ইমরান চৌধুরী বি.ই.এম

img

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরঃ পরীক্ষিত বন্ধুত্বের পরাকাষ্ঠা

প্রকাশিত :  ২২:৪১, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরঃ পরীক্ষিত বন্ধুত্বের পরাকাষ্ঠা

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ এ চার দিনের সফরে ইন্ডিয়াতে গিয়েছেন এক রাষ্ট্রীয় সফরে। ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশের সম্পর্ক শুরু হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের ষেই ক্রান্তি লগ্ন থেকে। বাংলাদেশ এবং ইন্ডিয়ার সম্পর্ক সেই পুরাকাল থেকেই আমাদের এই দুই দেশের মাঝে রয়েছে বন্টিত ইতিহাস, সংস্কৃতি, রীতি নীতি, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং এথনিক সামঞ্জস্য। ভূগোলিকভাবে আমাদের দুটি দেশই একে ওপরের নিকট সম্পূরক অনেক ভাবেই। হিমালয়ের বরফগলা পানিরাশি দিয়ে বিধৌত প্রধান তিনটি নদী ব্যবস্থা তিনটিই সমুদ্রে প্রবাহিত হচ্ছে বাংলাদেশের উপর দিয়ে। বাণিজ্য, সামরিক, নিরাপত্তা এবং ভূ রাজনৈতিক দিক থেকে আমারা এই দুইটি দেশ একবারেই অবিচ্ছেদ্য। 

১৯৭১ সালের সেই তুলকালাম দিনগুলোতে যখন পরাশক্তি সহ সব দেশেই বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটী মানুষের উপর নেমে আসা সেই বর্বরোচিত অপমান, অবমননা এবং জেনোসাইড থেকে তাদের কৃপার দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে শুধু নিয়েছিল না পক্ষান্তরে হামলাকারীদের সাথে ঐ সকল দেশকে বাড়ীয়ে দিয়েছিল তাদের সহায়তা। আজ তারা আমাদের দেশের জন্য, জনগণের জন্য, আমাদের গণতন্ত্র এর জন্য, উন্নয়নের জন্য কুম্ভীরাশ্রু নির্গমন করে - কি আশ্চর্য - একদা যারা চায়নি আমাদের স্বাধীনতা, কর্ণপাত করে নাই আমাদের লক্ষ কোটি মানুষের আর্তনাদে তারা এখন হতে চায় আমাদের বন্ধু! কি বিচিত্র এই জগত!

ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশ এর বন্ধুত্ব শুধু বান্যিজিক, অর্থনৈতিক, নিরাপত্তাই শুধু নয়, এই দৃঢ় সম্পর্ক আত্মিক, এই সম্পর্ক চিরস্থায়ী এবং অনড় তথা অটুট। ১৯৭১ সালের সেই সময় ইন্ডিয়া আজকের ইন্ডিয়া ছিল না — ইন্ডিয়া তখন ছিল অনেক দিক থেকেই পশ্চাৎগামী, যোগাযোগ ব্যবাস্থা, সামরিক সরঞ্জামের অপ্রতুলতা, অর্থনীতি আপেক্ষিক ভাবে উন্নয়নশীল নয়, উত্তর পূর্ব ইন্ডিয়ায় তখন বিচ্ছিনতাবাদী ইন্সারযেঞ্ছি, বিদেশ নীতিতে একটু পিছুপা এবং আন্তর্জাতিক জোটের সদস্য সঙ্কট - কিন্তু এর কোন কিছুই ইন্ডিয়া কে মানবিকতার উৎকর্ষতা দেখাতে স্তিমিত করতে পারে নাই। 

এপ্রিল ১৯৭১ সালে প্রথম সপ্তাহ থেকে ১৫ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল শেষ দিন পর্যন্ত প্রত্যহ হাজার হাজার নিঃস্ব, জীবনের ভয়ে বিহ্বল, ঘর বাড়ি হীন আবাল বৃদ্ধ বনিতারা প্রবেশ করতে থাকে ইন্ডিয়াতে ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয়া এবং পশ্চিম বাংলায়। ইন্ডিয়া এবং তার উদার জনগণ ব্যবস্থা করে ছিল এই সব শরণার্থীদের জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান এবং আবাস। ইতিহাসে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর বাংলাদেশের শরণার্থী সঙ্কট ছিল সবচেয়ে বড় শরণার্থী সঙ্কট প্রায় ১ থেকে দেড় কোটি অসহায়, সহায়, সম্বলহীন, মৃত্যুভয়ে আতঙ্কিত বাঙ্গালীরা উপায়ান্তর না পেয়ে ইন্ডিয়া তে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। 

