পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এবং আইএসআই এর উন্নয়নের প্রধান বাধা
পাকিস্তানের সামরিক স্থাপনা, মূলত সেনাবাহিনী এবং ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) এর সমন্বয়ে গঠিত। ১৯৪৭ সালে তার সূচনা থেকেই দেশের রাজনীতি ও সমাজে একটি প্রভাবশালী শক্তি। এটি উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সামরিক বাহিনী পাকিস্তানের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার প্রাথমিক উপায়গুলির মধ্যে একটি হল দেশের সম্পদের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে। সামরিক বাহিনী পাকিস্তানের বাজেটকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে এবং উন্নয়ন প্রকল্প থেকে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা উদ্যোগের দিকে তহবিল সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। এর ফলে দেশের দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অবকাঠামোর মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে কম বিনিয়োগ হয়েছে।
সামরিক বাহিনী পাকিস্তানের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার আরেকটি উপায় হল রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ। সামরিক বাহিনী কর্তৃক গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ এবং সামরিক শাসন আরোপ করার ইতিহাস রয়েছে। পাকিস্তান সৃষ্টির পর হতে আজও কোন গণতান্ত্রিক সরকার তাদের সাংবিধানিক ৫ বছর মেয়াদের সময়কাল পর্যন্ত দেশ পরিচালনা করতে পারে নাই । এর ফলে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
সামরিক বাহিনীকে গণমাধ্যমে কারসাজি এবং ভিন্নমত দমন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সুশীল সমাজকে আঘাত করার অভিযোগও আনা হয়েছে।
পাকিস্তানের সমাজে সেনাবাহিনীর আধিপত্য একটি শক্তিশালী নাগরিক সমাজের বিকাশকেও বাধাগ্রস্ত করেছে। সামরিক বাহিনী ভিন্নমতকে দমন করার এবং স্বাধীন কণ্ঠস্বরকে দমিয়ে রাখার, একটি প্রাণবন্ত নাগরিক সমাজের উন্নয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগ আনা হয়েছে। মানবাধিকারের প্রচার, গণতন্ত্রের প্রচার এবং সরকারকে জবাবদিহি করার জন্য নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলি অপরিহার্য। তবে, সামরিক বাহিনীর আধিপত্য সুশীল সমাজের পক্ষে কার্যকরভাবে কাজ করা কঠিন করে তুলেছে।
অবশেষে, আঞ্চলিক সংঘাতে সেনাবাহিনীর জড়িত থাকার কারণে পাকিস্তানের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ, কাশ্মীর সংঘাত এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মতো সংঘাতে পাকিস্তানের জড়িত থাকার ফলে উচ্চ অর্থনৈতিক ও মানবিক খরচ হয়েছে। এই দ্বন্দ্বগুলো উন্নয়ন প্রকল্প থেকে সম্পদকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে এবং দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশে সেনাবাহিনী এবং এর গভীর রাষ্ট্রযন্ত্রের নিন্দনীয় ও অবমাননাকর আচরণ বাঙ্গালী গণহত্যা ও ধর্ষণ বিশ্ব মঞ্চে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মর্যাদাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাঙালিদের নির্মূল করার এই অমানবিক, বর্বর প্রচেষ্টা, ৭৫ মিলিয়ন বাঙালির উপর প্রান্তিকতা এবং বৈষম্যের একটি দীর্ঘ সময়, যাবত এই বাহিনী এবং তার দোসররা চালিয়েছে । ১৯৭১ সালের যুদ্ধে ভারতের কাছে অত্যন্ত লজ্জাজনক পরাজয় বরন করেছে এবং ৯২০০০ সৈনিক দের অবমাননাকর আত্মসমর্পণ পাকিস্তানের জন্য ছিল অত্যন্ত লজ্জাস্কর । যার ফলশ্রুতিতে দেশটির ওপর সামরিক নিয়ন্ত্রণের দীর্ঘ সময় ধরে চলে এবং দেশ এর উন্নয়ন এবং অর্থনীতি শুকিয়ে যায় ক্রমাগত । এর ফলে জাতি গঠনের প্রক্রিয়ায় ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।
উপসংহারে বলা যায়, সেনাবাহিনী এবং আইএসআই-এর সমন্বয়ে গঠিত সামরিক স্থাপনা পাকিস্তানের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্যভাবে বাধা সৃষ্টি করেছে। সম্পদের ওপর সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ, সুশীল সমাজকে দমন করা এবং আঞ্চলিক সংঘাতে জড়িত হওয়া দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। পাকিস্তানকে তার পূর্ণ সক্ষমতা অর্জন করতে হলে, সামরিক প্রতিষ্ঠানের প্রভাব রোধ করতে হবে, এবং গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং সুশীল সমাজকে উন্নীত করার জন্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে।