একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘লন্ডন মাল্টিলিংগুয়াল ডে’ হিসেবে ঘোষণা দেয়ার দাবি

প্রকাশিত :  ০৭:৫৫, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

 একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘লন্ডন মাল্টিলিংগুয়াল ডে’ হিসেবে ঘোষণা দেয়ার দাবি

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত অমর একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘লন্ডন মাল্টিলিংগুয়াল ডে’ হিসেবে পালনের আহ্বানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ হাই কমিশন, লন্ডন ‘বাংলা ভাষা শহিদ দিবস’ ও ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করেছে।

এ উপলক্ষে লন্ডনের কেন্জিংটনে এক হোটেলে “Safeguarding Indigenous Languages through Transforming Education” শীর্ষক এক বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম তার বক্তব্যে ১৯৫২-এর সকল ভাষা শহিদ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত অমর একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘লন্ডন মাল্টিলিংগুয়াল ডে’ হিসেবে ঘোষণা দেয়ার জন্য লন্ডন মেয়রের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “এ বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব হাই কমিশন খুব শীঘ্রই লন্ডন মেয়রের কাছে পাঠাবে।”

কমনওয়েলথের সেক্রেটারি জেনারেল পেট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। এতে লন্ডনে অবস্থিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, ১৭টি দূতাবাসের কূটনীতিক ও প্রতিনিধিগণ এবং ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অংশ নিয়ে বায়ান্নোর মহান ভাষা শহিদের ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বক্তব্য দেন।

এছাড়া অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনার ও রাষ্ট্রদূতগণ এবং দূতাবাসগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী শিল্পীরা মহান ভাষা শহিদদের উৎসর্গ করে নিজ নিজ ভাষায় মনোজ্ঞ সংগীত, আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশন করেন। দূতাবাসগুলোর মধ্যে ছিলো ভারত, কুয়েত, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, আর্জেন্টিনা, কিউবা, সাইপ্রাস, মিশর, রুয়ান্ডা, ফিলিস্তিন, জর্ডান, উগান্ডা ও রোমানিয়া।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি কমনওয়েলথের সেক্রেটারি জেনারেল পেট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড তার বক্তব্যে এবছরের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতিপাদ্যের উল্লেখ করে প্রতিটি দেশে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মাতৃভাষার সংরক্ষণ ও চর্চার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে বাংলাদেশে বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনকে মাতৃভাষার সংরক্ষণ ও চর্চার ক্ষেত্রে এক অনন্য নজির বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে ভাষা ও সংস্কৃতি সুরক্ষায় যারা প্রাণ দিয়েছিলো, তাদের সেই আত্মদান থেকে আজো আমরা অনুপ্রেরণা নিতে পারি।“

হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম যুক্তরাজ্যে প্রায় ৩০০টি এবং লন্ডনে প্রায় ২০০টি মাতৃভাষার প্রচলন রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, “একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটিকে ‘লন্ডন মাল্টিলিংগুয়াল ডে’ হিসেবে ঘোষণা করা খুবই যৌক্তিক এবং এবিষয়ে আজকের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সকল দেশের রাষ্ট্রদূতগণ অভিন্ন মত ব্যক্ত করেছেন।”

হাইকমিশনার ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটিসহ বিভিন্ন কমিউনিটির সদস্যদের তাদের নিজ নিজ এলাকার কাউন্সিলরদের মাধ্যমে লন্ডন মেয়রের নিকট এবিষয়ে প্রস্তাব প্রেরণের পরামর্শ দেন। তাছাড়া তিনি বাংলা ভাষা শিক্ষা এবং চর্চার জন্য যুক্তরাজ্যে কমিউনিটি সংগঠনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ গ্রহণ করলে হাইকমিশন বিনামূল্যে বাংলা পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করতে সহায়তা করবে বলে জানান।

হাইকমিশনার তার বক্তব্যে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ-এর প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে ৫২-র ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের কথা পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন এবং মহান একুশে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পাওয়া, বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের অন্যতম দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগসহ বাংলা ভাষার সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য পল ব্রিস্টো অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, “যুক্তরাজ্যে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটি অমর একুশের মহান আদর্শ ধারণ করে আছে যা আগামী দিনগুলোতেও এদেশে নিজ নিজ মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও উন্নয়নে অন্য ভাষার মানুষকেও উৎসাহ যোগাবে।

যুক্তরাজ্যে ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা অর্জনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন হাই কমিশনের স্মারক অনুষ্ঠানের সহ-আয়োজক যুক্তরাজ্যে ইউনেস্কোর জাতীয় কমিশনের প্রতিনিধি ম্যাথিউ রাবাগলিয়াতি, ব্রিটিশ কাউন্সিল প্রতিনিধি ও\'বায়ার্ন মুলিগান ও যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ।

অনুষ্ঠানে উদীচী স্কুল অব পারফরমিং আর্টসের শিশু-কিশোর শিল্পীরা সমবেত কণ্ঠে “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি” অমর সংগীতটি পরিবেশন করে। ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটিসহ লন্ডনে বসবাসকারী বিভিন্ন দেশের বিপুল সংখ্যক আমন্ত্রিত অতিথি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে হাইকমিশনার অতিথি ও মিশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রতীকী শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর ভাষা শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

একুশের প্রথম প্রহরে হাইকমিশনার ও টাওয়ার হ্যামলেটস-এর মেয়র লুৎফুর রহমান একসাথে এবং পরে মিশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে পূর্ব লন্ডনের শহিদ আলতাব আলি পার্কে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে বায়ান্নোর ভাষা শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

কমিউনিটি এর আরও খবর

মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ‘সুনামগঞ্জ জেলা ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ইউকে’র আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত :  ১৩:৩৪, ২৮ মার্চ ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১৪:৫৫, ২৮ মার্চ ২০২৪

সুনামগঞ্জ জেলা ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ইউকে'র উদ্যোগে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ২৭ মার্চ বুধবার পূর্ব লন্ডনের একটি ভেন্যুতে এ আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাসুক আহমেদ সরদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহ সানোওয়ার হোসেন।


সংগঠনের সিনিয়র সদস্য আব্দুল কাইয়ুমের পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের স্পীকার কাউন্সিলর জাহেদ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক, জিএলএ মেম্বার উমেশ দেশাই, নিউহাম বারার চেয়ার কাউন্সিলর রহিমা রহমান, রেডব্রিজ বারার সিভিক মেয়র কাউন্সিলর জোছনা ইসলাম, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আজহারুল ইসলাম সিপার, প্রধান উপদেষ্টা আতাউর রহমান, জিএসসির চেয়ার ব্যারিস্টার আতাউর রহমান, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক স্পীকার আহবাব হোসেন,  সাবেক মেয়র দরস উল্লাহ, কাউন্সিলর শামস ইসলাম, কাউন্সিলর সাইদা চৌধুরী। সাবেক প্রধান উপদেষ্টা সৈয়দ আবুল কাশেম এসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ সভাপতি শাহীন খান, সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার হাবিবুর রহমান, সিনিয়র সদস্য ড: রোয়াব  উদ্দিন, উপদেষ্টা আব্দুল আশিক চৌধুরী,সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিয়াজুল ইসলাম চৌধুরী। 

এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা জুনেদ আহমেদ সুন্দর, উপদেষ্টা নুরুল ইসলাম এমবিই, প্রফেসর শাহনুর আহমদ খান, উপদেষ্টা মাষ্টার আমির উদ্দিন আহমেদ, ফজল উদ্দিন,  সহ সভাপতি আনসার আহমেদ, ফারুক মিয়া জিলু, শিশু মিয়া, বদর উদ্দিন, নাসির উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, নোমান আহমদ, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবু ইয়াসিন সুমন, সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান, সাবেক কাউন্সিলর রুহুল আমিন, আসাদুজ্জামান, তউরিস মিয়া, আনোয়ার কামাল দুলাল, এডভোকেট আল আমিন, সৈয়দ মকবুল, জাকির হোসেন সেলিম, নোয়াব আলী, আবুল মনসুর আহমদ, হেভেন খান, রাজু মিয়া, ফয়জুল হক, আতিকুর রহমান আতি, শাহানুর সহ বিপুল সংখ্যক লোকজন। আলোচনা সভায় বক্তারা মহান স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করেন।  তারা সবাইকে দেশের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে আগতরা 'সুনামগঞ্জ জেলা ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ইউকে'র পক্ষ থেকে এমন আয়োজনের জন্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান। এসময় তারা এসোসিয়েশনের উত্তরোত্তর সম্মৃদ্ধি ও প্রসার কামনা করেন। 

শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন, এসোসিয়েশনের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক লুৎফুর রহমান বিন নুরী।

কমিউনিটি এর আরও খবর