স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধ সংগঠন থেকে শুরু করে অস্ত্র, প্রশিক্ষণ, পোশাক, খাদ্য, গোলাবারুদ, মুক্তি বাহিনী ক্যাম্প, ভারি থেকে হাল্কা অস্ত্র, ম্যাপ, বিনোকুলার থেকে শুরু করে যুদ্ধ করতে যে সমস্থ সামগ্রী প্রয়োজন তার সবই ইন্ডিয়া দিয়েছিল এবং মুক্তি বাহিনীর সাথে যুগপৎ ভাবে সমরে যোগদান করেছিল সেই মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহর থেকেই। ৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ইন্ডিয়ান সম্মিলিত বাহিনী এবং মুক্তি বাহিনী যুগপৎ ভাবে পাকিস্তানি দের আত্মসমর্পণ এর মাধ্যমে পরাজিত করে ছিনিয়ে এনে দিতে সক্ষম হয় আমাদের দেশ - বাংলাদেশ!

একটি একাডেমিক রিসার্চ পেপারের উদ্ধৃতিতে লিখেছে, বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধে ইন্ডিয়াকে আজকের মুদ্রায় ইউ এস ডলার ১ শত বিলিয়ন ব্যয় করতে হয়েছিল এবং এটা আশ্চর্য হবার মত কোন মহাকাশীয় সংখ্যা নয় - এটা মনে হয় একটি সত্যি খরচের পরিসংখ্যান। 

১৯৭১ সাল থেকে আজ ২০২২ সালের বাংলাদেশ এবং ইন্ডিয়া অনেক চড়াই উৎরাই অতিক্রম করে এখানে এসেছে ; বৈশ্বিক সমস্যা - কোভিড-১৯ এর ব্যাকল্যাস, মুদ্রাস্ফীতি, রাশিয়া - উইক্রেন যুদ্ধ, চীন আগ্রাসী মনোভাব, মুসলমান সংখ্যালঘু ইউঘোরদের উপর চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির জেনোসাইড, ইন্ডিয়ান মহাসাগর, দক্ষিণ চায়না সাগর, গনতন্ত্রকামী তাইওয়ান এর অস্তিত্বের হুমকি সহ অন্যান্য সহস্রাধিক সম্যসায় পৃথিবী আজ অতিক্রম করছে ক্রান্তিকাল আর এই সময়ে বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রীর ইন্ডিয়া সফর একটি বিশাল তাৎপর্য পূর্ণ সফর। এই সফর শুধু পারোস্পরিক সহযোগিতা, সমঝোতা, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, অর্থনীতি, পররাষ্ট্র নীতি মূলক এজেন্ডাতেই সীমাবদ্ধ নয় এই সফর অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের সুদৃঢ়তার মাইল ফলক হিসাবে। সর্বদা অটুট তাখুক বাংলাদেশ - ইন্ডিয়া বন্ধুত্ব ! 

মতামত এর আরও খবর

img

লন্ডন মেয়র নিবার্চন ২০২৪, কে হবেন লন্ডন কান্ডারী?

প্রকাশিত :  ০১:১৭, ০২ মে ২০২৪

|| নুজহাত নূর সাদিয়া  ||

সুনসান নির্জনতা। পথচারি চলাচল দূর দৃষ্টির সীমানায়ও ধরা পড়ে না।  ঘড়ির কাঁটা ১টা  ছঁুই ছঁুই, ঘাড়ের কাছটায় অর্তকিত হামলা! ছুরির ফলা লালচে শিরা কেটে প্রায় ঢুকে পড়েছে, কোথায় আমাদের জনগণের তথাকথিত সেবকরা, লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ? ভাগ্যগুণে  হয়তোবা আমি বেঁচে গেছি, তবে সৌভাগ্যের  ছেঁায়া কি সবাই পায়। 

ক্যান্সার জয়ী লিবারেল ডেমোক্রেট প্রার্থী রব ব্ল্যাকি সহ চলতি ২০২৪ সালে মোট ১৩ জন লন্ডন মেয়র প্রার্থীর কন্ঠে যে বেজেছে একই অনুযোগ, একই প্রতিশ্রম্নতি রাখার দৃঢ় প্রত্যয়। হবে নাইবা কেন, অর্তকিত ছুরিকাঘাত, গ্যাং হামলা, ধর্ষণ সহ নানা অপরাধের বেড়াজালে ঐতিহ্যবাহী লন্ডন শহরটি যে ক্রমশ তার স্বকীয়তা, সৌন্দর্য আর নিরাপত্তা হারাতে বসেছে।

লিবারেল ডেমোক্রেট ব্রিটিশ রাজনীতির দুই চির প্রতিদ্বদন্বীর মযার্দাপূর্ণ লড়াইতে ক্রমশ স্বতন্ত্র অবস্থান নিতে শুরু করেছে— ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের দলটি। কোভিড পরবতীর্ রাশিয়া—ইউক্রেন যুদ্ধের ডামাডোলে বিশ্বব্যাপি বর্ধিত জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো, জাতীয় স্বাস্থ্য খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, টেমস নদীর সুয়ারেজ সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধান সহ সবোর্পরি জনগণের রক্ষক অর্থাৎ লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের আমূল সংস্কার সাধনসহ (অর্ধিক সংখ্যাক দক্ষ নিয়োগ, তাদের বাস্তবসম্মত চাহিদা পূরণ, বন্ধ পুলিশ স্টেশনগুলোর পুনরায় কার্যক্রম চালু) সহ নানা বিষয়ে নিজ প্রতিশ্রম্নতি ব্যক্ত করেছেন এই তরুণ লিবডেম প্রার্থী। 

দুনিয়া জুড়ে আজ একটিই স্লোগান—বন্য প্রাণী রক্ষা কর, পরিবেশ বাঁচাও। অসহনীয় প্রকৃতি, জীবনের উপর্যপুরি চাহিদা মেটানো এই সাংঘার্ষিক দিন বদলের খেলা দূরদশীর্ তরুণ প্রজন্ম  উত্তপ্ত ভবিষ্যতের আঁচ টের পেয়েই এই সবুজ পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তুলতে আজ বদ্ধ পরিকর। পালাবদলের খেলা, একদা ব্রিটেনে স্থায়ী হওয়ার সুখ স্বপ্নে বিভোর আফগান শরনার্থীটি বর্তমানে  পোড় খাওয়া এক লড়াকু মেয়র পদপ্রার্থী। হ্যা, বলছিলাম অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার পার্টির প্রতিনিধি সুন্দরী ফেনি আমিনের কথা। স্বাস্থ্য খাতে ক্যারিয়ার গড়া এই চৌকষ তরুণীর অন্যতম স্বপ্ন রাজধানীবাসির সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা। লন্ডনবাসীর বহুদিনের কৌতুহল, একজন নারী কি নগরপিতার আসন আলোকিত করতে সক্ষম হবেন?

পরিবেশবাদী ফেনি, প্রাণীদের ব্যাপারে স্বাভাবিকভাবেই সংবেদনশীল তবে,  মননে পিছিয়ে নেই স্বল্প ও মধ্যম মানের আয়ের মানুষদের বাসস্থান ও কর্মসংস্থানেও। পশুর পশম বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা, গাছ উতপাদনে অযাচিত সারের ব্যবহার বন্ধ সহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বরাবরি সোচ্চার এই চটপটে তরুণী।

লন্ডন চায় একজন সবুজ মনের মানুষ, বাড়তে থাকা গ্রীন পার্টির সমর্থনের পাল্লাটি—এই অভিনব প্রচারণায় দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছেন দলটির প্রতিনিধি জো গারবেট। ভাড়া বাড়িতে থাকা কর্মজীবী মানুষের প্রতিনিধিত্ব করা এ নারী কাউন্সিলর স্বাভাবিকভাবেই ভাড়াটিয়াদের সাধ —সাধ্যের টানাপোড়েনের স্বপ্নটিকে বাস্তবের পাথুরে ভিত্তির উপর শক্তভাবে দাঁড় করিয়ে দিতে চান। স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রাস্তাঘাট পরিষ্কার,তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ,পাবলিক যানবাহনের খরচ কমানো সহ নগরের নিরাপত্তা বৃদ্ধির  উপর জোর দিয়েছেন এ ব্যক্তিত্বময়ী তরুণী।

