img

‘সাগা (saga) অব উন্নয়নশীল বাংলাদেশ’

প্রকাশিত :  ১৪:৩৪, ৩১ জুলাই ২০২১

‘সাগা (saga) অব উন্নয়নশীল বাংলাদেশ’

মু. নূর উদ্দিন।। বছর দুয়েক ধরে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দল ও তাদের বিভিন্ন পর্যায়ের সমর্থকদের মধ্য একটি শব্দ বা টাইটেল নিয়ে বেশ আলোচনা এবং গর্ববোধ পোষন চলছে। সর্বশেষ গেল ফেব্রুয়ারিতে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে সংবাদ সম্মেলন করে কৃতিত্বের(?) ঝুলি জাতির সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করলেন। সেটা হচ্ছে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর বাংলাদেশ এখন ‘উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর। তাই এ ব্যাপারে দুটি কথা। 

১৯৯৭ সালে আমার উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষা জীবন শুরু, আর ২০০৯ সালে অর্থনীতি সম্মান শেষ বর্ষের মাধ্যমে বাংলাদেশে একাডেমিক শিক্ষার ইতি। এই প্রায় এক যুগ সময় ধরে বাংলা, ইংরেজী, ইতিহাস, সামাজিক বিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান থেকে শুরু করে রাষ্ট্র বিজ্ঞান, সর্বশেষ অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয় যেমন বাংলাদেশ অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক অর্থনীতি, কৃষি অর্থনীতি প্রভৃতি পাঠ্যপুস্তক বাংলাদেশ সম্পর্কে যতটুকু পাঠ গ্রহণ করেছি, জেনেছি, তা হচ্ছে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এই উন্নয়নশীল বাংলাদেশ ধারণাটি সম্ভবত এরো বহু আগে থেকেই ছিলো। 

মাধ্যমিকে পড়াকালীন আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক যখন উন্নত দেশের উদাহরণ দিচ্ছিলেন যেমন ব্রিটেন, আমেরিকা, জাপান তখন উন্নয়নশীল দেশের উদাহরণে বাংলাদেশের নাম বললেন। আমি জিগ্যেস করেছিলাম, এসব দেশের সাথে আমাদের অনেক ব্যবধান তাহলে কি আমরা অন্ন্নুত দেশ নই? তিনি জবাব দিলেন, আসলে অনুন্নতই। মৃদূ হেসে বললেন, অনুন্নত শুনতে খারাপ দেখায় তাই উন্নয়নশীল বলা হয় একারণে যে এসব দেশ ধীরে ধীরে উন্নতি করছে Ñ করবে। 

২০০৫ সালে আমি যখন অর্থনীতি ১ম বর্ষের ছাত্র, সমাজ বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক প্রিয় আনিস স্যার এ ব্যাপারে উল্লেখ করেন -“আসলে কী জানো, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ আমার কাছে তা মনে হয়না। আমি মালয়েশিয়া সফর করেছি তাদের উন্নয়ন সত্যিই অসাধারণ, বাংলাদেশ সেই তুলনায় অনেক অনেক পিছিয়ে। সেই মালয়েশিয়াকেও যদি উন্নয়নশীল দেশ বলা হয় তাহলে বাংলাদেশকে কীভাবে উন্নয়নশীল দেশ বলা যায়?”


তবুও কিনা আমরা গদ্যে-কবিতায়, ভাব-সম্প্রসারণে রচনায়, ইংরেজি-বাংলায় বাংলদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ বলে পড়ে পড়ে মুখে ফেনা তুলেছি। লিখে কতো কলমের কালী শেষ করেছি তার হিসেব নেই। 

অথচ আজ এতো বছর পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ঘটা করে জানালেন, বাংলাদেশ এখন একটি উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। তাহলে কেন বাংলাদেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী এতদিন ভুল শিখলো? এর দায়ভার কার?

