বিজয়ফুল কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন

img

আঁধারের মাঝে আলোর দিশারী হয়ে ফুটে উঠেছে বিজয়ফুল

প্রকাশিত :  ১২:৫৯, ০১ ডিসেম্বর ২০২১
সর্বশেষ আপডেট: ১৫:৫২, ০১ ডিসেম্বর ২০২১

আঁধারের মাঝে আলোর দিশারী হয়ে ফুটে উঠেছে বিজয়ফুল

নিলুফা ইয়াসমীন হাসান, লন্ডনঃ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখে ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই বেগবান করার অঙ্গিকার নেয়ার মধ্য দিয়ে লন্ডনে বিজয়ফুল কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে।

কনকনে শীতকে উপেক্ষা করে পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনারের পাদদেশে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় বিকাল সাড়ে পাঁচটায় ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’  দেশাত্ববোধক গানের  মাধ্যমে একে অপরকে বিজয়ফুল পরানোর মধ্য  দিয়ে, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং  মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারকে স্যালুট দেওয়ার মাধ্যমে বিজয়ফুল কর্মসূচীর উদ্বোধন হয়।

উদ্বোধনী আনুষ্ঠানে অন্যানদের মধ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন, বিজয়ফুল কর্মসূচির প্রতিষ্ঠাতা কবি শামীম আজাদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসাইন, টাওয়ার হেমলেটস কাউন্সিলের স্পীকার  কাউন্সিলার আহবাব হোসেন, কাউন্সিলার সাবিনা আকতার, সাংবাদিক সৈয়দ নাহাস পাশা, সাংবাদিক  বুলবুল হাসান, বিজয়ফুল কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা বিভাগের প্রাধান সিরাজুল বাসিত চৌধুরী প্রমুখ । 

ঢাকা থেকে জুমের মাধমে যুক্ত হয়েছেন বিজয় ফুলের আন্তর্জাতিক দূত ড.সেলিম জাহান এবং বিজয়ফুলের বাংলাদেশের দূত গহর নাঈম ওয়ারার।  অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিজয়ফুল কর্মসূচির সমন্বয়ক মিল্টন রহমান এবং সহ সমন্বয়ক অপু ইসলাম । 

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিজয়ফুল সাংস্কৃতিক বিভাগের প্রধান স্মৃতি আজাদ, উজ্জীবক কবি ফারাহ্ নাজ,  সাংবাদিক তবারকুল ইসলাম পারভেজ, শিল্পী সাদিয়া আফরোজ চৌধুরী, ফিরোজ আহমদ বিপুল, রুবি হক, ওয়াহিদ জামান উপল, সিনথিয়া আশরাফ, শামিমা মিতা, মোহনা বেগম,জান্নাতুল ফেরদৌস তুলি, নিপা, আনিকা হক মল্লিক,  ফয়সল, ফজলুল হক প্রমুখ।

অনুষ্ঠানটি ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সরাসরি প্রচার করা হয় । 

