বঙ্গবন্ধু আমার শক্তির উৎস : এম,এ,মান্নান
ক. পৃথিবীর শক্তির উৎস যেমন সূর্য, আমার শক্তির উৎস বঙ্গবন্ধ। আমার জীবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রভাব চীরস্থায়ী। জীবনে তার সান্নিধ্য খুব বেশি পাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি। ততে দুইবার স্বল্প সময়ের জন্য তার কাছে গিয়ে কথা বলার সুযোগ আমার হয়েছে। সেই সুখ স্মৃতি এখনো জ্বল জ্বল করছে।
খ. ৫০ এর দশকে আমি জুনিয়র লেবেলের ছাত্র ছিলাম। তখন তেমন কিছু বুঝতাম না। কিন্তু ৬০ এর দশকে একজন সতেচন বাঙ্গালী তরুণ হয়ে উঠেছি। তখন বাংলাদেশের চিন্তার জগতে একটা উলোট পালট শুরু হয়েছে। সেময় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের একটানা কাজের ফলে অর্থাৎ জনসংযোগের ফলে মানুষকে ধর্মীয় আচ্ছন্নতা থেকে ফিরিয়ে আনার কাজ চলছে মানুষকে ওই অবস্থা থেকে ফিরিয়ে এনে বাস্তব বাদী ও আধুনিক চেতনা এবং জাতায়তাবাদী চেতনায় ফেরানোর কাজ চলছিল। মানুষকে বোঝানো হচ্ছিল যে, এটা আমাদের দেশ নয়, আমরা ধর্মীয় উত্তেজনায় আচ্ছন্ন আছি। সফলভাবে মানুষকে বোঝানোর এই কাজটিই বঙ্গবন্ধু ও তার সঙ্গীরা তখন করে চলেছিলেন। সেসময় পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী ধর্মের নামে শাষন করতে গিয়ে এদেশে শোষণ চালাচ্ছিল। আমি কলেজের ছাত্র। সেসময় প্রায়ই শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তব্য শুনতাম। তখনও তিনি বঙ্গবন্ধু হননি। কিন্তু তার বক্তব্য থেকে উত্তেজিত চেতনা ও প্রেরণার জন্ম হচ্ছিল। তার বক্তব্যে শুধু আবেগই ছিল না, ছিল তথ্যও। তিনি সুন্দরভাবে সহজ সরলভাবে এবং সাধারনভাবে তুলে ধরতেন সব কিছুই। যেমন আমরা পূর্ব পাকিস্তানীরা কিভাবে অর্থনৈতিক শোষনের শিকার হচ্ছি। পুরো ৬০ দশক এ ছিল শেখ মুজিবময়। সে’সময় খবরের কাগজ ছিল একমাত্র ভরসা। সকল কাগজ যে তাঁর পক্ষে ছিল তা নয়। কিন্তু জনগণের চাপে তারাও বঙ্গবন্ধুর পক্ষে লিখতে থাকেন। পরবর্তীতে ছয় দফা আন্দোলন শুরু হয়। সেসময় ছয় দফার ভেতরে কি ছিল। সেটিও বুঝার মতো অবস্থায় আমি ও আমার মতো অনেকেই ছিলাম না। কিন্তু তারপরও ছয় দফার প্রতিটি দফাই যেন আমাদের মুখের ভাষা হয়ে উঠেছিল। এই ছয় দফা়’যে আমাদের বাচার প্রধান মন্ত্র সেটি বুঝে গিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু সেই অবস্থা তৈরি করতে পেরেছিলেন। এসময় শেখ মুজিব আমার অন্যতম মহানায়কে পরিনত হয়ে যান। তখনও আমি সরকারি চাকরিতে যোগ দেই নি।
গ.৭০ সালের প্রথম দিকের কথা। এই প্রথম বঙ্গবন্ধুকে সামনাসামনি দেখার সৌভাগ্য আমার হলো। টাঙ্গাইলের ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কের পাকুল্লা নামক একটি স্থানে তাঁর সঙ্গে আমার দেখা। সেসময় আমি কেয়ার নামের একটি মার্কিন সংস্থায় কাজ করতাম। অফিসের গাড়ী ছিল। সেই গাড়ীতে যখন যাচ্ছিলাম। সেসময় পাকুল্লার রাস্তায় ৩-৪'শ মানুষের ভীড় লক্ষ্য করি। জনতার মাঝে শেখ মুজিবুর