img

পুকুরে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে ৪ শিশুর মৃত্যু

প্রকাশিত :  ১৩:৩৮, ৩০ অক্টোবর ২০২১

পুকুরে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে ৪ শিশুর মৃত্যু

জনমত ডেস্ক: নওগাঁ পৌরসভার আরজি-নওগাঁ এলাকার শেরপুর মহল্লার একটি পুকুরে গোসল করতে নেমে ডুবে ৬ থেকে ১০ বছর বয়সের ৪ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুর ১টার দিকে বাড়ির পাশের একটি পুকুরের এ ঘটনায় মহল্লায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
মৃতদের মধ্যে সহোদর ভাই-বোনসহ তিন কন্যা ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে। এরা হলো- ওই মহল্লার আব্দুস সালাম মন্ডলের মেয়ে খাদিজা খাতুন (৮), আনোয়ার হোসেনের মেয়ে আশা (৮) এবং টুকু মন্ডলের মেয়ে সুরাইয়া আক্তার (১০) ও ছেলে ফরহাদ হোসেন (৬)।
এ ঘটনার পর ওই মহল্লায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বাড়ি বাড়ি চলছে শোকের মাতম। মৃত শিশুদের পিতা-মাতাসহ অনেক অভিভাবক শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে ৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হৃদয় বিদারক ঘটনাটি শোনার পর মৃত শিশুদের এক নজর দেখার জন্য সেখানে ভীড় করেন হাজার হাজার নারী-পরুষ।
এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, প্রায় একই বয়সের ৬ শিশু খেলাধুলা করে দুপুর ১টার দিকে ওই পুকুরে গোসল করতে নামে। এর মধ্যে ২ শিশু পুকুরপাড়েই কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছিল। এরমধ্যে ওই চার শিশু পানিতে তলিয়ে যায়। অপর দুই শিশু ভয়ে নিজ নিজ বাড়ি চলে যায়।
এদিকে দীর্ঘক্ষণ পরেও শিশুরা বাড়িতে না ফেরায় স্বজনরা আশপাশের এলাকা ও প্রতিবেশিদের বাড়িতে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। এক পর্যায়ে প্রতিবেশি শিশুদের মাধ্যমে স্বজনরা জানতে পারে, ওই চার শিশু পুকুরে গোসল করতে নেমেছিল। এ খবর পেয়ে স্বজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা পুকুরে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে খোঁজাখুঁজির পর ওই চার শিশুকে উদ্ধার করে।
তাদের উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেয়া হলে জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাদের চারজনকেই মৃত ঘোষণা করেন। পরে স্বজনরা বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শিশুদের লাশ বাড়িতে নিয়ে আসে।
এদিন বিকেল ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, চার শিশু একসঙ্গে পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার খবর শুনে আশপাশের এলাকার হাজার হাজার মানুষ ওই শিশুদের দেখতে নিহতের বাড়িতে ভিড় জমায়। এ সময় প্রাণহীন তরতাজা চার শিশুকে দেখে কেউই চোখের পানি সংবরণ করতে পারেননি।
নিহত শিশুদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যার পর-পরই মৃত শিশুদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।  
ওই এলাকার মসজিদের ইমাম মাওলানা ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ওই চার শিশুই আমার মসজিদের মক্তবের শিক্ষার্থী ছিল। তারা পুকুরে গোসল করতে গিয়ে এভাবে মারা যাবে ভাবতেও পারছি না। আল্লাহ তাদের পরিবারের সকলকে ধর্য্য ধারণ করার তৌফিক দান করুক।
এদিকে নওগাঁ পৌরসভার আরজি-নওগাঁ নামা শেরপুর মহল্লার বাসিন্দা সাইদুর রহমান বলেন, আমার পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েও ওই শিশুদের সঙ্গে দুপুরে টুকু ও সালাম মন্ডলের বাড়ির সামনে খেলছিল। খেলতে খেলতে প্রতিবেশি টুকুর এক ছেলে ও এক মেয়ে, টুকুর ভাই সালামের মেয়ে ও আরেক প্রতিবেশি আনোয়ার হোসেনের মেয়ে পুকুরে গোসল করতে নামে। কিন্তু আমার মেয়ে ও আরেক শিশু পুকুরে গোসল করতে না নেমে বাড়িতে চলে আসে। গোসলে নেমে পানিতে ডুবে ওই চার শিশুই মারা যায়।
মৃত সুরাইয়া আক্তার ও ফরহাদ হোসেনের পিতা টুকু মন্ডল বলেন, আমার ওই দুই ছেলে-মেয়েই ছিল, আর কেউ নেই। আমি এখন নিঃসন্তান হয়ে গেলাম। ওই দুই শিশুর মাসহ আরো দুই জন শোকে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নওগাঁ সদর মডেল থানার ওসি মোঃ নজরুল ইসলাম জুয়েল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে।

img

ইসরাইলে ইরানের হামলায় কোন দেশের কত খরচ হলো?

প্রকাশিত :  ১১:৩৭, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৬, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

শনিবার রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে নজিরবিহীন ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ইরান। ইরানের ছোড়া এসব ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের ৯৯ শতাংশই ঠেকিয়ে দেওয়ার দাবি করেছে ইসরায়েল। আর এ হামলা চালাতে ইরানের যে ব্যয় হয়েছে তার চেয়ে ঠেকাতে ইসরায়েলের খরচ হয়েছে ৯৭ গুণের বেশি।

গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। ওই হামলার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করে তেহরান। বদলা হিসেবে গত শনিবার রাতভর ইসরাইলে শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) রোববার বলেছে, ইরান থেকে প্রায় ৩৬০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছোড়া হয়েছিল। 

আইডিএফের ভাষ্য, একটি সফল প্রতিরক্ষা মিশনের মাধ্যমে ইরানি হুমকির (হামলা) ৯৯ শতাংশ পথিমধ্যে রুখে দেওয়া হয়েছে। এই কাজে ইসরাইলের খরচ দাঁড়াতে পারে ৮০০ মিলিয়ন পাউন্ড। তবে তারা অনেক জীবন বাঁচিয়েছে। একই সঙ্গে ইরানের সামরিক বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে।

ইরানের সামরিক পরিকল্পনাটিকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার হামলার কৌশলের মতো মনে হয়। তেহরান ব্যাপক মাত্রায়, জটিল আক্রমণের কৌশলের মাধ্যমে ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে পরাভূত করার চেষ্টা করছিল।

ইসরাইলে হামলায় তুলনামূলক ধীরগতির ড্রোন ব্যবহার করে ইরান। আবার তারা দ্রুতগতির ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। পাশাপাশি ছিল উচ্চগতির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও।

যদিও ইরানের হামলার বিষয়টি আগেই জানা গিয়েছিল। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান রোববার বলেছেন, হামলার বিষয়ে তারা প্রতিবেশী দেশগুলোকে আগেই সতর্ক করেছিল। অন্তত ৭২ ঘণ্টা আগে তারা নোটিশ দিয়েছিল।

রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের গবেষক সিদ্ধার্থ কৌশল বলেন, ইরানের সর্বশেষ এই হামলার লক্ষ্য ছিল ইসরাইলের ক্ষয়ক্ষতি করা। কিন্তু তা হয়নি। ফলে তা ইরানের সামরিক বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য ক্ষতিকর হয়েছে।

রাতের বেলার এই হামলায় ব্যবহৃত ধীরগতির ইরানি ড্রোনগুলো প্রতিহত করার ক্ষেত্রে ইসরাইলের জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য জরুরি ছিল।

যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা প্রায় ৭০টি ইরানি ড্রোন ও তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, তার দেশের রয়্যাল এয়ারফোর্সও (আরএএফ) হামলা প্রতিহত করেছে। তবে সংখ্যা উল্লেখ করেননি তিনি।

বিভিন্ন প্রতিবেদন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্র জর্ডান তার আকাশসীমায় কয়েক ডজন ইরানি ড্রোন ভূপাতিত করেছে।

ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলছে, হামলা চালাতে ইরান থেকে ১৭০টি ড্রোন পাঠানো হয়েছিল। এগুলো সম্ভবত শাহেদ ঘরানার ড্রোন। ইসরাইলের আকাশসীমায় পৌঁছানোর আগেই এগুলো ধ্বংস করা হয়েছিল।

ইরানের ড্রোন প্রতিহত করার জন্য ইসরাইল যথেষ্ট সময় পেয়েছিল। ধীরগতির এই ড্রোনগুলোর ইরান থেকে ইসরাইলে পৌঁছাতে ছয় ঘণ্টার মতো সময় লাগে।

তবে কিছু ইসরাইলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইরান এই হামলায় দ্রুতগতির ড্রোনও ব্যবহার করেছিল।

ইরানের হামলা রুখতে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্যান্য দেশের হঠাৎ অংশগ্রহণ চমক হতে পারে। তবে এই হামলা ঠেকাতে পরিকল্পনা করার জন্য অনেক সময় পেয়েছে ইসরাইল ও তার মিত্ররা।

দ্য ক্রাডল বলছে, হামলা চালাতে ইরানের যে ব্যয় হয়েছে তার চেয়ে ঠেকাতে ইসরাইলের খরচ হয়েছে ৯৭ গুণের বেশি অর্থ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ঠেকাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইসরাইলি জোটের হিসাব ছাড়াই শুধু ইসরাইলের খরচ হয়েছে প্রায় ১৩৫ কোটি ডলার। 

অপরদিকে ইরানের সামরিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইসরাইলে হামলায় ব্যবহৃত দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্রের মূল্য মাত্র ৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। যা তেল আবিবের ব্যয়ের মাত্র দুই দশমিক ৫ শতাংশ।