img

রক্তদানে উপকৃত হন দাতা নিজেই

প্রকাশিত :  ০৯:৫৫, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

রক্তদানে উপকৃত হন দাতা নিজেই

ডা. আয়েশা হান্না

রক্তদান যে গ্রহীতাদের জীবনকেই শুধু বাঁচায় তা-ই নয়, নিয়মিত রক্তদান রক্তদাতাকেও দিতে পারে অসাধারণ সব উপকার। অনেক সময় একজন রক্তদাতা জানতেই পারেন না তার নিজস্ব উপকারের কথা।

প্রতিবার রক্তদানের মাধ্যমে প্রাণঘাতী রক্তবাহিত রোগ হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইসিস সি, এইডস, সিফিলিস এবং ম্যালেরিয়া রোগ থেকে নিরাপদ থাকতে সচেতন থাকাসহ নানাবিধ ইতিবাচক প্রভাব পড়ে রক্তাদাতার শরীর ও মনে।


হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো  

আমেরিকান জার্নাল অব এপিডেমিওলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয় যে, নিয়মিত রক্তদাতাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৩৩ ভাগ কম এবং তাদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি কম ৮৮ ভাগ। রক্তদান করলে দাতার শরীরে লৌহের পরিমাণ কমে যাওয়াকেই এর কারণ হিসেবে বলেন বিজ্ঞানীরা। রক্তে লৌহের পরিমাণ বেশি থাকলে রক্ত ঘন হয়, কোলেস্টেরল তৈরি হওয়ার হার ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। আর কোলেস্টেরলের সাথে যে হৃদরোগের যোগ আছে তা তো কারো অজানা নয়। 


তাছাড়া লোহা বা আয়রনের পরিমাণ বেড়ে গেলে অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, অবসাদ, পেশির দুর্বলতা, ধমনীর শক্ত হয়ে যাওয়া, লিভার বড় হয়ে যাওয়াসহ নানান অসুখের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অন্যদিকে রক্ত দিলে একজনের শরীর থেকে প্রায় ২২৫ থেকে ২৫০ মিলিগ্রাম লোহা বেরিয়ে যায়। যা হৃদরোগসহ এর কারক হিসেবে যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে তার ঝুঁকি কমায়।  


বাড়তি ওজন হ্রাস  

প্রতি পাইন্ট (এক গ্যালনের আট ভাগের এক ভাগ) রক্ত দিলে ৬৫০ ক্যালরি করে শক্তি খরচ হয়। কারণ দেহ তখন তা পূরণের জন্যে কাজে নিয়োজিত হয়। কাজেই ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।


ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো  

মিলার-কিস্টোন ব্লাড সেন্টারের এক গবেষণায় দেখা যায়, যারা বছরে দুই বার রক্ত দেয়, অন্যদের তুলনায় তাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম। বিশেষ করে ফুসফুস, লিভার, কোলন, পাকস্থলী ও গলার ক্যান্সারের ঝুঁকি নিয়মিত রক্তদাতাদের ক্ষেত্রে অনেক কম বলে দেখা গেছে। চার বছর ধরে ১২০০ লোকের ওপর এ গবেষণা চালানো হয়। গবেষকরা বলেন, নিয়মিত রক্ত দিলে রক্তের ইনফ্লেমেটরি মার্কার কমে ও এন্টিঅক্সিডেন্ট উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে।


বিনামূল্যে সুস্থতা যাচাই  

রক্ত দিতে এলে প্রতিবারই একজন রক্তদাতার সুস্থতার বেশ কিছু পরীক্ষা একদম ফ্রি হয়ে যাচ্ছে। যেমন তার নাড়ি, ব্লাড প্রেশার, দেহের তাপমাত্রা, হিমোগ্লোবিন মাত্রা ইত্যাদি। তাছাড়া রক্ত দেয়ার পর হয়ে যাচ্ছে হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, এইচআইভি, সিফিলিস, গনোরিয়া এরকম রক্তবাহিত পাঁচটি রোগের স্ক্রিনিং। ফলে প্রতি চার মাসে এক বার করে বছরে তিন বার হয়ে যাচ্ছে তার সুস্থতার সার্বিক একটি যাচাই। রক্তদাতা জানতে পারেন তিনি কোনো সংক্রামক রোগে ভুগছেন কিনা।


প্রাণবন্ততা ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি  

রক্তদান করার সাথে সাথে আমাদের শরীরের মধ্যে অবস্থিত বোন ম্যারো বা অস্থিমজ্জা নতুন কণিকা তৈরির জন্যে উদ্দীপ্ত হয়। রক্তদান করার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দেহে রক্তের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে যায়, আর লোহিত কণিকার ঘাটতি পূরণ হতে সময় লাগে চার থেকে আট সপ্তাহ। এই পুরো প্রক্রিয়া আসলে শরীরের সার্বিক সুস্থতা, প্রাণবন্ততা আর কর্মক্ষমতাকেই বাড়িয়ে দেয়।


তবে রক্তদানের এ উপকারগুলো আসলে তারাই পাবেন যারা নিয়মিত রক্তদান করেন। জার্নাল অব আমেরিকান মেডিকেল এসোসিয়েশনের এক রিপোর্টে দেখা গেছে, ৪৩ থেকে ৬১ বছর বয়সী যেসব মানুষ প্রতি ছয় মাস পর পর নিয়মিত রক্ত দেন, তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কম। আর প্রাকৃতিক নিয়মেই যেহেতু প্রতি চার মাস পর পর আমাদের শরীরের লোহিত কণিকা বদলায়, তাই বছরে তিন বার রক্ত দিলে শরীরের লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা আরো বেড়ে যায়।


মন ভালো করতে অনবদ্য  

রক্তদানের ফলে মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়। কাউকে সাহায্য করার মতো, বিশেষ করে কারো জীবন বাঁচানোর মতো প্রশান্তিদায়ক অনুভূতি অন্য কিছুতেই নেই। সে মানসিক তৃপ্তি কখনোই অন্য কোনোকিছুর সঙ্গে তুলনীয় নয়। রক্তদানের মাধ্যমে মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ববোধও বাড়ে। 


ধর্মীয় দৃষ্টিতে  

রক্তদান ধর্মীয় দিক থেকেও অত্যন্ত পুণ্য বা সওয়াবের কাজ। পবিত্র কোরআনের সূরা মায়েদার ৩২ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘. . .আর যখন কেউ কোনো মানুষের জীবন রক্ষা করল, সে যেন সমগ্র মানবজাতির জীবন রক্ষা করল।’ ঋগ্বেদে বলা হয়েছে, ‘নিঃশর্ত দানের জন্যে রয়েছে চমৎকার পুরস্কার। তারা লাভ করে আশীর্বাদধন্য দীর্ঘজীবন ও অমরত্ব।’ আসলে সব ধর্মেই রক্তদানকে উৎসাহিত করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে রক্তদানের মাধ্যমে প্রাণ বাঁচানো একটি মহৎ কাজ এবং বড় ইবাদত।


নিজের জন্যে সঞ্চয়  

স্বেচ্ছায় রক্তদাতাকে একটি ডোনার কার্ড দেওয়া হয়। ওই কার্ড দিয়ে রক্তদাতা নিজে এবং নিজের পরিবার প্রয়োজনে আজীবন ওই প্রতিষ্ঠান থেকে রক্ত পেতে পারেন। এজন্যে বলা যায়, রক্তদান করে দাতা আসলে নিজের দুঃসময়ের জন্যে রক্ত সঞ্চয় করছেন। 


সামাজিক দায়িত্ববোধ 

রক্তদান আমাদের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্বও বটে। এটা সম্পূর্ণ মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক কার্যক্রম। এর মাধ্যমে সামাজিক দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি পায়, এমনকি ধর্মীয় সম্প্রীতিও বৃদ্ধি পায়। 

সবশেষে বলা যায়, জীবনের জন্যে প্রয়োজন রক্তের। অপারেশন ছাড়াও বিভিন্ন কারণে শরীরে রক্তের ঘাটতি হতে পারে। এসময় প্রয়োজন বিশুদ্ধ রক্ত, যার কোনো বিকল্প নেই। এখনো বিশ্বের অনেক দেশে মানুষের রক্তের চাহিদা হলে নির্ভর করতে হয় নিজের পরিবারের সদস্য বা নিজের বন্ধুদের রক্তদানের ওপর। আর অনেক দেশে পেশাদার রক্তদাতারা অর্থের বিনিময়ে রক্তদান করে। একসময় বেশিরভাগ রক্তই আসত পেশাদার রক্ত বিক্রেতা ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে। আর পেশাদার রক্ত বিক্রেতাদের অধিকাংশই সিফিলিস, ম্যালেরিয়া, হেপাটাইটিস-বি ও সি এবং এইডসে আক্রান্ত। ফলে এই দূষিত রক্ত পরিসঞ্চালিত হয়ে রক্তগ্রহীতাও আক্রান্ত হন এসব দুরারোগ্য ব্যাধিতে। 

বিশ্বের নানা দেশ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে জানা যায়, নিরাপদ রক্ত সরবরাহের মূল ভিত্তি হলো স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে দান করা রক্ত। কারণ তাদের রক্ত তুলনামূলকভাবে নিরাপদ এবং এসব রক্তের মধ্য দিয়ে গ্রহীতার মধ্যে জীবনসংশয়ী সংক্রমণ, যেমন এইচআইভি ও হেপাটাইটিস সংক্রমণের আশঙ্কা খুবই কম। সুতরাং আসুন, জীবন সংহারী রোগ থেকে আর্ত মানুষকে বাঁচাতে নিজে রক্ত দিই। অন্যকে রক্ত দানে উৎসাহিত করি। আগামী ১৪ জুন সারা পৃথিবীতে পালিত হবে বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। বিশ্বের সকল রক্তদাতাকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।

লেখক: এসোসিয়েট প্রফেসর, প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ, স্যার সলিমউল্লাহ মেডিকেল কলেজ এন্ড মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা।

img

গুগলকে টেক্কা দিতে সার্চ ইঞ্জিন আনছে ওপেনএআই

প্রকাশিত :  ১২:৫১, ১২ মে ২০২৪

ফোনে কিংবা কম্পিউটারে গুগল সার্চ ইঞ্জিনই বেশি ব্যবহৃত হয়, যা গুগলের নিজস্ব উদ্ভাবন। এবার এই প্রতিষ্ঠানটিকে টেক্কা দিতে মাঠে নামছে চ্যাটজিপিটি ডেভেলপার ওপেনএআই। যারা চ্যাটজিপিটি সার্চ ইঞ্জিন চালু করছে। ধারণা করা হচ্ছে এই সার্চ ইঞ্জিন চালু হলে গুগলকে রীতিমতো বেকায়দায় ফেলবে।

ওপেনএআই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (এআই) সার্চ ইঞ্জিন ফিচার নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছে। এর মাধ্যমে গুগল সার্চের সঙ্গে সরাসরি প্রতিযোগিতায় নামবে কোম্পানিটি। বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তির বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এই তথ্য জানিয়েছে।

আগামী সোমবার ফিচারটি উন্মোচন করতে পারে কোম্পানিটি। ব্লুমবার্গ ও দ্য ইনফরমেশনের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অ্যালফাবেটের মালিকানাধীন গুগল কোম্পানি ও নতুন এআই স্টার্টআপ পারপ্লেক্সিটির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে নতুন একটি সার্চ ইঞ্জিন তৈরির চেষ্টা করছে মাইক্রোসফট সমর্থিত ওপেনএআই।

আগামী মঙ্গলবার গুগলের বার্ষিক ডেভেলপার কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে। কোম্পানিটির এআইভিত্তিক বিভিন্ন পণ্য এই অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হবে। তাই এই অনুষ্ঠানের আগেই ওপেনএআই নতুন সার্চ ইঞ্জিন উন্মোচন করতে পারে বলে বিভিন্ন প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন।

ব্লুমবার্গের মতে, চ্যাটবট চ্যাটজিপিটিরই একটি এক্সটেনশন হবে ওপেনএআইয়ের সার্চ ইঞ্জিনটি। এর মাধ্যমে চ্যাটজিপিটি ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি তথ্য ও উদ্ধৃতি তুলে ধরতে পারবে। টেক্সটের মাধ্যমে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হলে চ্যাটজিপিটি চ্যাটবট মানুষের মতো উত্তর দিতে পারে।

চ্যাটজিপিটিকে অনেক আগে থেকেই অনলাইনে তথ্য জানার বিকল্প হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন প্রযুক্তি খাতের বিশ্লেষকেরা। তবে এটি নির্ভুল ও ওয়েবসাইট থেকে সাম্প্রতিক তথ্য তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে।

মাইক্রোসফটের বিং সার্চ ইঞ্জিনের সঙ্গে ওপেনএআইয়ের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি যুক্ত করা হয়েছে। আর গুগল তার সার্চ ইঞ্জিনেই এআই জেনারেটিভ ফিচার যুক্ত করেছে। ওপেনএআই প্রাক্তন গবেষক পারপ্লেক্সিটি নামের নতুন একটি স্টার্টআপ শুরু করেন। কোম্পানিটির মূলধন এখন ১০০ কোটি ডলার। এআইভিত্তিক সার্চের ইন্টারফেসের কারণে স্টার্টআপটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই সার্চ ইঞ্জিনের ফলাফল উদ্ধৃতি, টেক্সট ও ছবি দেখায়। গত জানুয়ারিতে এক ব্লগ পোস্টে কোম্পানিটি বলে, এতে ১ কোটি সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে।

২০২২ সালের নভেম্বরে চালু হওয়ার পর ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অ্যাপ হিসেবে পরিণত হয় চ্যাটজিপিটি। সেসময় প্ল্যাটফর্মটিতে ১০ কোটি সক্রিয় ব্যবহারকারী ছিল। তবে গত বছর চ্যাটজিপিটিতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়তে-কমতে দেখা যায়। ওয়েবসাইট ট্রাফিক ও পারফরম্যান্স বিশ্লেষণকারী সংস্থা সিমিলারওয়েবের মতে, ২০২৩ সালের মে মাসে প্ল্যাটফর্মটিতে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ব্যবহারকারী ছিল। চ্যাটজিপিটিতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়াতে চাপের মুখে রয়েছে কোম্পানিটি।