যুদ্ধের উন্মাদনা

img

ভারতের-পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক শক্তির পার্থক্য কতটুকু

প্রকাশিত :  ০৫:৩৮, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
সর্বশেষ আপডেট: ০৬:০৯, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৯

 ভারতের-পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক শক্তির পার্থক্য কতটুকু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সামরিক শক্তির দিক থেকে বিশ্বের ১৩৬টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান চতুর্থ, অন্যদিকে পাকিস্তানের অবস্থান সতেরোতম। 

এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে ৫৫টির বেশি উপাদান বিবেচনায় নিয়ে। ভৌগলিক, অর্থনৈতিক, স্থানীয় শিল্প, প্রাকৃতিক সম্পদ, কর্মক্ষমতা এবং প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিশ্বের দেশের মর্যাদার বিষয়গুলো এখানে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। 

জনসংখ্যার দিক থেকে পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে ভারত। পাকিস্তানের জনসংখ্যা যেখানে সাড়ে ২০ কোটি, সেখানে ভারতের জনসংখ্যা ১২৮ কোটির বেশি। পাকিস্তানের সৈন্য সংখ্যা ৯ লাখ ১৯ হাজার হলেও ভারতের সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি - ৪২ লাখ। 

প্রতিরক্ষা বাজেট:

ভারত ও পাকিস্তান - এই দুই দেশের প্রতিরক্ষা বাজেটে বড় পার্থক্য রয়েছে। ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট চার হাজার ৭০০ কোটি ডলার, অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষায় বরাদ্দ রয়েছে ৭০০ কোটি ডলার।

সামরিক বিমানের সংখ্যা:

ভারতের মোট সামরিক বিমান রয়েছে ২,১৮৫টি, আর পাকিস্তানের রয়েছে ১,২৮১টি বিমান।

এসবের মধ্যে ভারতের যুদ্ধবিমান রয়েছে ৫৯০টি আর পাকিস্তানের ৩২০টি। সেই সঙ্গে ভারতের আক্রমণকারী বা অ্যাটাকিং বিমান রয়েছে ৮০৪টি, অন্যদিকে পাকিস্তানের আছে ৪১০টি। 

পরিবহনের জন্য ভারতের রয়েছে ৭০৮টি বিমান, পাকিস্তানের রয়েছে ৪৮৬টি।

হেলিকপ্টার

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর কাছে সাধারণ হেলিকপ্টার রয়েছে যেখানে ৩২৮টি, ভারতের কাছে রয়েছে ৭২০টি। তবে পাকিস্তানের আক্রমণকারী বা অ্যাটাকিং হেলিকপ্টার রয়েছে ৪৯টি, যেখানে ভারতের আছে মাত্র ১৫টি। 

কার্যক্ষম বিমানবন্দর রয়েছে ভারতের ৩৪৬টি, আর পাকিস্তানের ১৫১টি। 

ট্যাংক 

পাকিস্তানের মোট ট্যাংকের সংখ্যা ২,১৮২টি হলেও ভারতের রয়েছে এর প্রায় দ্বিগুণ - ৪,৪২৬টি। 

সাঁজোয়া যান

এরকম বাহন ভারতের রয়েছে ৩,১৪৭টি, আর পাকিস্তানের ২,৬০৪টি। 

আর্টিলারি

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তালিকায় স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের দিক বিবেচনায় ভারতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে পাকিস্তান। 

ভারতের ১৯০টি এ ধরণের অস্ত্র থাকলেও পাকিস্তানের রয়েছে ৩০৭টি। তবে টেনে নিয়ে যাওয়া যায়, এমন আর্টিলারি ভারতের আছে ৪,১৫৮টি। তবে পাকিস্তানের আছে এর এক চতুর্থাংশ - মাত্র ১,২৪০টি। 

রকেট প্রজেক্টর ভারতের কাছে আছে ২৬৬টি আর পাকিস্তানের কাছে আছে ১৪৪টি।

নৌবাহিনীর সরঞ্জাম

ভারতের নৌবাহিনীর কাছে মোট যুদ্ধযান রয়েছে ২৯৫টি আর পাকিস্তানের আছে ১৯৭টি। 

এসব যুদ্ধযানের মধ্যে ভারতের একটি বিমানবাহী রণতরী থাকলেও ভারতের সেরকম কিছু নেই। 

ভারতের কাছে ১৬টি সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ থাকলেও পাকিস্তানের আছে পাঁচটি। 

ফ্রিগেট রয়েছে ভারতের ১৪টি, আর পাকিস্তানের ১০টি। 

ভারতের ১১টি ডেস্ট্রয়ার থাকলেও পাকিস্তানের এরকম কোন যুদ্ধজাহাজ নেই। তেমনি ভারতের ২২টি কর্ভেট (ছোট আকারের যুদ্ধজাহাজ) থাকলেও পাকিস্তানের এরকম কোন নৌযান নেই। 

ভারতের প্যাট্রোল নৌযান রয়েছে ১৩৯টি, আর পাকিস্তানের আছে ১১টি। 

মাইন যুদ্ধজাহাজ রয়েছে ভারতের ৪টি আর পাকিস্তানের ৩টি। 

নৌ-বন্দর, কর্মক্ষম ব্যক্তি, বাণিজ্য জাহাজ, সংরক্ষিত শক্তি ইত্যাদির দিক বিবেচনায় পাকিস্তানের চেয়ে বেশ অনেকটা এগিয়ে রয়েছে ভারত। 

