সামনে আসছে 'কঠিন' মাস
জনমত রিপোর্টঃ ব্রিটেনের ডেপুটি চীফ মেডিক্যাল অফিসার বলেছেন, করোনাভাইরাসের বর্তমান সংক্রমণ হারের উর্ধগতির অর্থ হলো, ‘কঠিন মাস’ সামনে আসছে। বিবিসি’র এক প্রশ্ন-উত্তর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রফেসর জনাথন ভান-তাম বলেন শরতের মওসুমের শুরু থেকেই সংক্রমণের উর্ধগতি চরম উদ্বেগের বিষয়।
তিনি বলেন, বেশির ভাগ মানুষই বিশ্বাস করে যে মহামারী শেষ হয়ে গেছে। তিনি এই বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন যে, ক্রিসমাস ও শীতের মাসগুলো চরমভাবে সংকটাপন্ন হতে পারে।
মঙ্গলবার এক দিনে ব্রিটেনে করোনায় মারা গেছেন ২৯৩ জন, যা গত ফেব্রুয়ারী মাসের পর সর্বোচ্চ। আর কোভিড আক্রান্তের নথিভূক্ত সংখ্যা হচ্ছে ৩৩,৮৬৫।
এদিকে উদ্বেগজনকভাবে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যেই পদত্যাগ করেছেন ব্রিটেনের সায়েন্টিফিক এডভাইজরি গ্রুপ ফর ইমার্জেন্সির (এসএজিই) শীর্ষ বিশেষজ্ঞ স্যার জেরেমি ফারার।
বিবিসি ব্রেকফাস্ট এবং বিবিসি রেডিও ফাইভ লাইভ এর প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠানে প্রফেসর ভ্যান-ট্যাম বলেন, সংক্রমণের যে হারকে স্থিতিশীল বলে মনে হচ্ছে, তা খুবই বেশি এবং ইউরোপের অধিকাংশ দেশের তুলনায় অনেক উপরে।
তিনি বলেন, মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে এবং সংক্রমণ এখন বয়স্ক জনগোষ্টির মধ্যে ‘অনুপ্রবেশ’ করতে শুরু করার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
তিনি মনে করেন, করোনা সংক্রমণের যে হার এখন বিরাজমান, তাতে করে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। তিনি জানান, বিশেষজ্ঞরা আগামী কয়েক দিন ডেটা বিশ্লেষণ করবেন।
‘মুখ ঢেকে রাখা এবং অন্যদের সাথে আলাপচারিতার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করার মত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা বর্তমানে যা ঘটছে তার সাথে শীতের অন্ধকার মাসগুলোর মধ্যকার একটি বড় নির্ধারক হবে।’
তিনি ফুটবল খেলার সাথে পরিস্থিতির তুলনা করে বলেন, আমি বলব যে আমরা এখন অতিরিক্ত সময়ের হাফটাইমে আছি। আমি জানিনা খেলা শেষের বাঁিশ কখন বাজবে, তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি আরো কয়েক মাস পর আগামী বছরের বসন্তকালের মধ্যে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসবে।
তিনি জনগণকে কোভিড ভ্যাকসিন, বুস্টার জাব এবং ফ্লু জাব নেয়ার জন্য লোকজনের প্রতি আহ্বান জানান।
উপদেষ্টা কমিটি থেকে শীর্ষ বিশেষজ্ঞের পদত্যাগ
উদ্বেগজনকভাবে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যেই পদত্যাগ করেছেন বৃটেনের সায়েন্টিফিক এডভাইজরি গ্রুপ ফর ইমার্জেন্সির (এসএজিই) শীর্ষ বিশেষজ্ঞ স্যার জেরেমি ফারার। গত মাসে বৃটেনে উচ্চ হারে করোনা সংক্রমণের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। এরপর সরকারকে কথিত ‘ভ্যাক্সিন প্লাস’ পরিকল্পনা নিয়ে সামনে এগুলোর আহ্বান জানান। অনুরোধ করেন মুখে মাস্ক পরাসহ করোনা বিধিনিষেধের ‘প্ল্যান বি’ প্রয়োগের। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। এ অবস্থায় তিনি পদত্যাগ করে ক্লিনিক্যাল সায়েন্টিস্ট হিসেবে তার ভূমিকা রাখার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন। জেরেমি ফারার মহামারিকালে সরকারের করোনা বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের শীর্ষ স্থানীয় সদস্য ছিলেন। এমনিতে তিনি ওয়েলকাম ট্রাস্টের পরিচালক। এ খবর দিয়েছে লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
Jeremy Farrar
ওদিকে স্কাই নিউজ জানিয়েছে, সরকারের মন্ত্রীদেরকে ভাক্সিন প্লাস পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন জেরেমি ফারার। এর মধ্যে রয়েছে মুখে মাস্ক পরা। ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা করা এবং করোনার পরীক্ষা অব্যাহত রাখা। কিন্তু এ পর্যন্ত সরকার এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করেছে। পক্ষান্তরে তারা বর্তমানে অধিক শিথিল নির্দেশনার অধীনে কর্মকান্ড পরিচালনা করছে।
মঙ্গলবার রাতে স্যার জেরেমি ফারার এক বিবৃতিতে বলেছেন, করোনা সঙ্কট একটি দীর্ঘমেয়াদী বিষয়। এ থেকে মুক্তি পেতে অনেক দূর যেতে হবে। একে সরকারের অবস্থানের সমালোচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। তিনি আরো বলেছেন, শীতের মাসগুলোতে প্রয়োজনীয় বেশির ভাগ বিজ্ঞান বিষয়ক পরামর্শ মন্ত্রীদের দেয়া হয়েছে। এটা জানার পর তিনি এসএজিইর একজন প্রতিনিধি হিসেবে পদত্যাগ করেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, সতর্ক বিবেচনার পর ২০২১ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে এসএজিই থেকে আমি পদত্যাগ করেছি। এখন আমার কাজ হবে ওয়েলকাম ট্রাস্টে বসে কাজে মন দেয়া। এর উদ্দেশ্য হবে করোনা মহামারি বন্ধে আন্তর্জাতিক গবেষণায় সহযোগিতা করা। অনিবার্য ভবিষ্যত সংক্রামক ব্যাধির হুমকি থেকে সুরক্ষিত থাকতে আরো ভালভাবে বিশ্বকে প্রস্তুত করা। একই সঙ্গে বিষয়গুলোকে এমনভাবে বৈজ্ঞানিক উপায়ে পূর্ণাঙ্গভাবে তুলে ধরা হবে, যাতে বিশ্ব জরুরি স্বাস্থ্যগত হুমকি সম্পর্কে তথ্য জানতে পারে এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে পারে।
স্যার জেরেমি ফারার আরো বলেন, পুরো মহামারিকালে এসএজিই বৃটেনে গৃহীত পদক্ষেপে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ, নিরপেক্ষ, বিশেষজ্ঞ, স্বচ্ছ উপদেশ দিয়েছে। কখনো তা দেয়া হয়েছে অনেক চাপের অধীনে থেকেও। ওদিকে গভর্নমেন্ট অফিস ফর সায়েন্স এক বিবৃতিতে বলেছে, কোভিড এসএজিই কর্মকান্ড থেকে পদত্যাগ করেছেন স্যার জেরেমি। এ বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করছি। এই পদক্ষেপের একেবারে শুরু থেকে তিনি যে অবদান রেখেছেন সে জন্য তাকে ধন্যবাদ।