অ্যামি গেলাঘের, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির এই কর্মজীবী সেবিকাটি তার সেবা পেশাটির গন্ডি ছাঁড়িয়ে সম্ভবত নিজেকে দেখতে চান ব্রিটিশ রাজনীতির রঙ্গ মঞ্চে। শ্রেণী বৈষম্যের বিভেদের চাদরে  নিজেকে না জড়িয়ে, যোগাযোগ ব্যয় কমানো, মাত্রাতিরিক্ত রোড ট্যাক্স প্রত্যাহার , ২৪ ঘন্টা পাবলিক যানবাহন চালু রাখা, পুরনো ঘরানার বাড়ি ভেঙ্গে  বাসোপযোগী আধুনিক বাসস্থানের ব্যব স্থা সহ ঐতিহ্যবাহী লন্ডনকে ডিজিটাল লন্ডনে রূপ দিতে অগ্রগামী অ্যামি।


তরুণ গুলাটি, এই ব্রিটিশ ধনকুবের ও দূরদশীর্ ব্যাংকার  স্বতন্ত্র পদধারীদের তালিকার সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র। রক্তে পূর্ব পুরুষের আভিজাত্য বিদ্যমান, রয়েছে  বিশ্বব্যপী তিন শতকের আর্থিক খাতে সূক্ষè পরিকল্পনা প্রয়োগের কার্যকরী অভিজ্ঞতা। তাই—এ ক্যারিশমাটিক প্রধান নির্বাহী অফিসারটির মুখেই হয়তো মানায় এ পরম বুলিটি—আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব—মানুষ হতে উৎসারিত, মানুষ দ্বারা পরিবেষ্টিত এবং মানুষের সেবায় নিবেদিত। চার চারটি দশকের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ধীমানটির মুখে ফুটে উঠেছে নিশ্চিত প্রত্যয়ের সুর— খঁুড়িয়ে চলা মেট পুলিশের পুনরুত্থান, বিশেষ করে নারীদের নিরাপত্তা রক্ষা, লন্ডন হবে সেরা বিনিয়োগ কেন্দ্র এবং বিদ্যাপিপাসু ও পর্যটকদের  অন্যতম আর্কষণের কেন্দ্রবিন্দু, এলাকা ভিক্তিক কর্মসংস্থান, ক্ষুদ্র ব্যবসা সহ অন্যান্য সমস্যার সমাধান, ফ্রি স্কুল মিল, সপ্তাহান্তে পাবলিক যানবাহনের বাড়তি চার্জকে ছুটি জানানো; শেষ নেই তার কর্ম উন্মাদনার।

হুওয়ার্ড কক্স, ব্যতিক্রমী এ মাঝবয়সী রাজনীতিবিদটি আলোচিত ‘ফেয়ারফুয়েল ইউকে’ ক্যাম্পেইন নামক অভিনব প্রচারণাটির জন্য। সড়ক ও জনপদ বিভাগের সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মানুষটির একমাত্র লক্ষ্যই যেন সাশ্রয়ী মূল্যে আমজনতার কাছে পরিশোধিত জ্বালানি তেলের যোগান দেওয়া যা তার ভাষ্যমতে ২০১১ সাল হতে তিনি নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। উপরি পাওনা হিসেবে আছে, মধ্যম আয়ের বিলেতবাসীর জন্য এক টুকরো সবুজ আবাসের ভিত্তি গড়া এবং রাণি এলিজাবেথ দ্বিতীয়ার ঐতিহাসিক স্মৃতিগাঁথার সম্মানজনক সংরক্ষণ।

নাটালি ক্যাম্পবেল, এ কৃষ্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় চ্যান্সেলর একজন সামাজিক উদ্যোক্তাও বটে যিনি বেলু নামক সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা নিবার্হী প্রধান। রাজনীতির অলি—গলির আদা—জল খেয়ে বড় হওয়া নয়, নিজ মেধা—পরিশ্রমে শাণিত নারীটি প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই সমাজের অবহেলিত মানুষদের প্রতি সচেতন। তাই তার নিবার্চনী প্রতিশ্রম্নতির পাতায় প্রথমেই অগ্রাধিকার পেয়েছে— গৃহহীনদের গৃহী করার আপ্রাণ প্রয়াস। সুপ্ত ইচ্ছে ৪০,০০০ নিমার্নাধীন বাড়ির বাস্তবায়নের, অপরাধ কমানো, ৩২০টি নতুন প্রতিবেশি কেন্দ্র স্থাপন এবং নিত্য—নতুন উদ্ভাবনের সুযোগ তৈরি।

আন্দ্রে মিগলি ও নিক স্ক্যানলন এ দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী শিরায় প্রবাহিত নীল রক্ত নিয়ে ভীষণ সচেতন। ভিনদেশী অধিবাসীদের অহেতুক বোঝা অভিহিত করা এবং তার ফলে লন্ডন ক্রমশ অসুস্থ শহরে পরিণত এই আশংকা ব্যক্ত করে রাজনীতির দুষ্ট কবল হতে মুক্ত করে ঐতিহ্যবাহী লন্ডনকে বিস্মৃতপ্রায় সমৃদ্ধি ফিরিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর এ আত্নবিশ্বাসী যুগল।

প্রথমা’র তকমা এলিট রাজনৈতিক দলটির বণার্ঢ্য ক্যারিয়ারে, অথচ ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলটির কাছে গত ৮টি বছর রাজধানী লন্ডনের এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ পদটি তীর্থের কাক। বিরোধী দল লেবারের হেভিওয়েট প্রার্থী, অভিনব প্রচারণা এসব কিছুর কাছেই হেরে গেছে তাদের আজন্মলালিত ব্রিটিশ আভিজাত্য আর কূটকৌশল।

সুসান  হল, এ এলিট শ্রেণীর টোরির কন্ঠে শোনা যায় সাধারণের সেবার এক নিখাদ আকাঙ্খা — নতুন বাড়ি তৈরি, বাড়তি যানবাহন চার্জ কমানো, সবুজ প্রকৃতি ধরে রাখা, দলমত নির্বিশেষে অন্যায়কে না বলা— লন্ডনবাসী কি প্রথমবারের মত এক প্রচারবিমুখ নারীকে মেয়র  পদে দেখতে পাবে?

সাদিক খান, বর্তমান মুসলিম মেয়রটি নব রাজনৈতিক ইতিহাস তৈরি, ফ্রি স্কুল মিলের মত সময়োপযোগী সেবা, ৫টি বছর ধরে পাবলিক যানবাহনের চার্জ মোটামুটি একি স্কেলে ধরে রাখার চেষ্টা, ১৩০০ নতুন পুলিশ নিয়োগ, তরুণদের জন্য আশাব্যাঞ্জক বিনিয়োগ সহ নানা কর্মকান্ডে যেমন জনতাকে উজ্জীবিত করেছেন। অপরদিকে, রাস্তাঘাটের অপরিকল্পিত সংস্কার, স্বল্প দূরত্বে বাস স্টেশন স্থাপন, বাড়তি কর আরোপ সহ নানা সিদ্ধান্তের দ্বারা বিলেতবাসীকে দিন দিন হতাশায় ডুবিয়েছেন। ২০২১ সাল, কোভিড—১৯ দুঃসময়কালে শতকরা ৫৮ ভাগ (১.৫ মি.) ভোটার বিরত ছিলেন নিবার্চনে, দুঃসময়ের ত্রাতা  অভিনব প্যাকেজ সেবা প্রণেতা লেবার সাদিক কি পারবেন হ্যাটট্রিকের গৌরবময় টিকা কপালে পড়তে না গতিময় লন্ডন  নতুন কান্ডারীর প্রত্যাশায়?

২‘রা মে বৃহস্পতিবার ’২৪ সালের নব উষাটি যে তারই অপেক্ষায়। 

নুজহাত নূর সাদিয়া, লন্ডন ২৮শে এপ্রিল ২০২৪


মতামত এর আরও খবর