বছর তিনেক আগে বাংলাদেশের তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং তার অনুসারী দল বলাবলি করলেন বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে চলেছে। কিন্তু বছর খানেক পর উনি যখন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন তখন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আসলে মধ্যম আয়ের দেশ বলতে কিছু নেই’। 

এইভাবে পলিটিশিয়ানরা মনগড়া কথাবার্তা হরহামেশা বলে চলেছেন অবশ্য সেটা নতুন কিছু নয়। 

যাহোক এবারে আসি মুল ঘটনায়।

বাংলাদেশের এই উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর নিয়ে দেশের জাতীয় ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার একটি প্রতিবেদন ছাপিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে ৪৫ বছর পর স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জন করলো। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ অফিসিয়ালি উন্নয়নশীল দেশ বলে গণ্য হবে। যদিও রূপান্তর সময়কাল তিন বছর কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারনে বাংলাদেশকে আরো ৫ বছর স্বল্পন্নোত দেশের সুবিধা দেয়া হবে। সূত্রঃ ডেইলি স্টার ২৮ফেব্রুয়ারী ২০২১। 

অন্যদিকে অধ্যাপক আলী রিয়াজ ও ডঃ সাইমুম পারভেজ তাদের এক নিবন্ধে লিখেছেন অর্থনীতিতে প্রধানত অবদান রাখছে দেশের বাইরে থেকে পাঠানো রেমিট্যান্স এবং তৈরি পোশাক রপ্তানি। অথচ তারা এও লিখেছেন “এই যে এই দুই খাতের যে শ্রমিকগোষ্ঠী এই সাফল্যের নির্মাতা, তাঁদের ব্যাপারে রাষ্ট্র একধরনের নির্লিপ্ততাই অনুসরণ করেছে, তাঁদের নিরাপত্তা এবং অধিকার নিয়ে রাষ্ট্র কিছুই করেনি।একই কথা বলা চলে কৃষি খাত বিষয়েও। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা সত্ত্বেও ১৯৭৪ সালের পর বাংলাদেশ দুর্ভিক্ষে পতিত হয়নি; এই কৃতিত্ব একাদিক্রমে কৃষকের এবং নীতিনির্ধারকদের।” সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো ২১মার্চ ২০২১। 

যেকোন দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। 

তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও জাপানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তারা প্রথমে কৃষি নির্ভর অর্থনীতি ছিল। 

তাই আগামী দিনে প্রবাসী ও পোশাক খাতের শ্রমিকদের দেখভাল, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, কৃষি ও কৃষকের জীবন মান উন্নয়ন করতে পারলে অর্থনীতিতে বাংলদেশ ঈর্শনীয় সাফল্য অর্জন করে কাংখিত লক্ষ্যে পৌছতে পারবে একথা অনেকটা নিশ্চিত করে বলা যায়। 

মু. নূর উদ্দিনঃ সাবেক শিক্ষার্থী, বিএসএস(সম্মান) অর্থনীতি, এমসি কলেজ, সিলেট। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত।

মতামত এর আরও খবর

img

গাজা যুদ্ধ বন্ধে বাইডেন কেন এতটা মরিয়া

প্রকাশিত :  ১১:৪১, ১২ মে ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১১:৪৮, ১২ মে ২০২৪

জনাথন ফ্রিডল্যান্ড

দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হবেন কি না তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উদ্বেগ একেবারে প্রান্তে এসে পৌঁছেছে। জো বাইডেনের পরামর্শ বারবার উপেক্ষা করে আসছিলেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এই উপেক্ষার মূল্য কী হতে পারে, এই সপ্তাহে ইসরায়েল সেটা দেখতে পেল।

ইসরায়েলের ৩ হাজার ৫০০ বোমার চালান আটকে দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। এই অস্ত্র ইসরায়েল গাজার দক্ষিণের শহর রাফা আক্রমণে ব্যবহার করবে, সেই বিবেচনায় অস্ত্রের চালানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাফায় এখন ১০ লাখের বেশি শরণার্থীর আশ্রয়শিবির।

ইসরায়েলের প্রতি জো বাইডেন তাঁর ‘লৌহদৃঢ়’ সমর্থন থেকে সরে আসছেন না। কিন্তু ইসরায়েল রাফা হামলার জন্য যে হুমকি দিয়ে চলেছে, সেটা সফল করতে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করবেন না। সিএনএনকে বাইডেন বলেছেন, ‘ইসরায়েলের নিরাপত্তা দেওয়া থেকে আমরা সরে আসছি না। অন্যখানে যুদ্ধ করার সক্ষমতা তৈরির পথ থেকে সরে আসছি আমরা।’

ইসরায়েলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আইজাক রবিন বলতেন, তাঁর দেশের ১ নম্বর কৌশলগত সম্পদ এই সব অস্ত্র, এমনকি পারমাণবিক অস্ত্র নয়; বরং ওয়াশিংটনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক। দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় অস্ত্রের জোগানদাতা ও কূটনৈতিক অভিভাবক। 

কিন্তু মাত্র ছয় সপ্তাহের ব্যবধানে ওয়াশিংটন এমন দুটি পদক্ষেপ নিল, যা পুরোপুরি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গেল। গত মার্চ মাসে নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ভেটো দেওয়া থেকে বিরত থাকে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে ইসরায়েল প্রস্তাবটি আটকে দিতে চাইলেও ব্যর্থ হয়। আর এখন তো ওয়াশিংটন অস্ত্রের চালান আটকে দিল।

এর থেকেও বড় বিষয় হলো, এই সিদ্ধান্তগুলো এমন একজন রাজনীতিবিদ নিয়েছেন, যিনি ব্যক্তিগতভাবে ইসরায়েলের খুব নিবেদিতপ্রাণ সমর্থক। বাইডেন সেই যুগের একজন ডেমোক্র্যাট, যখন দুই সহস্রাব্দের নির্বাসন ও শাস্তির পর মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদিদের আদি বাড়ি প্রতিষ্ঠার বিষয়টি গতি পেতে শুরু করেছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের উদারপন্থীদের চোখ তখন রহস্যজনকভাবে বন্ধ ছিল।  

গোল্ডা মেয়ার থেকে শুরু করে ইসরায়েলের প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাইডেন দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে। ইসরায়েলের প্রতি বাইডেনের টান বাড়ার ক্ষেত্রে এর একটার ভূমিকা আছে। পূর্বতন প্রেসিডেন্টদের মতো বাইডেনের ইসরায়েলের প্রতি ভ্রাতৃত্ববোধ শুধু নির্বাচনী হিসাব-নিকাশের বিষয় নয়।  

গাজা নিয়ে কোনো চুক্তি হচ্ছে না। কেননা, নেতানিয়াহু কিংবা সিনাওয়ারা কেউই বিশ্বাস করেন না, চুক্তি করলে তাঁদের স্বার্থ রক্ষিত হয়। যেমনটা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা অ্যারন ডেভিড মিলার বলেছেন, ‘এই সংঘাত বন্ধে একটি পক্ষেরই কেবল সত্যিকারের তাড়া আছে, সেই পক্ষটি হলেন জো বাইডেন।’

অন্যদিকে ১৯৮০-এর দশকে নেতানিয়াহু প্রথম আলোচনার পাদপ্রদীপে উঠে আসেন। তিনি এমন একজন কূটনীতিক, যিনি আমেরিকানদের সঙ্গে সাবলীলভাবে কথা বলতেন। সে সময় থেকেই তিনি নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে দাঁড় করান। ইসরায়েলের একজন হবু নেতার জন্য এই দক্ষতা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। 

কয়েক দশক ধরে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর ভোটারদের এই বার্তা দিয়ে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যকার সব ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিনিই একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি।

কিন্তু বাস্তব অবস্থাটা এখন কী দাঁড়াল?  চার দশকের বেশি সময়ের মধ্যে বাইডেনই প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করলেন। (১৯৮২ সালে ইসরায়েলের লেবানন অভিযানের সময় রোনাল্ড রিগ্যান যুদ্ধবিমান দিতে বিলম্ব করেছিলেন।) বাইডেন কেন এটা করলেন? কারণ, নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের একটি অংশের জনগোষ্ঠীর মধ্যে এমন তিক্ততা তৈরি করেছেন, যেটা আগে দেখা যায়নি।

ইসরায়েলের প্রতি যে যুক্তরাষ্ট্রের সমাজের নিরেট সমর্থন, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেভাবে ছাত্র আন্দোলন আছড়ে পড়েছে, সেটা বিস্ময়করই। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা গ্যালাপের মার্চ মাসের জরিপ বলছে, ৫১ শতাংশ ইসরায়েলের পক্ষে সমর্থন দিয়েছে, ২৭ শতাংশ সমর্থন দিয়েছে ফিলিস্তিনের পক্ষে। কিন্তু ডেমোক্র্যাট ও তরুণ জনগোষ্ঠী—দুই ক্ষেত্রেই ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সমর্থন অনেকটাই বেড়েছে।

