আলোচিত ইউটিউবার হিরো আলমকে নিয়ে আলোচনা যেন থামছেই না। উপনির্বাচনে অল্প ভোটে হেরে গিয়ে লাইমলাইটে চলে আসেন এই অভিনেতা।
এবার স্বেচ্ছায় তাকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ভাস্কর্য নির্মাণ করেছেন। সেটিও এখন দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সেই ভাস্কর্যটিও হিরো আলম নিতে চান। বুধবার যুগান্তরকে এ তথ্য জানিয়েছেন হিরো আলম।
হিরো আলম বলেন, ঢাবি শিক্ষার্থীর ভাস্কর্যটি আমি নিতে চাই। যিনি বানিয়েছেন তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। সে যদি আমাকে উপহার হিসেবে দিতে চায়, তা হলে উপহার হিসেবে নেব । আর যদি টাকার মাধ্যমে দিতে চায়, তা হলে সেভাবেও নেব।
এই ভাস্কর্য কোথায় রাখা হবে এ বিষয়ে যুগান্তরকে হিরো আলম বলেন, ভাস্কর্যটি ওই শিক্ষার্থী হস্তান্তর করলে পরে সিদ্ধান্ত নেব কোথায় রাখব।
হিরো আলমের ভাস্কর্যটি তৈরি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের ছাত্র উত্তম কুমার।
তিনি জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে স্টাডি ওয়ার্ক হিসেবে হিরো আলমের ক্যারেক্টারটা নিয়ে ভাস্কর্যটা তৈরি করি। এটা শুধু ভালো লাগার জায়গা থেকেই করা। হিরো আলমকে ক্যারেক্টার হিসেবে নেওয়ার কারণ হচ্ছে— তার চেহারার মধ্যে অন্য রকম একটা ব্যাপার আছে, যেটি আমরা ভাস্কররা খুব পছন্দ করি। ওই ধাঁচটা সাধারণ মানুষের চেহারায় থাকে না।
ওই শিক্ষার্থী বলেন, হিরো আলমের ভাস্কর্য তৈরিতে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। হিরো আলম চাইলে ভাস্কর্যটা হস্তান্তর করব।
উত্তম কুমার চারুকলার ভাস্কর্য বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি জগন্নাথ হলের জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা ভবনে থাকেন। হিরো আলমের ভাস্কর্যটি এখন সেখানেই রাখা আছে।
মানুষ শারীরিক সক্ষমতার চেয়ে মানসিক শক্তিতে বড় হয়.....
প্রকাশিত :
০৬:৩১, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সর্বশেষ আপডেট: ০৭:০৯, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
রেজুয়ান আহম্মেদ
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা ফুটফুটে সেই ছেলেটির চেহারা আমাদের হৃদয়ে অমোঘ এক দাগ কেটে গেছে। সে একটি স্বপ্ন দেখত, ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু জীবন কখনো কখনো নিষ্ঠুর বাস্তবতার মুখোমুখি করে দেয়, যেখানে সব স্বপ্নগুলো যেন মুহূর্তেই ভেঙে পড়ে। তার পা হারিয়ে যাওয়া মানে শুধুমাত্র শারীরিক অসুস্থতা নয়, তার সমস্ত স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষারও বিনাশ। এই বাস্তবতা এতটাই নির্মম যে, তার মতো সাহসী একটি তরুণের চোখেও নিরাশার ছায়া পড়েছে।
ছেলেটির মুখে কথা ফোটে, “স্যার, আমার ক্রিকেট খেলার অনেক শখ ছিল, আমি এখন কিভাবে ক্রিকেট খেলব?” কথাটি শুনে মুহূর্তের জন্য থমকে যান আমাদের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস। ড. ইউনুস মানুষের দুঃখ, কষ্ট, স্বপ্ন ও বেদনা বোঝার অসামান্য ক্ষমতা রাখেন। তিনি শুধুমাত্র একজন নেতা নন, তিনি একজন মানবদরদী। তার চোখে তখন অশ্রু চলে আসে, একটি তরুণ হৃদয়ের স্বপ্ন ভাঙার এই মুহূর্তে তার মানবিকতা তাকে গভীরভাবে আঘাত করে।
ড. ইউনুস কিছুক্ষণ নীরব থাকেন। তিনি বুঝতে পারেন, শুধু একটি পা হারানো নয়, এই ছেলেটি তার জীবন হারিয়েছে, তার স্বপ্নগুলোও যেন ঝরে গেছে। কিন্তু ড. ইউনুস একজন লড়াকু মানুষ। তিনি জানেন, জীবনে বড় কিছু করতে গেলে শুধুমাত্র শারীরিক সক্ষমতা নয়, মানসিক শক্তিও অপরিহার্য। তিনি বুঝতে পারছেন, এই ছেলেটির জীবন থেকে ক্রিকেটের স্বপ্ন হারিয়ে গেছে, কিন্তু তার সামনে জীবনের আরও অনেক পথ খোলা।
তিনি সেই ছেলেটির মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, "তুমি শুধু একজন ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলে, কিন্তু তুমি জীবনে আরও অনেক কিছু করতে পারো। পা হারিয়ে গেছে, কিন্তু তোমার ইচ্ছাশক্তি, তোমার মেধা, তোমার মনোবল এখনও অটুট আছে। মানুষ শারীরিক সক্ষমতার চেয়ে মানসিক শক্তিতে বড় হয়। তুমি যদি চেষ্টা করো, তাহলে জীবন তোমাকে অন্য কোনো পথ খুলে দেবে।"
ড. ইউনুসের এই কথাগুলো ছিল শুধু কথাই নয়, এটি ছিল সেই ছেলেটির ভেতরে নতুন করে আশার সঞ্চার করা। জীবন কখনোই থেমে যায় না, এবং একজন প্রকৃত যোদ্ধা জীবনের প্রতিটি ধাপে লড়াই চালিয়ে যায়। ছেলেটি হয়তো তার শারীরিক সামর্থ্য হারিয়েছে, কিন্তু তার মানসিক শক্তি এখনও অপরাজেয়। এই ছেলেটিকে নতুন করে উৎসাহিত করতে ড. ইউনুসের মতো একজন মানবিক নেতার প্রয়োজন ছিল।
জীবনে এমন অনেক পরিস্থিতি আসে যখন আমরা মনে করি, সব শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কিছুই শেষ হয় না। যেখানেই হোক না কেন, জীবনের নতুন দরজা খোলা অপেক্ষা করে। আমাদের নিজেদের মধ্যে সেই মনোবল রাখতে হবে, যে কোনো পরিস্থিতি থেকে ফিরে আসার ক্ষমতা থাকতে হবে। যারা নিজেদের ভেতরের শক্তিকে কাজে লাগায়, তারা কখনোই হেরে যায় না।
এই ছেলেটি যদি নিজের ভেতরে সেই আশার আলো জ্বালাতে পারে, তবে সে জীবনের অন্য কোনো দিক থেকে সফল হতে পারবে। জীবনের একটি দিক বন্ধ হলে, অন্য দিক খুলে যায়। জীবন শুধু শারীরিক সক্ষমতার উপর নির্ভর করে না, এটি আমাদের মন ও মস্তিষ্কের শক্তিতে পরিচালিত হয়।
মানুষের জীবনে অনেক সংগ্রাম আসে, কিন্তু সেই সংগ্রামগুলোই মানুষকে আরও দৃঢ় ও শক্তিশালী করে তোলে। এই ছেলেটির মতো যারা নিজেদের স্বপ্ন হারিয়েছে, তাদের জন্য আমাদের সমর্থন ও ভালোবাসা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের উচিত তাদের পাশে দাঁড়িয়ে নতুন স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করা। কারণ জীবন কখনো থেমে থাকে না, জীবন সবসময় এগিয়ে যায়।
ড. ইউনুসের এই হৃদয়বিদারক মুহূর্ত আমাদেরকে শিখিয়ে দেয়, মানুষের জীবনে যতই দুঃখ ও বেদনা আসুক না কেন, সেই বেদনাকে অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহসিকতা রাখতে হবে। জীবন যতই কঠিন হোক, তার সামনে মাথা নত করতে নেই।
রেজুয়ান আহম্মেদ: কলামিস্ট, বিশ্লেষক; সম্পাদক অর্থনীতি ডটকম