লকডাউন পার্টি ইস্যু: পদত্যাগে বাধ্য হতে পারেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত :  ১১:০৬, ১৩ জানুয়ারী ২০২২
সর্বশেষ আপডেট: ১২:৩১, ১৩ জানুয়ারী ২০২২

লকডাউন পার্টি ইস্যু: পদত্যাগে বাধ্য হতে পারেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

জনমত ডেস্ক: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন লকডাউনের মধ্যে পার্টি করে এখন ক্ষমতায় টিকে থাকাকে ঝুঁকিতে ফেলেছেন। কোভিড নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় বিরোধীরা তাকে পদত্যাগের সর্বোচ্চ চাপ দিয়ে যাচ্ছেন। বিরোধীদের পাশাপাশি নিজ দল কনজারভেটিভ পার্টির আইনপ্রনেতাদের একাংশও বরিস জনসনকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বৃটিশ রাজনীতির সবথেকে আলোচিত ইস্যু ছিল ২০২০ সালের মে মাসে আয়োজিত প্রধানমন্ত্রীর ওই লকডাউন পার্টি। এ নিয়ে তার উপরে চাপ বাড়ছিল। তবে বুধবার প্রথমবারের মতো ওই পার্টিতে যোগ দেয়ার কথা স্বীকার করে নেন জনসন। এ জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি। কিন্তু সমালোচকদের ক্ষোভ প্রশমনের পরিবর্তে পরিস্থিতি তার জন্য আরও খারাপ হয়েছে।
সব মিলিয়ে তার ক্ষমতায় টিকে থাকাই এখন হুমকিতে রয়েছে।
উপপ্রধানমন্ত্রী ডমিনিক রাবসহ মন্ত্রীসভার সদস্যরা যদিও বরিস জনসনের পক্ষ নিয়েছেন। তবে কনজারভেটিভ দলের প্রধান নেতাদের অনেকেই জনসনের এমন কাজকে ছোট করে দেখতে নারাজ। তারা এখন সরাসরি বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর উচিৎ পদত্যাগ করা। পদত্যাগ দাবি করাদের মধ্যে আছেন কনজারভেটিভ পার্টির স্কটিশ নেতা ডগলাস রোস, আইনপ্রণেতা উইলিয়াম রেগ, ক্যারোলিন নোকস ও রজার গ্যালেসহ অনেকেই।
ডলার রোস একই সঙ্গে হাউস অব কমন্সের আইনপ্রণেতা এবং স্কটল্যান্ডের পার্লামেন্টের আইনপ্রণেতা। তিনি বলেন, হাউস অব কমন্সে ক্ষমা চাওয়ার পর জনসনের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। এসময় দুজনের মধ্যে কঠিন কথাবার্তা হয়েছে। এখন ১৯২২ কমিটির কাছে জনসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ লিখতে চান রোস। তার বক্তব্য হচ্ছে, তিনি আর জনসনের নেতৃত্বের উপরে ভরসা করতে পারছেন না। বরিস জনসন একজন প্রধানমন্ত্রী। এটা তার সরকার, যারা কিনা আইন বাস্তবায়নে কাজ করছে। কিন্তু যে ধরনের কাজ করেছেন, সে জন্য তাকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। ১৯২২ কমিটি মূলত কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব নির্বাচনে কাজ করে থাকে। এর আনুষ্ঠানিক নাম কনজারভেটিভ প্রাইভেট মেম্বারস কমিটি। এই কমিটির কাছে যদি দলটির ৫৪ জন আইনপ্রণেতা চিঠি লেখেন, তবে বরিসের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
বরিস জনসন বলছেন, তিনি জনগণের ক্ষোভের কারণ বুঝতে পারছেন। এ জন্য তিনি ক্ষমাপ্রার্থী। তবে ওই পার্টি নিয়ে যে তদন্ত চালু হয়েছে তার রিপোর্ট প্রকাশ পর্যন্ত অপেক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এই রিপোর্ট এ মাসের শেষের দিকে প্রকাশিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে  এই তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আইনপ্রণেতা ও হাউস অব কমন্সের সিলেক্ট কমিটির প্রধান উইলিয়াম। তিনি বলেন, আমি মনে করি না, প্রধানমন্ত্রীর ভবিষ্যৎ নির্ধারণে বিষয়টি প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারীর তদন্তের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত হবে। আইনপ্রণেতা ও হাউস অব কমন্সের আরেক কমিটির প্রধান ক্যারোলিনও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উচিত এখনই পদত্যাগ করা। তিনি কনজারভেটিভ পার্টির ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন।
২০২০ সালের মে মাসে ডাউনিং স্ট্রিটে তার কার্যালয়ে এটি আয়োজিত হয়েছিল। তবে প্রধানমন্ত্রীর দাবি, তিনি এই পার্টিকে একটি অফিসের অনুষ্ঠান হিসাবে নিয়েছিলেন। এরপরেও তিনি হাউজ অব কমনসে বলেন, আমি ক্ষমা চাইছি। আমার উচিৎ ছিল সবাইকে ফেরত পাঠানো। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া এক ইমেইলে ওই পার্টির বিষয়টি জানা গেছে। এই মেইল প্রকাশ করে বৃটিশ আইটিভি। এতে জানানো হয়, ওই পার্টিতে অন্তত ১০০ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে সে দিন অংশ নিয়েছিলেন প্রায় ৪০ জন। অংশ নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং তার স্ত্রী ক্যারি সিমন্ডস। প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল প্রাইভেট সেক্রেটারি মার্টিন রেনল্ডস ডাউনিং স্ট্রিটের ওই পার্টিতে অংশ নিতে ১০০ এর বেশি জনকে মেইল করেছিলেন। এতে লেখা ছিল, এক অবিশ্বাস্য ব্যস্ত সময় পর আমরা ভাবছি এই সন্ধায় ১০ নম্বর গার্ডেনে মনোরম পরিবেশে পানীয় পান করা যাবে। এরপর থেকেই বিরোধী দলের আইনপ্রনেতারা তার পদত্যাগ দাবি করে আসছেন।
বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা কিয়ের স্টার্মার বলেন, জনসনের বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে একজন মানুষের করুণ দৃশ্য দেখছি, যার আর কোনো উপায় নেই। প্রধানমন্ত্রী নিজেকে বাঁচাতে বলেছেন যে, তিনি বুঝতেই পারেন নি যে তিনি একটি পার্টিতে রয়েছেন। এটি পুরোপুরি হাস্যকর। সবাই জানতেন যে তিনি ওই পার্টিতে ছিলেন। অথচ তাকে জোর করে সেটি স্বীকার করাতে হয়েছে। যখন পুরো দেশ লকডাউনে থেমে ছিল তখন তিনি ডাউনিং স্ট্রিট পার্টি করছিলেন। তিনি কি এখন একটি উপযুক্ত কাজ করবেন এবং পদত্যাগ করবেন?
তবে এখনো জনসন এটি ভেবে আশ্বস্ত হতে পারেন যে, পার্লামেন্টে তার দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। তবে জনসনের জন্য ভীতিকর বিষয় হচ্ছে, কনজারভেটিভ দলের অনেক আইনপ্রনেতাদের একাংশও তার নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। ২০১৯ সালে তাকে নেতা নির্বাচিত করে কনজারভেটিভ দল। সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ উভয় ক্যারিয়ারেই অনেকগুলো নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ ছিল জনসনের বিরুদ্ধে। তারপরেও তার জনপ্রিয়তার কারণে তাকে নির্বাচিত করা হয়েছিল। এটি যে দলের জন্য ভাল সিদ্ধান্ত ছিল তা জনসন প্রমাণ করেছেন নিজেদের দলকে নির্বাচনে জয়ী করার মধ্য দিয়ে।
তবে বিভিন্ন কারণে দলের মধ্যে তার সমর্থন আস্তে আস্তে কমে এসেছে। লকডাউনের সময় বৃদ্ধি ও নানা কোভিড বিধিনিষেধ আরোপের কারণে কনজারভেটিভ নেতারা জনসনের প্রতি তাদের সমর্থন কমিয়ে দিয়েছেন। অনেকেই এসব বিধিনিষেধকে মাত্রাতিরিক্ত মনে করেছেন। নিজেদের নেতাদের সরিয়ে দেয়ার ইতিহাস রয়েছে কনজারভেটিভদের। পার্টি করা নিয়ে জনসনের অবস্থান স¤পর্কে তার দলের নেতা ক্রিশ্চিয়ান ওয়েকফোর্ড বলেন, যা অসম্ভব তার চেষ্টা করা বন্ধ করতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি যা করছেন তা বিব্রতকর। তিনি এটিকে আরও টেনে নিয়ে গেলে রাজনীতির প্রতি বিশ্বাস হ্রাস পাবে। যে কোনো সময়ের থেকে এখন আমাদের রাজনীতিতে বিশ্বাস ও সততার দরকার।
জনসনকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হলে তার সম্ভাব্য উত্তরসরি হিসাবে ধরা হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস এবং চ্যান্সেলর ঋশি সুনাককে। তবে তারা টুইটারে বরিস জনসনকে পুরোপুরি সমর্থন দিয়েছেন। ট্রাস বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ১০০ ভাগ সমর্থন দিচ্ছেন। অপরদিকে ঋশি সুনাক বলেছেন, পার্লামেন্টে ক্ষমা চেয়ে সঠিক কাজই করেছেন প্রধানমন্ত্রী। যতদিন না তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ পাচ্ছে তিনি ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানান তিনি।

ক্যান্সারের আক্রান্ত ব্রিটিশ রাজকুমারী কেট

প্রকাশিত :  ০৯:১৪, ২৩ মার্চ ২০২৪

ব্রিটিশ রাজবধূ প্রিন্সেস অব ওয়েলস কেট মিডলটন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় নিজেই এই তথ্য জানান তিনি। বর্তমানে তিনি প্রতিরোধমূলক কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। 

বুধবার উইন্ডসরে বিবিসি স্টুডিওর রেকর্ড করা একটি ভিডিও বার্তায় কেট বলেন, গত জানুয়ারিতে তার পেটে অস্ত্রোপচারের পরে তার ক্যানসার ধরা পড়ে।

তিনি বলেন, ‘অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। তবে অপারেশনের পর পরীক্ষায় ক্যান্সার পাওয়া গেছে। তাই আমার মেডিকেল টিম পরামর্শ দিয়েছে যে আমাকে প্রতিরোধমূলক কেমোথেরাপির কোর্স করা উচিত এবং আমি এখন সেই চিকিৎসার প্রাথমিক পর্যায়ে আছি।’

তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে কয়েক সপ্তাহ ধরে জল্পনা-কল্পনার বিষয়ে কেট আরও বলেন, তিনি এবং তার স্বামী প্রিন্স উইলিয়াম তাদের সন্তানদের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার জন্য সময় প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘অবশ্যই এটি একটি বিশাল ধাক্কা হিসাবে এসেছিল আমাদের কাছে এবং উইলিয়াম এবং আমি আমাদের সন্তান ও পরিবারের স্বার্থে ব্যক্তিগতভাবে এটি প্রক্রিয়াকরণ এবং পরিচালনা করার জন্য আমরা যা যা করতে পারি তা করছি।’

প্রিন্সেস অব ওয়েলস আরও বলেন, ‘আমার কাজ সবসময় আমাকে আনন্দের গভীর অনুভূতি এনেছে এবং আমি যখন সক্ষম হব তখন আমি ফিরে আসার অপেক্ষায় আছি, কিন্তু আপাতত আমাকে এই রোগ থেকে সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধারের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।

প্রসঙ্গত, এই নিয়ে গত তিন মাসের মধ্যে ব্রিটিশ রাজপরিবারের তিন সদস্যের ক্যানসারের খবর পাওয়া গেলো। গত ৬ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ রাজা চার্লস ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এর আগে জানুয়ারিতে, প্রিস অ্যান্ড্রুর সাবেক স্ত্রী ডাচেস অব ইয়র্ক সারাহ ফার্গুসন স্কিন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন বলেও জানা যায়।