রহমানের মাথা দেখে চমকিত হই। গাড়ী থেকে নেমে তার কাছে যাই। তিনি একটি জীপের মতো গাড়ীতে ছিলেন। সেসময় তাজউদ্দিন সাহেব, সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ অন্য নেতারাও ছিলেন। আমি তার নজরে পড়লে তিনি আঙ্গুলের ইশারায় কাছে ডাকলেন। আমি কাছে গেলাম। তিনি বললেন কি ব্যাপার, তোমার পরিচয় কি? আমার পরনে ভাল পোশাক ছিল । চকচকে একটি গাড়ী থেকে নেমেছি। সেজন্য হয়ত ওনার দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। আমি যেখানে চাকরি করি তার সব কিছুই বললাম। তিনি বললেন কোথায় যাচ্ছো ? জানালাম সামনে,গতকাল একটি ঝড় হয়েছিল, তার ক্ষয়ক্ষতি দেখতে যাচ্ছি। রিলিফ হয়তো দেওয়া হবে। তিনি বললেন যাও, খুব ভাল কাজ। এরপর তিনি পাকুল্লার নামকরা সন্দেশ আমাকে দেওয়ার জন্য একজনকে বললেন। (সেসময় তাঁরা সেটি খাচ্ছিলেন)। এক লোক একটা সন্দেশ এনে দিলেন। সেটি ছিল আমার জন্য অনেক বড় সম্মানের বিষয়।
ঘ, স্বাধীনতার পরের বিষয়। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসলেন। দেশের অবস্থা টালমাটাল। আমি তখন বেকার। মুক্তিযুদ্ধের আগেই আমি সিএসপি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। চাকরির জন্য মনোনীত হয়েছিলাম। কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর সে সময়ের সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু অফিসারেরা কোন পাত্তাই দিচ্ছিলেন না। তারা বলতেন যাও, তোমরা পাকিস্তান থেকে পাশ করেছে। এদেশে তোমাদের কোন চাকরি হবে না। তখন আমিসহ আমরা যারা মনোনীত হয়েছিলাম তারা প্রায় হতাশ হয়ে গেলাম। কিন্তু হাল ছাড়িনি। আমাদের শেষ। ঠিকানা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। বঙ্গবন্ধু তখন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধায়। থাকতেন। রমনা পার্কের মাঠে বৈঠক করে সবাই আমাকেই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করার দায়িত্ব দিলেন। আমি যেহেতু ওই ব্যাচের প্রথম হয়েছিলাম। তাই এই দায়িত্ব আমার কাঁধে আসলো। আমরা ৫০-৬০ জন সিএসপি হিসেবে মনোনিত হয়েছিলাম। তার মধ্যে ওই বৈঠকে ২০-২৫ জন উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু কিভাবে দেখা করা যায়। তখন বঙ্গবন্ধুর সচিব ছিলেন বর্তমান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর বাবা রফিক উল্লাহ চৌধুরী, সিএসপি সাহেব। ওনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলো। তিনি সব শুনে একটি ডেট দিয়ে মাগরিবের পরে আমাদের ডাকলেন। আমি গেলাম। গিয়ে দেখি মানুষ দিয়ে বোঝাই। বাসার সামনে, বারন্দায় পার্কে লোকে লোকারণ্য। আমাদের পাস দেওয়া ছিল। আমরা দুজন ভেতরে গিয়ে বসলাম নিচ তলায়। এরই মধ্যে সিঙ্গারাসহ কিছু নাস্তাও খেয়েছি। রাত ১১টার দিকে আমাদের ডাক পড়লো। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধায়। দোতলার দরজা আধা খোলা ছিল। ঢুকে দেখলাম একটি ছোট রুমে তিনজন মানুষ দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। এনাদের মধ্যে একজন তোফায়েল আহমেদ এবং আরেকজন নোয়াখালীর বিখ্যাত শ্রমিক নেতা নুরুল হক। সেখানে ২০-২৫ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ করেই বঙ্গবন্ধুর নজর পড়লো আমার দিকে । তিনি ভালোভাবে অবজার্ভ করলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন। আমি সব কিছু বললাম। তিনি বললেন। এটা খুব ভাল। খুব ভাল। তোমাদের মতো ছেলে দরকার। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি বললেন তোফায়েল (সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ) বিষয়টি দেখার । এদের মতো কোয়ালিফাইড ছেলেপেলে আমার দরকার। আমরা চলে আসলাম। তারপর প্রায় প্রতিদিনই সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের যাতায়াত করতে হয়েছে। কিন্তু এই নিয়োগ প্রক্রিয়া করতেই চলে যায় দুই বছর। বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরে ৭৪ সালে আমাদের নিয়োগ হলো। একবছর তার সরকারে কাজ করেছি। তারপর আমাদের দেশ উলট পালট করে দিলো দেশবিরোধী চক্র, জাতির পিতাকে স্বপরিবারে নি:শ্বেষ করে দিল,বাঙ্গালী জাতিকে নেত্রীত্ববিহীন করে পঙ্গুত্বের দারপ্রান্তে নিয়ে গেল । অভিবাবক হীন বাংলাদেশ দির্ঘ ২৫বছর ? কি হারিয়েছি কাকে হারিয়েছি বাঙ্গালীরা টের পেয়েছিল অক্ষরে অক্ষরে ।
যুক্তরাজ্যে আমার যাওয়া আসা অনেক দিনের আওয়ামীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে অর্থ প্রতি মন্ত্রীর দায়ীত্ব দিয়েছিলেন সেই সুবাধে আমার প্রিয় যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের সাথে বার মেলার সুযোগ হয়েছিল । জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জিবীত অবস্হায় ৭বার মাদার অব ডেমোক্রেসি যুক্তরাজ্য লন্ডন সফর করেছিলেন আর সেই লন্ডন শহরের সিডনি স্ট্রীটে জাতির পিতার ভাস্কর্য হয়েছে দেখে আমি বিমোহিত , গর্বিত ।জাতির পিতা স্বগৌরবে দাড়িয়ে আছেন লন্ডনের সিডনি স্ট্রিটে , আর এই মহান কাজটি করেছেন আমাদের তরুন প্রজন্মের অহংকার লন্ডন আওয়ামীলীগ এর যুগ্মসম্পাদক আমার প্রিয় আফছার খান সাদেক । জাতির পিতার ভাস্কর্য করে বিশ্ব পরিমন্ডলে বাংলাদেশকে তুলে ধরার এই কাজকে আমি স্বাগত জানাই ।
আমিও গিয়ে দেখে এসেছি জাতির পিতার এই সুন্দর ভাস্কর্য শ্রদ্ধা জানিয়েছি আর বলেছি “তোমার সৃস্টিতে তুমিই মহান হে’পিতা মুজিব “ দেশের সকল মন্ত্রী এম পি রা গিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন দেখে মনটা ভরে যায় , সাথে বিদেশী পর্যটক ।
মেমোরিজ অব বঙ্গবন্ধু প্রকাশনা সফল হোক, বঙ্গবন্ধুর নাম সকল শ্রেনী পেশার মানুষের কাছে পৌছে যাক ।
আবারো বলি সাদেক খানকে ধন্যবাদ ।
জয়বাংলা জয়বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজিবী হোক
এম এ মান্নান এম পি
পরিকল্পনা মন্ত্রী
গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ।