img

বঙ্গবন্ধু আমার শক্তির উৎস : এম,এ,মান্নান

প্রকাশিত :  ০৬:৪৮, ১৫ নভেম্বর ২০২১
সর্বশেষ আপডেট: ০৬:৫৭, ১৫ নভেম্বর ২০২১

বঙ্গবন্ধু আমার শক্তির উৎস : এম,এ,মান্নান

ক. পৃথিবীর শক্তির উৎস যেমন সূর্য, আমার শক্তির উৎস বঙ্গবন্ধ। আমার জীবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রভাব চীরস্থায়ী। জীবনে তার সান্নিধ্য খুব বেশি পাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি। ততে দুইবার স্বল্প সময়ের জন্য তার কাছে গিয়ে কথা বলার সুযোগ আমার হয়েছে। সেই সুখ স্মৃতি এখনো জ্বল জ্বল করছে। 

খ. ৫০ এর দশকে আমি জুনিয়র লেবেলের ছাত্র ছিলাম। তখন তেমন কিছু বুঝতাম না। কিন্তু ৬০ এর দশকে একজন সতেচন বাঙ্গালী তরুণ হয়ে উঠেছি। তখন বাংলাদেশের চিন্তার জগতে একটা উলোট পালট শুরু হয়েছে। সেময় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের একটানা কাজের ফলে অর্থাৎ জনসংযোগের ফলে মানুষকে ধর্মীয় আচ্ছন্নতা থেকে ফিরিয়ে আনার কাজ চলছে মানুষকে ওই অবস্থা থেকে ফিরিয়ে এনে বাস্তব বাদী ও আধুনিক চেতনা এবং জাতায়তাবাদী চেতনায় ফেরানোর কাজ চলছিল। মানুষকে বোঝানো হচ্ছিল যে, এটা আমাদের দেশ নয়, আমরা ধর্মীয় উত্তেজনায় আচ্ছন্ন আছি। সফলভাবে মানুষকে বোঝানোর এই কাজটিই বঙ্গবন্ধু ও তার সঙ্গীরা তখন করে চলেছিলেন। সেসময় পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী ধর্মের নামে শাষন করতে গিয়ে এদেশে শোষণ চালাচ্ছিল। আমি কলেজের ছাত্র। সেসময় প্রায়ই শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তব্য শুনতাম। তখনও তিনি বঙ্গবন্ধু হননি। কিন্তু তার বক্তব্য থেকে উত্তেজিত চেতনা ও প্রেরণার জন্ম হচ্ছিল। তার বক্তব্যে শুধু আবেগই ছিল না, ছিল তথ্যও। তিনি সুন্দরভাবে সহজ সরলভাবে এবং সাধারনভাবে তুলে ধরতেন সব কিছুই। যেমন আমরা পূর্ব পাকিস্তানীরা কিভাবে অর্থনৈতিক শোষনের শিকার হচ্ছি। পুরো ৬০ দশক এ ছিল শেখ মুজিবময়। সে’সময় খবরের কাগজ ছিল একমাত্র ভরসা। সকল কাগজ যে তাঁর পক্ষে ছিল তা নয়। কিন্তু জনগণের চাপে তারাও বঙ্গবন্ধুর পক্ষে লিখতে থাকেন। পরবর্তীতে ছয় দফা আন্দোলন শুরু হয়। সেসময় ছয় দফার ভেতরে কি ছিল। সেটিও বুঝার মতো অবস্থায় আমি ও আমার মতো অনেকেই ছিলাম না। কিন্তু তারপরও ছয় দফার প্রতিটি দফাই যেন আমাদের মুখের ভাষা হয়ে উঠেছিল। এই ছয় দফা়’যে আমাদের বাচার প্রধান মন্ত্র সেটি বুঝে গিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু সেই অবস্থা তৈরি করতে পেরেছিলেন। এসময় শেখ মুজিব আমার অন্যতম মহানায়কে পরিনত হয়ে যান। তখনও আমি সরকারি চাকরিতে যোগ দেই নি। 

গ.৭০ সালের প্রথম দিকের কথা। এই প্রথম বঙ্গবন্ধুকে সামনাসামনি দেখার সৌভাগ্য আমার হলো। টাঙ্গাইলের ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কের পাকুল্লা নামক একটি স্থানে তাঁর সঙ্গে আমার দেখা। সেসময় আমি কেয়ার নামের একটি মার্কিন সংস্থায় কাজ করতাম। অফিসের গাড়ী ছিল। সেই গাড়ীতে যখন যাচ্ছিলাম। সেসময় পাকুল্লার রাস্তায় ৩-৪'শ মানুষের ভীড় লক্ষ্য করি। জনতার মাঝে শেখ মুজিবুর রহমানের মাথা দেখে চমকিত হই। গাড়ী থেকে নেমে তার কাছে যাই। তিনি একটি জীপের মতো গাড়ীতে ছিলেন। সেসময় তাজউদ্দিন সাহেব, সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ অন্য নেতারাও ছিলেন। আমি তার নজরে পড়লে তিনি আঙ্গুলের ইশারায় কাছে ডাকলেন। আমি কাছে গেলাম। তিনি বললেন কি ব্যাপার, তোমার পরিচয় কি? আমার পরনে ভাল পোশাক ছিল । চকচকে একটি গাড়ী থেকে নেমেছি। সেজন্য হয়ত ওনার দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। আমি যেখানে চাকরি করি তার সব কিছুই বললাম। তিনি বললেন কোথায় যাচ্ছো ? জানালাম সামনে,গতকাল একটি ঝড় হয়েছিল, তার ক্ষয়ক্ষতি দেখতে যাচ্ছি। রিলিফ হয়তো দেওয়া হবে। তিনি বললেন যাও, খুব ভাল কাজ। এরপর তিনি পাকুল্লার নামকরা সন্দেশ আমাকে দেওয়ার জন্য একজনকে বললেন। (সেসময় তাঁরা সেটি খাচ্ছিলেন)। এক লোক একটা সন্দেশ এনে দিলেন। সেটি ছিল আমার জন্য অনেক বড় সম্মানের বিষয়। 

ঘ, স্বাধীনতার পরের বিষয়। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসলেন। দেশের অবস্থা টালমাটাল। আমি তখন বেকার। মুক্তিযুদ্ধের আগেই আমি সিএসপি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। চাকরির জন্য মনোনীত হয়েছিলাম। কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর সে সময়ের সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু অফিসারেরা কোন পাত্তাই দিচ্ছিলেন না। তারা বলতেন যাও, তোমরা পাকিস্তান থেকে পাশ করেছে। এদেশে তোমাদের কোন চাকরি হবে না। তখন আমিসহ আমরা যারা মনোনীত হয়েছিলাম তারা প্রায় হতাশ হয়ে গেলাম। কিন্তু হাল ছাড়িনি। আমাদের শেষ। ঠিকানা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। বঙ্গবন্ধু তখন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধায়। থাকতেন। রমনা পার্কের মাঠে বৈঠক করে সবাই আমাকেই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করার দায়িত্ব দিলেন। আমি যেহেতু ওই ব্যাচের প্রথম হয়েছিলাম। তাই এই দায়িত্ব আমার কাঁধে আসলো। আমরা ৫০-৬০ জন সিএসপি হিসেবে মনোনিত হয়েছিলাম। তার মধ্যে ওই বৈঠকে ২০-২৫ জন উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু কিভাবে দেখা করা যায়। তখন বঙ্গবন্ধুর সচিব ছিলেন বর্তমান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা রফিক উল্লাহ চৌধুরী, সিএসপি সাহেব। ওনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলো। তিনি সব শুনে একটি ডেট দিয়ে মাগরিবের পরে আমাদের ডাকলেন। আমি গেলাম। গিয়ে দেখি মানুষ দিয়ে বোঝাই। বাসার সামনে, বারন্দায় পার্কে লোকে লোকারণ্য। আমাদের পাস দেওয়া ছিল। আমরা দুজন ভেতরে গিয়ে বসলাম নিচ তলায়। এরই মধ্যে সিঙ্গারাসহ কিছু নাস্তাও খেয়েছি। রাত ১১টার দিকে আমাদের ডাক পড়লো। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধায়। দোতলার দরজা আধা খোলা ছিল। ঢুকে দেখলাম একটি ছোট রুমে তিনজন মানুষ দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। এনাদের মধ্যে একজন তোফায়েল আহমেদ এবং আরেকজন নোয়াখালীর বিখ্যাত শ্রমিক নেতা নুরুল হক। সেখানে ২০-২৫ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ করেই বঙ্গবন্ধুর নজর পড়লো আমার দিকে । তিনি ভালোভাবে অবজার্ভ করলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন। আমি সব কিছু বললাম। তিনি বললেন। এটা খুব ভাল। খুব ভাল। তোমাদের মতো ছেলে দরকার। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি বললেন তোফায়েল (সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ) বিষয়টি দেখার । এদের মতো কোয়ালিফাইড ছেলেপেলে আমার দরকার। আমরা চলে আসলাম। তারপর প্রায় প্রতিদিনই সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের যাতায়াত করতে হয়েছে। কিন্তু এই নিয়োগ প্রক্রিয়া করতেই চলে যায় দুই বছর। বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরে ৭৪ সালে আমাদের নিয়োগ হলো। একবছর তার সরকারে কাজ করেছি। তারপর আমাদের দেশ উলট পালট করে দিলো দেশবিরোধী চক্র, জাতির পিতাকে স্বপরিবারে নি:শ্বেষ করে দিল,বাঙ্গালী জাতিকে নেত্রীত্ববিহীন করে পঙ্গুত্বের দারপ্রান্তে নিয়ে গেল । অভিবাবক হীন বাংলাদেশ দির্ঘ ২৫বছর ? কি হারিয়েছি কাকে হারিয়েছি বাঙ্গালীরা টের পেয়েছিল অক্ষরে অক্ষরে ।

যুক্তরাজ্যে আমার যাওয়া আসা অনেক দিনের আওয়ামীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে অর্থ প্রতি মন্ত্রীর দায়ীত্ব দিয়েছিলেন সেই সুবাধে আমার প্রিয় যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের সাথে বার মেলার সুযোগ হয়েছিল । জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জিবীত অবস্হায় ৭বার মাদার অব ডেমোক্রেসি যুক্তরাজ্য লন্ডন সফর করেছিলেন আর সেই লন্ডন শহরের সিডনি স্ট্রীটে জাতির পিতার ভাস্কর্য হয়েছে দেখে আমি বিমোহিত , গর্বিত ।জাতির পিতা স্বগৌরবে দাড়িয়ে আছেন লন্ডনের সিডনি স্ট্রিটে , আর এই মহান কাজটি করেছেন আমাদের তরুন প্রজন্মের অহংকার লন্ডন আওয়ামীলীগ এর যুগ্মসম্পাদক আমার প্রিয় আফছার খান সাদেক । জাতির পিতার ভাস্কর্য করে বিশ্ব পরিমন্ডলে বাংলাদেশকে তুলে ধরার এই কাজকে আমি স্বাগত জানাই ।

আমিও গিয়ে দেখে এসেছি জাতির পিতার এই সুন্দর ভাস্কর্য শ্রদ্ধা জানিয়েছি আর বলেছি “তোমার সৃস্টিতে তুমিই মহান হে’পিতা মুজিব “ দেশের সকল মন্ত্রী এম পি রা গিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন দেখে মনটা ভরে যায় , সাথে বিদেশী পর্যটক । 

মেমোরিজ অব বঙ্গবন্ধু প্রকাশনা সফল হোক, বঙ্গবন্ধুর নাম সকল শ্রেনী পেশার মানুষের কাছে পৌছে যাক । 

আবারো বলি সাদেক খানকে ধন্যবাদ ।

জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু 

বাংলাদেশ চিরজিবী হোক


এম এ মান্নান এম পি

পরিকল্পনা মন্ত্রী 

গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ।

মতামত এর আরও খবর

img

গাজা যুদ্ধ বন্ধে বাইডেন কেন এতটা মরিয়া

প্রকাশিত :  ১১:৪১, ১২ মে ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১১:৪৮, ১২ মে ২০২৪

জনাথন ফ্রিডল্যান্ড

দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হবেন কি না তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উদ্বেগ একেবারে প্রান্তে এসে পৌঁছেছে। জো বাইডেনের পরামর্শ বারবার উপেক্ষা করে আসছিলেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এই উপেক্ষার মূল্য কী হতে পারে, এই সপ্তাহে ইসরায়েল সেটা দেখতে পেল।

ইসরায়েলের ৩ হাজার ৫০০ বোমার চালান আটকে দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। এই অস্ত্র ইসরায়েল গাজার দক্ষিণের শহর রাফা আক্রমণে ব্যবহার করবে, সেই বিবেচনায় অস্ত্রের চালানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাফায় এখন ১০ লাখের বেশি শরণার্থীর আশ্রয়শিবির।

ইসরায়েলের প্রতি জো বাইডেন তাঁর ‘লৌহদৃঢ়’ সমর্থন থেকে সরে আসছেন না। কিন্তু ইসরায়েল রাফা হামলার জন্য যে হুমকি দিয়ে চলেছে, সেটা সফল করতে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করবেন না। সিএনএনকে বাইডেন বলেছেন, ‘ইসরায়েলের নিরাপত্তা দেওয়া থেকে আমরা সরে আসছি না। অন্যখানে যুদ্ধ করার সক্ষমতা তৈরির পথ থেকে সরে আসছি আমরা।’

ইসরায়েলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আইজাক রবিন বলতেন, তাঁর দেশের ১ নম্বর কৌশলগত সম্পদ এই সব অস্ত্র, এমনকি পারমাণবিক অস্ত্র নয়; বরং ওয়াশিংটনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক। দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় অস্ত্রের জোগানদাতা ও কূটনৈতিক অভিভাবক। 

কিন্তু মাত্র ছয় সপ্তাহের ব্যবধানে ওয়াশিংটন এমন দুটি পদক্ষেপ নিল, যা পুরোপুরি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গেল। গত মার্চ মাসে নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ভেটো দেওয়া থেকে বিরত থাকে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে ইসরায়েল প্রস্তাবটি আটকে দিতে চাইলেও ব্যর্থ হয়। আর এখন তো ওয়াশিংটন অস্ত্রের চালান আটকে দিল।

এর থেকেও বড় বিষয় হলো, এই সিদ্ধান্তগুলো এমন একজন রাজনীতিবিদ নিয়েছেন, যিনি ব্যক্তিগতভাবে ইসরায়েলের খুব নিবেদিতপ্রাণ সমর্থক। বাইডেন সেই যুগের একজন ডেমোক্র্যাট, যখন দুই সহস্রাব্দের নির্বাসন ও শাস্তির পর মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদিদের আদি বাড়ি প্রতিষ্ঠার বিষয়টি গতি পেতে শুরু করেছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের উদারপন্থীদের চোখ তখন রহস্যজনকভাবে বন্ধ ছিল।  

গোল্ডা মেয়ার থেকে শুরু করে ইসরায়েলের প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাইডেন দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে। ইসরায়েলের প্রতি বাইডেনের টান বাড়ার ক্ষেত্রে এর একটার ভূমিকা আছে। পূর্বতন প্রেসিডেন্টদের মতো বাইডেনের ইসরায়েলের প্রতি ভ্রাতৃত্ববোধ শুধু নির্বাচনী হিসাব-নিকাশের বিষয় নয়।  

গাজা নিয়ে কোনো চুক্তি হচ্ছে না। কেননা, নেতানিয়াহু কিংবা সিনাওয়ারা কেউই বিশ্বাস করেন না, চুক্তি করলে তাঁদের স্বার্থ রক্ষিত হয়। যেমনটা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা অ্যারন ডেভিড মিলার বলেছেন, ‘এই সংঘাত বন্ধে একটি পক্ষেরই কেবল সত্যিকারের তাড়া আছে, সেই পক্ষটি হলেন জো বাইডেন।’

অন্যদিকে ১৯৮০-এর দশকে নেতানিয়াহু প্রথম আলোচনার পাদপ্রদীপে উঠে আসেন। তিনি এমন একজন কূটনীতিক, যিনি আমেরিকানদের সঙ্গে সাবলীলভাবে কথা বলতেন। সে সময় থেকেই তিনি নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে দাঁড় করান। ইসরায়েলের একজন হবু নেতার জন্য এই দক্ষতা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। 

কয়েক দশক ধরে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর ভোটারদের এই বার্তা দিয়ে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যকার সব ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিনিই একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি।

কিন্তু বাস্তব অবস্থাটা এখন কী দাঁড়াল?  চার দশকের বেশি সময়ের মধ্যে বাইডেনই প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করলেন। (১৯৮২ সালে ইসরায়েলের লেবানন অভিযানের সময় রোনাল্ড রিগ্যান যুদ্ধবিমান দিতে বিলম্ব করেছিলেন।) বাইডেন কেন এটা করলেন? কারণ, নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের একটি অংশের জনগোষ্ঠীর মধ্যে এমন তিক্ততা তৈরি করেছেন, যেটা আগে দেখা যায়নি।

ইসরায়েলের প্রতি যে যুক্তরাষ্ট্রের সমাজের নিরেট সমর্থন, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেভাবে ছাত্র আন্দোলন আছড়ে পড়েছে, সেটা বিস্ময়করই। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা গ্যালাপের মার্চ মাসের জরিপ বলছে, ৫১ শতাংশ ইসরায়েলের পক্ষে সমর্থন দিয়েছে, ২৭ শতাংশ সমর্থন দিয়েছে ফিলিস্তিনের পক্ষে। কিন্তু ডেমোক্র্যাট ও তরুণ জনগোষ্ঠী—দুই ক্ষেত্রেই ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সমর্থন অনেকটাই বেড়েছে।

জরিপের এই তথ্য বাইডেন ও তাঁর নির্বাচনী প্রচারণা দলকে চিন্তার মধ্যে ফেলেছে। এই অংশের দ্ব্যর্থহীন সমর্থনই ২০২০ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করতে ভূমিকা রেখেছিল। গাজাবাসীর দুর্ভোগ সেই ভোটারদের সমর্থন অনিশ্চিত করে তুলেছে। হোয়াইট হাউস নেতানিয়াহুর কাছে পরিকল্পনা চেয়েছিলেন, বেসামরিক জনসাধারণকে হতাহত না করে কীভাবে রাফায় অভিযান করতে পারে ইসরায়েল। 

কিন্তু নেতানিয়াহু সেই পরিকল্পনা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সেই কারণে ইসরায়েলকে থামানোর জন্য অস্ত্রের চালান আটকে দেওয়ার সরাসরি পথ বেছে নিয়েছে ওয়াশিংটন।

রাফা বাইডেনের জন্য শক্তি পরীক্ষার জায়গাও হয়ে উঠেছে। বাইডেন রাফাকে বিপদরেখা হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। নেতানিয়াহু যদি সেই বিপদরেখা অতিক্রম করেন, তাহলে বাইডেন দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত হবেন।

কিন্তু নেতানিয়াহু এখন পর্যন্ত রণেভঙ্গ দিতে অস্বীকার করেছেন। ইসরায়েলের স্বাধীনতা আন্দোলনকে সামনে রেখে জনগণের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ছাড়া আমরা একাই লড়ে যাব। প্রয়োজনে আমরা আমাদের নখ দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাব।’ 

নেতানিয়াহু চার্চিলের মতো আওয়াজ তুলতে চাইছেন। কিন্তু তাঁর কথাগুলো দুর্বলের কণ্ঠস্বর, সবলের নয়। ওয়াশিংটন চায়, নেতানিয়াহু যেন রাফা অভিযান থেকে সরে আসেন। কিন্তু জোট সরকারের অতি ডানপন্থী মিত্ররা তাঁকে আরও কঠোর হতে বলছেন, রাফা অভিযানের মাধ্যমে হামাসের বিরুদ্ধে পুরোপুরি বিজয়ের জন্য বলছেন।

এই নিরানন্দ নাটকে বাইডেন ও নেতানিয়াহুই কেবল কুশীলব নন; হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনাওয়ারেরও নিজস্ব হিসাব-নিকাশ আছে, নেতা হিসেবে টিকে থাকার সংকল্প রয়েছে। খুব ঘনিষ্ঠভাবে যাঁরা সিনাওয়ারকেও পাঠ করেছেন তাঁরা বিশ্বাস করেন, নির্দোষ মানুষের জীবন রক্ষা করা তাঁর অগ্রাধিকার নয়; বরং যত বেশি গাজাবাসী নিহত হবেন, আন্তর্জাতিক পরিসরে তাঁর শত্রু ইসরায়েলে অবস্থান ততই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেই পরিস্থিতি তাঁকে বিজয়ী দাবি করতে সহায়তা করবে। সম্প্রতি হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নেওয়ার ঘোষণার পেছনে সিনাওয়ারের এই ভাবনায় কাজ করেছে। 

সিনাওয়ারা সাময়িক কোনো যুদ্ধবিরতি (তাতে অনেক মানুষের প্রাণরক্ষা হয়, দুর্ভোগ কমে) চান না, তিনি চান স্থায়ী যুদ্ধবিরতি। আর তার জন্য সিনাওয়ারা অপেক্ষা করতেও রাজি।

গাজা নিয়ে কোনো চুক্তি হচ্ছে না। কেননা, নেতানিয়াহু কিংবা সিনাওয়ারা কেউই বিশ্বাস করেন না, চুক্তি করলে তাঁদের স্বার্থ রক্ষিত হয়। যেমনটা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা অ্যারন ডেভিড মিলার বলেছেন, ‘এই সংঘাত বন্ধে একটি পক্ষেরই কেবল সত্যিকারের তাড়া আছে, সেই পক্ষটি হলেন জো বাইডেন।’


জনাথন ফ্রিডল্যান্ড, ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ানের খ্যাতিমান কলামিস্ট

মতামত এর আরও খবর