গ্যাস উত্তোলনে পেট্রোবাংলার পরিকল্পনা কতটা বাস্তবসম্মত?

প্রকাশিত :  ১২:৪৩, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

গ্যাস উত্তোলনে পেট্রোবাংলার পরিকল্পনা কতটা বাস্তবসম্মত?

বদরূল ইমাম 

গ্যাসের চাহিদা মেটাতে উচ্চ মূল্যের এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা যে আর্থিক খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, সে আশঙ্কা আগে থেকেই করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এর প্রভাবে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি এবং রিজার্ভ-সংকট ইতিমধ্যে জনসাধারণ ও সরকার—উভয়ের জন্যই অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দামের ওঠা ও নামা জ্বালানি খাতে বিশ্বব্যাপী অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দায়ী। বাংলাদেশ ২০১৮ সালে যখন এলএনজি আমদানি শুরু করে, তখন এর দাম তুলনামূলক কম ছিল, কিন্তু গত বছর নাগাদ এর দাম এতটাই বেড়ে যায় যে বাংলাদেশ স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনার সামর্থ্য হারায়।

এ কারণে গ্যাস-সংকটে দেশে যে লোডশেডিং হয়, তার অভিজ্ঞতা আমাদের সবারই হয়েছে।

উচ্চ মূল্যের এলএনজির ওপর নির্ভরশীল না হয়ে দেশের নিজস্ব গ্যাস সম্পদ সর্বোচ্চ সক্ষমতায় উত্তোলন ও তার ওপর নির্ভর করার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। এ বিষয়ে আগে থেকেই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তাঁদের মতে, ভূতাত্ত্বিকভাবে বাংলাদেশ গ্যাসের জন্য যথেষ্ট সম্ভাবনাময়, কিন্তু গ্যাস অনুসন্ধান নিয়ে অবহেলা ও দুর্বল উদ্যোগের কারণে গ্যাস–সংকট আজ এই পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে গড়ে প্রতিবছর মাত্র একটি অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়, গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, এমন দেশগুলোর মধ্যে অনুসন্ধানের এ হার বিশ্বে ন্যূনতম।

তবে দেরিতে হলেও আশার কথা হচ্ছে সম্প্রতি দেশের নিজস্ব গ্যাসসম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলন বাড়ানোর লক্ষ্যে একটি জরুরি ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ঘোষণা করা হয়েছে। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে পেট্রোবাংলা ২০২৫ সালের সালের মধ্যে ৪৬টি কূপ খনন পরিকল্পনা ঘোষণা করে। এর মধ্যে ১৭টি অনুসন্ধান কূপ, ১২টি উন্নয়ন কূপ ও ১৭টি ওয়ার্কওভার কূপ অন্তর্ভুক্ত।

বাংলাদেশে গড় সাফল্যের হার বেশি এবং তা হলো, তিনটি অনুসন্ধান কূপ খনন করলে একটিতে সাফল্য। সেই হিসাবে ১৭টি অনুসন্ধান কূপ খনন করলে তার এক-তৃতীয়াংশ সফল হতে পারে এবং গ্যাস প্রাপ্তির প্রাক্কলন সেভাবেই করা উচিত। সব কটি কূপে সাফল্য ধরে যে পরিমাণ উৎপাদন হিসাব করা হয়েছে, তা বাস্তবসম্মত নয়। এরপরও বলি, নতুন গ্যাস কূপ খননের যে উদ্যোগ পেট্রোবাংলা নিয়েছে, তা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। গ্যাস অনুসন্ধানে দীর্ঘদিনের স্থবিরতা কাটিয়ে উঠে যথেষ্ট মাত্রায় কূপ খনন করা হলে বর্তমান গ্যাস-সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

পেট্রোবাংলার আশা, এসব কূপের মাধ্যমে দৈনিক প্রায় ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যাবে। উল্লেখ্য, বর্তমানে কমবেশি এ পরিমাণ গ্যাস এলএনজি আমদানির মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। এখন প্রশ্ন হলো, পেট্রোবাংলার পরিকল্পনাটি কতটা সন্তোষজনক এবং এর মাধ্যমে প্রত্যাশা অনুযায়ী গ্যাস তোলার সম্ভাবনা কতটুকু?

সাধারণ পাঠকদের জন্য বোঝার জন্য বলছি, ‘অনুসন্ধান কূপ’ অজ্ঞাত স্থানে খনন করা হয় এবং গ্যাস পাওয়া গেলে তা দেশের গ্যাস মজুত বাড়ায়। ‘উন্নয়ন কূপ’ হচ্ছে ইতিমধ্যে আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নতুন কূপ খনন। আর ‘ওয়ার্কওভার কূপ’ নতুন কূপ নয়; বরং আগে খনন করা ও পরিত্যক্ত কূপে মেরামত বা কোনো যন্ত্রাংশ সংযোজনের মাধ্যমে সেখানে রয়ে যাওয়া বা ফেলে আসা গ্যাস তোলার চেষ্টা করা।

পেট্রোবাংলা গত আগস্টে যে পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল, এ বছর ফেব্রুয়ারিতে তা সংশোধন করেছে। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪৬টি কূপ খননের কাজ ২০২৫ সালের পরিবর্তে ২০২৪ সালের মধ্যেই শেষ করা হবে। অর্থাৎ, তিন বছরের পরিবর্তে এখন দুই বছরের মধ্যেই ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এ সময়ে যে ১৭টি অনুসন্ধান কূপ খনন করার কথা, এর ৬টি ২০২৩ সালে এবং ১১টি ২০২৪ সালে খনন করা হবে। কেবল এই অনুসন্ধান কূপগুলো বিবেচনায় নিয়ে পরিবর্তনের যৌক্তিকতা বিচার করে দেখা যেতে পারে।

বাংলাদেশের নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্স তার বর্তমান লোকবল ও রসদ সামর্থ্য নিয়ে বছরে দুই থেকে তিনটি অনুসন্ধান কূপ খনন করতে পারে। সেই বিবেচনায় ২০২৩ সালে ৬টি অনুসন্ধান কূপ খননের পরিকল্পনাই উচ্চাভিলাষী। আর ২০২৪ সালে ১১টি অনুসন্ধান কূপ খনন করার পরিকল্পনাকে বলতে হয় অতি উচ্চাভিলাষী।

আমাদের মনে আছে, ২০১৬ সালে পেট্রোবাংলা ‘পাঁচ বছরে ১০৮টি কূপ খননের’ পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল। এর মধ্যে ৫৫টি ছিল অনুসন্ধান কূপ। পাঁচ বছরে তা করতে হলে প্রতিবছর ১১টি খনন করা প্রয়োজন। কিন্তু বাপেক্স পরিকল্পনাটি কার্যকর করতে পুরোপুরিভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

দেশীয় কোম্পানি বাপেক্স যে তার সীমাবদ্ধতার কারণে পেট্রোবাংলার নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৩ সালে ৬টি ও ২০২৪ সালে ১১টি অনুসন্ধান কূপ খনন করতে পারবে না, তা সহজেই বোঝা যায়।

এ ক্ষেত্রে কূপ খননের জন্য আউটসোর্সিং ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাকে সাধারণভাবে যৌক্তিক হিসেবে বিবেচনা করা যায়। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা এর সীমাবদ্ধতার দিকটি ও আমাদের সামনে তুলে ধরে। এক বছরে এতগুলো আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার সামর্থ্য কি আমাদের আছে?

কূপ খননে আউটসোর্সিং কোম্পানি ও পেট্রোবাংলার বিরোধ অনেক সময় আদালত পর্যন্ত গড়ায়। কয়েক বছর আগে সেমুতাং-৫ ও বেগমগঞ্জ-৪ কূপ দুটি আউটসোর্সিং ব্যবস্থাপনায় আজারবাইজানের রাষ্ট্রীয় তেল–গ্যাস কোম্পানি সোকারকে খনন করতে দেওয়া হয়। কিন্তু পেট্রোবাংলার সঙ্গে ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক বিষয়ে বিরোধ হওয়ার কারণে তারা বেগমগঞ্জ কূপটি খনন না করে চলে যায়। এ জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া হয়েছে কিন্তু আজ পর্যন্ত বিষয়টির কোনো নিষ্পত্তি হয়নি।

আইনি নিষ্পত্তি না হওয়ায় এখন বেগমগঞ্জ-৪ কূপটি এখন আমাদের বাপেক্সও খনন করতে পারছে না। একইভাবে ছাতক গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস তোলার জন্য কানাডার অখ্যাত নাইকো কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। নাইকো কূপটিতে দুর্ঘটনা ঘটায় এবং তাতে কূপটি নষ্ট হয়ে যায়। বাংলাদেশ ক্ষতিপূরণের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে গেছে কিন্তু ১৭ বছরেও তার নিষ্পত্তি হয়নি।

ফলে এ গ্যাস-সংকটের দিনেও ছাতক গ্যাসক্ষেত্র থেকেও গ্যাস উত্তোলন সম্ভব হচ্ছে। এদিকে অনেক কূপ বাপেক্সকে দিয়ে খনন না করিয়ে রাশিয়ার গাজপ্রম কোম্পানির মাধ্যমে করানো হচ্ছে, যেখানে গাজপ্রম প্রতিটি কূপ খননে বাপেক্সের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ দাম নিচ্ছে।

বর্তমানে ঘোষিত ৪৬টি কূপ খনন তিন বছরের (২০২৩-২০২৫) পরিবর্তে দুই বছরে (২০২৩-২০২৪) সম্পন্ন করার পরিবর্তিত পরিকল্পনা সুচিন্তিত নয় বলে মনে হয়। মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতাবিহীন প্রশাসনের উচ্চ মহলের সুপারিশে এ রকম সিদ্ধান্ত হয়ে থাকতে পারে। এত বেশিসংখ্যক কূপ তাড়াহুড়ার মধ্যে করতে যাওয়ার যে ঝুঁকি রয়েছে, তা আমলে না নেওয়া অদূরদর্শিতার সাক্ষ্য বহন করে। একটি বছর তেমন বড় কিছু সময় নয়, যেখানে বাংলাদেশ বছরের পর বছর গ্যাস-সংকটে ভুগে আসছে।

অন্যদিকে ৪৬টি কূপ খননের মাধ্যমে ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদনের যে হিসাব করেছে, তা-ও সুচিন্তিত নয়। পেট্রোবাংলার হিসাবে প্রতিটি অনুসন্ধান কূপে সফলতা ও গ্যাসপ্রাপ্তি ধরে কূপপ্রতি ১৫ থেকে ২০ মিলিয়ন ঘনফুট উৎপাদন হিসাব করা হয়েছে। কিন্তু বিশ্বের কোথাও অনুসন্ধান কূপের প্রতিটি সফল হয় না।

বাংলাদেশে গড় সাফল্যের হার বেশি এবং তা হলো, তিনটি অনুসন্ধান কূপ খনন করলে একটিতে সাফল্য। সেই হিসাবে ১৭টি অনুসন্ধান কূপ খনন করলে তার এক-তৃতীয়াংশ সফল হতে পারে এবং গ্যাস প্রাপ্তির প্রাক্কলন সেভাবেই করা উচিত। সব কটি কূপে সাফল্য ধরে যে পরিমাণ উৎপাদন হিসাব করা হয়েছে, তা বাস্তবসম্মত নয়। এরপরও বলি, নতুন গ্যাস কূপ খননের যে উদ্যোগ পেট্রোবাংলা নিয়েছে, তা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। গ্যাস অনুসন্ধানে দীর্ঘদিনের স্থবিরতা কাটিয়ে উঠে যথেষ্ট মাত্রায় কূপ খনন করা হলে বর্তমান গ্যাস-সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

ড. বদরূল ইমাম অধ্যাপক, ভূতত্ত্ব বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


মতামত এর আরও খবর

ফের মধ্যপ্রাচ্য সফরে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, যুদ্ধ কি থামবে?

প্রকাশিত :  ১৪:০৮, ২১ মার্চ ২০২৪

 ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার জন্য ফের মধ্যপ্রাচ্য সফরে গেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। প্রথমে সৌদি আরব ও তারপর মিসরে আরব নেতাদের সাথে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন আলোচনা করবেন। যাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলছে ‘অ্যান আর্কিটেকচার ফর লাস্টিং পিস’, অর্থাৎ সেখানে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির লক্ষ্যে একটি কাঠামো তৈরির চেষ্টা করা হবে। এবারের আলোচনার মূল বিষয়বস্তুও এটি।

এই উদ্যোগ এমন সময়ে নেয়া হলো, যখন প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন ইসরাইলি বাহিনী গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালের চারপাশে অভিযান বাড়িয়েছে, এমনকি তারা বেশ কয়েকটি বিমান হামলাও চালিয়েছে।

এর আগে ইসরাইলের সেনাবাহিনী বলেছিল যে তারা সোমবার থেকে সেখানে ৯০ জন বন্দুকধারীকে হত্যা করেছে।

একইসাথে, যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তির জন্য কাতারে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা চলছে। তবে কিছু বিষয় দেখে বোঝা যাচ্ছে যে একটা অগ্রগতি আসন্ন।

গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এই অঞ্চলে এটি মি ব্লিঙ্কেনের ষষ্ঠ সফর। সৌদি নেতাদের সাথে দেখা করতে বুধবার বিকেলে তিনি জেদ্দায় অবতরণ করেন।

সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ আগে বিমান থেকে নামার পর সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাজিন আল-হিমালি সহ অপেক্ষমান কর্মকর্তারা তাকে অভ্যর্থনা জানান এবং আলিঙ্গন করেন।

বুধবার রাতে রাজপ্রাসাদে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে তার দেখা করার কথা।

যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন যে তারা একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির সিদ্ধান্তে পৌঁছানো ও গাজায় চলমান মানবিক সংকটের মাঝে সেখানে ত্রাণ বিতরণ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করবেন।

এই সপ্তাহে জাতিসঙ্ঘ-সমর্থিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি)-এর একটি খাদ্য নিরাপত্তা জরিপ বলছে যে গাজার এক দশমিক এক মিলিয়ন, অর্থাৎ ১১ লাখ মানুষ ভয়ানক ক্ষুধা ও অনাহারের সাথে লড়াই করছে।

সংস্থাটি আরো বলেছে যে আগামী মে মাসের মাঝে গাজার উত্তরাঞ্চলেও একটি মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ আসতে চলেছে।

এছাড়াও মিলার যোগ করেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচ্যসূচিতে আরো থাকবে গাজার জন্য সঙ্ঘাত পরবর্তী পরিকল্পনার সমন্বয়, এটি নিশ্চিত করা যে হামাস আর গাজাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে বা ৭ অক্টোবরের হামলার আর পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারবে না, ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য একটি রাজনৈতিক সমাধান, দীর্ঘস্থায়ী শান্তি স্থাপন এবং এই অঞ্চলের নিরাপত্তা।’

ব্লিঙ্কেন মিসরের নেতাদের সাথে দেখা করতে বৃহস্পতিবার কায়রো যাবেন।

আজ থেকে ১৭ বছর আগে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্যালেস্টেনিয়ান অথরিটিকে (পিএ) গাজা থেকে বিতাড়িত করেছিলো হামাস।

এত বছর পর আবার তাদেরকে গাজায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে আমেরিকানরা।

এখনো কিছুই এগোয়নি। কিন্তু, আন্তর্জাতিক মহল দীর্ঘদিন ধরে যে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের কথা বলে আসছে, ইসরাইলসহ সকল পক্ষ যখন সেদিকে অগ্রসর হবে, তখন আরব দেশগুলোর সমর্থন পাওয়া যাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের উন্নত অস্ত্রশস্ত্র এবং তাদের সমর্থিত বেসামরিক পারমাণবিক শক্তি কর্মসূচিতে প্রবেশের বিনময়ে আরব দেশগুলোর প্রধান পৃষ্ঠপোষক দেশ সৌদি আরব ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে পারে।

এদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার গাজায় পিএ নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

এই অবস্থায় গাজায় পিএ-কে ফিরিয়ে আবার চেষ্টার কারণে তার এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সম্পর্কে কিছুটা চিড় ধরাতে পারে।

তবে এই পরিকল্পনার বিষয়ে জানেন, এমন কেউ কেউ স্বীকার করেছেন যে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে অগ্রগতির অভাব, গাজায় চলমান মানবিক সংকট, ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে বিদ্যমান অবশিষ্ট আস্থাটুকুও ভেঙে যাওয়ার কারণে আপাতদৃষ্টিতে এটিকে উচ্চাভিলাষী বলে মনে হচ্ছে।

যদিও মার্কিন প্রশাসন তাদের এই পরিকল্পনার বিষয়ে এখনো আশাবাদী।

ব্লিঙ্কেনও তার বর্তমান সফরের অংশ হিসেবে শুক্রবার ইসরাইলেও যাবেন।

মিলারের মতে, তিনি ইসরাইলি নেতাদের সাথে জিম্মিদের বিষয়ে ও রাফাহ-তে বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য হামাসের পরাজয় সুনিশ্চিত করা নিয়েও আলোচনা করবেন।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরাইলকে সতর্ক করেছেন যে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহ-তে আক্রমণ শুরু করা ‘ভুল’ হবে। কারণ সেখানে এক মিলিয়নেরও বেশি বাস্তুচ্যুত বেসামরিক লোক আশ্রয় নিয়েছে।

কিন্তু মঙ্গলবার নেতানিয়াহু বলেন, ইসরাইল রাফাহ-তে হামাস ব্যাটালিয়নদের নির্মূল করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং স্থল আক্রমণ ছাড়া এটি করার আর কোনো উপায় নেই।

হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় ৩১ হাজার ৯০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

আর ইসরাইল বলছে, সাতই অক্টোবর দক্ষিণ ইসরাইলে হামাসের হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ জন নিহত ও ২৫৩ জন জিম্মি হওয়ার পর থেকে এই সংঘর্ষ শুরু হয়।

বুধবার গাজার মাটিতে, বিশেষত আল-শিফা হাসপাতালের চারপাশে প্রচণ্ড লড়াই হয়েছিল। কারণ সেখানে তৃতীয় দিনের মতো ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর অভিযান অব্যাহত ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবিসিকে বলেছেন যে আগে হাসপাতাল কমপ্লেক্সের চারপাশে অবস্থান করা ট্যাঙ্কগুলো এখন আল-ওয়াহদা স্ট্রিট বরাবর পূর্ব দিকে সরে গেছে।

তারা গাজা শহর ও উত্তরাঞ্চলে বিমান হামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধির কথাও জানিয়েছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গাজা শহরে মানবিক সহায়তা বিতরণের সময় ১১ জন নিহত হন। গাজার স্থানীয়রা বলছেন যে তারা শুধু বোমা হামলাই সহ্য করছে না, খাদ্য সংকটেরও সম্মুখীন হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ওসামা তৌফিক বলেন যে কিছুদিন শান্ত থাকার পর তার এলাকায় পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

‘আমরা শুধু বোমা হামলাই সহ্য করছি না, খাদ্য সঙ্কটও মোকাবেলা করছি’, তিনি বলেন।

তিনি জানান, গত রমজানে তারা ইফতারে কিছু একটা খেয়ে রোজা ভাঙতে পারতেন। কিন্তু এখন তারা পানির বাইরে তেমন কিছুই খেতে পান না।

এমনকি যে পানি তারা পান করছেন, সেগুলোও ‘নর্দমার গন্ধযুক্ত ও সুমদ্রের পানির মতো স্বাদযুক্ত’ বলে জানিয়েছেন তিনি।

তৌফিক বলেন যে তারা এখন সামান্য একটু রুটিও খেতে পান না। ‘আমার সন্তানরা ক্ষুধার কষ্টে ভুগছে’, বলছিলেন তিনি।

বুধবার সকালে ইসরাইলের সেনাবাহিনী বলেছে যে প্রায় ৯০ জনকে হত্যা করার পাশাপাশি তারা সেদিন ৩০০ জন সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

এটিকে তারা আল-শিফা হাসপাতালের চারপাশে ‘নির্দিষ্ট অভিযান’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

এই হাসপাতালে প্রথম অভিযান চালানো হয়েছিল গত নভেম্বরে। তখন ইসরাইলি সেনাবাহিনী এটিকে হামাসের ‘কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার’ হিসেবে অভিযুক্ত করেছিল।

যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করেছিল।

ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বলছে যে সোমবার ফের অভিযান শুরুর কারণ, ‘জ্যেষ্ঠ হামাস সন্ত্রাসীরা ভেতরে পুনরায় সংগঠিত হয়েছে…এবং তারা এটিকে ব্যবহার করে ইসরাইলের বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা করছে।’

হামাস স্বীকার করেছে যে সোমবার সেখানে তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীর একজন জ্যেষ্ঠ কমান্ডার নিহত হয়েছেন। তবে তারা বলেছেন যে তিনি তখন ত্রাণ বিতরণে সমন্বয় করছিলেন। সূত্র : বিবিসি