প্রকাশিত :
০৬:৪১, ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ সর্বশেষ আপডেট: ০৬:৫০, ৩০ ডিসেম্বর ২০২২
ফারহানা খান
মাত্র ২১ বছর বয়সে ‘দিবারাত্রির কাব্য’ উপন্যাসটি লিখেছিলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র হেরম্ব। ঘটনাচক্রে সুপ্রিয়া ও আনন্দ নামে দুই নারীর সঙ্গে নিজের জীবন জড়িয়ে ফেলে হেরম্ব। তবে হেরম্ব যে দুশ্চরিত্র এমনটা মোটেও নয়।
আনন্দের সঙ্গে হেরম্বের আলাপচারিতার সময় পাঠক দেখবেন, প্রেম সম্পর্কিত প্রচলিত ধারণাকে কটাক্ষ করেছেন লেখক। কোনো প্রেমিকের দৃষ্টিতে নয়, একজন সমালোচকের দৃষ্টিতে প্রেমকে দেখেছেন তিনি। দুই নারীর সঙ্গে প্রণয়ে জড়ানোর পর হেরম্বের নিজের জীবন সম্পর্কেও কিছু ধারণার পরিবর্তন হয়। বিশেষ করে সুপ্রিয়ার সঙ্গে দ্বিতীয়বার দেখা হওয়ার পর হেরম্বের একটি উক্তি ছিল এমন, ‘আমার ছিল না এমন অনেক স্বভাব এর মধ্যে আমি অর্জন করে ফেলেছি। ’
উপন্যাসটির প্রথম প্রকাশের ভূমিকায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ‘দিবারাত্রির কাব্য পড়তে বসে যদি কখনো মনে হয় বইখানা খাপছাড়া, অস্বাভাবিক, তখন মনে রাখতে হবে এটা গল্পও নয়, উপন্যাসও নয়, রূপক কাহিনি। রূপকের এ একটা নূতন রূপ। ’ পড়তে গেলেও বারবার মনে হবে উপন্যাস পড়ছেন, না নতুন আঙ্গিকের রূপককাহিনি।
মানুষ শারীরিক সক্ষমতার চেয়ে মানসিক শক্তিতে বড় হয়.....
প্রকাশিত :
০৬:৩১, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সর্বশেষ আপডেট: ০৭:০৯, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
রেজুয়ান আহম্মেদ
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা ফুটফুটে সেই ছেলেটির চেহারা আমাদের হৃদয়ে অমোঘ এক দাগ কেটে গেছে। সে একটি স্বপ্ন দেখত, ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু জীবন কখনো কখনো নিষ্ঠুর বাস্তবতার মুখোমুখি করে দেয়, যেখানে সব স্বপ্নগুলো যেন মুহূর্তেই ভেঙে পড়ে। তার পা হারিয়ে যাওয়া মানে শুধুমাত্র শারীরিক অসুস্থতা নয়, তার সমস্ত স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষারও বিনাশ। এই বাস্তবতা এতটাই নির্মম যে, তার মতো সাহসী একটি তরুণের চোখেও নিরাশার ছায়া পড়েছে।
ছেলেটির মুখে কথা ফোটে, “স্যার, আমার ক্রিকেট খেলার অনেক শখ ছিল, আমি এখন কিভাবে ক্রিকেট খেলব?” কথাটি শুনে মুহূর্তের জন্য থমকে যান আমাদের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস। ড. ইউনুস মানুষের দুঃখ, কষ্ট, স্বপ্ন ও বেদনা বোঝার অসামান্য ক্ষমতা রাখেন। তিনি শুধুমাত্র একজন নেতা নন, তিনি একজন মানবদরদী। তার চোখে তখন অশ্রু চলে আসে, একটি তরুণ হৃদয়ের স্বপ্ন ভাঙার এই মুহূর্তে তার মানবিকতা তাকে গভীরভাবে আঘাত করে।
