এডিবি’র প্রতিবেদন

করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি কমিয়ে দিচ্ছে

প্রকাশিত :  ০৪:২৪, ২৪ জুলাই ২০২১

করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি কমিয়ে দিচ্ছে

জনমত ডেস্ক: করোনার প্রথম ধাক্কা সামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা সামলাতে ফের করাকড়ি আরোপ করায় অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে পড়ার আশঙ্কা করেছে এশীয় উন্নয় ব্যাংক (এডিবি)। গত এপ্রিলে এশিয়ার অর্থনীতির পূর্বাভাস হালনাগাদ করে সম্প্রতি সম্পূরক পূর্বাভাস প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এতে এশিয়ার অর্থনীতির আগের পূর্বাভাস কিছুটা কমানো হয়েছে।

এপ্রিলের প্রতিবেদনে এ বছর এশিয়ায় ৭ দশমিক ৩ শতাংশ মোট দেশজ উত্পাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা ছিল। জুলাই মাসে হালনাগাদ করে এই হার ৭ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। তবে এই হারকেও শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের পূর্বাভাস বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের বিষয়ে বলা হয়েছে, বিদায়ি ২০২০-২১ অর্থবছরের ১১ মাসের তথ্যে দেখা যায় রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। ১০ মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থবছরের ১০ মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায় করতে পেরেছে। তবে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা সামলাতে এপ্রিলের শুরু থেকে দেশে চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য ফের বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় দেশের অর্থনীতির গতি ধীর করে দিচ্ছে।

এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক সাপ্লিমেন্ট জুলাই ২০২১ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। মধ্য এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি আগের পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি হবে। তবে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি আগের পূর্বাভাসের চেয়ে কমবে। সব মিলিয়ে উন্নয়নশীল এশিয়ার জিডিপি গড়ে ৭ দশমিক ২ শতাংশ বাড়বে এ বছর। আগামী ২০২২ সালে এটি ৫ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে আসতে পারে।এ বছর চীনের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৮ দশমিক ১ শতাংশ যা ২০২২ সালে সাড়ে ৫ ভাগে নেমে আসবে। এ বছর ভারতের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ১০ শতাংশ যা পরের বছর সাড়ে ৭ ভাগে নেমে আসতে পারে।

পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। এপ্রিলের পূর্বাভাস ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। এ বছর এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম প্রান্তিকে দেশগুলোতে অর্থনীতির গতি শক্তিশালী হয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, এ বছর শেষ নাগাদ দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ যা ২০২২ সালে ৭ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। ভারতের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ১১ শতাংশ থেকে নামিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। তবে দুই দফায় লকডাউনে ভুটানের অর্থনীতি এ বছর ৬ দশমিক ৩ শতাংশ সংকোচনের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। দেশটিতে এই লকডাউনের প্রভাবে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। তবে অর্থনীতির গতি কমে গেছে। মালদ্বীপে এ বছরের প্রথম দিকে পর্যটন আগমন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তবে দেশটিতে গত মার্চে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বহু দ্বীপ লকডাউন করতে হয়েছে। এতে মালদ্বীপের অর্থনীতির গতিও কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে নেপালে ২ দশমিক ১ শতাংশের সংকোচনের ধারণা করা হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিলের আগ পর্যন্ত আফগানিস্তানের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে ছিল। কিন্তু দেশটির নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হওয়ায় পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াও থমকে যাচ্ছে। ২০২০ সালে দেশটির অর্থনীতি ১ দশমিক ৯ শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল।

বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি

এডিবির প্রতিবেদেনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৪ দশমিক ৪ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে। মধ্য এশিয়ার পূর্বাভাস ৩ দশমিক ৪ থেকে বাড়িয়ে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ করা হয়েছে।

সব মিলিয়ে এশিয়ার মূল্যস্ফীতি কিছুটা বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এপ্রিলের পূর্বাভাসে ২ দশমিক ৩ শতাংশ মূলস্ফীতির হার ধারণা করা হলেও এবারের প্রতিবেদনে এই হার ২ দশমিক ৪ শতাংশ করা হয়েছে। তবে আগামী বছর মূল্যস্ফীতির হার ২ দশমিক ৭ শতাংশের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

এডিবি উল্লেখ করেছে, করোনার প্রথম ধাক্কা কাটিয়ে বেশ ভালোই এগুচ্ছিল এশিয়ার অর্থনীতি। কিন্তু নতুন করে ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ উদ্বেগ বাড়িয়েছে। জুনের মাঝামাঝি সময়ের হিসাবে প্রতিদিন গড়ে করোনার আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লাখ ৩৪ হাজারে ছাড়িয়ে যায়। মে মাসের মাঝামাঝি দৈনিক শনাক্তের হার ছিল ১ লাখ ৯ হাজারের মতো। প্রতি ১০ লাখে ২৬ জন শনাক্ত হচ্ছে এশিয়া অঞ্চলে। তবে বিশ্বে সংক্রমণের গড় হার (প্রতি ১০ লাখে ৪৯) এর তুলনায় প্রায় অর্ধেক। করোনার এই ধাক্কা তুলনামূলক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে। প্যাসিফিক অঞ্চলে পাপুয়া নিউগিনি এবং ফিজিতেও আঘাত হেনেছে। তবে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে করোনার সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। বহু দেশে ভ্যাক্সিন কার্যক্রম এগিয়েছে। কিন্তু উন্নয়নশীল এশিয়ার দেশগুলোতে ‘হার্ড ইমিউনিটি’ তৈরিতে পিছিয়ে রয়েছে। জুন পর্যন্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রতি ১০০ জনে ৪১ দশমিক ৬ ডোজ টিকা নিশ্চিত করতে পেরেছে যা বৈশ্বিক গড় ৩৯ দশমিক ২ থেকে কিছুটা বেশি। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (৯৭ দশমিক ৬ শতাংশ) ইউরোপীয় ইউনিয়ন (৮১ দশমিক ৮ শতাংশ) থেকে পিছিয়ে রয়েছে।

বিশ্বে প্রতিদিন ১০০ কোটি টন খাবার নষ্ট হয় : জাতিসংঘ

প্রকাশিত :  ১৭:৫৩, ২৮ মার্চ ২০২৪

জাতিসংঘের নতুন এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ১০০ কোটি টনের বেশি খাবার নষ্ট হচ্ছে। যদিও এর বিপরীতে প্রতিদিন অনাহারে থাকছে প্রায় ৮০ কোটি মানুষ।

বুধবার (২৭ মার্চ) জাতিসংঘ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। খাবার অপচয়ের এ ঘটনাকে উল্লেখ করা হয়েছে ‘বৈশ্বিক ট্র্যাজেডি’ হিসেবে।

জাতিসংঘের ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের প্রায় ৮০ কোটি মানুষ যখন না খেয়ে আছে, তখন লাখ কোটি ডলার মূল্যের খাবার ময়লার ঝুড়িতে ফেলা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২২ সালে যত খাবার নষ্ট হয়েছে, তার ২৮ শতাংশ নষ্ট হয়েছে রেস্তোরাঁ, ক্যান্টিন ও হোটেলের মতো খাদ্য পরিষেবা ব্যবস্থাগুলোতে। কসাই ও মুদিদোকানে নষ্ট হয়েছে ১২ শতাংশ খাবার। তবে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৬০ শতাংশ খাবার নষ্ট হয়েছে বাসাবাড়িতে। এর পরিমাণ ৬৩ কোটি ১০ লাখ টন।

বাড়িঘরগুলোতে প্রতি বছর যে পরিমাণ খাদ্য নষ্ট হয়, তা এক বছরে বিশ্বে মোট উৎপাদিত খাদ্যের এক পঞ্চমাংশ। জাতিসংঘের বৈশ্বিক পরিবেশ রক্ষা বিষয়ক প্রকল্প ইউনাইটেড নেশন্স এনভায়র্নমেন্ট প্রোগ্রামের (ইউএনইপি) নির্বাহী পরিচালক ইঙ্গের অ্যান্ডারসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘খাদ্যের অপচয় একটি বৈশ্বিক ট্র্যাজেডি। শুধুমাত্র এই অপচয়ের কারণে প্রতিদিন বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ না খেয়ে থাকেন।’

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ‘খাদ্যের অপচয় কেবল মানুষের আদর্শগত ব্যর্থতা নয়, বরং পরিবেশের জন্যও হুমকি। অপচয়িত বা ফেলে দেওয়া খাবার থেকে বিপুল পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী। আমাদের হাতে থাকা তথ্য বলছে, , ফেলে দেওয়া খাবার থেকে প্রতিদিন যে পরিমাণ গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত হয়, বিশ্বে প্রতিদিন বিমান চলাচলজনিত কারণে নির্গত হওয়া গ্রিনহাউস গ্যাসের তুলনায় তা পাঁচগুণ বেশি।

প্রতিবেদনটির তথ্য সংগ্রহ ও তা বিশ্লেষণের কাজে জাতিসংঘকে সহযোগিতা করেছে র‌্যাপ নামের একটি অলাভজনক গবেষণা সংস্থা। ইউএনইপির কর্মকর্তা ক্লেমেন্টেন ও’কনর এএফপিকে বলেন,‘আমরা এখানে শুধু বাড়িঘরগুলোর তথ্য দিয়েছি। এই তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে জরিপের ভিত্তিতে। এছাড়া রেস্তোরাঁয় খাদ্য অপচয়ের তথ্য এখানে দেওয়া হয়নি। তাই আমাদের বিশ্বাস, বাড়িঘর ও রেস্তোরাঁয় অপচয় হওয়া খাদ্যের প্রকৃত আরও অনেক, অনেক বেশি।

এখন পর্যন্ত বিশ্বে খাবারের অপচয় নিয়ে জাতিসংঘের সংকলিত দ্বিতীয় প্রতিবেদন এটি। প্রতিবেদনটি তৈরিতে জাতিসংঘকে সহযোগিতা করেছে অলাভজনক সংস্থা ডব্লিউআরএপি। সূত্র: সিএনএন