জরিপের এই তথ্য বাইডেন ও তাঁর নির্বাচনী প্রচারণা দলকে চিন্তার মধ্যে ফেলেছে। এই অংশের দ্ব্যর্থহীন সমর্থনই ২০২০ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করতে ভূমিকা রেখেছিল। গাজাবাসীর দুর্ভোগ সেই ভোটারদের সমর্থন অনিশ্চিত করে তুলেছে। হোয়াইট হাউস নেতানিয়াহুর কাছে পরিকল্পনা চেয়েছিলেন, বেসামরিক জনসাধারণকে হতাহত না করে কীভাবে রাফায় অভিযান করতে পারে ইসরায়েল। 

কিন্তু নেতানিয়াহু সেই পরিকল্পনা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সেই কারণে ইসরায়েলকে থামানোর জন্য অস্ত্রের চালান আটকে দেওয়ার সরাসরি পথ বেছে নিয়েছে ওয়াশিংটন।

রাফা বাইডেনের জন্য শক্তি পরীক্ষার জায়গাও হয়ে উঠেছে। বাইডেন রাফাকে বিপদরেখা হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। নেতানিয়াহু যদি সেই বিপদরেখা অতিক্রম করেন, তাহলে বাইডেন দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত হবেন।

কিন্তু নেতানিয়াহু এখন পর্যন্ত রণেভঙ্গ দিতে অস্বীকার করেছেন। ইসরায়েলের স্বাধীনতা আন্দোলনকে সামনে রেখে জনগণের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ছাড়া আমরা একাই লড়ে যাব। প্রয়োজনে আমরা আমাদের নখ দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাব।’ 

নেতানিয়াহু চার্চিলের মতো আওয়াজ তুলতে চাইছেন। কিন্তু তাঁর কথাগুলো দুর্বলের কণ্ঠস্বর, সবলের নয়। ওয়াশিংটন চায়, নেতানিয়াহু যেন রাফা অভিযান থেকে সরে আসেন। কিন্তু জোট সরকারের অতি ডানপন্থী মিত্ররা তাঁকে আরও কঠোর হতে বলছেন, রাফা অভিযানের মাধ্যমে হামাসের বিরুদ্ধে পুরোপুরি বিজয়ের জন্য বলছেন।

এই নিরানন্দ নাটকে বাইডেন ও নেতানিয়াহুই কেবল কুশীলব নন; হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনাওয়ারেরও নিজস্ব হিসাব-নিকাশ আছে, নেতা হিসেবে টিকে থাকার সংকল্প রয়েছে। খুব ঘনিষ্ঠভাবে যাঁরা সিনাওয়ারকেও পাঠ করেছেন তাঁরা বিশ্বাস করেন, নির্দোষ মানুষের জীবন রক্ষা করা তাঁর অগ্রাধিকার নয়; বরং যত বেশি গাজাবাসী নিহত হবেন, আন্তর্জাতিক পরিসরে তাঁর শত্রু ইসরায়েলে অবস্থান ততই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেই পরিস্থিতি তাঁকে বিজয়ী দাবি করতে সহায়তা করবে। সম্প্রতি হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নেওয়ার ঘোষণার পেছনে সিনাওয়ারের এই ভাবনায় কাজ করেছে। 

সিনাওয়ারা সাময়িক কোনো যুদ্ধবিরতি (তাতে অনেক মানুষের প্রাণরক্ষা হয়, দুর্ভোগ কমে) চান না, তিনি চান স্থায়ী যুদ্ধবিরতি। আর তার জন্য সিনাওয়ারা অপেক্ষা করতেও রাজি।

গাজা নিয়ে কোনো চুক্তি হচ্ছে না। কেননা, নেতানিয়াহু কিংবা সিনাওয়ারা কেউই বিশ্বাস করেন না, চুক্তি করলে তাঁদের স্বার্থ রক্ষিত হয়। যেমনটা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা অ্যারন ডেভিড মিলার বলেছেন, ‘এই সংঘাত বন্ধে একটি পক্ষেরই কেবল সত্যিকারের তাড়া আছে, সেই পক্ষটি হলেন জো বাইডেন।’


জনাথন ফ্রিডল্যান্ড, ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ানের খ্যাতিমান কলামিস্ট

মতামত এর আরও খবর