গভীর রাতে ঢাকা থেকে জুমের মাধমে যুক্ত হয়ে বিজয়ফুলের আন্তর্জাতিক দূত ড.সেলিম জাহান বলেন, ঢাকায় এখন মধ্য রাত, চারদিকে অন্ধকার। সে আঁধারের মাঝে একটি আলোর দিশারী এবং প্রতীক হয়ে ফুটে উঠছে বিজয়ফুল এবং আমার দেখতে পাচ্ছি যে, লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে এ বছরের বিজয়ফুল কর্মসূচীর শুভ উদ্বোধন হলো। বিজয়ফুল প্রথম যখন প্রবর্তিত হয় কর্মসূচী হিসেবে, তখন তার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা জনানো, যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তাদের প্রতি সম্মান প্রদৰ্শন এবং সেই সঙ্গে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আমাদের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের চিন্তা-চেতনা, বাংলাদেশের যে গৌরবময় ঐতিহ্য সেটাকে তুলে ধরা। আমি মনে করি যে, বর্তমান সময়ে সেই সব কর্মসূচি এবং লক্ষ্যসমূহ  ঠিকই আছে। তার সঙ্গে সঙ্গে বিজয় ফুলের একটি  নতুন তাৎপর্য দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ একটি অশনি সংকেতের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ  করে ড. সেলিম জাহান বলেন, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের চিন্তা-চেতনা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে, যে চার নীতির উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের জন্ম, সেটাকে আমরা পাশ কাটিয়ে গেছি। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থেকে আমরা সরে এসেছি। আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের আত্মপরিচয়ের ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে দ্বন্দ আছে, ধর্মান্ধতা এবং মৌলবাদ ধর্ম নিরপেক্ষতাকে ক্ষুন্ন করছে। এখন বিজয় ফুলের একটি নতুন দায়িত্ব এসে গেছে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক দূত হিসাবে তিনি লন্ডন, বাংলাদেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজধানী এবং শহরে বিজয় ফুল কর্মসূচী পালন করার আহবান জানান।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে টাওয়ার হ্যামলেটস্ কাউন্সিলের স্পীকার কাউন্সিলর আহবাব হোসেন বলেন, বাংলাদেশের বিজয় দিবসের সূবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে কাউন্সিলের পক্ষ  থেকে ব্যাপক কর্মসূচী পালন কর হচ্ছে। তিনি বলেন যে, টাওয়ার হ্যামলেটস্ এর মতো এত ব্যাপক কর্মসূচি বাংলাদেশের বাইরে অন্য কোথাও হয়নি, আগামী ১৭ই ডিসেম্বর কনসার্টের মাধ্যমে কাউন্সিলের বিজয় দিবসের কর্মসূচী শেষ হবে।  সবাইকে বিজয়  দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে জাতির  পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বাংলাদেশের বিজয় আনতে গিয়ে যারা শহীদ হয়েছেন, যারা আত্মাহূতি দিয়েছেন তাঁদের  আত্মার শান্তি  কামনা করেন স্পীকার আহবাব হোসেন ।

বিজয়ফুল কর্মসূচীর উদ্যোক্তাদের এবং বিশেষ করে শামীম আজাদের নতুন চিন্তা-ভাবনার ভূয়সী প্রশংসা  করে স্পিকার বলেন, এর  মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করা, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বিজয় দিবসের তাৎপর্য শেখানোর পথ উন্মুক্ত হয়েছে। 

বিজয়ফুল কর্মসূচির প্রতিষ্ঠাতা কবি শামীম আজাদ বলেন, ২০০৭ সাল থেকে এই কর্মসূচী উদযাপিত হচ্ছে। উপস্থিত সকলকে এবং যারা অনলাইনে যুক্ত হয়েছেন তাদের সবাইকে স্বাগত জানিয়ে কবি শামীম আজাদ বিজয়ফুল কর্মসূচীর বৈশ্বিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। 

সভায় বক্তারা বলেন, ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে লুপ্ত চেতনা পুনরুদ্ধার করার জন্য এবং চিন্তা-চেতনার অবক্ষয় দূর করার জন্য বিজয়ফুল কর্মসূচির গুরুত্ব অপরিসীম। নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বার্তা পৌঁছে দিব এটাই আমাদের অঙ্গীকার। তারা বলেন, বছরব্যাপী দেশ -বিদেশে সর্বস্তরের মানুষকে, বিশেষ করে নব প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করে এই কর্মসূচি পালন করা প্রয়োজন । ডিসেম্বর মাস, বাংলাদেশের বিজয়ের মাস। এবার পালিত হবে বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী। বিশ্বের যেখানেই থাকুন বিজয়ের মাসে প্রতিদিন বিজয়ফুল পরুন, বিজয়ের গৌরবে সমুন্নত থাকুন এবং  ‘৭১ এর শহীদদের স্মরণ করুন আর বাংলাদেশের বিজয়কে বুকে ধারণ করুন।

ডিসেম্বর মাসের ১ থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত বিশ্বের সর্বত্র মুক্তিযুদ্ধের গল্পবলা এবং প্রতিদিন বিজয়ফুল পরার আহবান জানিয়ে প্রতি বছরের মত এবারও নভেম্বর মাস থেকেই শুরু হয়েছে সে কার্যক্রম। 

প্রবাসে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাসকে তুলে ধরার জন্য বিজয়ফুল কর্মসূচি গত ১৪ বছর যাবৎ পালিত হয়ে আসছে। এখন আমাদের কাজ হলো বৃহত্তর পরিসরে সকলের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করে কর্মসূচিকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়া। 

 বিজয়ফুল কর্মসূচী বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে দেবার প্রত্যয় নিয়ে জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি। চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি’ গাওয়ার মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা  হয়।

উল্লেখ্য, সত্তর দশকের কবি শামীম আজাদ বিলেত থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং বিজয় নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি ও ক্যম্পেইন শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিজয় ফুলের সৃষ্টি। বহির্বিশ্বে বসবাসরত বাংলাদেশীদের কাছে বিজয় ফুল হয়ে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক।

বিজয়ফুল তৈরীর সময়ে দেশে বিদেশে একটি ক্রিয়েটিভ কর্মকান্ডের মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের কাছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলার সুযোগটা পাওয়া যায়। বিজয়ফুল একটা উপলক্ষ্য। বাচ্চারা বিজয়ফুল তৈরী করার সময় একজন মুক্তিযোদ্ধা পাশে বসে মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধ জয়ের গল্প শোনান। এতে নতুন প্রজন্মের কাছে একাত্তরের বার্তা পৌঁছে যায়। ছেলেমেয়েরা যখন নিজ হাতে পাঁচটি সবুজ পাপড়ি ও একটি লাল গোলকের সম্মিলনে ফুল তৈরী করে, তখন তাদের শেখানো হয় মাঝখানের বৃত্ত আমাদের বিজয়ের লাল সূর্য, আর পাঁচটি পাপড়ির মাধ্যমে আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতা-নানা ধর্মের মানুষের সহমর্মিতা, আমাদের মৌলিক অধিকার, দেশের নদী, সবুজ প্রকৃতি ইত্যাদি বুঝানো হয়। তাই বিজয়ফুল বানানোর সময় নতুন প্রজন্মের সামনে গোটা বাংলাদেশের চিত্র ফুটে ওঠে। বিজয়ফুল শুধু লন্ডনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতি ডিসেম্বরে বহু বাঙালীরা বুকে বিজয়ফুল পরেন, হৃদয়ে বিজয়ের চেতনা ধারণ করেন।

বাংলাদেশে  বিজয়ফুল:

এদিকে বাংলাদেশেও বিজয়ফুল কর্মসূচি শুরু হয়েছে । বাংলাদেশ বিজয়ফুল কমিটির অন্যতম উপদেষ্টা অধ্যাপক রাশেদা নাসরীন প্রতিষ্ঠিত সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের “আলোক স্কুল” বিজয়ফুল তৈরীতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। স্কুলের ছয় শতাধিক ছেলেমেয়েরা প্রতিদিন দেশাত্ববোধক গান কবিতা ও গল্পে উৎসবমুখর সময় পার করছে।

কমিউনিটি এর আরও খবর

img

এপ্রিলে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১০.২২ শতাংশ

প্রকাশিত :  ১২:৫১, ১৩ মে ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১২:৫৯, ১৩ মে ২০২৪

মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার সব চেষ্টার মধ্যেও গত এপ্রিলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ৩৫ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে এপ্রিলে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ২২ শতাংশে। এর আগের মাসে অর্থাৎ, মার্চে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। তবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি গত মার্চের তুলনায় এপ্রিলে সাত বেসিস পয়েন্ট কমে নয় দশমিক ৭৪ শতাংশ দাঁড়িয়েছে।

আজ সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। হালনাগাদের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে, গত এপ্রিলে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ৩০ বেসিস পয়েন্ট কমে নয় দশমিক ৩৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মার্চে এটি ছিল নয় দশমিক ৬৪ শতাংশ।

এপ্রিল মাসে খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে; গত মাসে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

মার্চ মাসে যা ছিল ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এ দিকে গত এপ্রিল মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ হয়েছে; আগের মাসে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি এখন অর্থনীতির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। বিশ্লেষকেরা বলেন, মূল্যস্ফীতি এক ধরনের কর, যা ধনী-গরিব-নির্বিশেষে সবার চাপ বাড়ায়। আয় বৃদ্ধির তুলনায় মূল্যস্ফীতি বেশি বেড়ে গেলে গরিব ও মধ্যবিত্তের সংসার চালাতে ভোগান্তি বাড়ে। এমনিতেই জিনিসপত্রের দাম বেশ চড়া। তার সঙ্গে চিকিৎসা, পরিবহনসহ খাদ্যবহির্ভূত খাতেও খরচ বেড়েছে। সব মিলিয়ে মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ


কমিউনিটি এর আরও খবর