ড. ইউনুস কিছুক্ষণ নীরব থাকেন। তিনি বুঝতে পারেন, শুধু একটি পা হারানো নয়, এই ছেলেটি তার জীবন হারিয়েছে, তার স্বপ্নগুলোও যেন ঝরে গেছে। কিন্তু ড. ইউনুস একজন লড়াকু মানুষ। তিনি জানেন, জীবনে বড় কিছু করতে গেলে শুধুমাত্র শারীরিক সক্ষমতা নয়, মানসিক শক্তিও অপরিহার্য। তিনি বুঝতে পারছেন, এই ছেলেটির জীবন থেকে ক্রিকেটের স্বপ্ন হারিয়ে গেছে, কিন্তু তার সামনে জীবনের আরও অনেক পথ খোলা।
তিনি সেই ছেলেটির মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, "তুমি শুধু একজন ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলে, কিন্তু তুমি জীবনে আরও অনেক কিছু করতে পারো। পা হারিয়ে গেছে, কিন্তু তোমার ইচ্ছাশক্তি, তোমার মেধা, তোমার মনোবল এখনও অটুট আছে। মানুষ শারীরিক সক্ষমতার চেয়ে মানসিক শক্তিতে বড় হয়। তুমি যদি চেষ্টা করো, তাহলে জীবন তোমাকে অন্য কোনো পথ খুলে দেবে।"
ড. ইউনুসের এই কথাগুলো ছিল শুধু কথাই নয়, এটি ছিল সেই ছেলেটির ভেতরে নতুন করে আশার সঞ্চার করা। জীবন কখনোই থেমে যায় না, এবং একজন প্রকৃত যোদ্ধা জীবনের প্রতিটি ধাপে লড়াই চালিয়ে যায়। ছেলেটি হয়তো তার শারীরিক সামর্থ্য হারিয়েছে, কিন্তু তার মানসিক শক্তি এখনও অপরাজেয়। এই ছেলেটিকে নতুন করে উৎসাহিত করতে ড. ইউনুসের মতো একজন মানবিক নেতার প্রয়োজন ছিল।
জীবনে এমন অনেক পরিস্থিতি আসে যখন আমরা মনে করি, সব শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কিছুই শেষ হয় না। যেখানেই হোক না কেন, জীবনের নতুন দরজা খোলা অপেক্ষা করে। আমাদের নিজেদের মধ্যে সেই মনোবল রাখতে হবে, যে কোনো পরিস্থিতি থেকে ফিরে আসার ক্ষমতা থাকতে হবে। যারা নিজেদের ভেতরের শক্তিকে কাজে লাগায়, তারা কখনোই হেরে যায় না।
এই ছেলেটি যদি নিজের ভেতরে সেই আশার আলো জ্বালাতে পারে, তবে সে জীবনের অন্য কোনো দিক থেকে সফল হতে পারবে। জীবনের একটি দিক বন্ধ হলে, অন্য দিক খুলে যায়। জীবন শুধু শারীরিক সক্ষমতার উপর নির্ভর করে না, এটি আমাদের মন ও মস্তিষ্কের শক্তিতে পরিচালিত হয়।
মানুষের জীবনে অনেক সংগ্রাম আসে, কিন্তু সেই সংগ্রামগুলোই মানুষকে আরও দৃঢ় ও শক্তিশালী করে তোলে। এই ছেলেটির মতো যারা নিজেদের স্বপ্ন হারিয়েছে, তাদের জন্য আমাদের সমর্থন ও ভালোবাসা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের উচিত তাদের পাশে দাঁড়িয়ে নতুন স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করা। কারণ জীবন কখনো থেমে থাকে না, জীবন সবসময় এগিয়ে যায়।
ড. ইউনুসের এই হৃদয়বিদারক মুহূর্ত আমাদেরকে শিখিয়ে দেয়, মানুষের জীবনে যতই দুঃখ ও বেদনা আসুক না কেন, সেই বেদনাকে অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহসিকতা রাখতে হবে। জীবন যতই কঠিন হোক, তার সামনে মাথা নত করতে নেই।
রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম