স্বমহিমায় ফিরছে বইমেলা

প্রকাশিত :  ০৮:৫১, ৩১ জানুয়ারী ২০২৩

স্বমহিমায় ফিরছে বইমেলা

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হাতুড়ি-পেরেকের ঠুকঠাক আওয়াজ আর শ্রমিকদের ব্যস্ততা জানান দিচ্ছে- বইমেলা চলে এসেছে। আর দুদিন পরই শুরু হবে বাঙালির প্রাণের এ বইমেলা।  বইমেলার প্রস্তুতিও প্রায় শেষের দিকে। শেষ মূহুর্তের সাজসজ্জা ও স্টল নির্মাণে ব্যস্ত সময় পার করছে শ্রমিকরা।   

করোনা মহামারির কারণে বিগত দু’বছর বইমেলা চিরাচরিত নিয়ম থেকে অনেকটাই ব্যতিক্রম হলেও মহামারী না থাকায় এবার ফিরছে আপন নিয়মে।

শনিবার বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা যায় স্টল নির্মাণকারী শ্রমিকদের ব্যস্ততা। কোথাও রঙের তুলিতে চলছে স্টলের শৈল্পিক কারুকাজ,  কোথাও হাতুড়ি-পেরেক-শাবালের ঠুকঠাকে চলছে স্টল নির্মাণ, আবার কোথাও চলছে লাইট বসানোর কাজ। শ্রমিকদের যেন এক মূহুর্তের জন্যও দম ফুরানোর হুঁশ নেই। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণেও ঠিক একইরকম ব্যস্ততা দেখা যায়।

স্টল শ্রমিক ইমন জানান, প্রতিদিন সকাল ৯-১০ টা থেকে রাত ৯-১০ টা পর্যন্ত একটানা চলে কাজ। তারা কয়েকজন এবার মেলায় প্রায় ছয়টি স্টল নির্মাণ করছেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কথা হয় জাগৃতির প্রকাশনীর স্টল নির্মাণের তদারকিতে থাকা খালেদুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, আমরা ২২ তারিখ(২২ জানুয়ারি) লটারিতে স্থান বরাদ্দ পাওয়ার পরপরই কাজ শুরু করে দিয়েছি। আমাদের কাজ প্রায় শেষের দিকে। আজকের মধ্যেই (২৮ জানুয়ারি) স্টল সম্পুর্ণ রুপে প্রস্তুত হয়ে যাবে।

তবে সব স্টলের প্রস্তুতি সমান নয়। কোনো কোনো প্রকাশনী স্টলের কাজ মাত্রই শুরু করেছে। তবে তারাও ৩১ তারিখের মধ্যেই সম্পুর্ন স্টল নির্মাণ হয়ে যাবে বলে আশা করেন প্রকাশকরা।

বরাবরের মতো এবারও মেলার মূল অংশ থাকবে বাংলা একাডেমিতে। আর গ্রন্থ উন্মোচন ও লেখক বলছি মঞ্চ থাকবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে।

তবে প্রতিবার স্টল ও প্যাভিলিয়ন মিশ্রভাবে থাকলেও এবারের স্টল ও প্যাভিলিয়নের জন্য আলাদা সারি করা হয়েছে। যা মেলার সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দিবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।

 এবার বইমেলায় অংশ নিচ্ছে মোট ৫৭৫ প্রতিষ্ঠান। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪৭২টি প্রতিষ্ঠানকে ৭১০টি স্টল ও বাংলা একাডেমিতে ১০৩টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪৭টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ এবারের বইমেলায় সর্বমোট ৮৫৮টি ইউনিট স্টল বরাদ্দ দিয়েছে বাংলা একাডেমি। এছাড়া মেলায় ছোট-বড় প্যাভিলিয়ন থাকবে ৩৪টি।

গত বছরের বইমেলায় ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭৬টি ইউনিট স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ছিল ৩৫টি।

সেদিক বিবেচনায় চলতি বছর বইমেলাতে একটি প্যাভিলিয়ন সংখ্যা কমেছে। তবে এবছর প্রতিষ্ঠান ও স্টল সংখ্যা দুটোই বেড়েছে।

এদিকে একটি বইতে ‘ভিন্নমত’ থাকার অভিযোগে ‘আদর্শ’ প্রকাশনীকে এবার বইমেলায় স্টল বরাদ্দ দেয়নি বাংলা একাডেমি। বিষয়টি ব্যপক আলোচনার জন্ম দেয়। পরে আদর্শ প্রকাশনী কর্তৃপক্ষের আপত্তি থাকা বইটি সরিয়ে নেওয়ার ঘোষনা দিয়ে স্টল বরাদ্দের আবেদন জানায়। কিন্তু ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত এর সুরাহা হয়নি।

যায়যায়দিন পত্রিকাকে তা নিশ্চিত করেন আদর্শের প্রকাশক মাহবুবুর রহমান। 

আজ পর্দা নামছে একুশে বইমেলার

প্রকাশিত :  ০৪:৪৩, ০২ মার্চ ২০২৪

আজ শনিবার (২ মার্চ) পর্দা নামছে অমর একুশে বইমেলার। তবে যে প্রত্যাশা নিয়ে মেলার সময় বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছিল সে অনুযায়ী বই বিক্রি হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা। তাদের ভাষ্য— বেইলি রোডের মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানির ঘটনা পাঠকদের আলোড়িত করেছে। এ অবস্থায় মেলা শেষ হওয়ার আগের দিন শুক্রবার হওয়া সত্ত্বেও ভিড় ও বিক্রি ছিল কম।

আবার অনেকে বলছেন, মেলার সময় বাড়ানোর তথ্যটা যে পরিমাণে প্রচার হওয়া দরকার ছিল সেই পরিমাণে হয়নি। তাই অনেকে জানেনই না যে মেলার সময় বেড়েছে।

সাধারণত বইমেলা হয় ২৮ দিনে। তবে এ বছর অধিবর্ষ হওয়ায় মেলা এক দিন বেশি পেয়ে দাঁড়ায় ২৯ দিনে। তার ওপর ২৯তম দিনটি বৃহস্পতিবার হওয়ায় প্রকাশকদের দাবি ছিল মেলার সময় বাড়িয়ে শনিবার পর্যন্ত নেওয়ার। তাদের দাবি মেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অনুমোদনক্রমে ২৭ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা দিয়ে বইমেলার সময় দুদিন বাড়ানো হয়।

এবারের বইমেলা শুরু থেকেই ছিল জাঁকজমকপূর্ণ। প্রথম সপ্তাহের পর থেকে মেলা পুরোদমে জমে ওঠে। এর মধ্যে আবার মেট্রো ট্রেন বইমেলায় যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। দূরত্ব ও যানজট বিবেচনায় আগে যারা বইমেলায় আসতে নিরুৎসাহ বোধ করতেন এবার মেট্রো ট্রেন তাদেরও নিয়ে এসেছে বইমেলায়। ফলে বিগত বছরগুলোর তুলনায় দর্শনার্থীর ভিড় এবং ভালো বেচাবিক্রি হওয়ায় প্রকাশকদের মুখেও ছিল সন্তুষ্টির ছাপ।

এছাড়া আবহাওয়া ভালো থাকায় প্রকৃতির বিরূপ প্রভাবও পড়েনি মেলায়। ২২ ফেব্রুয়ারি অল্প সময়ের বৃষ্টি মেলার বেচা-বিক্রিতে কিছুটা বিঘ্ন সৃষ্টি করলেও তা প্রকাশক ও পাঠকদের বড় ভোগান্তির কারণ হয়নি। তবে পাঠকের অত্যধিক সমাগমের দিন মেলার ধুলোবালি কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলেছে দর্শনার্থীদের।

এদিকে মেলার শেষ সময়েও নতুন বই নিয়ে আসছেন প্রকাশকরা। শুক্রবার বইমেলার ৩০তম দিনেও নতুন বই এসেছে ২১৯টি। শুক্রবার হওয়ায় এদিন মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায় আর শেষ হয় রাত ৯টায়। তবে এদিন ছিল না কোনো শিশুপ্রহর। শনিবারও থাকবে না কোনো শিশুপ্রহর।

মেলার শুরু থেকে মূল মঞ্চে প্রতিদিনই থেকেছে আলোচনা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। লেখক বলছি মঞ্চে থাকতো বই নিয়ে কথোপকথন। বর্ধিত দুই দিনে তা-ও থাকছে না। এই সময়টাতে মূলত বই বিক্রিই মুখ্য বিষয় থাকবে প্রকাশকদের।

শনিবার সমাপনী দিনে মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৫টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৪’-এর সদস্য সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। অনুষ্ঠানে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার এবং শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হবে।