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, সামরিক দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এরপরেই রয়েছে রাশিয়া, চীন ও ভারত। 

শীর্ষ ১০দেশের মধ্যে আরো রয়েছে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, তুরস্ক এবং জার্মানি। 

ভারত এবং পাকিস্তান - এই দুটো দেশের হাতেই রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র। 

তবে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেনি যে কোন দেশের হাতে কতটি এ ধরণের অস্ত্র রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, পারমাণবিক অস্ত্র ক্ষমতার বিষয়টি তারা তাদের রিপোর্টে বিবেচনায় নেয়নি।

সামরিক বিশ্লেষকরা অবশ্য বলে থাকেন যে পারমাণবিক অস্ত্র যুদ্ধের ক্ষেত্রে অনেকটা ডেটেরেন্ট বা নিবৃত্তকরণের উপাদান হিসেবে কাজ করে, কারণ শেষ বিচারে এ ধরণের অস্ত্র কেউ ব্যবহার করতে চাইবে না।

আন্তর্জাতিক এর আরও খবর

img

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে অস্ত্র সমর্পণ করবে হামাস

প্রকাশিত :  ০৯:১৯, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ০৯:২১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

টানা প্রায় সাত মাস ধরে গাজায় অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে এরপরও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে পরাজিত করতে পারেনি ইসরায়েল।

নির্বিচার এই হামলার জেরে নিহত হয়েছেন ৩৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। লাগাতার হামলায় গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই ভেঙে পড়েছে।

এমন অবস্থায় অনেকটা শান্তির বার্তাই সামনে আনলো হামাস। স্বাধীনতাকামী এই গোষ্ঠী বলছে, একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটি তাদের অস্ত্র সমর্পণ করবে।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন ও ওয়াশিংটন পোস্ট।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরায়েলের দখল করা অঞ্চলগুলোতে ফিলিস্তিনিরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেলে হামাস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম ছেড়ে দিতে পারে বলে হামাসের কিছু কর্মকর্তা ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সিএনএন বলছে, সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটির কিছু কর্মকর্তার দেওয়া এই বার্তাটি হামাসের অবস্থান কিছুটা নরম হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। কারণ গাজা ভূখণ্ডের শাসন ক্ষমতায় থাকা এই দলটি দীর্ঘদিন ধরে ইহুদি রাষ্ট্র তথা ইসরায়েলকে ধ্বংস করার আহ্বান জানিয়ে আসছে।

হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর ইস্তাম্বুল-ভিত্তিক সদস্য বাসেম নাইম বৃহস্পতিবার সিএনএনকে বলেছেন, একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে স্বাধীনতাকামী এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি নিজেদেরকে নিরস্ত্র করতে রাজি হবে।

হামাসের সশস্ত্র শাখার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের অধিকার সংরক্ষণের পাশাপাশি যদি জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়, তাহলে আল কাসামকে (ভবিষ্যত) জাতীয় সেনাবাহিনীতে একীভূত করা যেতে পারে।’


হামাস ঐতিহ্যগতভাবে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানকে বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে এসেছে। এই সমাধান নীতি অনুযায়ী, ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত থাকবে। বরং এর পরিবর্তে হামাস এতোদিন সমস্ত ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে কথা বলে এসেছে।

প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভের প্রেসিডেন্ট মোস্তফা বারঘৌতি বলেছেন, তিনি হামাসের অস্ত্র সমর্পণের প্রস্তাব সম্পর্কে আগে থেকে অবগত নন। তবে তিনি বলেন, এটি সত্য হলে তা হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

তিনি ১৯৬৭ সালে দখল করা ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোতে ইসরায়েলের সামরিক নিয়ন্ত্রণের কথা উল্লেখ করে সিএনএনকে বলেছেন, ‘এটা এই অর্থে গুরুত্বপূর্ণ যে, ফিলিস্তিনিরা দখলদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করছে কারণ এখানে দখলদারিত্ব চলছে। যদি কোনও ধরনের দখলদারিত্ব সেখানে না থাকে, তবে তাদের প্রতিরোধ করারও দরকার নেই।'

মূলত ১৯৬৭ সালে দখল করা ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোতে এখনও লাখ লাখ ফিলিস্তিনি বাস করেন। যদিও এসব এলাকায় ইসরায়েলের সামরিক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

অন্যদিকে হামাসের একজন শীর্ষ রাজনৈতিক কর্মকর্তা দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন, ইসলামিক এই গোষ্ঠীটি ইসরায়েলের সঙ্গে পাঁচ বছর বা তার বেশি সময়ের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে ইচ্ছুক এবং ১৯৬৭ সালের আগের সীমান্ত অনুযায়ী একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে তারা তাদের অস্ত্র সমর্পণ করতে এবং রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত হতে ইচ্ছুক।

ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, গত বুধবার দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে হামাসের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা খলিল আল-হাইয়ার এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এলো যখন গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য গত কয়েক মাস আলোচনা চললেও তা কার্যত অচলাবস্থার মধ্যে রয়েছে।

এছাড়া হামাস নিজেদের নিরস্ত্রীকরণ করবে এমন ইঙ্গিতটি হামাসের পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য ছাড় বলে মনে হচ্ছে। কারণ হামাস এমন এক সশস্ত্র গোষ্ঠী যারা বরাবরই ইসরায়েলকে ধ্বংস করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল।