমন পরিস্থিতি এড়াতে মাস্ক বাধ্যমতামূলক করা এবং ঘরে বসে কাজ করার পরামর্শমূলক নির্দেশনা আগষ্টের শুরুতে ফের বলবত করতে সেইজ এর সায়েন্টিস্টরা পরামর্শ দিয়েছেন।
সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে যে, সংক্রমণের চূড়ায় আরোহনের পূর্বাভাসের ৬ সপ্তাহ আগেই ১৯ জুলাই কথিত ‘মুক্তি দিবস’ এর সপ্তাহে গড়ে প্রতিদিন ৭৪৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এবং এই সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।
১৯ জুলাই সোমবার যুক্তরাজ্যেল হাসপাতালগুলোতে কোভিডে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিলো ৪,৫৬৭ জন। এদের মধ্যে ৬১১ জন রয়েছে ভেন্টিলেটর বেডে। মঙ্গলবার ২০ জুলাই নতুন করে ৪৬,৫৫৮ জনের কোভিড পজিটিভ হিসেবে সনাক্ত হয়েছে। এদিন কোভিডে মারা গেছেন ৯৬ জন, যা গত চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যু।
গত সপ্তাহে ইংল্যান্ডের চিফ মেডিক্যাল অফিসার প্রফেসর ক্রিস উইটি বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংখ্যা প্রতি তিন সপ্তাহে দ্বিগুন হচ্ছে এবং আগামী সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই এই হার ‘আতংকজনক’ পর্যায়ে উন্নীত হতে পারে। বিধিনিষেধ আবার জারি করা হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
বৈজ্ঞানিক প্রজেকশন অনুযায়ি আগষ্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা দৈনিক ১৫০০তে গিয়ে ঠেকতে পারে, যা মাসের শেষ নাগাদ দৈনিক তিন হাজারে গিয়ে উন্নীত হবে। অর্থাৎ গত বছরের এপ্রিলে সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়ের সময়কালে সংক্রমণ সংখ্যার প্রায় কাছাকাছি পর্যায়ে গিয়ে ঠেকবে তৃতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ সংখ্যা।
প্রাইমমিনিস্টার বরিস জনসন নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করার ব্যাপারে অনাগ্রহ প্রকাশ করলেও তার অফিস টেন ডাউনিং স্ট্রিট থেকে বলা হচ্ছে কিছু কিছু বিধিনিষেধ ফের আরোপ করার বিশেষটির নিয়ে মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি।
এদিকে, নাইট ক্লাব ও বড় বড় ইভেন্টে যোগ দিতে ভ্যাকসিন পাসপোর্ট বাধ্যতামূলক করতে গিয়ে নিজ দলের মধ্যে প্রবল বাধার মুখোমুখি হচ্ছেন প্রধান মন্ত্রী বরিস জনসন। ‘নাগরিক স্বাধীনতা’ নিয়ে উদ্বিগ্ন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির ৪০ এর বেশি এমপি প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কথা জানিয়েছেন।
নিজ দলের মধ্যে বিদ্রোহ হলেও বিরোধী লেবার পার্টির পক্ষ থেকে সরকারের ভ্যাকসিন পাসপোর্ট প্রবর্তনের উদ্যোগকে সমর্থন জানানো হতে পারে।
সেপ্টেম্বর থেকে ইংল্যান্ডের নাইটক্লাব এবং ইনডোরে আয়োজিত বড় ধরনের সমাবেশমূলক অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন পাসপোর্ট বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই উদ্যোগকে আইনে রূপ দিতে পার্লামেন্টে আনা বিলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন টোরি পার্টির ৪২ জন এমপি একজোট হয়েছেন।
সংক্রমণের গতি প্রকৃতি পর্যালোচনায় সরকার মনে করছেন তরুণদের মধ্যে এখন সংক্রমণের হার বেশি। তাই শুধু নাইট ক্লাব নয়, পাব বা পানশালা সহ এ ধরনের অন্যান্য ভেন্যুতেও ভ্যাকসিন পাসপোর্ট বাধ্যতামূলক করার বিষয়টি বিবেচনায় নেই - এমনটি টেন ডাউনিং স্ট্রিট থেকে বলা হচ্ছে না। এজন্য ‘নাগরিক স্বাধীনতা ক্ষুন্ন’ হতে পারে বলে এমপিরা উদ্বিগ্ন এবং এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন। যদি বিরোধী দলীয় এমপিদের একাংশ এই বিলের বিরুদ্ধে ভোট দেন, তাহলে সরকারের পক্ষে এটি পাশ করিয়ে আনা কঠিন হতে পারে। (MR)